<p>খ্রিস্টপূর্ব ৩৫৬ সালে জন্মেছিলেন গ্রিসের সম্রাট আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। সেলুকাস ছিলেন আলেকজান্ডারের সেনাপতি। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তিনিও শাসক হয়েছিলেন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ সালে আলেকজান্ডার ভারত দখলের অভিযানে আসেন। সেলুকাসও প্রধান সেনাপতি হিসেবে আলেকজান্ডারের সঙ্গে ভারত অভিযানে আসেন। সিন্ধু উপত্যকা দিয়েই তাঁরা ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করেন। ভারতের একটি বিরাট অংশ অধিকার করেছিলেন আলেকজান্ডার। প্রায় ১৯ মাস তিনি ভারতীয় ভূখণ্ডে অতিবাহিত করেন। কথিত আছে, ইউরোপ থেকে ইরান-আফগানিস্তান পার হয়ে ভারতে এলে এখানকার মানুষের গঠন, চালচলন, কৃষ্টি, সভ্যতা ইত্যাদির ভিন্নতা ও বিচিত্রতা দেখে অবাক ও বিস্মিত হন আলেকজান্ডার। প্রচলিত আছে, এই বৈচিত্র্য দেখে গ্রিক ভাষায় আলেকজান্ডার সেলুকাসকে বলেছিলেন, ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!’ আলেকজান্ডার আদৌ এমন বলেছিলেন কি না তা সত্যি করে জানা যায় না। তবে ১৯১১ সালে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর ঐতিহাসিক নাটক ‘চন্দ্রগুপ্ত’র সংলাপে আলেকজান্ডারের ভারতে অবস্থানের সময়ের অনুভূতি সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!’ আলেকজান্ডারের অনুভূতিটুকু ইতিবাচক বা প্রশংসার বহিঃপ্রকাশ ছিল, না নেতিবাচক কিছু ছিল তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।<br /> <img alt="সত্যিই কী বিচিত্র এই দেশ!" height="352" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/january/04-01-2024/1.jpg" style="float:left" width="400" />কালের বিবর্তনে আমরা মূলত মানুষের চিত্র-বিচিত্র চরিত্র দেখে এটিকে অসংগত, অবাস্তব, অসম্ভব, অসহনীয় বা আজগুবি অবস্থা বোঝাতে ব্যবহার করে থাকি। আলেকজান্ডার বেঁচে থাকলে এই সময়টায় আমাদের দেশে এলে তাঁর অনুভূতি কেমন হতো তা সোমনাথ মিশ্র ‘বিচিত্র এই দেশ’ কবিতায় লিখেছেন, ‘আছে কিছু দেশে বুদ্ধিজীবী,/ওরা নাকি বুদ্ধিমান লোকও/ সময় বুঝে লেজ নাড়ে শুধু,/প্রভুর জন্যে করে ভোক ভোকও/...সত্য কি বিচিত্র এই দেশ,/ মনে মনে হাসল সেলুকাসও/নিজেরা মারছে নিজেদের,/নিজের দেশের করছে সর্বনাশও।’ কিছু নষ্ট বুদ্ধিজীবী ও সুধী কুটিলতার আশ্রয় নিয়ে বিএনপিকে নির্বাচন বর্জনে প্ররোচনা দিয়েছেন। তাঁরা বিএনপিকে বুঝিয়েছে তাঁদের সঙ্গে পশ্চিমাদের যে যোগাযোগ আছে তাতে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগে বাধ্য হবে। নষ্টদের কথায় আস্থা রেখে বিএনপির সর্বনাশ হয়েছে। আর রাষ্ট্রকে সংকটের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।<br /> সমগ্র বিশ্বে কিছু দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, আর প্রায় সব মহাদেশের শতাধিক দেশের নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। উন্নত, উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত সব দেশেই নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক পরিলক্ষিত হয়। কয়েক শ বছর ধরেই পৃথিবীর নানা প্রান্তের নির্বাচন নিয়ে অহর্নিশ বিতর্কের অন্ত নেই। বিশ্বের বহু দেশেই নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়ম, প্রতারণা, রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সম্পদের ব্যবহার, ভোট ক্রয়, ভোট গণনা নিয়ে বিতর্ক, সহিংসতা, ভোটের ফল পাল্টে দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে অসংখ্য মামলাও হয়। বিচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্বাচনী সংস্থা কাজ করে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো