<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত ১১ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে নির্বাচনব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, সংবিধান ও দুর্নীতি দমন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠনের কথা বলেন। এরই মধ্যে ছয়জনের নেতৃত্বে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং কমিটিগুলো কাজ শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে ওই সব কমিশনের ১ অক্টোবর থেকে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও সেটি এখন শুরু হয়েছে ৩ অক্টোবর থেকে (সংবিধান সংস্কার কমিশন বাদে)। কারণ কমিশনগুলোর কাজ শুরু করার আগেই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে উপদেষ্টা পরিষদের আরেক দফা আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং গত ৫ অক্টোবর থেকে সেই আলোচনা শুরু করা হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংস্কার নিয়ে ওই আলোচনার প্রথম দিন অংশ নেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, হেফাজতে ইসলাম, বাম গণতান্ত্রিক জোট, <img alt="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/14-10-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="311" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/14-10-2024/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" style="float:left" width="350" />ইসলামী আন্দোলন, এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতারা। ওই সংলাপে বেশির ভাগ দল নির্বাচনকেই প্রাধান্য দিয়েছে। সংলাপে আগামী জাতীয় নির্বাচন, নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কারসহ মোটামুটি ১৮টি বিষয়ে কথা বলেছে বিএনপি। তবে দলটির মূল চাওয়া ছিল কবে নাগাদ নির্বাচন হবে, তার একটি রোডম্যাপ। দলটির নেতারা রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে তাঁদের ঘোষিত ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব সামনে রেখে কথা বলেছেন। অন্যদিকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে সংস্কার চেয়ে নির্বাচনের পথে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে জামায়াত। এ জন্য জামায়াত অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সংস্কার ও নির্বাচন প্রশ্নে দুটি রোডম্যাপ চেয়েছে। তারা নির্বাচনের চেয়ে সংস্কারকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানায়। তাদের মতে, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংস্কার খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং সংস্কার ঠিকমতো না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রধান উপদেষ্টা সংস্কারকাজের পাশাপাশি নির্বাচনের কার্যক্রম এগিয়ে নেবেন বলে দলগুলোর নেতাদের জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও তার জোটের শরিক দলগুলো এবং জাতীয় পার্টিকে এ সংলাপে ডাকা হবে কি না সন্দেহ। আর ডাকা হলেও এ মুহূর্তে তাদের থেকে সাড়া না পাওয়ার সম্ভাবনাটাই বেশি।     </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আলোচনায় রাজনৈতিক দলগুলো তাদের বিভিন্ন সুপারিশের কথা উত্থাপন করেছে। কমিশনগুলো থেকে সুপারিশ পাওয়ার পর এসব সুপারিশ সঙ্গে নিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ নিজেদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করতে পারে এবং চূড়ান্ত সুপারিশগুলো নির্দিষ্ট করতে পারে। অথবা দলগুলো থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ কমিশনের মধ্যে বিতরণ করা হতে পারে, যাতে তাদের সুপারিশ প্রণয়নে সুবিধা হয়। এ ছাড়া শোনা যাচ্ছে যে সংস্কারকাঠামো চূড়ান্ত করার আগে উপদেষ্টা পরিষদ সমাজের বিভিন্ন স্তরের, বিশেষ করে ছাত্রসংগঠন, সিভিল সোসাইটি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আরেকবার পরামর্শমূলক আলোচনায় বসতে পারে। ৫ অক্টোবরের আলোচনার পর অনুষ্ঠিত সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছয়টি কমিশন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে কথা বলবে। তিন মাসের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবে। এরপর ওই প্রতিবেদন নিয়ে আবার অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সঙ্গে আলোচনা করবে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যের ওপর নির্ভর করবে নির্বাচনের সময়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকার গত ৩ অক্টোবর সংবিধান সংস্কার কমিশন ছাড়া বাকি পাঁচটি সংস্কার কমিশনের সদস্যদের নামসহ কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কমিশন ৩ অক্টোবর থেকে কার্যক্রম শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত বিবেচনা করে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে। যদি এই সময়সীমা কোনো কারণেই আর বর্ধিত করা না হয়, তাহলে আগামী বছরের শুরুতেই (জানুয়ারি মাসের প্রথম দিন বুধবার) ওই প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টার হাতে আসবে। তারপর উপদেষ্টা পরিষদ হয়তো জানুয়ারির মধ্যেই সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পরামর্শমূলক মতবিনিময় কার্যক্রমটি শেষ করবে। সব রকমের আলাপ-আলোচনা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা সমাপনান্তে পরিষদ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপের সময় ছাড়াও বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে নির্বাচনের রোডম্যাপ জানাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করে