ব্যাংকিং খাত সংস্কারে সুশাসনই বড় চ্যালেঞ্জ

নিরঞ্জন রায়
শেয়ার
ব্যাংকিং খাত সংস্কারে সুশাসনই বড় চ্যালেঞ্জ

দেশে ব্যাংকিং খাত সংস্কারের কাজটি এখন সম্পন্ন হবে বলেই অনেকের ধারণা। ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে ব্যাংক পরিচালনার মানোন্নয়ন করার উদ্দেশ্যে এই খাতে সংস্কারের উদ্যোগ দীর্ঘদিনের দাবি হলেও এ ব্যাপারে সে রকম গ্রহণযোগ্য উদ্যোগ আগে কখনো নেওয়া হয়নি। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরই এদিকে নজর দিয়েছে এবং দেশের ব্যাংকিং খাত সংস্কারের উদ্দেশ্যে গভর্নরের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্সও গঠিত হয়েছে। ফলে পর্যবেক্ষকমহলের বিশ্বাস, এবার অন্তত দেশের ব্যাংকিং খাতে একটি মানসম্পন্ন সংস্কার হবে।

দেশের ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের দাবি যেমন দীর্ঘদিনের, তেমনি এই কাজটি বেশ জটিল এবং ব্যাপক এক কর্মযজ্ঞও বটে। দেশের ব্যাংকিং খাতে বিশৃঙ্খল অবস্থা যেমন দীর্ঘদিনের, তেমনি এই খাতের সমস্যারও কোনো অন্ত নেই। ফলে সব কিছু ঠিক করে, সব ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা দূর করে এবং বিরাজমান সব সমস্যার সমাধান করে একটি কার্যকর ও সফল সংস্কার সম্পন্ন করা এক ধরনের অসাধ্য সাধন করার মতো।

এ কথা ঠিক যে দেশের ব্যাংকিং খাতে সমস্যার যেমন শেষ নেই, তেমনি সব সমস্যা সমান গুরুত্বপূর্ণ নয়।

গুরুত্ব এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ব্যাংকিং খাতের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। তবে দেশের ব্যাংকিং খাতের সমস্যার বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই চলে আসে সুশাসনের অভাব এবং মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণ। এই দুটি বিষয় যে দেশের ব্যাংকিং খাতে বড় ধরনের সমস্যা, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এগুলো অন্য আরো অনেক সমস্যার কারণেই সৃষ্টি হয়েছে।
যেমন নিয়ন্ত্রক সংস্থার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দুর্বলতা এবং এক ধরনের আপসমূলক আচরণের কারণে দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়নি। একইভাবে দেশের ব্যাংকিং খাতে প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক এবং স্বয়ংক্রিয় ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা বা ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট (সিআরএম) প্রবর্তন করতে না পারার কারণে দেশে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। যা হোক, সার্বিক বিচারে সুশাসনের অভাব এবং খেলাপি ঋণ আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতে সবচেয়ে বেশি আলোচিত সমস্যা। এ কারণেই ব্যাংকিং খাতের সংস্কার করতে হলে প্রথমেই ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দিতে হবে।

ব্যাংকিং খাত সংস্কারে সুশাসনই বড় চ্যালেঞ্জব্যাংকে সুশাসন নিয়ে আলোচনা করা যত সহজ, বাস্তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা তার চেয়ে অনেক বেশি কঠিন।

সবচেয়ে বড় অসুবিধা হচ্ছে সুশাসনের গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা নিরূপণ করা। অর্থাৎ কী কী পদক্ষেপ নিলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে, সেটি নিশ্চিত করে নির্ধারণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। সুশাসন সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে যে সব কিছু ঠিকমতো চললে বলা হয় সুশাসন নিশ্চিত হয়েছে। আবার যখনই কোনো সমস্যা হয় বা কোনো কিছুর ব্যত্যয় ঘটে, তখন বলা হয় যে সুশাসনের বড় অভাব। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ উন্নত বিশ্বের ব্যাংকে সে রকম কোনো সমস্যা হয় না বা তেমন কোনো ব্যত্যয় ঘটতে দেখা যায় না। এ কারণে বলা হয়ে থাকে যে উন্নত বিশ্বের ব্যাংকে সুশাসন নিশ্চিত করা হয়েছে। পক্ষান্তরে আমাদের দেশসহ উন্নয়নশীল বিশ্বের ব্যাংকে নানা সমস্যা লেগেই আছে এবং প্রায়ই অনেক কিছুর ব্যত্যয় ঘটে। সে কারণে বলা হয়ে থাকে যে সেসব দেশের ব্যাংকে সুশাসনের বড় অভাব।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতে ন্যূনতম সুশাসন বা গুড গভর্ন্যান্স মেনে চলা হয় না। এর বড় কারণ হচ্ছে আমাদের দেশের বেসরকারি ব্যাংকের মালিক হচ্ছে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। যাঁরা দেশের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক, তাঁরাই ব্যাংকের পরিচালক এবং চেয়ারম্যান হয়ে থাকেন। ফলে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা তাঁদের আর দশটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যেভাবে পরিচালনা করেন, ঠিক একইভাবে ব্যাংকও পরিচালনা করে থাকেন। তাঁরা বুঝতেই চেষ্টা করেন না যে দেশের এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনের অনেক আইন ও বিধি-বিধান মেনে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। ফলে ব্যাংক পরিচালনা করতে গিয়ে তাঁরা এমন আচরণ করেন এবং এমন কিছু সিদ্ধান্ত নেন, যা প্রচলিত আইনের চরম লঙ্ঘন। আর এ কারণেই ব্যাংকে তখন সুশাসনের চরম অভাব দেখা দেয়।

বহুল আলোচিত এই সুশাসনের সংজ্ঞা নিয়ে আমাদের দেশের অনেক ব্যাংকারের মধ্যেও পরিষ্কার ধারণা নেই। আমি অনেক ব্যাংকারের কাছে সুস্পষ্টভাবে জানতে চেয়েছি যে সুনির্দিষ্টভাবে কী কী পদক্ষেপ  নিলে ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিত হবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সন্তোষজনক উত্তর আমি কারো কাছ থেকেই সেভাবে পাইনি। আর এ কারণেই দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার কাজটি এমনিতেই জটিল হয়ে যাবে। এর বিকল্প হিসেবে আইএমএফ বা বিদেশি পরামর্শকদের কাছ থেকে সুশাসনের ব্যাপারে কিছু সুপারিশ এবং পদক্ষেপ নিয়ে বাস্তবায়ন করলেই যে দেশের ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে, সেটিও নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তা ছাড়া এভাবে সুশাসন নিশ্চিত করলে কাগজে-কলমে ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলেও বাস্তবে সুশাসন ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে। কেননা আমাদের দেশের ব্যাংকে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে আমাদের সমাজের ব্যাংকিং চাহিদার কথা মাথায় রেখে।

আমাদের দেশের ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে সুনির্দিষ্টভাবে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া অপরিহার্য, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে১. পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্ট টিমের মধ্যকার সুনির্দিষ্ট সীমারেখা; ২. পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্ট টিমের কার্যক্রম পৃথকভাবে চিহ্নিত করা; ৩. ব্যাংকিং সংক্রান্ত আইনের সংশোধন; ৪. প্রযুক্তির মাধ্যমে সুশাসনের প্যারামিটার বা শর্তগুলো প্রতিপালন করা এবং ৫. নিয়ন্ত্রক সংস্থার এনফোর্সমেন্ট ক্ষমতা বৃদ্ধি করা।          

