<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সময়ই অনেকে করেছে যে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ আয়বর্ধক প্রকল্প নয়, তা কেবল দেশের নামের শোভা বাড়াবে। কারণ হিসেবে তারা বলেছে যে টানেল নির্মাণের  আয় ও ব্যয়ের সমীক্ষায় যেসব স্বপ্ন ও কল্পনার বয়ান করা হয়েছে, তাতে গরমিল রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাস্তব আর স্বপ্ন যে এক নয়, সেটি এখন পুরোপুরিই দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতু নির্মাণের আগেও এ রকম স্বপ্ন রচিত হয়েছিল। আর যেসব স্বপ্ন দেখানো ও রাজনৈতিক গলাবাজি করা হযেছে, সেগুলো যে ফাঁপানো ও মিথ্যাচার ছিল, তা এখন সাধারণ মানুষও বুঝতে পারছে। প্রতিটি মেগাপ্রকল্পেরই অবস্থা একই রকম। ১০ হাজার বা ১২ হাজার কোটি টাকার প্রাক্কলিত পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয় শেষতক পৌঁছেছে ৩২ হাজার কোটিতে। টানেল নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯ হাজার কোটি টাকা, কিন্তু সেই ব্যয় গিয়ে ঠেকেছে ১১-১২ হাজার কোটি টাকায়। দেশের প্রতিটি মেগাপ্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদনেই মূলত ফাঁপানো হয়েছে আসল আর নকলের মধ্যে। বাস্তবায়নের পর যে ফারাক দেখা যাচ্ছে, তা ওই দৃশ্যমান প্রকল্পের মতোই বিপুল। এমনকি ঢাকা ও চট্টগ্রাম উড়ালসড়কের ব্যয়ের যে সমীক্ষাজাত হিসাব, সেখানেও গরমিল প্রায় তিন-চার গুণ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চীনের টাইহুর টানেলটি সমুদ্র তলদেশের ভেতর দিয়ে নির্মিত হয়েছে। ১১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের টানেলটি প্রতি কিলোমিটারের ব্যয় যদি এক হাজার ৫৯০ কোটি টাকা হয়, ভারতের মুম্বাইয়ের কোস্টাল রোড প্রকল্পের অধীন দুই কিলোমিটার তলদেশের টানেল নির্মাণ ব্যয় যদি এক হাজার ৭৭৯ কোটি টাকা হয়, তাহলে কোন যুক্তিতে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে ব্যয় প্রতি কিলোমিটারে হবে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা? হয় তখনই, যখন প্রকল্পের স্বাপ্নিক সেই প্রকল্পকে তাঁর দুর্নীতির একটি উৎস পরিণত করেন। হাসিনার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ দেশবাসী করেছে/ভিন্নমতাবলম্বীরা করেছে। আমরা লিখেও জানিয়েছি যে এই প্রকল্প ভায়াবল নয়। তাঁর পতনের পর একে একে ধরা পড়ছে হাসিনার মিথ্যাচারের সঙ্গে টাকা পাচারের পরিকল্পিত মেগাপ্রকল্পগুলোর নাম। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের ব্যয় কত ডাবল করেছে হাসিনার লুটেরা সরকার, তা খতিয়ে দেখলেই পাওয়া যাবে। এবং আমরা চাই প্রতিটি মেগাপ্রকল্পের ব্যয়ের প্রকৃত হিসাব এই সরকার বের করে জাতির সামনে তুলে ধরুক, যাতে আর কোনো সরকার এমন লুটেরা কাজ না করার সাহস পায়। তবে আমরা তো ভুলো-জাতি, খুব সহজেই সব কিছু ভুলে যাই। হাসিনার ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে যে পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন তিন-চার বছরে, তা তাঁকে চতুর্থ প্রজন্মের ব্যবসায়ী দাবি করা হলেও বাস্তবে তা সম্ভব নয়। ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে ১৫০টি স্থাবর সম্পত্তি কেনা কোনো ব্যবসায়ীর পক্ষে সম্ভব নয়। এতে প্রাথমিকভাবেই ব্যয় হয়েছে ১৫০ কোটি ব্রিটিশ পাউন্ড। এই বিপুল অর্থ যে বাংলাদেশ থেকে পাচার করে নেওয়া হয়েছে এবং এর পেছনে যে তাঁর সরকারপ্রধানই জড়িত ছিলেন, সেটিও বেরিয়ে আসবে নিশ্চয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাসিনার মূল পরিকল্পনা কেবল টাকা লুটে নেওয়ার মধ্যেই নিহিত ছিল না, তিনি স্বপ্ন নির্মাতা ও তাঁর সফল মার্কেটিংও করেছেন দেশবাসীর মনে আশা জাগিয়ে। তিনি দৃশ্যমান প্রকল্প বাস্তবায়নে ও তা উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানিয়েছেন যে তিনিই কেবল উন্নয়ন করতে পারেন। কিন্তু তিনি তো এটি পরিষ্কার করেননি যে তাঁর শাসনামলে মাত্র ১০০ বিলিয়ন ডলারের ঋণের বোঝা তিনি চাপিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কোমরে ক্ষত সৃষ্টি করেছেন। ওই ১০০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাংলাদেশ পরিশোধ করবে কেমন করে?