ও ব্রাজিলে। লাতিন আমেরিকায় গণতন্ত্র রপ্তানির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯১২ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত ক্রমাগত হস্তক্ষেপ করেছে। তবু এসব দেশের অনেকগুলো নির্বাচন নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে। বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে গুগলে সার্চ দিলে যে দেশের বিতর্কিত নির্বাচনের বিষয় সবচেয়ে বেশিসংখ্যক প্রদর্শন করে সেটি যুক্তরাষ্ট্র। যেসব দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, আর যেসব দেশের নির্বাচন নিয়ে নানা বিতর্ক হয় তার কোনোটিতেই অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান নেই। সুইডেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক থিংকট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ইলেকটোরাল অ্যাসিসট্যান্স (আইডিইএ)-এর গবেষণা বলছে, ১৭৩টি দেশের মধ্যে ৮৫টিতে ‘গণতান্ত্রিক পারফরম্যান্সের অন্তত একটি প্রধান সূচক গত পাঁচ বছরে পতনের সম্মুখীন হয়েছে। এসব সূচকের মধ্যে ত্রুটিপূর্ণ নির্বাচন থেকে শুরু করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কমে যাওয়া, সমাবেশ করার অধিকার খর্ব ইত্যাদি রয়েছে বলে জানিয়েছে আইডিইএ। অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি, লুক্সেমবার্গ, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, পর্তুগাল ও যুক্তরাজ্যে গণতন্ত্রের অবনতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।<br /> বাংলাদেশের সংবিধানে একাধিকবার স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জ্যপূর্ণ কোনো আইন তৈরি করবে না এবং কোনো আইন সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জ্যপূর্ণ হলে তা যতখানি অসামঞ্জ্যপূর্ণ ততটুকু বাতিল বলে গণ্য হবে। কোনো আইন সংবিধানের সঙ্গে অসামঞ্জ্যপূর্ণ কি না সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার কেবল উচ্চ আদালতের রয়েছে। আমাদের সর্বোচ্চ আদালত অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন। আদালতের এই সিদ্ধান্ত যদি ভুলও হয়ে থাকে, তা পরিবর্তন করার ক্ষমতা কেবল আদালতের আছে, রাষ্ট্রের আর কোনো বিভাগের নেই। দেশ-বিদেশের কিছু নষ্ট মানুষ কুতর্ক ও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে সংসদ উচ্চ আদালতের রায়কে পাল্টে দিতে পারে। কিছু নষ্টরা তো আরেক কাঠি সরেস। তারা বুঝিয়েছে নির্বাহী বিভাগই আদালতের রায় পাল্টে অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।<br /> বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে উচ্চ আদালতের বিচারকদের সংসদ কর্তৃক অভিশংসনের বিধান রেখে আওয়ামী লীগ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী প্রণয়ন করেছে। আমাদের উচ্চ আদালত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করেছেন। আওয়ামী লীগ ওই রায়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে। আইন বিভাগ কিংবা নির্বাহী বিভাগ যদি আদালতের রায় পাল্টে দিতে পারত, তাহলে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘোষণা করে আদালত যে রায় দিয়েছেন আওয়ামী লীগ ওই রায় পাল্টে দিতে পারল না কেন?<br /> নষ্টদের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। ওপরে সুধী ভেতরে কুটিল এসব মানুষ এখন বুঝতে পেরেছেন তাঁদের সমীকরণ ভুল ছিল। নির্বাচন এমন জমে উঠবে, এতটা প্রতিযোগিতাপূর্ণ হবে এটা বিএনপি ও তাদের মিত্র বুদ্ধিজীবী-সুধীরা অনুমান করতে পারেনি। রেললাইনের নাটবল্টু খুলে, রেলের বগিতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করে কিংবা রেললাইন কেটে রেল যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত করা গেলেও নির্বাচনের ট্রেন সব বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। তাই নির্বাচন নিয়ে এখন নতুন সুর তুলেছে, ৭ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচনের তফসিল বাতিল করে সংবিধানের ১২৩(৩)(খ) অনুযায়ী সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে হবে। সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় বসে নির্বাচন পরিচালনাসহ পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলার লক্ষ্যে ন্যূনতম সমঝোতার ভিত্তিতে ‘জাতীয় সমঝোতা সনদ’ গ্রহণ করতে হবে। পরবর্তী সংসদের প্রথম অধিবেশনে গৃহীত ‘জাতীয় সমঝোতা সনদ’-এর ভিত্তিতে সংবিধান সংস্কারের জন্য বিল পাস করতে হবে। একটি রাজনৈতিক দল সেনাবাহিনীর অধীনে জাতীয় নির্বাচন চেয়ে আপিল বিভাগে মামলা দায়ের করেছে। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে তথাকথিত জাতীয় সমঝোতার কথা ও সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্বাচনের কথা বলছে। অন্যথায়  নিষেধাজ্ঞা, গৃহযুদ্ধ এসবের ভয় দেখাচ্ছে। এর আগে রাষ্ট্রপতি আহ্বান জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন সংলাপে ডেকেছে, তফসিল ঘোষণার পরও নির্বাচন কমিশন বারবার তাদের নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, বিএনপি নির্বাচনে এলে তফসিল পেছানো হবে। তখন  নির্বাচন কমিশনকে ‘গরু-ছাগল’, ‘পা চাটা গোলাম’, ‘আওয়ামী মাফিয়া’ আখ্যায়িত করে তাচ্ছিল্যভরে সেসব আহ্বান প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অথচ নির্বাচন অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সময়ের ১০০ ঘণ্টার কম সময় আগে নির্বাচন বাতিলের আহ্বান জানানো হচ্ছে। এটি কি পাড়া-মহল্লার কোনো ক্রিকেট বা ফুটবল খেলা? ইচ্ছাখুশি ম্যাচের সময় বদলে ফেলা যায়?<br /> বিএনপি ও তার মিত্ররা বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থাকে অসত্য, বিকৃত তথ্য দিয়ে ও লবিং করে দেশকে কৃত্রিম সংকটে ফেলেছে। পশ্চিমা কোনো কোনো দেশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে থাবা বসাতে উদ্যত হয়েছে। ঠিক সেই সময় কোনো কোনো এনজিও বিদেশিদের উসকে দিতে মানবাধিকার ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছে। ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়া দুর্নীতি, অর্থপাচার, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা, আদালতের রায়কে ফরমায়েশি রায় বলে সমালোচনা, মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য উপস্থাপনসহ যা খুশি তা-ই বলতে পারছে। রিউমার স্ক্যানারের প্রতিবেদন বলছে, গত তিন মাসে সর্বোচ্চ ৫৬টি গুজব ছড়ানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে। এর পরই বেশি গুজবের শিকার হয়েছে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী। আর এ কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব প্ল্যাটফরম। জাতির পিতাকে নিয়ে কী অসম্মানজনক মিথ্যা, বানোয়াট ও আজগুবি তথ্য রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। তার পরও অভিযোগ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই।<br /> যে পশ্চিমা বিশ্বকে আমাদের সামনে মত প্রকাশের স্বাধীনতার পথিকৃৎ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় তাদের স্বাধীনতার সাম্প্রতিক দু-একটি উদাহরণ উল্লেখ করছি। ইসরায়েলের সমালোচক সাংবাদিক মেহেদি হাসানের টিভি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এমএসএনবিসি। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে দুজন নারী চাকরি হারিয়েছেন। এঁদের মধ্যে একজন ব্যাংকার, অন্যজন চিকিৎসক। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা ও তাতে মার্কিন সরকারের সমর্থনের সমালোচনা করায় মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদ কংগ্রেসের একমাত্র ফিলিস্তিনি-আমেরিকান আইন প্রণেতা রাশিদা তালিবের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে। ফিলিস্তিনিদের সমর্থন করায় হার্ভার্ড ও কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের চাকরি দেয়নি ডেভিস পোল্ক অ্যান্ড ওয়ার্ড ওয়েল নামে অভিজাত এক ল ফার্ম। আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটি আরো ঘোষণা দিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারী কাউকেই ফার্মে চাকরি দেওয়া হবে না। মরক্কান বংশোদ্ভূত ডাচ উইঙ্গার আনোয়ার এল ঘাজির চুক্তি বাতিল করেছে জার্মান ক্লাব মাইন্স। তাঁর দোষ? গাজায় ফিলিস্তিনের হতাহতদের পক্ষ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি। গাজায় চলমান ইসরায়েলি হামলার বিরোধিতা করায় যুক্তরাষ্ট্রে ৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ইসরায়েলের বিরুদ্ধে টুইট করায় ইলিনয়েস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিভেন সালাটিয়াকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। ফিলিস্তিনি জাতিগত নিধনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দেওয়ায় ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেঠ ক্রসবিকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একইভাবে স্ট্যানফোর্ড ও ইউসি বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিচ্যুতির ঘটনা ঘটেছে। কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাসেল রিকফোর্ড ইসরায়েলের সমালোচনা করায় প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে চাকরি বাঁচিয়েছেন।<br /> নাগরিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আমাদেরও ঘাটতি রয়েছে এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু অর্থনৈতিক ও সামাজিক মানবাধিকারের অনেক ক্ষেত্রে আমরা চ্যাম্পিয়ন এটি স্বীকার করতেই হবে। স্বল্পোন্নত কোনো দেশে সরকার সাত লাখ মানুষকে বাসস্থান নির্মাণ করে দিয়েছে? দুই কোটি মানুষকে বছরের পর বছর বিশেষ ভর্তুকি দিয়ে খাদ্যপণ্য সরবরাহ করছে?<br /> যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়। প্রতিবছর হাজার নয়, কয়েক লাখ মানুষ নিখোঁজ হয় যুক্তরাষ্ট্রে। প্রেস ট্র্যাকারে অনুসন্ধান করে দেখুন, যুক্তরাষ্ট্রে কতজন সাংবাদিক নিপীড়নের শিকার হয়, কতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়, বছরের পর বছর তাদের কারাগারে থাকতে হয়। বাংলাদেশের মতো যুক্তরাষ্ট্রে জাতির পিতা, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র ও স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাসকে ক্রমাগত অস্বীকার করলে তার প্রতিক্রিয়া কী হবে ভেবে দেখেছেন? তার পরও বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, সংবাদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা খুব খারাপ বলে পশ্চিমা হস্তক্ষেপকে উসকে দেবেন? ঘাটতি আছে সন্দেহ নেই, কিন্তু বাইরের হস্তক্ষেপের মতো অবস্থা অবশ্যই নেই। এর পরও যেসব রাজনৈতিক দল বিদেশি রাষ্ট্র ও সংস্থার হস্তক্ষেপের জন্য বিরামহীম চেষ্টা করে যাচ্ছে, তাদের পক্ষেই যদি অবস্থান নেন, আলেকজান্ডারের ভাষায় বলব, সত্যিই কী বিচিত্র এই দেশ!<br />  লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ<br /> চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়<br /> zhossain1965@gmail.com</p>