আমাদের দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্ট টিমের মধ্যে সুস্পষ্ট কোনো সীমারেখা নেই। এখানে পরিচালনা পর্ষদ, বিশেষ করে ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালকরা এমডি বা প্রধান নির্বাহীকে যা নির্দেশ দেন, তাঁরা সেগুলোই বাস্তবায়ন করে থাকেন, সেগুলো নিয়মের মধ্যে থাকুক বা নিয়মবহির্ভূত হোক। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে অবস্থা এমন দাঁড়ায়, যেখানে ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট টিম বা এমডি নির্দেশের জন্য ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালকদের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এই ব্যবস্থা ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথে বড় ধরনের অন্তরায়। সুশাসন প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্টের মধ্যে সুনির্দিষ্ট সীমারেখা নির্ধারণ করে দিতে হবে। যেমনব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, পদোন্নতি ও বদলি

সম্পূর্ণরূপে ম্যানেজমেন্ট টিমের দায়িত্ব এবং তারাই এই দায়িত্ব পালন করবে। এখানে পরিচালনা পর্ষদ বা চেয়ারম্যান-পরিচালকদের সিদ্ধান্ত দেওয়া তো দূরের কথা, কোনো রকম মতামত দেওয়ারও সুযোগ থাকবে না। এভাবেই ব্যাংক পরিচালনার সব কার্যক্রমে পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্ট টিমের মধ্যে সীমারেখা নিশ্চিত করে ফেলতে হবে।

সুশাসন নিশ্চিত করার স্বার্থে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব-কর্তব্য এবং ম্যানেজমেন্ট টিমের কার্যক্রমকে সুনির্দিষ্টভাবে পৃথক করে দিতে হবে। আমাদের দেশে ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্ট টিমের কাজের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় না। ফলে পরিচালনা পর্ষদের যা করার কথা না, তারা তা-ও করে। পক্ষান্তরে ম্যানেজমেন্ট টিমের যা করার কথা, তারা সেটি করে না। যেমন আমাদের দেশের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ আবেদন মঞ্জুর করে, যা কোনো অবস্থায়ই পরিচালনা পর্ষদের কাজ নয়। পরিচালনা পর্ষদ এবং ম্যানেজমেন্ট টিমের এ রকম এলোপাতাড়ি দায়িত্ব পালন কখনোই সুশাসনের পর্যায় পড়ে না। পরিচালনা পর্ষদ ঋণ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় গাইডলাইন এবং নির্দেশনা প্রদান করবে। যেমন ব্যাংকের ঋণদানের সর্বোচ্চ সীমা, ঝুঁকি নেওয়ার সক্ষমতা, কোন ধরনের গ্রাহকদের কী পরিমাণ ঋণ দেওয়া হবে, কোন কোন খাতে কী পরিমাণ ঋণ দেওয়া হবে প্রভৃতি উল্লেখ করে একটি ঋণ ঝুঁকি গাইডলাইন প্রদান করবে। আর ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট টিম এই গাইডলাইন এবং শর্ত মেনে ঋণ প্রদান করবে। এর কোনো রকম ব্যত্যয় ঘটলে ব্যাংকের ম্যানেজমেন্ট টিম একক বা সমষ্টিগতভাবে দায়ী থাকবে। ব্যাংকে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে কাগজে-কলমে সুশাসনের বিষয়গুলো লিখে রাখলে যে এর প্রয়োগ হবে, তেমনটি ভাবার কোনো কারণ নেই। সুশাসনের শর্তগুলো প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রয়োগ করার উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যবহৃত প্রযুক্তিতে সুশাসনের শর্তগুলো আগে থেকেই অন্তর্ভুক্ত থাকলে সেসব শর্ত মেনেই ব্যাংকের কাজ পরিচালনা করতে হবে। তখন চাইলেও এসব শর্তের ব্যত্যয় ঘটাতে পারবে না। এর পাশাপাশি সুশাসনের অনেক বিষয় ব্যাংকসংক্রান্ত অনেক আইনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। অর্থাৎ সুশাসন নিশ্চিত করতে প্রচলিত আইনের সংশোধন করার প্রয়োজন হবে। সবচেয়ে বড় কথা, সুশাসনের বিষয়গুলো যাতে সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়াতে হবে।

এ কথা অনস্বীকার্য যে দেশের ব্যাংকিং খাতে সংস্কার করতে হলে ব্যাংকে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। আবার এই সুশাসন নিশ্চিত করার কাজটি যে মোটেও সহজ নয়, সেটিও সবাইকে বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে। তবে সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিতে পারলে কাজটি যে অসম্ভব, তেমনও নয়। তাই ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ হওয়া প্রয়োজন সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। কাজটি নিঃসন্দেহে একটি বড় চ্যালেঞ্জ, কিন্তু অসম্ভব নয়।

 

 লেখক : সার্টিফায়েড অ্যান্টি মানি লন্ডারিং স্পেশালিস্ট ও ব্যাংকার, টরন্টো, কানাডা

nironjankumar_roy@yahoo.com

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিনিয়োগ না বাড়ালে মন্দা দেখা দেবে

মো. মাহবুবুল হক
শেয়ার
বিনিয়োগ না বাড়ালে মন্দা দেখা দেবে

৫ আগস্ট ২০২৪ সরকার পতনের পরবর্তী তিন দিন প্রশাসনিক শূন্যতায় ছিল বাংলাদেশ। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সময়ের মধ্যে গ্রাম-শহর-নির্বিশেষে দেশবাসীর সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় ছিল বেঁচে থাকাকখন বাসায় ডাকাত পড়ে, কখন ছিনতাকারীর কবলে, চুরি-ছিনতাই-লুটপাট।

বাজারে ভোগ্য পণ্যের দাম বেড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে।