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বঙ্গবন্ধু টানেলের কথাই ধরা যাক। সমীক্ষায় বলা হয়েছিল, এই টানেল দিয়ে যে পরিমাণ গাড়ি চলবে, তা দিয়েই শোধ করা হবে এর ঋণ। কিন্তু প্রকৃত চিত্র কালের কণ্ঠে উঠে এসেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তথ্যানুযায়ী, প্রথম পর্যায়ে এই টানেল দিয়ে দৈনিক ১৭ হাজার ২৬০টি যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী বছরে ৭৬ লাখ যানবাহন চলাচল করবে। ২০২৫ সালের পর থেকে টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। এ ছাড়া ২০৩০ সালে যানবাহন চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি। টানেলের লাইফটাইম ১০০ বছর। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেষ করি একটি উপাত্ত দিয়ে, তাহলে বোঝা যাবে আওয়ামী ঘরানায় কত শত গোয়েবলস বসে আছে। গণ-অভ্যুত্থানের সময় হাসিনার বিরুদ্ধে থাকা লোকজন বা মিছিলকারীরা মেট্রো রেলের দুটি স্টেশন পুড়িয়ে দেয়। অনেকেরই বিশ্বাস যে ওই অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আওয়ামী ঘরানার রাজনৈতিক বাস মালিকরা। তাঁদের বাসের ব্যবসায় ধস নামবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটি বুঝতে পেরেই মেট্রো রেলের কাজকে উৎসাহিত করেননি। এবং হাসিনার উদ্বোধনের রোগের কারণে ছয়টি লাইনের মধ্যে মাত্র একটির বেশির ভাগ সম্পন্ন না হতেই তিনি মহাসমারোহে উদ্বোধন করেন। যেমনটি তিনি করে গেছেন শাহজালাল বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন করে। এই বিমানবন্দরটির নাম সংক্ষিপ্ত করলে দাঁড়ায় হাসিনা। শাহজালালের প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তিনি জিয়ার নাম বাদ দিয়ে ওই নাম রাখেননি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনের পর লোকজন বলতে শুরু করল, তাহলে কি হাসিনার দিন শেষ? না হলে তিনি এতটা পাগল হয়ে উদ্বোধন করছেন কেন? মেট্রো রেলের কাজীপাড়া স্টেশন পুড়িয়ে দেওয়ার পর সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বললেন, ওই দুটি স্টেশন সারাই করতে ২০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তাঁদের বিদায় হওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকার মাত্র ৫০ লাখ টাকায় একটি স্টেশন রিপিয়ার করেছে। ২০ কোটি টাকা ব্যয়ের হিসাবটি গোয়েবলসীয় এবং সব মেগা ও অমেগা প্রকল্পের ব্যয়ও মিথ্যায় ভরা। মিথ্যা দিয়ে রাজনীতি হয় না। অসহিষ্ণুতা আর দমন-পীড়নের রাজনীতির অবসান করতে হবে। আমার ছাত্রলীগই যথেষ্ট বলে ওবায়দুল কাদের যে রণহুংকার দিয়েছিলেন, সেই ছাত্রলীগকে তো তাঁরা সন্ত্রাসী বাহিনীতে রূপান্তর করেছিলেন। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সন্ত্রাস, রণহুংকার ইতরতর ভাষার ব্যবহার, হেয় করার নিম্নমানের বক্রোক্তি চলে না। আওয়ামি লীগ কি সেটি জানে? সেটি কি বুঝতে পারবে? মনে হয় পারবে। আবার মনে হয় পারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ এইচ মুসলিম হলে একটি ছেলেকে যারা পিটিয়ে হত্যা করেছে, তাদের ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনই ছাত্রলীগের কর্মী। গত ১৫ বছরেই কেবল নয়, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। তাঁর বরকন্দাজ ছিলেন একসময়কার ছাত্রলীগ নেতা ওবায়দুল কাদের।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই রাজনৈতিক সংস্কৃতি থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বেরিয়ে আসতে হবে। শুরু করতে হবে সুস্থ, স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক রাজনীতি। বিএনপি বুঝতে পেরেছে এবং তারা পাঁচ বছর ধরে সেই রাজনীতিই চর্চা করছে। তারাও ওই ধরনের মাস্তানির রাজনীতি, প্রতিহিংসার রাজনীতি, প্রতিশোধের রাজনীতির ডালপালা কেটেছেঁটে নতুন জীবন ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগকেও এই পথেই আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কবি</span></span></span></span></p> <p> </p>