<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুর্নীতির উৎস থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে (ইনস্টিটিউশনস) সংস্কার আনার ব্যাপারে বাংলাদেশ যখন সংকল্পবদ্ধ, ঠিক সেই সময় নোবেল পুরস্কার পেল বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠানের তুলনামূলক গুণাগুণ বিচার এবং বৈষম্য ব্যাখ্যা। অর্থনীতিতে এবারের তিন নোবেল বিজয়ীর মূল বক্তব্য প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতার পার্থক্য এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তার তাৎপর্য। যুক্তরাষ্ট্রের আরিজোনা ও মেক্সিকোর মাঝে একটি দেয়াল তাদের আলাদা করে রেখেছে। উত্তরে উন্নত আরিজোনা, দক্ষিণে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র মেক্সিকো অথচ ভৌগোলিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত বা ধর্মীয় উপাদান নয়, তাদের আকাশ-পাতাল পার্থক্যের পেছনে কাজ করেছে গুণ-মান সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান, যা উত্তরে আরিজোনায় আছে, দক্ষিণের মেক্সিকোতে অনুপস্থিত। বাংলাদেশের চলমান প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার প্রক্রিয়া চাইলে তিন নোবেলজয়ী থেকে অনেক কিছু নিতে পারে। (সূত্র : রাজু নুরুল, ফেসবুক) </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুই.</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের ব্যাপক দুর্নীতি এখন বহুল আলোচিত। ব্যাংক খাতের কথা ধরা যাক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে বর্তমানে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৫। বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার, এস আলমসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এখন বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮টি কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখা (লাইফ সাপোর্ট) হয়েছে। এই ১৮টির মধ্যে ৯টিই মুমূর্ষু। বাকি ৯টি অতি রুগ্ণ, কোনোমতে টিকে আছে। এ ছাড়া রুগ্ণ প্রতিষ্ঠান হিসাব করলে দেশের মোট ২৮টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবস্থাই খারাপ। কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠান।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রকাশিত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="বৈষম্য বাড়ে কমে প্রতিষ্ঠানের গুণাগুণে" height="280" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/19-10-2024/1.jpg" style="float:left" width="321" />দুর্নীতি সম্পর্কিত ওপরের ভয়াবহ চিত্রটি টিপ অব আইসবার্গ হিমশৈলের উপরিভাগ মাত্র। তবে বাংলাদেশে ডুবতে যাওয়া ব্যাংক খাতে আশার আলো দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে টাস্কফোর্স গঠন, কমপক্ষে এক ডজন ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন, দখলদারদের হাত থেকে ব্যাংক উদ্ধার এবং কাগুজে নোট ছেপে ব্যাংকের তারল্য সংকট না কমানোর সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ফল দেবে বলে মনে করছেন তাঁরা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বলার অপেক্ষা রাখে না যে বাংলাদেশের দুর্নীতি সর্বগ্রাসী রূপ নিয়ে উপস্থিত সব জায়গায়, সব খাতে, নগরে-বন্দরে এবং সদরে-অন্দরে। অভিযোগ আছে, দুর্নীতিবাজদের দাপটে কাঁপছে দেশ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেউ বা ছিলেছুলে বাকলা রেখে দিয়ে সুদূর কানাডার টরেন্টোর বেগমপাড়ায় পাড়ি, সেকেন্ড হোমে, উন্নত বিশ্বে, কেউ বা ভেতরে থাকছেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ম্যানেজ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> করে। প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতায় এবং রাজনৈতিক সমর্থনে তারা মরে থাকে বাঁচার মতো। রাজনীতি, অর্থনীতি, এমনকি সমাজনীতির নিয়ন্ত্রক এসব দুর্নীতিবাজ। ব্যাপক দুর্নীতির কারণে জনগণের সেবক হিসেবে সরকারের ওপর আস্থা বলতে গেলে এখন শূন্যের কোঠায়। তাই বিগত, বর্তমান কিংবা আগত সরকারের মুখে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের কথা শুনলে অথবা মূল্যস্ফীতি হ্রাস কিংবা কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা শুনলে ঘোড়াও নাকি হাসতে চায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিন.</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্ভবত ২০১৭ সালে প্রিয় ছাত্র অর্থনীতিবিদ মিনহাজ মাহমুদ ও বিখ্যাত জাপানি অর্থনীতিবিদ ইয়াসুকু সাওয়াদা প্রসিদ্ধ এক পুস্তকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুশাসনের চ্যালেঞ্জ : প্রাতিষ্ঠানিক মান এবং বাংলাদেশে আস্থা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শিরোনামে একটি সুন্দর অধ্যায় উপস্থাপন করেছেন। ওই অধ্যায়ের বিষয়বস্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক বলেই হাতে কলম তোলা আর কি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর আগে বলে রাখা ভালো যে কয়েক শ বছর আগে উন্নয়নের জন্য কার্যকর রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং সুশাসনের গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেছিলেন অ্যাডাম স্মিথ ও জন এস মিল। নব্বইয়ের দশকে ডগলাস নর্থ বললেন, তৃতীয় বিশ্বে ঐতিহাসিক স্থবিরতা এবং সমসাময়িক অনুন্নয়নের জন্য দায়ী কম খরচে চুক্তির কার্যকরীকরণে ব্যর্থতা। অন্যদিকে ৪০টি অশিল্পায়িত দেশের ১০০ বছরের তথ্য নিয়ে এক গবেষক উপসংহার টানলেন এ রকম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রবৃদ্ধিকে সজোরে সামনে ঠেলে দেয় যে দুই উপাদান তার একটি হলো রাজনৈতিক সংগঠন এবং অপরটি সরকারি প্রশাসন। বলা বাহুল্য, পরবর্তীকালে ডগলাস নর্থের পথ অনুসরণ করে অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানীরা উন্নয়নের জন্য সুশাসনের গুরুত্ব একনিষ্ঠভাবে তুলে ধরতে থাকেন। আরো একটি কথা, প্রারম্ভিক পর্যবেক্ষণে দুর্নীতিকে অর্থনীতির চাকার গ্রিজ হিসেবে ধরা হতো, কিন্তু ইদানীং সে ধারণা প্রায় অস্তমিত, বরং কম দুর্নীতির বিনিময়ে বেশি আয় তত্ত্ব প্রাধান্য পেতে থাকে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চার.</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মজার কথা, মাহমুদ ও সাওয়াদা মনে করেন, বাংলাদেশের শাসনের সব চিহ্নই যখন দুর্বল এবং সময়ের আবর্তনে ক্ষেত্রবিশেষে অবনতি ঘটেছে, তখন দেশটি অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধির হার প্রত্যক্ষ করে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল দুর্নীতি ধারণা সূচকের মতে, ইদানীং বাংলাদেশের স্কোর এমনভাবে উন্নীত হয়নি যে কম দুর্নীতি ও বেশি প্রবৃদ্ধির মধ্যকার ইতিবাচক সম্পর্ক পাওয়া যাবে। যখন উন্নয়ন অর্থনীতিবিদদের ধারণা বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিজ্ঞতা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হতবুদ্ধিকর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">, তখন একই সঙ্গে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে ক. এমন ক্ষেত্র কি আছে, যেখানে শাসন বড় কোনো সমস্যা নয়; খ. বা শাসনের সূচক একপেশে বিধায় বাস্তব অবস্থা প্রতিফলিত হয় না; গ. অথবা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি জ্বালানি পেয়েছে এমন উপাদান ও নীতিমালা থেকে, যেগুলো অপশাসনপ্রবণ ছিল না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যা হোক, একটি দেশের প্রাতিষ্ঠানিক গুণ-মান অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা দান করে এবং তা ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন ধরে রাখার রক্ষাকবচ হিসেবে থাকতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, প্রতিষ্ঠানগুলোর মান বা তাদের কৃতিত্ব তাদের ওপর জনগণের আস্থার নিয়ামক হয়ে ওঠে, যা আবার একটি সমাজে সাধারণ আস্থাকে প্রভাবিত করে থাকে। অন্য কথায়, প্রাতিষ্ঠানিক আস্থা উঁচু মাত্রায় থাকলে তা নিশ্চিতভাবে ব্যক্তি-ব্যক্তি (ইন্টারপারসোনাল ট্রাস্ট) আস্থা সৃষ্টিতে অবদান রাখে। ফলে বিনিময় খরচ হ্রাস পায়, অর্থনীতির উপকার হয়। অনেক গবেষণা বলছে, যেহেতু মানুষের মধ্যে আস্থা সহযোগিতা সৃষ্টে অবদান রাখে, তাই এটি প্রবৃদ্ধির জন্য উপকারী। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণত যে বিষয়টি অনুভব করা হয় না, তা হলো দুর্নীতি কী করে পরোক্ষভাবে আন্ত ব্যক্তি আস্থা (ইন্টারপারসোনাল ট্রাস্ট ) হ্রাস করে বিনিময় খরচ বৃদ্ধি করে। যুক্তিটি এই যে দুর্নীতি সরকারি কৃতিত্বকে বাধাগ্রস্ত করে এবং জনগণের চাহিদা মেটাতে সরকারি পারঙ্গমতা প্রশ্নের মুখোমুখি পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ মনে করে না যে সরকার তাদের চাহিদা পূরণে সক্ষম। এক গবেষক দেখিয়েছেন যে পুলিশ ও বিচার বিভাগের ওপর বিশ্বাস এবং আন্ত ব্যক্তি আস্থার সম্পর্ক অত্যন্ত শক্তিশালী। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাঁচ.</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে লেখকদ্বয় দুর্নীতির অন্য একটি দিক তুলে ধরেছেন, যা চলমান আলোচনায় অনুপস্থিত। ধারণা করা হয় যে উঁচু দুর্নীতির দেশগুলোর নাগরিকরা রাজনৈতিক পদ্ধতির কৃতিত্ব মূল্যায়নে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে এবং সরকারি আমলাদের ওপর তাদের আস্থা অনেক নিম্নে। যদি ধরে নেওয়া যায় যে সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর আস্থা মানে মানবজাতির ওপর আস্থার এক নির্দিষ্ট নমুনা, তাহলে রাজনৈতিক এবং ব্যক্তি স্তরে আস্থা পারস্পরিক সম্পর্কিত। কারো মতে, দুর্নীতির কারণে উন্নয়নশীল দেশের সরকারের ওপর নিম্নগামী আস্থা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে বড় বাধা এবং সরকার কর্তৃক উচ্চারিত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুর্নীতি নির্মূল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জিরো টলারেন্স</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> আপ্তবাক্য মানুষের বিশ্বাসে চিড় ধরায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যদি প্রতিষ্ঠানের ওপর নাগরিকের আস্থা প্রণালীবদ্ধভাবে আন্ত ব্যক্তিগত আস্থায় প্রভাব ফেলে, সে ক্ষেত্রে নিম্নমানের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। মাহমুদ ও সাওয়াদা বাংলাদেশের মানুষের দুর্নীতির ওপর ধারণা (পারসেপশন) এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থার সংযোগ দেখতে চেয়েছেন। মনে রাখা দরকার, দুর্নীতি শুধু পাবলিক প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব নয়, যার ওপর ব্যক্তি খাতের প্রসার এবং বড় দাগে উন্নয়ন নির্ভরশীল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সামাজিক খাতেও দুর্নীতি অবাধ। বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে টিআইবির ২০১৪ সালের পর্যবেক্ষণ প্রণিধানযোগ্য। সাম্প্রতিক এক অধ্যয়ন প্রতিষ্ঠানের ওপর বর্ধনশীল রাজনৈতিক প্রভাব এবং গণতান্ত্রিক শাসনে এর তাৎপর্য নিয়ে মন্তব্য করেছে। বলা বাহুল্য, এমন পরিস্থিতিতে পাবলিক প্রতিষ্ঠানের ওপর নাগরিকের আস্থা খুব কম থাকাই স্বাভাবিক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্ভবত এই প্রথম ২০১৪ সালে করা মাহমুদ ও সাওয়াদার একটি গবেষণা দেখতে চেয়েছে প্রতিষ্ঠানের দুর্বল গুণ-মান কিভাবে প্রতিষ্ঠান ঘিরে মানুষের মান নির্ণায়ক (নরমেটিভ) প্রত্যাশাকে </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রূপান্তর করে। দেখা গেল, দুর্নীতির ধারণা ও প্রতিষ্ঠানের ওপর আস্থা বেশ শক্তভাবে সম্পর্কিত। যাঁরা ভাবেন দুর্নীতি বেশি, তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনাস্থার আশঙ্কা প্রবল। দুই. ইন্টারপারসোনাল ট্রাস্ট এবং প্রাতিষ্ঠানিক ট্রাস্টের মধ্যকার সম্পর্ক শক্তিশালী। সরকারি সংস্থার ওপর আস্থা শুধু তাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য নয়, বরং গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তৈরিতে জনগণের সমর্থনের জন্যও দরকার। তিন. পাবলিক প্রতিষ্ঠানের ওপর প্রদর্শিত মানুষের আস্থা কম এবং পরিণতিতে দুর্নীতির ধারণা নাগরিকের আস্থা হ্রাস করে। চার. আন্ত ব্যক্তি আস্থা এবং প্রাতিষ্ঠানিক আস্থার গভীর সংযোগ বেশ তাৎপর্য বহন করে। আমলাতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের নিরপেক্ষতার অভাব আন্ত ব্যক্তি আস্থা হ্রাসে ভূমিকা রাখে। তেমনি নিরপেক্ষতা আস্থা বৃদ্ধি করে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">টিআইবির তথ্য বিশ্লেষণ করে এবং অন্য এক সূত্র ধরে গবেষকরা বলছেন, ২০০৬-০৭ এবং ২০১১-১২ সালে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে উন্নতি ঘটে থাকলেও ২০১২-১৩ সালে অবনতি ঘটে। শাসন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্ন আয় দেশের গড়ের ওপরে হলেও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের গড়ের নিচে। এর অর্থ দাঁড়ায় দুর্নীতি কমিশন প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে, যাতে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের বন্ধনীতে থাকা যায়। সব শেষে সরকারি প্রতিষ্ঠানের গুণ-মান বৃদ্ধির বিকল্প নেই; এসব প্রতিষ্ঠান সরকারি নীতি বাস্তবায়ন করে থাকে, যা লক্ষ্য অর্জন ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মোটকথা, বৈষম্য হ্রাস করতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের বিকল্প নেই। যত শিগগির হয়, তত ভালো। </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অর্থনীতিবিদ, সাবেক উপাচার্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p>