এমন চলতে থাকলে তারা যে না খেয়ে মরবে! মিডিয়ায় পাওয়া খবর অনুযায়ী সরকার স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য সামগ্রী টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে দুস্থদের কাছে বিক্রি করার জন্য দেশব্যাপী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। দেখা গেল, যেসব বিক্রেতাকে টিসিবির পণ্য বিতরণের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তারা কাজ ফেলে চলে গেছে। তারা নাকি সাবেক সরকারের প্রতি অনুগত। এমন না হওয়াটা বরং অস্বাভাবিক।
যারা সস্তায় ভোগ্য পণ্য কিনতে বাধ্য, তারা টিসিবির ট্রাক খুঁজে বেড়ায়। কারো আশা পূরণ হয়, কারো হয় না। যার হয় না, সে এবং তার পরিবারের সদস্যরাও অভুক্ত থাকতে পারে। বিষয়টি গুরুতর।
দেশের  বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। তারা অভুক্ত থাকলে তো সরকারের প্রতি জনরোষ বৃদ্ধি পাবে, যার পরিণতি সরকার ও ক্রেতা কারো জন্য শুভ হবে না। সরকার গঠনের দিন যদি ভোগ্য পণ্য সামগ্রী বিতরণব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একটি সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে আজ এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। একসময়ে পাড়ায় পাড়ায় রেশন দোকান ছিল। সপ্তাহওয়ারি যে যার রেশন তুলে নিত।
টিসিবির ট্রাকের পেছনে রাস্তায় রাস্তায় ছুটে বেড়ানো দুস্থদের জন্য অবমাননার শামিল। রাস্তায় ট্রাক থেকে কেনার ক্ষেত্রেও একটি ফাঁকি আছে। তা কেমন? ট্রাক বোঝাই পণ্য বিক্রি শেষ হয়ে গেলে লাইনে দাঁড়িয়ে দুস্থদের বঞ্চিত হতে হয়। টিসিবির ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থার বদলে সম্মানজনক বিতরণব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবা যেতে পারে; যেমনদেশজুড়ে রেশনব্যবস্থা। আপৎকালীন বাজারমূল্য সহজলভ্য করার লক্ষ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে দেশজুড়ে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় রেশন চালু করা যেতে পারে। রেশনব্যবস্থা ভারতে এখনো বলবৎ আছে। যত দিন আমরা খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ না হব, তত দিন আমাদের জন্য এ ব্যবস্থা অপরিহার্য।

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/05-01-2025/2/kalerkantho-ed-1a.jpgআরোগ্যলাভের সঙ্গে সময়-কালের সম্পর্ক নেই। বিশেষভাবে প্রযোজ্য তাদের জন্য, যারা জরুরি বিভাগের রোগী। সাবেক স্বৈরাচারী অবৈধ সরকারকে গদিচ্যুত করার মূল্য পূরণযোগ্য নয়। দেড়-দুই হাজার শহীদ, হাজার হাজার আহত, অন্ধত্বের বিনিময়ে এই দেশ রাহুমুক্ত হয়েছে। সরকার বলেছে, যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, তাদের পরিবারের একজনের ভার গ্রহণ করা হবে। যাদের চিকিৎসার সুযোগ দেশে নেই, তাদের বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার দায়িত্ব সরকার নেবে। যারা আহত, চোখে দেখতে পায় না, হাত অথবা পা কেটে ফেলতে হতে পারে, তাদের এ দেশেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। সময় চলে যাচ্ছে, কোথায় বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা, রুটিন চিকিৎসাসেবার কাজই নিয়মিত হচ্ছে না বলে পত্রিকান্তরে জানা যায়। মাঝেমধ্যে মিডিয়ায় কিছু খবরাখবর পাওয়া যায়, যা যথেষ্ট নয় বলে মনে হয়। এই অবহেলাজনিত কারণে আহতদের যেটুকু বেঁচে থাকার আশা ছিল, তা-ও অপসৃয়মাণ। কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চলে যাওয়ার সময়ে আহতদের স্বজনরা তাদের অবস্থা সরেজমিনে গিয়ে দেখার জন্য উপদেষ্টার কাছে আবেদন জানালে তিনি সময়ের অভাবে না দেখে চলে যেতে চেয়েছিলেন। এতে কি মনে হয় সরকার যে কথা দিয়েছিল, তা রেখে চলেছে? উচিত ছিল বিশেষ ব্যবস্থায় যেসব বেসরকারি হাসপাতাল এমন কাজে অভ্যস্ত এবং উপযুক্ত, তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া (সরকারি ক্রয় নীতিমালায় দুর্যোগকালীন অবস্থায় এভাবে পণ্য, সেবা কেনার বিধান রয়েছে)। তাহলে এমন দুঃখজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না বলে মনে করছি।

বেশ কয়েক মাস অতিক্রান্ত। অনিরাপদ অস্থির পরিবেশের তেমনটা উন্নতি হলো না। এমন চলতে থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়তে পারে, যাদের বিনিয়োগ আছে, তা গুটিয়ে নিতে চাইবে। দেশি বিনিয়োগও থমকে যেতে পারে। কর্মসংস্থান হ্রাস পেতে পারে।

পুলিশ বাহিনীকে সাবেক সরকার কর্তৃক অবাধ দুর্নীতি ও লুটপাট করার সুযোগ করে দেওয়ায়  বেশির ভাগ  সদস্য সাবেক সরকারপ্রধানের মতো প্রাণ ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিলেন। কর্মস্থল ত্যাগ করে পালিয়েছেন। এই ভয় তাদের সারা জীবন ধাওয়া করবে। কারণ যে বাহিনী হেরে যায় বা যারা দলত্যাগ করে, তাদের মনোবল-আনুগত্য তলানিতে চলে যায়। বিশ্বস্ততা থাকে না।

পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যার শিরোনাম বিনিয়োগ না বাড়ালে মন্দা দেখা দেবে (সূত্র : কালের কণ্ঠ, ২৬.১১.২০২৪)। তিনি বলেছেন, অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার কারণে বেসরকারি খাতে উৎপাদনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নতুন বিনিয়োগও হচ্ছে না। অন্যদিকে সরকারি উন্নয়ন ব্যয়ও যদি না বাড়ে, তাহলে তো অর্থনীতির মন্দা অবস্থা তৈরি হবে। এই পরিস্থিতিতে নতুন উদ্ভাবনী ও মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন প্রকল্প তৈরির কথা চিন্তা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তার কথার মর্মার্থ, খাদ্য, চিকিৎসাসেবা নিরাপত্তায় আশানুরূপ অগ্রগতি হলে মন্দার শঙ্কা দেখা দিত না। মন্দা একটি ভয়ংকর পরিবেশ। এর বৈশিষ্ট্য দীর্ঘকাল ধরে কর্মসংস্থানে দুর্ভিক্ষ, সেই সঙ্গে নিম্ন উৎপাদন ও বিনিয়োগে স্থবিরতা।

 

লেখক : প্রধান প্রকৌশলী ও পরিচালক (প্রকৌশল)

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন

মন্তব্য

ট্রাম্প কি এক দিনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারবেন

গাজীউল হাসান খান
শেয়ার
ট্রাম্প কি এক দিনে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে পারবেন

ডোনাল্ড ট্রাম্প কি সত্যি রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান দীর্ঘদিনের যুদ্ধ এক দিনে বন্ধ করতে পারবেন? আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ট্রাম্প। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ মত প্রকাশ করেছেন যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের গঠিত টিমের প্রস্তাব অনুযায়ী ইউক্রেনের ন্যাটো সামরিক জোটের সদস্য পদ লাভের সময় পিছিয়ে দেওয়াই যুদ্ধ বন্ধের জন্য যথেষ্ট নয়। গত নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি টিম রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই তারা পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের প্রস্তাবিত সদস্য পদ লাভের বিষয়টি যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে দীর্ঘদিনের জন্য ঝুলিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।

ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে অর্থাৎ প্রচারণার সময় যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য কিয়েভকে দেওয়া অর্থ সাহায্যের বিরুদ্ধে বিদায়ি বাইডেন প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। ট্রাম্প বলেছিলেন, ক্ষমতাসীন হলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তিনি এই যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন। সেটি কার্যকর করতে হলে ইউক্রেনকে কী ধরনের ছাড় দিতে হবে, তা নিয়ে ন্যাটোর সদস্যরা অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েছিল, যা এখনো চলমান। ট্রাম্পের ধারণা ছিল যে যুদ্ধ চালানোর ক্ষেত্রে ইউক্রেনকে যতই অর্থ কিংবা অস্ত্রশস্ত্র সরবরাহ করা হোক না কেন, তাতে ইউক্রেনের বিজয় নিশ্চিত হবে না।
ইউক্রেন কোনোমতেই চলমান যুদ্ধে সাফল্যের মুখ দেখবে না। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রসহ জোটভুক্ত পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থসম্পদেরই অপচয় হবে। সুতরাং এই চলমান যুদ্ধ অবসানের জন্য প্রথমেই দরকার একটি লম্বা যুদ্ধবিরতি। তবে এ ব্যাপারে ট্রাম্পের টিম যে প্রস্তাব দিয়েছে, রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে এটি এখানেই থেমে থাকবে বলে মনে হচ্ছে না। ট্রাম্পের টিম এ ক্ষেত্রে আরো অনেক বিকল্প রাস্তা খুঁজে দেখছে বলে জানা গেছে।

https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/05-01-2025/2/kalerkantho-ed-1a.jpgরাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো অবশ্যই এই চলমান যুদ্ধ থামাতে ব্যাকুল, তবে তাদের সুবিধাজনক শর্তে সেটি হতে হবে বলে কূটনৈতিক মহলের বিশ্বাস। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, কী ছিল ট্রাম্পের প্রাথমিক প্রস্তাব, সেটি জানার জন্য সবাই অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক নিঃশ্বাসে তার সব বিরোধ নিষ্পত্তির কার্ডগুলো খেলতে রাজি নন।

তিনি পর্যায়ক্রমে সব প্রস্তাব উত্থাপন করবেন বলে কূটনৈতিক মহল মনে করে। সে কারণেই প্রাথমিক পর্যায়ে ট্রাম্প তার সব নির্ধারিত অপশন প্রকাশ না করে একে একে সেগুলো মস্কোর কাছে বিবেচনার জন্য পেশ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ট্রাম্পের ধারণা জন্মেছে যে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা নিরসন করা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের চেয়ে অনেক সহজতর হতে পারে। কারণ তার মতে, রাশিয়া ও ইউক্রেন ভৌগোলিক অবস্থানগতভাবে প্রতিবেশী হলেও অতীতের সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাষ্ট্র ব্যবস্থার কারণে রাশিয়ায় সামরিক ও বাণিজ্যিক অবকাঠামোগত ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তা ছাড়া পরিবর্তিত রাশিয়ার এখনো সাম্রাজ্যবাদীদের কাছ থেকে আগ্রাসন কিংবা নিরাপত্তাজনিত আশঙ্কা কাটেনি। তার মূলে রয়েছে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ইউক্রেনকে তাদের প্রভাববলয়ে সংযুক্ত করার পুরনো সিদ্ধান্ত। রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়ন পদ্ধতির অবসান ঘটলেও পশ্চিমা সামরিক জোট এখনো তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধব্যূহ রচনা করতে তৎপর। তা ছাড়া অবস্থানগতভাবে কৃষ্ণ সাগরের বাণিজ্যিক ও সামরিক গুরুত্ব পশ্চিমাদের কাছে অনেক বেশি। সে অবস্থায় ইউক্রেনের বর্তমান শাসক ভোলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশ ইউক্রেনকে দ্বারস্থ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য পদ লাভের প্রত্যাশায়। জেলেনস্কি মনেপ্রাণে চাচ্ছেন যে অতি তাড়াতাড়ি তারা পশ্চিমা সামরিক জোটেও অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবেন।

উপরোল্লিখিত একটি অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে অবসান ঘটেছে কট্টরপন্থী সাম্রাজ্যবাদী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনকাল। নবনির্বাচিত ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের সাম্রাজ্যবাদী কিংবা সামরিক প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাণিজ্যিক স্বার্থ কিংবা অর্থনৈতিক সাফল্য।

ট্রাম্পের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা অত্যন্ত বলিষ্ঠ। এ ক্ষেত্রে ন্যাটো জোটের ইউরোপীয় সদস্যদের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নিজেদেরই গড়ে তুলতে হবে। সে জন্য তাদের নিরাপত্তাসংক্রান্ত ব্যয় বহুলাংশে বৃদ্ধি হবে এবং নিজেদের নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ট্রাম্প তার আগের শাসনকালেও (২০১৬-২০) এ বক্তব্য বারবার প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে অত্যন্ত আগ্রহী। সে কারণেই তিনি চান ইউক্রেন তার নিকটতম প্রতিবেশী রাশিয়ার সঙ্গে যাবতীয় ঝামেলা মিটিয়ে ফেলুক এবং এই কাজটি যত দ্রুত করা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য তা ততই মঙ্গলজনক। এখন থেকে দু-এক দশক পর বিশ্বের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা এ রকম থাকবে না। তখন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা কোথায় কতটুকু থাকবে, তা নিয়ে চিন্তা করে ট্রাম্প চীনের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উত্থানের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান আধিপত্য হারাতে চান না। তিনি বিশ্ববাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী করতে আগ্রহী। সে কারণেই ট্রাম্প ইউক্রেন কিংবা ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থসম্পদ খোয়াতে মোটেও আগ্রহী নন। এর চেয়ে বিশ্ববাণিজ্য ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ট্রাম্প চীনকে একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে আটকে ফেলতে চান। সে কারণে প্রথম থেকেই প্রেসিডেন্ট (নির্বাচিত) ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ওপর তার জোটের সদস্য কিংবা অন্য মিত্রদের নির্ভরশীলতা কমাতে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২০২০ সালে তিনি ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রতিপক্ষ জো বাইডেনের কাছে হেরে যাওয়ার কারণে তার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিই বিপরীত মুখে ধাবিত হয়েছিল। সে কারণেই পরিবর্তিত অবস্থায় এখন ট্রাম্প রাশিয়া-ইউক্রেন চলমান যুদ্ধের অবসান ঘটিয়ে অতি দ্রুত একটি স্থিতিশীল ব্যবস্থায় পৌঁছতে অত্যন্ত তৎপর হয়ে উঠেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৬ নভেম্বর ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের কাছে প্রদত্ত এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি অবিলম্বে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ স্থগিত করতে চান। সে লক্ষ্যে কিয়েভের প্রত্যাশিত ন্যাটো সদস্য পদ অন্তত ২০ বছরের জন্য পিছিয়ে দিতে চান। এতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এই চলমান যুদ্ধ থামাতে আগ্রহী হতে পারেন। পুতিন যুদ্ধ থামাতে আগ্রহী, তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় অত্যন্ত দ্বিধান্বিত। পুতিন মনে করেন, সার্বিক বিষয়টি এখন অত্যন্ত জটিল পর্যায়ে চলে গেছে। এই বিষয়টির সার্বিক সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য গভীর পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা ও মতবিনিময় প্রয়োজন। এ ব্যাপারে বাস্তবতার নিরিখে সব পক্ষ আন্তরিক ও সহানুভূতিশীল না হলে চলমান যুদ্ধ স্থগিত হতে পারে, কিন্তু আসল সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে না। এ অবস্থায় ট্রাম্পের নবনির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স তার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি বিস্তারিত পরিকল্পনার ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন। এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ভ্যান্স গত নভেম্বরে সেসব তথ্য প্রকাশ করেছেন, যা নির্বাচনী ডামাডোলে এখনো খুব একটা গতি লাভ করেনি।

