<p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলে ডেঙ্গুঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা পরিবর্তিত পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে ডেঙ্গু ভাইরাসের সম্পর্ক নিয়ে যথেষ্ট গবেষণা না থাকলেও এটি অনুমান করা যায় যে করোনা ভাইরাসের মতো এটিও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিজেকে পরিবর্তন করে নিতে সক্ষম। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গুর আঘাতের পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। রোগীর সংখ্যা বিচারে বছরভেদে কমবেশি হয়। এখন গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ রোগী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। প্রতিবছর প্রায় একই সময়ে ডেঙ্গু আঘাত হানছে আর আমরা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছি। প্রতিদিন বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। গত কয়েক দিনের আক্রান্ত ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করলে বোঝা যায় সামনের দিনগুলোর পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে চলেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এই সময়ে করণীয় " height="308" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/02-10-2024/1.jpg" style="float:left" width="341" />ডেঙ্গু সংক্রমণ কম বা বেশি হওয়া নির্ভর করে ডেঙ্গুপ্রবণ এলাকার জনসাধারণের জ্ঞান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, মনোভাব এবং এডিস মশার প্রজনন রোধে তাদের কার্যক্রম ও ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঠিক ও সময়োপযোগী কার্যক্রমের ওপর। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগামী দিনগুলোতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণের কার্যক্রম আরো বেগবান করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়েরও প্রস্তুত থাকতে হবে অধিক ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনার জন্য। জরুরি ভিত্তিতে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অক্টোবরে প্রতিদিন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবে হাজারের বেশি মানুষ।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোনো এলাকায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে গেলে জরুরি ভিত্তিতে হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করতে হয়। এই মুহূর্তে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঠেকাতে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। আর এই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় সিটি করপোরেশন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনসাধারণকেও সরাসরি সম্পৃক্ত হতে হবে। ডেঙ্গু রোগীর বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে প্রতিটি বাড়ির চারদিকে ফগিং করে উড়ন্ত মশা মারা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে কোনোভাবেই ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশাটি অন্য কাউকে আক্রান্ত করতে না পারে। ডেঙ্গুর চিকিৎসা দেওয়া হাসপাতালগুলোর চারদিকে নিয়মিত ফগিং করতে হবে, যাতে সেখানে কোনো এডিস মশা বেঁচে না থাকে। হাসপাতাল ও বাড়িতে থাকা যেকোনো ডেঙ্গু রোগীকে সব সময় মশারির নিচে রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী দুটি মাস হটস্পট ম্যানেজমেন্টের পাশাপাশি মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের কার্যক্রমও চালাতে হবে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত একটি ভাইরাসঘটিত জ্বর রোগ। ডেঙ্গু ভাইরাসের চারটি স্ট্রেইন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (ডেন-১, ২, ৩ ও ৪) এর যেকোনোটি দিয়ে ডেঙ্গু হতে পারে। আর এই ভাইরাস বহন করে এডিস ইজিপ্টি ও এডিস এলবোপিকটাস প্রজাতির মশা। এডিস ইজিপ্টি স্বভাবগতভাবে গৃহপালিত ও নগরকেন্দ্রিক। এটি আমাদের শহরে ঘরের ভেতরে এবং এর কাছাকাছি  থাকে। এ জন্য এটিকে আমরা গৃহপালিত মশা বলে থাকি। এডিস ইজিপ্টি মশা ডেঙ্গু বিস্তারে ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভূমিকা রাখে। আরেকটি প্রজাতি এডিস এলবোপিকটাস যাকে এশিয়ান টাইগার মশা বলা হয়। এটি বন্য বা জংলি বা গ্রামের মশা। