<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ১৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডারসেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে আসে এবং ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকা ত্যাগ করে। এ বছরের মে মাসে বাংলাদেশ সফরকারী দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ভারত সফর শেষে ওই প্রতিনিধিদলে যোগ দেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাঁদের জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর ছিল অত্যন্ত ব্যস্ততম দিন। ওই দিন তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। একই দিনে তাঁরা একটি সচিব পর্যায়ের বৈঠকেও মিলিত হন। এ ছাড়া ১৪ তারিখে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন কম্পানির দেশীয় প্রধানদের সঙ্গেও একটি বৈঠক করে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুই. </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মার্কিন প্রতিনিধিদলটি রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। সাক্ষাৎকালে প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের কথা উল্লেখ করে তাঁর সরকারের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কথা তুলে ধরেন এবং এরই মধ্যে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের, বিশেষ করে প্রশাসন, আর্থিক এবং বিচার বিভাগের সংস্কার নিয়ে কথা বলেন। দুর্নীতির সাগরে ডুবে থাকা দেশকে তুলে আনা তাঁর সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বাংলাদেশের পুনর্গঠন, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার এবং পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতা ব্রেন্ট নেইম্যান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া সংস্কার এজেন্ডায়, বিশেষ করে প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা জানান। তাঁদের আলোচনায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশে বিনিয়োগ, শ্রমিক ইস্যু এবং রোহিঙ্গা সংকটও স্থান পায়।  </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিন. </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিনিধিদলের সঙ্গে অর্থ, বাণিজ্য এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায়। অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে যেমন আর্থিক খাতের সংস্কারে মার্কিন সহযোগিতা নিয়ে কথা হয়েছে, তেমনি বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য, বিশেষ করে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বহুমুখীকরণসহ বিভিন্ন কারিগরি সহযোগিতা ও বাজার অনুসন্ধান নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে বাংলাদেশ সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইলে তা প্রদানের আশ্বাস দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে বাংলাদেশকে ২০০ মিলিয়ন ডলার মার্কিন উন্নয়ন সহায়তাসংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম সাহাবউদ্দিন এবং ইউএসএআইডির পক্ষ থেকে রিড জে অ্যাসচলিম্যান চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। উল্লেখ্য, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত দ্য ডেভেলপমেন্ট অবজেকটিভ গ্রান্ট অ্যাগ্রিমেন্ট (ডিওএজি) বা উন্নয়নের লক্ষ্যে অনুদান চুক্তির ষষ্ঠ সংশোধনী হিসেবে এই সহায়তা চুক্তি সই হয়। এই অর্থ স্বাস্থ্য, সুশাসন, মানবিক ও অর্থনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি ও মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ব্যয় করা হবে বলে জানানো হয়।    </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এরপর প্রতিনিধিদলটির বৈঠক হয় পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে উভয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা হলেও অর্থনৈতিক বিষয়গুলোই প্রাধান্য পায়। তা ছাড়া শ্রম পরিবেশ, মানবাধিকার সমুন্নত রাখা, রোহিঙ্গা সমস্যা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় মার্কিন সহায়তা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। মার্কিন প্রতিনিধিদল এসব ক্ষেত্রে তাদের সহায়তার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজে মার্কিন সমর্থনের আশ্বাস" height="277" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/18-09-2024/Untitled-1.jpg" style="float:left" width="600" />সচিবদের সঙ্গে প্রতিনিধিদলের আলোচনায় অন্যান্য বৈঠকে উত্থাপিত বিষয়গুলো নিয়েই কথা হয়। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি প্রতিনিধিদলের কাছে তুলে ধরা হয়। পারস্পরিক স্বার্থ বজায় রেখে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা কামনা করে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে তাঁরা অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলে পররাষ্ট্রসচিব জানান।     </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চার.    </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৪ সেপ্টেম্বর সকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিভিন্ন কম্পানির দেশীয় প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করে। মার্কিন জ্বালানি খাতের কম্পানি শেভরন, বীমা কম্পানি মেটলাইফ, প্রযুক্তি কম্পানি মাইক্রোসফট, কোমল পানীয় কম্পানি কোকাকোলা, বহুজাতিক আর্থিক কম্পানি সিটি ব্যাংক এনএ, মাস্টারকার্ড, জেনারেল ইলেকট্রনিকস,ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রধানরা বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, বিনিয়োগ পরিবেশ, ব্যাংক ও আর্থিক খাত, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর লভ্যাংশ ও বাংলাদেশ সরকারের কাছে পাওনা অর্থের বিষয়টিও উত্থাপিত হয়। তাঁরা বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে সুশাসনের অভাব, কর ব্যবস্থায় বৈষম্য এবং ডলার সংকট নিয়েও আলোচনা করেন।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মার্কিন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যা এবং সেসব সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য করণীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান। এ ছাড়া তাঁরা বাংলাদেশের পরিবর্তিত অবস্থায় সেসব সমস্যার কোনো উন্নতি ঘটছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে যুক্তরাষ্ট্রের কম্পানিগুলোর ইতিবাচক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তাঁরা আশা প্রকাশ করেন যে সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কার হলে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়াতে সক্ষম হবে।    </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাঁচ. </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের আন্তর্জাতিক অর্থবিষয়ক সহকারী সচিব ব্রেন্ট নেইম্যান। তাই এ সফরটি ছিল মূলত অর্থনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য। বিশেষ করে পরিবর্তিত অবস্থায় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কিভাবে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সাহায্য-সহযোগিতা করা যায় সে উদ্দেশ্যেই তাঁদের এ সফরটি অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্ভাব্য সংস্কার পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র আগামীতে যে সহায়তা প্রদান করতে পারে সে বিষয়ে ধারণা নিয়ে নিজেদের পদক্ষেপ গ্রহণে সহায়তা করার ক্ষেত্রে এ সফর অবশ্যই যথাযথ ভূমিকা রাখবে।   </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু সফররত প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মিলিত হন তাঁর ভারত সফর শেষে। ভারত থেকে এসে তিনি নিশ্চয়ই তাঁর প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সে ব্যাপারে কথা বলে থাকবেন। এ বছরের মে মাসে ডোনাল্ড লু যখন বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন তখনো রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলাপ হয়েছিল, এবারও আলাপ হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে তাঁদের পক্ষ থেকে তেমন একটা সাড়া দেখা যায়নি। বর্তমানে যেভাবে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ ঘটছে তাতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জানা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি।   </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যাহোক, মার্কিন প্রতিনিধিদলের এই সফরটি ছিল অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কোনো বিদেশি প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর। সফরটির মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশ কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ সরকারের এটি অনেক বড় অর্জন বলে মনে করা হয়। আগামীতে এ ধরনের সফর বিনিময় দুই দেশের সম্পর্ক আরো দৃঢ় ও প্রসারিত করবে। আশা করা যায়, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচিতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা অব্যাহত থাকবে, যাতে সেসবের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়।   </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>