২০ জানুয়ারি এই নতুন টিমের (ট্রাম্প-ভ্যান্স) শপথ গ্রহণের পর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে উত্থাপিত হবে বলে তথ্যাভিজ্ঞমহলের ধারণা। ভ্যান্স বলেছেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের বর্তমান বিভক্তি লাইনকে একটি অসামরিক কিংবা বেসামরিক জোনে পরিণত করা হতে পারে। এতে রাশিয়া আর ইউক্রেনের ওপর আক্রমণ চালাতে পারবে না। এই প্রস্তাবিত জোন এক হাজার ২৯০ কিলোমিটার বা ৮০০ মাইল দীর্ঘ হতে পারে বলে তার বিশ্বাস। ভ্যান্স বলেন, প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ইউক্রেনকে কিছু ভূমি রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিতে হবে। এতে রুশ ভাষাভাষী ইউক্রেনের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের লুহানস্ক, দোনেত্স্ক, খেরসন ও জাপোরিঝিয়ার দীর্ঘদিনের বিরাজিত সমস্যার একটি যুক্তিগ্রাহ্য সমাধান হতে পারে বলে ট্রাম্পের টিম সদস্যদের ধারণা। এখানে উল্লেখ্য, ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ ভূমির ওপর তাদের দখলদারি প্রতিষ্ঠা করেছে। এই সার্বিক সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ নভেম্বর ডোনাল্ড ট্রাম্প জেনারেল (অব.) কিথ কেলগকে বিশেষ দূত মনোনীত করেন রাশিয়া-ইউক্রেন বিষয়ে কাজ করার লক্ষ্যে। জেনারেল কেলগ এর আগে প্রস্তাব করেছিলেন যে ইউক্রেন যদি রাশিয়ার সঙ্গে প্রস্তাবিত শান্তি আলোচনায় যোগ দিতে রাজি হয়, তবে ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য দেওয়া অব্যাহত রাখা যেতে পারে। এ পর্যায়ে ইউক্রেনের প্রার্থিত ন্যাটো সদস্য পদ ঝুলিয়ে দেওয়া যেতে পারে। পাশাপাশি শান্তি আলোচনায় যোগদানের জন্য রাশিয়ার ওপর থেকে কিছু অবরোধ বা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা যেতে পারে। জেনারেল কেলগের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু বিশেষ সুবিধা দিয়ে দুই পক্ষকে প্রস্তাবিত শান্তি আলোচনার টেবিলে উপস্থিত হতে উৎসাহিত করা। এ রকম একটি উচ্চ পর্যায়ের কূটনৈতিক উদ্যোগ যখন সামনে এগোচ্ছিল, ঠিক সে সময় ইউক্রেন গত মাসে রাশিয়ার ভূমিতে মিসাইল আক্রমণ চালিয়েছে। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির সমালোচনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিনকে প্রদত্ত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জেলেনস্কির সেই মিসাইল আক্রমণের নিন্দা জানান। তিনি অভিযোগ করেন, বর্তমান অবস্থায় কিয়েভের উচিত হয়নি রাশিয়ার শত শত মাইল অভ্যন্তরে মিসাইল আক্রমণ পরিচালনা করা। এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে ট্রাম্প প্রশ্ন তোলেন। ট্রাম্প বলেন, এ ধরনের অবিবেকোচিত কাজ শুধু সংকটকে আরো ঘনীভূত করবে, নিরসন করতে সাহায্য করবে না। তা ছাড়া সেই মিসাইলগুলো ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নির্মিত। এতে শান্তিকামী মানুষের মনে বিশ্বব্যাপী এক বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত ২৬ ডিসেম্বর তার বার্ষিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে ইউক্রেনের প্রার্থিত সদস্য পদের বিষয়টি পিছিয়ে দিলেই দুই দেশের মধ্যে বিরাজিত সব সমস্যার সমাধান হবে না। তিনি বলেছেন, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনার গভীরে তিনি এখনো প্রবেশ করতে পারেননি। এ ধরনের একটি প্রস্তাব ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও পেশ করেছিলেন। এতেও ন্যাটোতে ইউক্রেনের প্রস্তাবিত সদস্য পদ ১০ থেকে ১৫ বছর পিছিয়ে দেওয়ার উল্লেখ ছিল, কিন্তু তাতে বিরাজমান মূল সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। কারণ দৃশ্যমান পরিস্থিতিতে মূল সমস্যা সমাধানের কোনো মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। সে কারণে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভও একই পন্থায় তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ইউক্রেনের প্রার্থিত সদস্য পদ ২০ বছর পিছিয়ে দিয়ে ইউক্রেনের সীমান্তে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় শান্তিরক্ষী সেনা মোতায়েন করার ফলে প্রকৃত সমস্যার কি কোনো সমাধান হবে? সমস্যার গভীরে নিহিত বিষয়গুলো সামনে এনে যুক্তিগ্রাহ্যভাবে সেগুলো সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ। সে জন্য প্রথমেই প্রয়োজন একটি পরিষ্কার ও বিস্তারিত পরিকল্পনা, যা সত্যিকার অর্থেই মূল সমস্যার সমাধান ও শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নিবেদিত। কূটনীতির কূটচালে যেন সব কিছু শেষ পর্যন্ত ভেস্তে না যায়। স্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট ফিকো ইউক্রেনে ইউরোপীয় সেনা মোতায়েনের প্রস্তাবকে অবাস্তব বলে উল্লেখ করে এর উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, এরা কি আসলেই শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে আসবে, নাকি সেখানে ভিন্ন কোনো মতলব নিহিত রয়েছে?

লেখক : বাংলাদেশ সং

বাদ সংস্থার (বাসস) সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক

gaziulhkhan@gmail.com

মন্তব্য

গাজার যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ক্ষীণ

ড. ফরিদুল আলম
শেয়ার
গাজার যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ক্ষীণ

গাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনার মাঝেই নতুন বছরের প্রথম দিনে জাবালিয়া ও মধ্য বুইরেজ শরণার্থী শিবির এবং খান ইউনিস শহরসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, যেখানে শিশুসহ ২২ জনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এর আগে গাজায় চালু থাকা শেষ হাসপাতালটিতে হামলার ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সেটিও, চিকিৎসাব্যবস্থায় পুরোপুরি ধস নেমেছে। এই অবস্থায় কয়েক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং আরব রাষ্ট্রগুলোর মধ্যস্থতায় যে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলছিল, সেটি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সময়কালের মধ্যে শেষ করে এ বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব কি না, তা নিয়ে গভীর সংকট দেখা দিয়েছে। দূরত্ব বেড়েছে ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যেও।

