<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সামরিক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পালাবদল আর গণ-অভ্যুত্থানে ঘটা পালাবদল এক নয়। গণ-অভ্যুত্থানে সামরিক শাসনের প্রয়োজন নেই। সাধারণত আগের মন্ত্রিসভা ও সংসদ বিলুপ্ত হওয়ায় তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এই সরকার নতুন সাংবিধানিক সরকার গঠনের আগে অন্তর্বর্তীকালের জন্য সরকারের দায়িত্ব পালন করে। এ ধরনের সরকারের প্রধান দায়িত্ব থাকে নতুন নির্বাচিত সরকার গঠন করে দায়িত্ব হস্তান্তর করা। সাংবিধানিকভাবে সাধারণত তিন মাসের জন্য এমন অন্তর্বর্তী (তত্ত্বাবধায়ক) সরকার গঠিত হয়। বিশেষ প্রয়োজন ও প্রেক্ষাপটে এ দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কাল দুই বছর পর্যন্ত প্রলম্বিত ছিল। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের প্রত্যয় নিয়ে সরকার গঠন করেছে। নানামুখী কঠিন চ্যালেঞ্জও আছে এই সরকারের সামনে। পূর্ববর্তী শেখ হাসিনা সরকার বিশাল অঙ্কের দেশি-বিদেশি ঋণের চাপে বিপর্যস্ত করে রেখে গেছে দেশকে। গত সরকারের আমলে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে বিদেশে। দুর্নীতিবাজদের দাপটে বিপর্যস্ত দেশ। দলীয়করণ বিক্ষুব্ধ করে ফেলেছিল দেশবাসীকে। সুতরাং এত সব জঞ্জাল সাফ করে রাষ্ট্র সংস্কার যদি করতে হয়, তা হবে সময়সাপেক্ষ। তাই এই সরকারের মেয়াদ হয়তো অনেকটা প্রলম্বিত হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আদর্শিক সততা দিয়ে সরকার পরিচালনার জোয়াল রাষ্ট্র পরিচালনায় অনেকটা অনভিজ্ঞ সরকার বইতে পারবে তো! ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে অধ্যাপক ইউনূস সরকার যখন গঠিত হয়, তাতে এ দেশের বেশির ভাগ মানুষের সমর্থন ছিল। নানা ক্ষেত্রে অনেক প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছিল। সরকার ও আন্দোলনকারী ছাত্রনেতাদের বক্তব্যের প্রতি মানুষ আস্থা রেখেছিল। বলা হয়েছিল, আমলাতন্ত্র থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় শূন্য হয়ে যাওয়া পদগুলোতে দলনিরপেক্ষ যোগ্য মানুষকে দিয়ে পূরণ করবে। ফলে কোনো প্রতিষ্ঠানে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ হবে না। এভাবে দীর্ঘদিনের দলীয়করণের অচলায়তন ভেঙে এবার সুবাতাস বইবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="প্রয়োজনে সরকারি নীতি শক্ত হতে হবে" height="286" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/20-09-2024/Untitled-1.jpg" style="float:left" width="346" />কিন্তু সরকারের এক মাসের কর্মভূমিকা মানুষকে তেমনভাবে স্বস্তি দিতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ইউজিসির চেয়ারম্যান, প্রধান বিচারপতি, প্রধান আইন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে সর্বত্র বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে যুক্ত মানুষরাই নিয়োগ পাচ্ছেন। বলছি না যাঁরা নিয়োগ পাচ্ছেন, তাঁরা যোগ্য নন। কিন্তু সরকারের অঙ্গীকার রক্ষা পাচ্ছে না, এটি হচ্ছে বড় ব্যাপার। চাঁদাবাজি ও দখলবাজির খবর প্রায়ই বেরোচ্ছে সংবাদমাধ্যমগুলোতে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরপরই মৌলবাদী ও পাকিস্তানপন্থী অনেক পক্ষই সরব হয়ে পড়ছে। এসব