যাচ্ছে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের জন্য নির্বাচন অবশ্যই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত অন্য অনেক ক্ষেত্রেরই যে সংস্কারের প্রয়োজন হবে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। নির্বাচনব্যবস্থার পরিপূর্ণ সংস্কার না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই এ ক্ষেত্রে নির্বাচনপ্রক্রিয়া এবং প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোর প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। বদিউল আলম মজুমদারকে প্রধান করে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছে এবং তাঁরা হয়তো এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। ওই কমিটিতে একজন ইলেকট্রনিক ভোটিং ও ব্লকচেইন বিশেষজ্ঞকেও রাখা হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আজ থেকে প্রায় এক দশক আগে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বচ্ছ নির্বাচনী ব্যবস্থাপনা : একটি প্রস্তাব</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শিরোনামে একটি লেখায় লিখেছিলাম, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন পদ্ধতির অনুশীলন গণতান্ত্রিক দেশে উত্তরণের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ। এই অনুশীলনটি ধীরে ধীরে একটি দেশের রাষ্ট্রীয় চরিত্র হয়ে দাঁড়ায়। তখন বাস্তব অর্থেই দেশটি গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। অন্যদিকে কোনো নির্বাচনে যদি জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত না হয় বা না হওয়ার আশঙ্কা থাকে, তখনই ওই নির্বাচনপদ্ধতি নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। প্রশ্নবিদ্ধ এ ধরনের নির্বাচনে যাঁরা নির্বাচিত হন, তাঁরা জনগণকে প্রকৃত অর্থে প্রতিনিধিত্ব করেন না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে সেদিন আমি আরো লিখেছিলাম, ইলেকট্রনিক ভোটিং প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রশ্নহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব। সরকার আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে আসছে। এ ক্ষেত্রে প্রত্যেকের ছবিসহ আঙুলের ছাপ নেওয়া হয়। ভোটার তালিকা প্রণয়নের সময় জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য দেওয়া ছবি ও আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করতে হবে। ওই ছবি ও বৃদ্ধাঙ্গুলির ছাপ নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার ডাটা ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকবে। নির্বাচনের সময় ভোটার প্রথমেই তাঁর আইডি কার্ডটি পোলিং অফিসারকে প্রদর্শন করবেন। এরপর ব্যালট পেপারের জন্য ভোটারের বৃদ্ধাঙ্গুলি নির্দিষ্ট ইলেকট্রনিক যন্ত্রের ওপর রাখতে হবে। আঙুলের ছাপটি যন্ত্রে সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে মিলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যালট পেপারটি প্রিন্ট হবে এবং ভোটার তাঁর পছন্দের মার্কায় কলম দিয়ে টিক দিয়ে ব্যালট বাক্সে ফেলবেন; অথবা ব্যালট পেপারটি স্ক্রিনে দেখা যাবে এবং ভোটার তাঁর পছন্দের মার্কায় মাউস দিয়ে ক্লিক করলেই ভোট দেওয়া হয়ে যাবে। প্রযুক্তিটি নিশ্চিত করবে যে ভোটারের ছবি ও আঙুলের ছাপের সঙ্গে কম্পিউটারে রক্ষিত তথ্যের মিল না হলে কোনোক্রমেই ব্যালট পেপারটি প্রিন্ট হবে না বা স্ক্রিনে দেখা যাবে না। একজন ভোটারের আঙুলের ছাপে মাত্র একবারই ব্যালট পেপার প্রিন্ট হবে বা দেখা যাবে। আমাদের বিশ্বাস, এ ধরনের সফটওয়্যার তৈরি করা সম্ভব। পদ্ধতিটি ব্যয়বহুল মনে হলে বিভাগ অনুযায়ী বিভিন্ন তারিখে নির্বাচনের আয়োজন করা যায়। সার্বিক বিবেচনায় নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কারে ইলেকট্রনিক ভোটিং প্রক্রিয়ার বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোনো সংস্কারই ভালো ফল দেবে না যদি ওই সব ক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সততা ও নিষ্ঠার প্রতি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ না হন। কাগজে-কলমে সংস্কারের বিষয়াদি লিপিবদ্ধ থাকলেই হবে না, সেসবের যথাযথ বাস্তবায়ন করাটাই হচ্ছে আসল কথা। তাই আমাদের অর্থাৎ সাধারণ জনগণের যেমন মনমানসিকতা ও চিন্তা-চেতনার সংস্কার প্রয়োজন, তেমনি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এবং রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন কাজকর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ত মানুষগুলোর মনমানসিকতা ও চিন্তা-চেতনার সংস্কারও অতীব জরুরি। রাষ্ট্র প্রশাসনে জড়িতদের যেমন দেশ ও জনগণের কল্যাণে নিবেদিত হতে হবে, একইভাবে সব রাজনৈতিক নেতৃত্বের উদ্দেশ্য থাকবে দেশ ও দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ জীবনের নিশ্চিয়তা  দেওয়ায় সহযোগিতা করা। বিদ্যমান মনমানসিকতা এবং চিন্তাধারা বদলাতে হবে অর্থাৎ সে ক্ষেত্রেও সংস্কার করতে হবে। সেটি না করতে পারলে যতসংখ্যকই সংস্কার কমিশন গঠন করা হোক না কেন, যাদের মাধ্যমে এবং যাদের জন্য সেটি করা হচ্ছে, তাদের মনমানসিকতা ও চিন্তা-চেতনার সংস্কার করা না গেলে কিছুতেই কিছু হবে না। বিদ্যমান অবস্থার কোনো পরিবর্তন হবে না, দেশ ও মানুষের কোনো কল্যাণই সেই সংস্কার বয়ে আনতে সক্ষম হবে না। অর্থাৎ সংস্কারকাঠামো প্রণয়নে যদি দেশের সর্বক্ষেত্রের মানুষের মনমানসিকতা ও চিন্তা-চেতনার সংস্কার ঘটানোর দিকগুলোর কথাও চিন্তা করা হয়, তাহলেই একমাত্র কাঙ্ক্ষিত ফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব</span></span></span></span></p>