দুই মাসের একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানো নিয়ে দুই পক্ষের তরফ থেকে যে প্রস্তাবগুলো দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে আপত্তি তুলেছে ইসরায়েল। হামাসের পক্ষ থেকে ৩০ জন জিম্মিকে মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি হামাসের সদস্যদের মুক্তি এবং গাজায় মানবিক ত্রাণ সরবরাহের পথ উন্মুক্ত করার দাবি জানানো হলে ইসরায়েল সব জিম্মিকে জীবিত মুক্তি ছাড়া যুদ্ধবিরতিতে যেতে অনীহা প্রকাশ করে। তা ছাড়া হামাসের তালিকা অনুযায়ী সবাইকে মুক্তি দিতেও অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। এমন অবস্থায় আগামী ২০ জানুয়ারি নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের আগে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে কোনো ধরনের চুক্তির কৃতিত্বপ্রাপ্তির আর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

এ ক্ষেত্রে গাজায় অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধবিরতি হতে যাচ্ছে কি না, বিষয়টির অনেকটাই পরবর্তী মার্কিন প্রশাসনের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগে তার নির্বাচনকালীন প্রচারণায় গাজা এবং রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যকার যুদ্ধ বন্ধের অঙ্গীকার করেছিলেন। যত দূর বোঝা যাচ্ছে, তিনি এখন পর্যন্ত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি তার অগ্রাধিকারের তালিকার সবচেয়ে ওপরে রেখেছেন। অন্যদিকে রাশিয়ার দিক থেকে এই যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে নানা ধরনের শর্তের বিষয় সামনে চলে আসছে, যেগুলো মেনে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন এবং ইউরোপের জন্য অনেকটা পরাজয়ের শামিল, অর্থাৎ ইউক্রেনে রাশিয়ার দখল করা এলাকাগুলো ছেড়ে দিতে হবে এবং ন্যাটোতে ইউক্রেনের যোগদানের বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অগ্রাহ্য করতে হবে।

এই বিষয়গুলো নিষ্পত্তি না করে কিংবা উভয় যুদ্ধ নিয়ে যুগপত্ভাবে ট্রাম্প বা তার প্রশাসন কাজ করে যাবে কি না, বিষয়টি স্পষ্ট নয়। এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, প্রসিডেন্ট বাইডেনের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে এই দুটি যুদ্ধ বর্তমানে যে অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে, এগুলো বন্ধ করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র ও তার সহযোগীদের অন্য মূল্য চোকাতে হবে। যদি সত্যি গাজার যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ক্ষীণযুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে নতুন করে পুনর্বাসন এবং যুদ্ধের ক্ষত সারাতে যে অর্থের প্রয়োজন হবে, সেটির বড় অংশেরই জোগান দিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। আবার এই যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হলেও অর্থ এবং অস্ত্রের একটি বড় অংশের চালান দিতে হবে তাদেরই। এককথায় প্রেসিডেন্ট বাইডেন এক কঠিন জঞ্জাল রেখে তার দায়িত্ব শেষ করতে যাচ্ছেন।

ধরে নিই, ডোনাল্ড ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর রাশিয়া-ইউক্রেনের মতো গাজা যুদ্ধ বন্ধের জন্যও উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই উদ্যোগের ধরনটা কেমন হবে। এরই মধ্যে তিনি যুদ্ধবিরতি কিংবা যুদ্ধ বন্ধের জন্য শর্ত দিয়েছেন। গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে তিনি এক বক্তব্যে জানিয়েছেন যে হামাসের হাতে বন্দি জিম্মিদের ২০ জানুয়ারির মধ্যে মুক্তি না দেওয়া হলে ব্যাপক সহিংসতা শুরু হবে, যা হামাসের প্রতি এক পরোক্ষ হুমকি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এর আগে ডিসেম্বর মাসের শুরুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় তিনি বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের সহিংসতার জন্য যারা দায়ী, তাদের মূল্য চোকাতে হবে। এমনভাবে তাদের আঘাত করা হবে, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কেউ কখনো দেখেনি। আমরা জানি, ১৫ মাস ধরে যে সহিংসতা, হত্যাযজ্ঞ এবং মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে, এটি একতরফা। হামাসের ক্ষুদ্র শক্তির তুলনায় ইসরায়েলের মতো প্রশিক্ষিত বাহিনী এবং বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পরিচালিত হয়ে আসছে এ ধরনের সব ঘৃণ্য কাজ। এর মধ্য দিয়ে এটি ভাবার কোনো কারণ নেই যে ট্রাম্পের এই হুমকি ইসরায়েলকে উদ্দেশ করে। তার মানে এটিই ধরে নেওয়া যায়, তিনি ইরানকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলেছেন। তার এই হুমকির বিষয়টি যদি তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর কার্যকরের উদ্যোগ নেন, তাহলে সন্দেহাতীতভাবেই এই যুদ্ধ বন্ধ বা বিরতির সম্ভাবনার পরিবর্তে আরো বিস্তৃত হবে এবং ইরান নতুন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হবে। সেদিক দিয়ে বর্তমান বাস্তবতায় বাইডেন যদি দুই পক্ষকেই অন্ততপক্ষে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি করাতে সক্ষম হন, তাহলে কিছুটা রক্ষা হতে পারে। অন্যথায় আরো ভয়ংকর পরিণতির দিকে যেতে পারে গোটা পরিস্থিতি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি ইসরায়েলের স্বার্থ বাদ দিয়ে সাধন করা সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল নীতি নিয়ে অতীতেও ডেমোক্রেটিক বা রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টদের মধ্যে কোনো মতভেদ দেখা দেয়নি, ভবিষ্যতেও এর সম্ভাবনা কম। উপরন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের প্রতি একটু বেশি সদয় বলা যেতে পারে, অন্যদিকে ইসরায়েলের বর্তমান নেতৃত্বও বাইডেনের চেয়ে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ট্রাম্পের ওপর অধিক আস্থাশীলএমনটা বললেও খুব একটা ভুল হবে না। গত বছর যুক্তরাষ্ট্র সফরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী সে দেশের কংগ্রেসে ভাষণ দেওয়ার পর ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আমন্ত্রণে ছুটে যান ফ্লোরিডায় তার অবকাশযাপন কেন্দ্রে। ধারণা করা যায়, দুই নেতার সেই বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইহুদি ভোটারদের ট্রাম্পের প্রতি সমর্থনের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছিল। সে ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কিছু গোপন বোঝাপড়া হয়ে থাকাটাও অসম্ভব কিছু নয়। অনেক বছর ধরেই হামাসকে যুক্তরাষ্ট্র একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে মনে করে আসছে। ট্রাম্প এ ক্ষেত্রে সব সময়ই ইসরায়েলের স্বার্থের বিষয়ে অধিক মনোযোগী। সেই ট্রাম্প এখন নতুন করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ইসরায়েলের সঙ্গে তার বোঝাপড়ার জায়গাটিকে গুরুত্ব দেওয়া হবে, এটিই স্বাভাবিক। তা ছাড়া তার সাম্প্রতিক ঘোষণা এবং পরোক্ষ হুমকি দ্বারা এটিও ধারণা করা যেতে পারে যে এর মধ্য দিয়ে তিনি যে কেবল হামাস বা ইরানকে হুমকি দিয়েছেন তা-ই নয়, মধ্যপ্রাচ্যের অপরাপর পক্ষ, যারা এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হামাসের পক্ষে যুদ্ধ করেছে, তারা সবাই ট্রাম্পের ভবিষ্যতের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। তাদের মধ্যে রয়েছে লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুতিরাও। তাই এমনটা ধারণা করা যেতেই পারে যে ট্রাম্পের সময়কালে এই যুদ্ধের দ্রুত নিষ্পত্তির পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অভিন্ন শত্রুদের বিরুদ্ধে আরো বিস্তৃত পরিসরে যুদ্ধ পরিচালনা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে হামাস একটি উপলক্ষ মাত্র।

