<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহর নেতা হাসান নাসরাল্লার হত্যাকাণ্ডে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন করে অস্থির হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলের আক্রমণে নিহত হন তিনি, যার ফলে আন্তর্জাতিক এবং আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভিন্নমাত্রার একটি সংকট তৈরি হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান এই হত্যাকাণ্ডের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও নিউইয়র্কের একটি কেন্দ্রকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভুলে যাবে না যে এই সন্ত্রাসী হামলার নির্দেশ নিউইয়র্ক থেকে এসেছিল।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হাসান নাসরাল্লা ছিলেন একজন শক্তিশালী নেতা, যিনি দীর্ঘ সময় ধরে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল এবং লেবাননের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছিল। নাসরাল্লার হত্যাকাণ্ড লেবাননের রাজনৈতিক ভারসাম্যকে ভেঙে দিতে পারে এবং হিজবুল্লাহকে একটি নতুন কৌশল গ্রহণের দিকে ঠেলে দিতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইসরায়েলি সরকারের নীতি এবং হামলার এই পরিণতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হয়েছে। ইসরায়েলিরা দাবি করেছে যে তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের হামলা কি সত্যি সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হবে, নাকি বরং নতুন সন্ত্রাসী পরিবেশের সৃষ্টি করবে? হাসান নাসরাল্লার হত্যার পর হিজবুল্লাহ এবং অন্য ইসলামী সংগঠনগুলোতে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। এই প্রতিশোধের ধারা মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাতের জন্ম দিতে পারে, যা এরই মধ্যে অস্থিরতার মধ্যে আছে। হাসান নাসরাল্লার হত্যাকাণ্ড ফিলিস্তিনের সংকটকে নতুন মাত্রা দিতে পারে। ফিলিস্তিনে দীর্ঘকাল ধরে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে, এই হত্যাকাণ্ড নতুন উত্থানের সূচনা করতে পারে। ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে হতাশা এবং অসন্তোষের অনুভূতি গভীর হতে পারে, যা তাদের আন্দোলনকে আরো শক্তিশালী করতে সহায়ক হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রক্রিয়ায় নতুন চ্যালেঞ্জ" height="181" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/01-10-2024/3.jpg" style="float:left" width="300" />হাসান নাসরাল্লার হত্যার ঘটনাটি শুধু হিজবুল্লাহর জন্যই নয়, বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য একটি গভীর সংকট তৈরি করেছে। নাসরাল্লা ছিলেন লেবাননের রাজনৈতিক শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তাঁর নেতৃত্বে হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের একটি প্রতীক হয়ে উঠেছিল। তাঁর মৃত্যু সেই প্রতিরোধের সাংগঠনিক এবং রাজনৈতিক ভিত্তিকে দুর্বল করতে পারে, যা লেবাননের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র অভিচয় আদরাই দাবি করেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাসরাল্লাকে নির্মূল করা হয়েছে। তিনি আর বিশ্বে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এভাবে তাঁরা নিজেদের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের সাফল্য দাবি করেছেন, কিন্তু এই সাফল্য শুধু ইসরায়েলের নিরাপত্তার জন্য হুমকিই নয়, বরং একটি নতুন সন্ত্রাসী পরিবেশের জন্ম দিতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখন প্রশ্ন উঠেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই পরিস্থিতিতে কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানিয়ে এসেছে, তবে তাদের উচিত হবে ফিলিস্তিনি জনগণের সংকট এবং অধিকারকে সমর্থন করা। এই সংকটের সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে একটি নতুন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইসরায়েলের জানা উচিত লেবাননে হিজবুল্লাহর শক্তিশালী অবস্থানের উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি করার জন্য তারা খুবই নগণ্য।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এই বক্তব্য ইসরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে চলমান সংঘাতের গভীরতা এবং ইরানের প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষাপট বোঝায়। খামেনির ভাষায়, ইসরায়েলি হামলায় সাধারণ মানুষের মৃত্যু শুধু একটি অমানবিক ঘটনা নয়, বরং এটি ইহুদিবাদী শাসনের হিংস্রতা এবং অদূরদর্শী নীতির প্রমাণ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নাসরাল্লার হত্যাকাণ্ডের পর শান্তির প্রক্রিয়া আরো জটিল হয়ে উঠেছে। এটি প্রশ্ন তুলে দেয় যে মধ্যপ্রাচ্যে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিভাবে প্রভাবিত হবে। ইসরায়েলি হামলার ফলে সৃষ্ট অস্থিরতা শান্তি প্রক্রিয়ায় নতুন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে লেবানন ও ইসরায়েলের মধ্যে বিদ্যমান দ্বন্দ্ব আরো তীব্র হয়ে উঠবে। নাসরাল্লার মৃত্যুর পর সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। হিজবুল্লাহ তার নেতা হারানোর ফলে শক্তি অর্জনের চেষ্টা করতে পারে। এটি মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিপন্ন করতে পারে এবং নতুন সহিংসতার জন্ম দিতে পারে। নাসরাল্লার হত্যাকাণ্ডের রাজনৈতিক প্রভাব লেবানন ও আশপাশের অঞ্চলে এক নতুন রাজনৈতিক আন্দোলনের জন্ম দিতে পারে। এই হত্যার পর লেবাননে রাজনৈতিক অস্তিরতা বাড়তে পারে এবং এর ফলে সামগ্রিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়বে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসান নাসরাল্লার হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে একটি নতুন সংকটের সূচনা করেছে। ফিলিস্তিনের সংকট আরো তীব্র হতে পারে এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা আরো হুমকির মুখে পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই সংকটের সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যাতে ভবিষ্যতে সংঘাতের আশঙ্কা কমে আসে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। নাসরাল্লার হত্যার পর হিজবুল্লাহ, ফিলিস্তিন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে একসঙ্গে কাজ করতে হবে একটি স্থায়ী ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে। শান্তির পথ কখনোই সহজ নয়, কিন্তু সাহস এবং দৃঢ়তার সঙ্গে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। হাসান নাসরাল্লার হত্যাকাণ্ড মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে একটি নতুন মোড় এনে দিয়েছে। ইসরায়েলি হামলার ফলে লেবানন ও আশপাশের অঞ্চলে নতুন সংকটের সৃষ্টি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই সময়ে শান্তির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাসরাল্লার হত্যাকাণ্ডের পর রাজনৈতিক নেতাদের এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সচেতন হতে হবে যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে একত্র হয়ে কাজ করতে হবে। শান্তির জন্য প্রয়োজন সুসংহত রাজনৈতিক পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, যাতে মধ্যপ্রাচ্যে আবারও সংঘাতের আগুন জ্বলতে না পারে। লেবাননের জন্য আগামী দিনগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নাসরাল্লার উত্তরাধিকার এবং হিজবুল্লাহর ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে এই পরিস্থিতিতে কিভাবে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলো নিজেদের ভূমিকা পালন করে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক ও সাবেক সভাপতি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p> </p>