<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের মানুষ কখনো ভোটযুদ্ধে, কখনো সম্মুখ সমরে অথবা আন্দোলন-সংগ্রামে জয়ী হয়ে পরিবর্তন এনেছে। স্বপ্ন দেখেছে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, সুশাসন, বৈষম্যহীন সমাজ, সমৃদ্ধি, শান্তি-শৃঙ্খলা, আর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার। বারবার আশাহত হয়েছে। বারবার ফিরে এসেছে স্বৈরশাসন, একনায়কতন্ত্র। বেড়েছে মূল্যবোধের অবক্ষয়, স্বেচ্ছাচারিতা, ঘুষ-দুর্নীতি, লুণ্ঠন, অর্থপাচার, আত্মসাৎ, চাঁদাবাজি, পেশিশক্তির ব্যবহার, অবৈধ কর্মকাণ্ড, বৈষম্য, মানবাধিকার লঙ্ঘন আর নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবার মূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অগণিত ছাত্র-জনতার রক্তঝরা অভ্যুত্থানে ২০২৪ সালে আবারও পরিবর্তন এসেছে। মৌলিক চিন্তার জন্য বিশ্বনন্দিত, শান্তিতে নোবেলজয়ী একমাত্র বাংলাদেশি ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ২১ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। তাঁদের অনেকেই আমার সমসাময়িক এবং পরিচিত। প্রত্যেকেই নির্লোভ সাদা মনের মানুষ, জনদরদী, দেশপ্রেমিক, সজ্জন ব্যক্তি। তাঁদের কাছে ছাত্র-জনতা বা সাধারণ মানুষের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা। তাঁরা রাষ্ট্রযন্ত্র সংস্কার করবেন। উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ভিত রচনা করবেন। একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি বন্ধ করবেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করবেন। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনবেন। অর্থনীতিতে আস্থা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করে দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেবেন। ঘুষ-দুর্নীতি, লুণ্ঠন, অর্থপাচার, চাঁদাবাজি, ব্যাংকের অর্থ লুট বন্ধ করবেন ও অপরাধীদের শাস্তি প্রদান করবেন। বৈষম্যহীন সমাজ গড়বেন। দারিদ্র্য নির্মূল করবেন। জীবনমানের উন্নয়ন ঘটাবেন।  মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে জনজীবনে স্বস্তি আনবেন। বিশ্বমানের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন। জাতির উদ্দেশে দেওয়া প্রথম ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অঙ্গীকার করেছেন জনগণের প্রত্যাশা পূরণ তাঁরা করবেনই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করছে অসম্ভবকে সম্ভব করার সুবিশাল কর্মপরিধি। প্রথম চ্যালেঞ্জ, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ, অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা অর্জন। আর্থিক খাত, ব্যাংক, বীমা এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা ও আস্থা প্রতিষ্ঠা করা। আমদানি-রপ্তানি, বৈদেশিক কর্মসংস্থান, রেমিট্যান্স প্রবাহ, কৃষি, শিল্পসহ সব উৎপাদনমুখী খাতে গতিশীলতা সৃষ্টি করে দেশকে উন্নতির পথে এগিয়ে নেওয়া; মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া এবং দেশকে বৈষম্যহীন সমৃদ্ধির পথে পরিচালিত করা। একই সঙ্গে সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থান এবং বিগত বছরগুলোতে হত্যা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং ঘুষ-দুর্নীতি, অর্থপাচার, ব্যাংকের অর্থ লুটে জড়িত সব অপরাধীর শাস্তির বিধান করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং পুনর্বাসন  করা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/13-09-2024/2/kalerkantho-ft-1a.jpg" height="276" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/13-09-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" style="float:left" width="350" />১৯৯১ থেকে বাংলাদেশ ওয়েস্ট মিনিস্টার পদ্ধতির সংসদীয় গণতান্তিক ব্যবস্থা অনুসরণ করে আসছে। ব্যতিক্রম ২০০৮ পর্যন্ত অগণতান্ত্রিক তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান। ১৯৯১ এবং ১৯৯৬ তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং জাতীয় নির্বাচন সর্বসাধারণের গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে। আওয়ামী লীগের ধারণা, ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কিছু কর্মকাণ্ড পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। ২০০১ সালে ক্ষমতা লাভের পর বিএনপি সরকার সংবিধান সংশোধন করে উচ্চ আদালতের বিচারকদের অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা ৬৭ বছরে উন্নীত করে তাদের দলের একসময়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক সচিব বিচারপতি হাসানের ২০০৬ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হওয়া নিশ্চিত করে। তাঁর নিয়োগ প্রতিহত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের আন্দোলনে দেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় এবং তিনি দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। অন্য বিচারপতিরাও অনীহা প্রকাশ করেন। রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ প্রধান উপদেষ্টার পদে শপথ নেন। তিনি ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের পরামর্শে পক্ষপাতমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে উদ্যোগী হলে অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান এবং অন্য তিন উপদেষ্টা পদত্যাগ করেন। আওয়ামী লীগের আন্দোলনে সারা দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ২০০৭ এর জানুয়ারি মাসে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। তাদের তত্ত্বাবধানে ২০০৮ এর ডিসেম্বরে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। স্পষ্টতই ২০০১-এ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি তাদের অনুকূলে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের বিচারকদের বয়সসীমা বৃদ্ধি করে। উচ্চ আদালত বিতর্কিত হয়ে পড়ে। প্রশাসনেও দলীয় প্রভাব বৃদ্ধি পায়। আওয়ামী লীগ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথা বাতিল করে। প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী, বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দলীয় প্রভাব বলয় সৃষ্টি করে। ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালে নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং সরকার গঠন করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একনায়কত্ব ও একদলীয় স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। দুর্নীতি ও অপশাসনের ব্যাপক প্রসার ঘটে। পদে পদে বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার পদদলিত হয়।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং নেতৃত্বের মন-মানসিকতা, ওয়েস্ট মিনিস্টার সংসদীয় পদ্ধতির দুর্বলতা এবং সংবিধান সংশোধন করে বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে পক্ষপাতদুষ্ট করার প্রচেষ্টা, স্বৈরশাসন এবং একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করেছে। প্রশাসন এবং বিচার বিভাগে চরম দলীয়করণ হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান অকার্যকর হয়ে পড়েছে। অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী-রাজনীতিবিদ অশুভ চক্র গড়ে উঠেছে। রাজনীতিতে ব্যাপক হারে ব্যবসায়ীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অর্থ ও পেশিশক্তির ব্যবহার সর্বগ্রাসী রূপ নিয়েছে এবং ব্যাপক কারচুপি বৈধতা লাভ করেছে। অন্যদিকে একক নির্বাচনী এলাকায় জয়ী প্রত্যেক সংসদ সদস্য, বিশেষ করে সরকারদলীয় সদস্যবৃন্দ, নিজ নিজ এলাকায় মুকুটহীন সম্রাটে পরিণত হয়েছেন। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা ও প্রশাসনে তাঁদের প্রভাব-প্রতিপত্তি ছিল সীমাহীন। সংসদ সদস্য পদে অংশগ্রহণ ও জয়ী হওয়া ব্যয়বহুল এবং একই সঙ্গে লাভজনক বিনিয়োগে পরিণত হয়। এতে বিনা শুল্কে বিলাসবহুল গাড়ি আমদানি, রাজধানীতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আবাসন প্লট বরাদ্দসহ নানা প্রশ্নবিদ্ধ বৈধ সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি অনৈতিক উপায় ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল অর্থবিত্ত অর্জনের পথ সৃষ্টি হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দল দ্রুত জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি করছে। তাদের ধারণা, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদকাল দুই মেয়াদ নির্ধারণ এবং সংসদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করলেই গণ-অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য অর্জিত হবে, আর কখনো স্বৈরশাসন ও একনায়কত্ব ফিরে আসবে না। আবার অনেকে মনে করেন, সংস্কার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ নয়, এ দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের। স্পষ্টতই কিছু রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিত্ব ক্ষমতা লাভের জন্য মরিয়া হয়ে পড়েছেন। তাঁদের প্রস্তাবিত সংবিধান সংশোধন রাষ্ট্রযন্ত্রে কোনো গুণগত পরিবর্তন আনবে বলে মনে হয় না। জনতার অন্দোলন-সংগ্রামে বাংলাদেশে বারবার রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে। কোনো রাজনৈতিক সরকারই জনগণের প্রত্যাশিত উদার অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্র; বৈষম্যহীন সমাজ; বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকার, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হয়নি। বরং ঘুষ-দুর্নীতি, লুণ্ঠন, অর্থপাচার, পেশিশক্তির ব্যবহার এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গুম-খুন ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পটভূমিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রযন্ত্রের সংস্কার সম্পন্ন করার দায়িত্ব নিতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের সংবিধানিক ব্যবস্থা বহুলাংশে ভারসাম্যহীন। প্রধানমন্ত্রীর একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। অন্যদিকে সরকারকে সর্বব্যাপী ক্ষমতার অধিকারী এবং প্রতিপক্ষকে প্রান্তিক শক্তিতে পরিণত করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রপতিশাসিত এবং ফ্রান্সে আধা-রাষ্ট্রপতিশাসিত সংবিধানিক ব্যবস্থা স্থিতিশীল, ভারসাম্যপূর্ণ, উদার, অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করেছে। জার্মান শাসনব্যবস্থাও ভারসাম্যপূর্ণ এবং স্থিতিশীল। স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি রোধ এবং নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি প্রতিহত করে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর সুগম করতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ এবং নেতৃত্বের মন-মানসিকতায় সংসদীয় অথবা রাষ্ট্রপতি বা আধা-রাষ্ট্রপতিশাসিত সংবিধানিক শাসন ব্যবস্থার কোনটি অধিক উপযোগী</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তা নির্ণয় করা প্রয়োজন। অন্যদিকে একক নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্যবৃন্দ আইন প্রণয়ন অপেক্ষা স্থানীয় প্রশাসনে হস্তক্ষেপ, প্রতিপত্তি বৃদ্ধি, প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অর্থ উপার্জনে অধিক মনোযোগ দেন। নির্বাচনও নানাভাবে কলঙ্কিত। দেশব্যাপী অথবা প্রশাসনিক বিভাগভিত্তিক ভোটারের আনুপাতিক হারে সংসদ সদস্য নির্বাচনের পদ্ধতি গ্রহণ করা হলে এই দুঃসহ অবস্থার অবসান কিছুটা হলেও হবে। ব্যক্তিগতভাবে আমি জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সংসদ সদস্য নির্বাচন এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যের পক্ষে। সে যা-ই হোক, সাংবিধানিক পরিবর্তন হতে হবে সুচিন্তিত, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, সর্বসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং টেকসই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংবিধান এবং প্রচলিত আইনে ব্যাপক সংশোধন ও পরিবর্তন ছাড়া দেশে নিয়মতান্ত্রিক উদার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা; রাষ্ট্রের প্রধান অঙ্গ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইন, বিচার এবং শাসন বিভাগে গুণগত এবং টেকসই সংস্কার; সুশাসন প্রতিষ্ঠা; ঘুষ, দুর্নীতি, লুণ্ঠন, চাঁদাবাজি নির্মূল; বৈষম্যহীন সমাজ কায়েম; সুসম উন্নয়ন; ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি অথবা একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রয়োজন মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা পরিহার। প্রায় ৪০ লাখ মামলা বিচারাধীন রেখে এবং দুর্নীতির মামলা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য দীর্ঘ সময়, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে যুগ যুগ অতিবাহিত হলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং দুর্নীতি র্নিমূল কখনোই সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। একই সঙ্গে আরো প্রয়োজন আমলাতন্ত্রে পেশাদারি অর্জনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামগত সংস্কার, মেধাভিত্তিক নিয়োগ ও পদোন্নতির প্রথা প্রবর্তন। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে দু-চার মাসে এত কিছু করা সম্ভব বলে মনে হয় না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া তাঁর প্রথম ভাষণে বলেছেন, ছাত্রদের আহ্বানে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং তাঁরাই তাঁর প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধান সম্মতভাবে উচ্চ আদালতের মতামতের ভিত্তিতে শপথ পাঠ করিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বৈধতা দিয়েছেন। তবে সরকারের মেয়াদের বিষয়টি এখনো স্পষ্ট হয়নি। কিছুদিনের মধ্যে প্রধান দুই একটি রাজনৈতিক দলের নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে অস্থিতিশীল এবং বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করার আশঙ্কা আছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তাঁর সরকারের মেয়াদকাল কত দিনের হবে, তা দেশবাসী ঠিক করবে। এই প্রেক্ষাপটে সংস্কার কর্মসূচি সত্বর চূড়ান্ত এবং বাস্তবায়নের সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সরকারের কর্মকালের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যে সংস্কার কর্মসূচি এবং সরকারের মেয়াদকাল নির্ধারণ করে গণভোট অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশবাসীর অনুমোদন গ্রহণ সুবিবেচনাপ্রসূত হবে। এতে রাজনৈতিক নেতাদের সত্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের চাপ সৃষ্টি করার প্রচেষ্টা কিছুটা স্তিমিত হবে। আবার সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নের পর বৈধতা ও স্থায়িত্ব প্রদানের জন্য আবারও গণভোট অনুষ্ঠান যৌক্তিক হবে। তা করা না হলে অন্তর্বর্তী সরকার গৃহীত সংবিধান ও আইন পরিবর্তন এবং সংস্কার কর্মসূচি জাতীয় নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সরকার সমর্থন ও সংসদে অনুমোদন না করলে অকার্যকর হয়ে পড়বে এবং নানা আইনি জটিলতা এবং সংকট সৃষ্টি হতে পারে।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাবেক চেয়ারম্যান, দুর্নীতি দমন কমিশন</span></span></span></span></p>