এসব অনুমানকে ছাপিয়ে পাল্টা কিছু অনুমানও করা যেতে পারে। ধরা যাক, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ বন্ধ হলো। এ ক্ষেত্রে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার যে মনোযোগ, সেটি গিয়ে ধাবিত হতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে। ইরানের সঙ্গে তাদের যে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে, বর্তমান সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে সেটি খুব একটা কার্যকর নেই, যার কারণে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের পতন ঘটেছে, ইরান দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং গাজা যুদ্ধ ও এর মধ্য দিয়ে ইরানপন্থী সংগঠনগুলোকে মদদ দেওয়ার কারণে ট্রাম্প ইরানের প্রতি অধিক মারমুখী হয়ে উঠলেন। এ ক্ষেত্রে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন যদি ইউক্রেন থেকে মনোযোগ সরিয়ে ইরানের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতায় মনোযোগ দেন, সে ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে দুই বৃহৎ শক্তি মুখোমুখি হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমান সময়ে মধ্যপ্রাচ্যে চীনের কৌশলগত স্বার্থ সম্পৃক্ত হয়েছে। সে ক্ষেত্রে চীনও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারে। এমনটি হলে ট্রাম্প যে পরিকল্পনা করছেন, সেটি বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে। 

এখানে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন এবং নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পউভয়েই এই যুদ্ধ বন্ধ করতে উৎসাহী। তবে দুজনের কৌশল দুই রকমের। বাইডেন এই মুহূর্তে তাড়াহুড়া করে একটি যুদ্ধবিরতি করে তার মেয়াদের অনেক বিতর্ক ছাপিয়ে কিছুটা আলো ছড়িয়ে দিতে চাইছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প তার স্বভাবসুলভ হুমকি দিয়ে ইসরায়েলবিরোধী পক্ষগুলোকে দুর্বল করতে চাইছেন। তবে বাস্তবে ইসরায়েল যে এই মুহূর্তে বাইডেনের কোনো ধরনের চাওয়ার বিষয়ে খুব একটা তোয়াক্কা করছে না, সেটা সাম্প্রতিক সময়ে যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলা সত্ত্বেও গাজায় তাদের আক্রমণ অব্যাহত রাখার মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে যাচ্ছে। সুতরাং যুদ্ধবিরতির সব সম্ভাবনা ছাপিয়ে গাজা যুদ্ধ নিশ্চিতভাবেই নতুন মাত্রা পেতে যাচ্ছে।

 

লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

mfulka@yahoo.com

মন্তব্য
সেলাই করা খোলা মুখ

কিশোর গ্যাংয়ের সেকাল-একাল

মোফাজ্জল করিম
শেয়ার
কিশোর গ্যাংয়ের সেকাল-একাল

শুরুতেই একটি বোমা ফাটানো যাক। আজকালকার কিশোর গ্যাং নিয়ে যে এত কথাবার্তা, এত বকাঝকা, এত সমালোচনা শুনি চারদিকে, সেই কিশোর গ্যাং কিন্তু আজ থেকে ৭০-৮০ বছর আগেও রীতিমতো সক্রিয় ছিল। উনিশ শ পঞ্চাশের দশকের কথাই ধরুন না কেন, তখন আমার মতো এই অশীতিপর বৃদ্ধদের কিশোরকাল চলছে। আর বিশ্বাস করুন, তখন আমি বা আমার বন্ধুবান্ধব সবাই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিলাম।

জি, আঁতকে উঠবেন না। সত্যি বলছি, আমাদেরও পাড়ায় পাড়ায় শিশু-কিশোরদের গ্যাং ছিল। আর তাদের কাজ ছিল বিকেলে হৈচৈ করে মাঠে গিয়ে ফুটবল-ক্রিকেট খেলা, আর না হয় কারো বাড়ির পেয়ারা বা লিচু গাছ থেকে পেয়ারা-লিচু চুরি করে খাওয়া। বিদ্রোহী কবির মতো হাবুদের ডালকুকুরের তাড়া খাওয়া ছিল, মালীর ওই পিটুনিগুলোও হয়তো ক্বচিৎ পিঠে পড়ত।
আবার শীতকালে রঙিন কাগজের ঘুড়ি বানিয়ে সুতায় মাঞ্জা দিয়ে, আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে কাটাকাটি খেলাএগুলো সবই ছিল ওই গ্যাং বা দলের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। এর সবই যে সব সময় অহিংস কার্যক্রম ছিল তা নয়। এটা-ওটা নিয়ে ঝগড়া-ফ্যাসাদ, এমনকি কখনোসখনো দুই দলের মধ্যে কিল-ঘুষি, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়াও হতো। তবে অবশ্যই এসব ঘটনা ছিল বিরল।
আরেকটি মজার ব্যাপার ছিল আড়ি দেওয়া-দেওয়ি। এক দল বা একজন আরেক দল বা জনের সঙ্গে আড়ি ছিল, মানে কথা বলা বন্ধ করে দিল। রাস্তাঘাটে দেখা হলে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, একই মাঠে খেলাধুলা না করা, এগুলো ছিল আড়ির লক্ষণ। মোটকথা, শৈশব-কৈশোরের প্রায় সব কার্যক্রমই ছিল যূথবদ্ধ। এগুলো পরিচালিত হতো পাড়ার কোনো ক্লাবকে কেন্দ্র করে কিংবা কোনো বন্ধুর বাড়ির বৈঠকখানায়।
তবে যেভাবেই পরিচালিত হোক না কেন, শিশু-কিশোরদের এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে কোনো অসামাজিক ক্রিয়াকলাপের অভিযোগ শোনা যেত না। সেই উনিশ শ পঞ্চাশের দশকে একজন কিশোরের বিচরণক্ষেত্র ছিল তার বাসগৃহ, বিদ্যালয় ও খেলার মাঠ। বাসগৃহে মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথাবার্তা, মান-অভিমান, দাবিদাওয়াএই পর্যন্তই। এখনকার মতো টিভি, মোবাইল ইত্যাদির আবির্ভাবই হয়নি। ফলে স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফিরে এসে কিছু একটা মুখে দিয়েই সবাই ছুটত পাড়ার বন্ধুদের দঙ্গলে অথবা স্কুলের মাঠে। এই ছিল উনিশ শ পঞ্চাশের দশক বা তার আগের একটি কিশোরের জীবন। সেখানে পাড়ায় পাড়ায় যেসব সংগঠন গড়ে উঠত, সেগুলো হয়তো কোথাও একটি ক্লাব হিসেবে গড়ে উঠত পাড়ার বড়দের সাহায্য-সহযোগিতা ও নজরদারিতে। তবে বেশির ভাগ কিশোরের দলই ছিল পাড়ার অসংগঠিত মিলনক্ষেত্র। এটিই ছিল বর্তমান গ্যাংয়ের আদিরূপ। তবে আবারও বলি, এদের কারো বিরুদ্ধে কোনো প্রকার চুরি-চামারি বা অন্য কোনো অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ শোনা যেত না।