আলামত মানুষকে শঙ্কায় ফেলছে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৩ বছরে যা কল্পনা করা যায়নি, অধ্যাপক ইউনূস সরকারের সময় কাকতালীয়ভাবে হলেও সে যাত্রা শুরু হলো। একটি সংগঠন পাকিস্তানের জাতির পিতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মৃত্যু দিবস সাড়ম্বরে পালন করল। আশঙ্কার সঙ্গে লক্ষ করতে হলো, এই সরকারের সময় একদিকে বাংলাদেশের জাতির পিতার স্মৃতি মোছা শুরু হচ্ছে, অন্যদিকে পাকিস্তানের জাতির পিতার মঞ্চে আগমন ঘটার প্রক্রিয়া শুরু হলো। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেক আগে থেকে ইসলামের লেবাসধারী ওয়াহাবি ধারার একটি দল আছে সুফি-সাধকদের মাজার বিরোধী। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দাবিদার বাংলাদেশে এরা তেমনভাবে বেড়ে উঠতে পারেনি। আজ এরা কেন নিজেদের এই সরকারের সময় নিরাপদ ভাবছে? এই দল একের পর এক মাজার আক্রমণ করছে এবং মাজারে ভাঙচুর চালাচ্ছে। এরা কি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিতর্কিত করার জন্য এমন অপতৎপরতা চালাচ্ছে, নাকি এ সময় নিজেদের শক্তিমান ও নির্ভয় মনে করছে? অনেকটা নীরবতার পর সরকারের পক্ষ থেকে মাজার আক্রমণকারীদের নিবৃত্ত হওয়ার জন্য হুঁশিয়ার করা হয়েছে। সরকারের বড় নির্ভরতা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্রশক্তি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কে এ ব্যাপারে সরব হতে দেখা যায়নি। লক্ষণটি খুব ভালো মনে হচ্ছে না আমাদের। মনে রাখতে হবে, ঐতিহাসিকভাবে এ দেশের মানুষ সুফি-সাধকদের দ্বারা প্রভাবিত। মাজার সংরক্ষণ, মাজারের প্রতি শ্রদ্ধা মানুষের আচরিত সংস্কৃতির অংশ। তাই এখানে আঘাত এলে এবং সরকারি তৎপরতায় এসব ধর্মান্ধ মতলববাজকে প্রতিহত না করতে পারলে জনরোষ সরকারের দিকেই ধাবিত হবে। মাজারে হামলাকারীরা যদি মুসলমান হয়ে থাকে, তাহলে তাদের ইতিহাস থেকে একটি সত্য জানতে হবে। তাদের মতাদর্শের পূর্বসূরিরা বাংলায় ইসলাম প্রচারে কোনো ভূমিকা রাখেননি। একমাত্র সুফি-সাধকরাই মানবতা ও ভ্রাতৃত্বের কথা বলে, মানবপ্রেমের মধ্য দিয়ে আল্লাহপ্রেমের কথা প্রচার করে ভিন্ন ধর্মের অবহেলিত মানুষকে ইসলামের পথে আনতে পেরেছিলেন। হিংসা নয়, মানুষের প্রতি ভালোবাসাই ছিল তাঁদের আদর্শে। অথচ যাঁদের ইসলাম ধর্ম প্রচারে কোনো অবদান ছিল না, তাঁদেরই উত্তরসূরিরা এখন সুফি-সাধকদের মাজারে আক্রমণ করছে। শান্তির ধর্ম ইসলামকে কলঙ্কিত করছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধর্মসংক্রান্ত আমার নিজের পড়াশোনা ও অনেক আলেমের সঙ্গে আলোচনা করে বুঝেছি, এভাবে মাজার ভাঙা ইসলামসম্মত নয়। মাজারে নানা রকম ধর্মীয় কাজকে বিরোধীরা অনেক সময় ইসলামবিরোধী কাজ বলে ফতোয়া দেয়। ফতোয়া হচ্ছে মতামত। কোনো পক্ষের দেওয়া ফতোয়া শেষ সিদ্ধান্ত নয়। অনেক আলেম ধর্মসূত্রেই ভিন্ন ব্যাখ্যাও উপস্থিত করেন। সুতরাং কে অন্যায় করল বা করল না, তা মহান আল্লাহর ওপর ছেড়ে দেওয়া উচিত নয় কি? কোনো পক্ষের শক্তি প্রয়োগ করাটাই বরং ইসলামসম্মত হবে না। কোনো মাজারে যদি অসামাজিক কাজ চলার অভিযোগ থাকে, তবে উচিত হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া নয়। ইসলাম এই অধিকার কাউকে দেয়নি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উনিশ শতকে হাজি শরীয়তুল্লাহ বাংলায় ফরায়েজি আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তিনি কৈশোরে হজ করার জন্য মক্কায় গিয়ে আর ফেরত আসেননি অনেককাল। সে সময় আরবে আল কালাম আবদুল ওয়াহাবের ওয়াহাবি আন্দোলনের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল। শরীয়তুল্লাহও ওয়াহাবি আন্দোলনে প্রভাবিত হন। দেশে ফিরে তিনি ইংরেজদের হটিয়ে আবার মুসলমানের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু বাস্তববাদী শরীয়তুল্লাহ বুঝতে পারেন শক্তি দিয়ে ইংরেজদের বিতাড়িত করার সামর্থ্য মুসলমানদের এখন আর নেই। মুসলমানদের এক শামিয়ানার নিচে আনাটা কঠিন। কারণ দীর্ঘদিন পাশাপাশি বাস করতে গিয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ ও ইসলামী সংস্কৃতি একে অন্যকে প্রভাবিত করেছে। মুসলমানরা একটি মিশ্র সংস্কৃতি ধারণ করেছে। এ কারণে প্রয়োজন বাংলার মুসলমানদের মৌলবাদী ইসলামে ঐক্যবদ্ধ করা। তাই তিনি ঘোষণা করলেন, এ দেশ এখন দারুল হার্ব অর্থাৎ অমুসলমানদের দেশ। তাই হয় সামর্থ্য থাকলে জিহাদ করে ইংরেজদের তাড়িয়ে দারুল ইসলাম অর্থাৎ মুসলমানদের দেশ করতে হবে, আর তা না পারলে দেশ ত্যাগ করে কোনো দারুল ইসলামে চলে যেতে হবে। সেই সামর্থ্য না থাকলে অর্থাৎ এই দারুল হার্বে থাকতে হলে মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্য নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য যে পর্যন্ত দেশটি দারুল ইসলাম না হবে, সে পর্যন্ত তারা ফরজ ইবাদত করা থেকে বিরত থাকবে। তাই হাজি শরীয়তুল্লাহর আন্দোলন ফরায়েজি আন্দোলন নামে পরিচিত ছিল।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সে যুগেও ফরায়েজিরা ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করেনি। বলপূর্বক নিজেদের মতামত চাপিয়ে দিতে চায়নি। ফলে সামাজিক সংকটও তৈরি হয়নি। এখন এ দেশে তাবলিগ ও জামায়াতের মধ্যে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব। জামায়াতে ইসলামীর আদর্শ ওয়াহাবি মতাদর্শে আটকে থাকায় এই দলকে মহানবীর সুন্নাহর আদর্শে থাকা ইসলামী দলগুলো পছন্দ করছে না। ধর্ম নিয়ে এসব দ্বন্দ্ব সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে। এ ধারার দ্বন্দ্ব আগেও ছিল, কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে কেন, তা সতর্কতার সঙ্গে লক্ষ করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারি নীতি শক্ত হতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা চাই না গণবিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত নতুন সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ কোনো দুর্বলতায় আবার অন্ধকার ডেকে আনুক। গণ-আন্দোলনের পর স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রশক্তির ওপর মানুষের নির্ভরতা বেড়ে যাচ্ছে। নানা কারণে এই শক্তিতে ভাঙন ধরলে বা কোনো পক্ষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হলে তা জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হবে। এই ছাত্রশক্তিকেই সমাজে সৃষ্টি করা বা সৃষ্টি হওয়া নানা সংকট প্রশমনে দাঁড়াতে হবে প্রথম প্রতিবন্ধক হয়ে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">shahnawaz7b@gmail.com</span></span></span></span></p>