<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">করোনা মহামারিতে কম বিষয়ে ও কম নম্বরে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ ৫ দুটিই হু হু করে বেড়েছিল। তবে এবার গত বছরের তুলনায় পাসের হার সামান্য বেড়েছে, কিন্তু জিপিএ ৫ কিছুটা কমেছে। তাই এবারের ফলাফল স্বাভাবিক মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ+ পাওয়ার সংখ্যা প্রশংসনীয়। কিন্তু বাস্তবে গুণগত মান শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বাড়ছে কি না, সেটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। উচ্চশিক্ষার বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করার সময় আসছে। শুধু জিপিএ ৫-এর সংখ্যা না বাড়িয়ে কিভাবে দক্ষ জনশক্তি বৃদ্ধি করা যায়, সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রশ্ন হলো, উচ্চশিক্ষায় কতজন ভর্তি হতে পারবে? কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা সীমিত। যে পরিমাণ শিক্ষার্থী পাস করেছে, সেই পরিমাণ আসন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নেই। আবার সবাই যদি উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হয়, তাহলে কিছু ক্ষেত্রে চাকরিতে লোক পাওয়া যাবে না। তাই শিক্ষাকে বহুমুখী করতে হবে। বর্তমান সরকারকে এসব ক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে রোবট, ভার্চুয়াল রিয়ালিটি এবং ইন্টারনেট অব থিংসের মতো প্রযুক্তির সমাজে প্রযুক্তিতে বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কারিগরি শিক্ষা। তাই বাংলাদেশে কারিগরি শিক্ষায় ব্যাপক উন্নয়ন হতে হবে। সবাইকে উচ্চশিক্ষায় না গিয়ে কারিগরি শিক্ষায় পড়ার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে, যেন অনেক শিক্ষার্থী এই শিক্ষায় পড়াশোনা করতে আগ্রহী হয়। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে প্রণোদনা দেওয়া উচিত বলে মনে করছি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা উচ্চশিক্ষার হার বাড়িয়েছি। অথচ ভারত বা শ্রীলঙ্কা থেকে আমাদের কর্মী নিয়োগ দিতে হচ্ছে। অর্থাৎ সফট স্কিল সম্পন্ন লোকের সংখ্যা কম। তাই শিল্পপ্রতিষ্ঠান দক্ষ মানবসম্পদের অভাবে ভুগছে। আমাদের শিক্ষার্থীকে সফট স্কিল বৃদ্ধি করার জন্য শিক্ষক বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সচেতন ও সতর্ক হতে হবে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে দেশে মোট বেকারের সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ। বাস্তবে বেকারের সংখ্যা অনেক। তাদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার শিক্ষিত বেকার, যারা এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসম্পন্ন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়াশোনা শেষ করেছে এমন বেকারের সংখ্যা নেহাত কম নয়। অ্যাকশন এইডের (২০১৯) গবেষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটের ৪৬ শতাংশের বেশিই বেকার। অন্যদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের দুটি জরিপ অনুযায়ী দেশের স্নাতক (অনার্স) ডিগ্রিধারীদের ৩৭ থেকে ৬৬ শতাংশ বেকার। তাই বেকার কমাতে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা হতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। বেকারের সংখ্যা হ্রাস করতে এসব শিক্ষার্থীকে কিভাবে কারিগরি শিক্ষায় অনুপ্রাণিত করা একান্ত প্রয়োজন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ বিষয়ে যদি সরকার কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে, তাহলে সেটি বেশি কার্যকর হবে। আমাদের দেশে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ বা অন্যান্য সাপোর্ট সিস্টেম বেশি গড়ে ওঠেনি। যা আছে, তা অপ্রতুল। তাই উদ্যোক্তা তৈরিতে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা সহজেই আর্থিক ঋণ ও অনুমতি পায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গবেষণার সংখ্যা ও মান উন্নয়ন করার বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। উচ্চশিক্ষা উন্নয়নের জন্য মূলে কাজ করতে হবে। মূল মানে প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষার আরো উন্নয়ন হওয়া এবং শিক্ষকদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা উচিত। তাহলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করতে আগ্রহী হবে। এতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করি। প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধি করা না হলে যে উচ্চশিক্ষায় গলদ থেকেই যাবে, এতে সন্দেহ নেই। তাই সরকারের উচিত প্রাথমিক পর্যায়ে কিভাবে পরিবর্তন আনা যায়, সেটি নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা। গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন আগের তুলনায় সহজলভ্য বলে কেউ কেউ মনে করছে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লাখো শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি করে বের হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় আট লাখ বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট বা স্নাতক ডিগ্রিধারী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে, কিন্তু সেই তুলনায় চাকরির ক্ষেত্র বাড়েনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রয়োজনে তরুণ প্রজন্মের অনেককে টেকনিক্যাল শিক্ষায় পড়াশোনা করতে আগ্রহী করে গড়ে তুলতে হবে। ক্যাডারবৈষম্য কমাতে হবে। সব পেশা ও ক্যাডারে সুযোগ-সুবিধায় ভারসাম্য আনতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্যারিয়ার উপযোগী ক্ষেত্র গড়ে তুলতে এবং নানামুখী কর্মশালা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা বিদেশে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পায়।  </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য-পদ্ধতি বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ</span></span></span></span></p>