কিশোর গ্যাংয়ের সেকাল-একালতাহলে এই যে একটি নিরীহ, নিরুপদ্রব কৈশোরকাল, তা হঠাৎই এ রকম ষণ্ডা-গুণ্ডার রূপ ধারণ করল কেমন করে? এখন কেন তাদের নামের সঙ্গে গ্যাং নামক একটি মাস্তানসূচক শব্দ যুক্ত হয়ে পড়েছে, কেন লোকে তাদের নাম শুনলে দুআ-দরুদ পড়ে বুকে ফুঁ দেয়? সাম্প্রতিককালে পত্রপত্রিকায় তাদের কিছু কার্যকলাপের সংবাদ এমনভাবে এসেছে যে মনে হয়, অচিরেই তারা দেশের অপরাধজগতের নেতৃত্ব দেবে। সেদিন যেন আর বেশি দূরে নয়, যখন কোনো পাড়ায় তাদের ছায়া পড়েছে শুনলেই লোকে ঘরে খিল দিয়ে বসে ইষ্টনাম জপতে শুরু করবে।

প্রশ্ন হলো, কেন এমনটি হলো? এর কারণ অবশ্যই একটি-দুটি নয়, অনেকগুলো। সর্বাগ্রে যে বিষয়টি উল্লেখ করতে হয়, তা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যে সর্বগ্রাসী বিবর্তন ঘটেছে, তার ছোঁয়া প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে আমাদের এই অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল স্বল্পোন্নত দেশেও লেগেছে। ১২-১৪ হাজার মাইল দূরের ইউরোপ-আমেরিকা বা জাপানে যা ঘটে তার সংবাদ এক লহমায় বাংলাদেশে পৌঁছে যায় আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে। সে সংবাদ যে শুধু বিমল সন্তোষদায়ক কিছু, তা তো সব সময় নয়। এগুলো যেমন মানবকল্যাণধর্মী বিষয়ের কথা জানান দেয়, তেমনি খুনখারাবি, ব্যাংক ডাকাতি, লুটতরাজ, ছিনতাই ইত্যাদির রোমহর্ষক বিবরণও পরিবেশন করে। আর এসব কিছুর মধ্যে ভালো হোক, মন্দ হোক, একটি অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধ থাকে, যা একটি ১০-১২ বছরের কিশোরের মনে দারুণ পুলক জাগায়। এ ছাড়া আছে ছায়াছবি, যা টিভির কল্যাণে ঘরে বসে ২৪ ঘণ্টাই দেখা যায়। একজন নবীন দর্শক মনে করে, ছায়াছবি, টিভি সিরিয়াল বা কোনো সত্য ঘটনার নায়ক যদি অবলীলাক্রমে একটি মেয়ের হাতব্যাগ বা গলার চেইন বাজপাখির মতো চোখের পলকে হাপিশ করে হাওয়ায় মিলিয়ে যেতে পারে, তাহলে আমি পারব না কেন? আচ্ছা, একা যদি না পারি, তাহলে আমার দোস্ত যদু-মধু-কদুদের সঙ্গে নিলেই তো পারি। এভাবেই গঠিত হয় হাল আমলের কিশোর গ্যাং, সোজা কথায় উঠতি ডাকাতের দল। এরা এভাবে কচু-ঘেচু কাটতে কাটতে একদিন মানুষের গলা কাটতেও পারঙ্গম হয়ে ওঠে।

এ তো গেল গণমাধ্যম, বিশেষ করে টিভি, ফেসবুক ইত্যাদির ভূমিকা। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে শিশু-কিশোরদের অবসর বিনোদনের উপকরণের অভাব। স্বাধীনতার আগে সাত কোটি-সাড়ে সাত কোটি মানুষের দেশে প্রতিটি শহরে-নগরে শিশু-কিশোরদের জন্য খেলাধুলার মাঠ, পার্ক ইত্যাদি কয়টি ছিল আর এখন কয়টি আছে? আগে বিকেলবেলা ছেলেরা ছুটত খেলার মাঠে, আর এখন? এখন মাঠ নেই, আছে দুষ্টবুদ্ধি চর্চার গোপন-সেমি গোপন কেন্দ্র, যেখানে বসে নির্বিবাদে চলে সব ধরনের অপকর্মের প্রস্তুতি। আর পাঠাগার? এগুলো তো এখন প্রাগৈতিহাসিক যুগের নিদর্শন হতে চলেছে। অতএব পাড়ায় পাড়ায় কিশোর গ্যাং খেতাবধারী সংগঠনের প্রাদুর্ভাব আর যা-ই হোক, অস্বাভাবিক নয়।

পঞ্চাশ-ষাটের দশকে দেশের প্রায় সব জেলা শহরে (কোথাও কোথাও মহকুমা শহরেও) মুকুল ফৌজ, খেলাঘর ইত্যাদি কিশোর সংগঠনের শাখা ছিল। আর ছিল সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় স্কুল-কলেজে স্কাউট/কাবস ট্রুপ। শিশু-কিশোরদের আনন্দ-বিনোদন ও খেলাধুলার উপকরণ সংকটের দিনে এসব সংগঠনকে এখন পুনর্জীবিত করা বোধ হয় সময়ের দাবি।

আরেকটি বিষয় আজকাল আলোচনায় আসে না বললেই চলে। শিশু-কিশোরদের চরিত্র গঠনের জন্য ধর্মীয় শিক্ষার বিকল্প নেই, এ কথা অনস্বীকার্য। পাড়ার মক্তব-মসজিদ-মাদরাসা এবং মন্দির-গির্জা-প্যাগোডায় শিশুদের জন্য সীমিত আকারে হলেও ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা থাকলে শৈশব থেকেই তা শিশু-কিশোরদের নৈতিক চরিত্র গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সব শেষে সেই পুরনো কথাটিই স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, যা বহু যুগ আগে বাংলা সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য কবি গোলাম মোস্তফা তার অমর লেখনীর মাধ্যমে বলে গেছেন : আমরা নূতন, আমরা কুঁড়ি, নিখিল বন-নন্দনে/ওষ্ঠে রাঙা হাসির রেখা, জীবন জাগে স্পন্দনে। লক্ষ আশা অন্তরে/ঘুমিয়ে আছে মন্তরে/ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে/...

হে কিশোর, তোমার ওষ্ঠের ওই রাঙা হাসিটুকুই আমাদের অর্থাৎ বুড়োদের, সব দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রণা লাঘব করে দিতে পারে, তোমার কিশোর গ্যাংয়ের করাল ভ্রুকুটিরেখা নয়। ওই রাঙা হাসিটুকুই সূর্যোদয়ের মতো জাগাবে সারা জাতিকে, সারা বিশ্বকে, কোনো গ্যাংয়ের দস্যিপনা নয়। বিশ্বাস করো, এতটুকু বাড়িয়ে বলছি না।

সবাইকে খ্রিষ্টীয় নববর্ষের শুভেচ্ছা।

 

লেখক : সাবেক সচিব, কবি

mkarim06@yahoo.com

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