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামেই এ মশাটি রয়েছে। এই প্রজাতি ডেঙ্গু বিস্তারে ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভূমিকা রাখে। এই মশা বিভিন্ন পাত্র ছাড়াও গাছগাছালিযুক্ত এলাকায় গাছের কোটর, কলাগাছের দুই পাতার মাঝখানে, কচুর পাতার মাঝখানে, কাটা বাঁশের গোড়ায় জমে থাকা পানিতে জন্মায়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নগরে এডিস ইজিপ্টি মশা জন্মানোর জন্য অন্যতম স্থান হলো ড্রাম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, টায়ার, বালতি, যেকোনো ধরনের মাটির পাত্র, নির্মাণাধীন ভবনের লিফটের গর্ত, ইট বা টাইলস ভেজানোর চৌবাচ্চা, কিউরিংয়ের পানি জমার স্থান, বিশেষ করে বেজমেন্ট।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডেঙ্গু এমন একটি সমস্যা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, যেটিকে সরকার বা সিটি করপোরেশন একা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। পৃথিবীর কোনো দেশেই জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম সফল হয়নি।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডেঙ্গু থেকে বাঁচার পদ্ধতি</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১. এডিস মশার জন্ম হয় পাত্রের জমে থাকা পানিতে। সপ্তাহে অন্তত এক দিন আপনার বাড়ি এবং বাড়ির চারদিকে ঘুরে দেখুন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, কোথাও কোনো পাত্রে পানি জমে আছে কি না। যদি থাকে তাহলে তা ফেলে দিন বা পরিষ্কার করুন। সাবান, ডিটারজেন্ট, ছাই বা মাটি দিয়ে ভালো করে ঘষে-মেজে ধুয়ে তারপর পানি ভরাট করুন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২. যদি পাত্রটি এমন হয় যে পানি ফেলে দেওয়া যাচ্ছে না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, তাহলে সেখানে মশা ধ্বংসকারী কীটনাশক বা ব্লিচিং পাউডার দিন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৩. গাড়ির অব্যবহৃত টায়ার রাখবেন না। কারণ এখানে এডিস মশার জন্ম হয়। যদি রাখতেই হয় তাহলে ছাউনির নিচে রাখুন যেন পানি জমা না হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৩. দই বা যেকোনো খাবারের পাত্র বাইরে ফেলবেন না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৪. বাথরুমে বা বাড়িতে যদি পানি ধরে রাখতে হয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, তাহলে পানির পাত্র সপ্তাহে অন্তত একবার ব্লিচিং পাউডার বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে আবার পানি ভর্তি করুন। এডিস মশা পানির পাত্রের কিনারে ডিম পাড়ে এবং পাত্রের গায়ে আটকে থাকে। এ কারণে পানি ফেলে দিলেও ডিম নষ্ট হয় না। তাই এটিকে ব্লিচিং পাউডার বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করা প্রয়োজন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৫. আপনার বাড়ির পাশে কোনো নির্মাণাধীন ভবন থাকলে এটির বেজমেন্ট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, লিফটের গর্ত, ইট ভেজানোর চৌবাচ্চা, ড্রাম পরীক্ষা করুন। যদি এসব জায়গায় জমে থাকা পানিতে ছোট ছোট পোকা দেখতে পান তাহলে বুঝবেন সেটি এডিস মশার লার্ভা বা বাচ্চা। নির্মাণাধীন ভবনের মালিককে সামাজিকভাবে চাপ প্রয়োগ করুন যেন তিনি তাঁর বাড়িতে মশা জন্মানোর স্থান তৈরি না করেন। নির্মাণাধীন ভবনটি যদি আপনার হয়, তাহলে সেখানে জমে থাকা পানিতে কীটনাশক বা কেরোসিন বা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে রাখুন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৬. বাড়ির আশপাশে গাছের গর্ত বা কাটা বাঁশের গোড়া মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিন। কারণ গাছের কোটর বা বাঁশের গর্তে এডিস মশার জন্ম হয়।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৭. আপনার বাড়ির আশপাশে যদি মশা জন্মানোর মতো কোনো সরকারি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-বেসরকারি স্থাপনা থাকে, তাহলে ওই অফিসকে জানান।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকার মতো ডেঙ্গু পরিস্থিতি যেন অন্য শহরগুলোতেও খারাপ না হয় সে বিষয়ে প্রতিটি নগরের নগর প্রশাসকদের সজাগ দৃষ্টি এবং নিয়মিত মশক নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ করতে পারলে ডেঙ্গু সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সিটি করপোরেশন ও নগরবাসীর সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে ডেঙ্গু সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হবে বলে বিশ্বাস করি।</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span dir="ltr" lang="BN" style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> : কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক ও অধ্যাপক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">professorkabirul@gmail.com</span></span></span></span></span></p> <p> </p>