<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৫ আগস্ট ২০২৪ বাংলাদেশ একটি অবিস্মরণীয় ইতিহাসের সাক্ষী হয়েছে। ছাত্রদের কোটাবিরোধী আন্দোলনের ৯ দফা এক দফায় পরিণত হয় এবং তার ফলে এই দিন ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে। এ বিজয়ে অবশ্যই ছাত্ররা প্রকৃত বিজয়ীর দাবিদার। বিজয়ীর মুকুট তাদের মাথায় শোভা পায় এবং সেই মুকুট কেউ ছিনিয়ে নিতে যাচ্ছে না। এই আন্দোলনে গণমানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশ নেওয়া কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। শুধু মৃত্যুর সংখ্যা হিসাব করলে দেখা যায়, প্রায় ৫০ শতাংশের অধিক ছাত্র নয় এমন ব্যক্তির মৃত্যু এই দাবির পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। অবিচ্ছেদ্যরূপেই তাই এই আন্দোলন ছাত্র-জনতার আন্দোলন হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তর্বর্তী সরকারে আমরা একটি ডাইনামিক উপদেষ্টামণ্ডলী পেয়েছি, যাঁরা নিজ নিজ কর্মে ও অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান ও দক্ষতাও ঈর্ষণীয়। গণমানুষের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁদের অনেকেরই আছে। তবু মাঠ পর্যায়ের রাজনীতি তাঁদের সবার জন্যই একটি নতুন অভিজ্ঞতা এবং চ্যালেঞ্জিং হিসেবে প্রতীয়মান হতে পারে। এরই মধ্যে বিভিন্ন দাবিদাওয়া নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের আন্দোলন, সড়ক অবরোধ, সচিবালয় ঘেরাও এবং তার ফল কঠিন ভবিষ্যতের ঈঙ্গিত দেয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না" height="286" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/08-10-2024/36.jpg" style="float:left" width="321" />অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দুটি চ্যালেঞ্জের একটি হলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা। স্বৈরাচারী সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে যেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ মামলা করা হচ্ছে, তা স্বৈরাচারী সরকারের দমননীতির ব্লুপ্রিন্ট। সাধারণ জনগণের একটি ধারণা (পাবলিক পারসেপশন) হলো, এই মামলাগুলো আপাতত আসামিদের আটকানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে। পরে সময়-সুযোগ বুঝে প্রকৃত তথ্যের ভিত্তিতে মামলা করা হবে। কিন্তু মনে রাখা দরকার, একজন ব্যক্তির বিপক্ষে করা একটি ভুল বা দুর্বল মামলা, সেই ব্যক্তির বিপক্ষে প্রকৃত মামলাও দুর্বল করে দিতে পারে। সাধারণ জনগণ এবং বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দিনশেষে মামলার প্রক্রিয়া ও গুণমান (মেরিট) নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এবং আদতে দোষী ব্যক্তির খালাস পাওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হবে। সুতরাং ব্যক্তির সুনির্দিষ্ট অপরাধের ধরন বিবেচনায় মামলা করতে হবে। এখন পর্যন্ত এ রকম যত মামলা হয়েছে, সেগুলো দ্রুত রিভিউ করে বাতিল বা রিভিশন করতে হবে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দপ্তর থেকে এ ক্ষেত্রে পরিষ্কার নির্দেশনা দিতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে স্বৈরাচার সরকারের দমন-পীড়ন কৌশল আবার ব্যবহার করে ছাত্র-জনতার এই অর্জন বৃথা হতে দেওয়া যাবে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সম্পর্কিত আরেকটি বিষয় হলো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মব জাস্টিস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নিয়ন্ত্রণ করতে না পারার ব্যর্থতা। এ ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি বলে মনে করি। দ্বিতীয় যে সমস্যাটির কিছুটা ঝলক এখন দেখা যাচ্ছে, তা ছাত্র-সমন্বয়ক সম্পর্কিত; যদিও অনেকে বলবেন, এ সম্পর্কিত প্রশ্ন উত্থাপন এখনো প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠেনি। তবু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যাকে আর বিচ্ছিন্ন বলার উপায় নেই। শিক্ষা উপদেষ্টা এরই মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরে বল প্রয়োগের বিরুদ্ধে বলেছেন, যদিও এটি অনস্বীকার্য যে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও কলুষিত করা হয়েছে। জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত শিক্ষক সম্প্রদায়ের বক্তব্য এবং কার্যক্রম দলীয় ক্যাডার বাহিনীর সঙ্গে পৃথক করা কঠিন হয়ে পড়েছিল। দেশের প্রচলিত আইনে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অবশ্যই বিচারের আওতায় আসবে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সমন্বয়ক বা সহসমন্বয়কের পরিচয়ে যে কর্তৃত্বমূলক দাবির আবরণে শাসন, তা চিন্তার খোরাক জোগায় বৈকি। অথচ ছাত্র-জনতার আন্দোলনের একটি বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল কর্তৃত্বমূলক শাসনের অবসান। এরই মধ্যে কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু সমন্বয়ক তাঁদের সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন শুধু এই শঙ্কা থেকেই। বিশেষ করে স্কুলগুলোতে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষকদের ওপর দৃষ্টিকটুভাবে বল প্রয়োগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সুস্থ পরিবেশের জন্য সহায়ক নয়। দাবি আদায়ে আলটিমেটাম বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক বা ব্যক্তির দুর্নীতির তথ্য দেওয়া আর দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা এককথা নয়। বয়সে ছোট আর আবেগী হওয়ার জন্য হয়তো স্কুলপড়ুয়ারা এ ধরনের কাজের ফল সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নয়। কিন্তু এ ধরনের কাজে অংশ নেওয়া পরবর্তী সময়ে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক না-ও হতে পারে। সুতরাং তাদের সঠিক পথে পরিচালনা করা এবং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা জরুরি বলে মনে করি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছাত্র-সমন্বয়কদের উচিত এই সরকারের ওপর বিশ্বাস রাখা, তাদের মুক্তভাবে কাজের সুযোগ করে দেওয়া এবং নিজেদের মূল কাজ পড়াশোনায় ফিরে যাওয়া। পাশাপাশি নিজেদের একটি প্রেশার গ্রুপ বা ওয়াচডগের ভূমিকা বজায় রাখা। যদি সেটি সম্ভব না হয় এবং তারা নিজেদের বর্তমান ভূমিকা প্রয়োজনীয় বলে মনে করে, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের উচিত দেশব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাঁদের সহসমন্বয়কদের জন্য স্পষ্ট নীতিমালা বা কার্যপ্রণালী তৈরি করা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বৈরাচারের পতন এবং বাকস্বাধীনতার আগল খুলে যাওয়ার পর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠেছে পাবলিক জাজমেন্ট বা পাবলিক ট্রায়ালের একটি মাধ্যম। যে কথাগুলো বলা যেত না, যে ক্ষতগুলো দিনের পর দিন একজন বয়ে বেড়িয়েছে, তা আজ প্রকাশ্যে চলে আসছে। তবে পাবলিক ট্রায়ালের সমস্যা হলো, এতে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ থাকে না। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর অভিযোগের সারবত্তা (মেরিট) থাকলেও এতে নিরীহ ব্যক্তির অভিযুক্ত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অনেক সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির কার্যকারণের ব্যাখ্যা থাকলেও তাঁর আত্মপক্ষ সমর্থনের আগেই সামাজিক বিচার হয়ে যায়। সুতরাং বাকস্বাধীনতার মানে শুধু একপক্ষীয়ভাবে নিজের ইচ্ছামতো কিছু বলার মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে এর মর্ম উপলব্ধি সাপেক্ষে সঠিক মাত্রায় ও উপায়ে ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় বলেই মনে করি। না হলে হয়তো এই বাকস্বাধীনতার স্বাধীনতা আবার আমরা অচিরেই হারাব। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটি কথা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে এই দেশ এখনো স্থিতিশীল অবস্থায় পৌঁছেনি। স্বৈরাচারসহ বৈশ্বিক শক্তি এখনো এই দেশকে অস্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার জন্য সক্রিয় রয়েছে। সে ক্ষেত্রে জনগণসহ ছাত্রদের সজাগ দৃষ্টি এবং সরকারের প্রতি প্রত্যক্ষ সমর্থন দরকার আছে। এ ক্ষেত্রে সরকার, প্রতিষ্ঠানগুলো, জনগণ এবং সর্বোপরি ছাত্র সম্প্রদায় সংযত, সহমর্মী, পরিশীলিত এবং পেশাদার আচরণে অপরাগ হলে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন আরো একবার থমকে যাবে। এই অন্তর্বর্তী সরকারকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p> </p>