<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বরাবরই অস্থিতিশীল এবং সংঘাতপূর্ণ। ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ, সীমান্ত বিরোধ এবং সামরিক সংঘাত এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের মূল বিষয়বস্তু হিসেবে কাজ করে আসছে। ইতিহাসে যুদ্ধ, রাজনৈতিক টানাপড়েন এবং সীমান্তে সংঘাতের কারণে দুই দেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক একাধিকবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে ২০২৪ সালের সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) সম্মেলন বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে, যদিও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন না, কিন্তু ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে পাকিস্তানে পাঠানো এক গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এসসিও একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক জোট, যেখানে চীন, রাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশ অংশ নেয়। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ২৩তম এসসিও সম্মেলনে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের পাকিস্তান সফর নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। প্রায় এক দশক পর প্রথমবারের মতো ভারতের কোনো উচ্চপদস্থ প্রতিনিধি পাকিস্তান সফর করেছেন, যা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের সম্ভাব্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে। ২০২৪ সালের এসসিও সম্মেলনে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পাকিস্তান সফর করেন এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের আতিথ্য গ্রহণ করেন। সম্মেলনের সমাপনী ভাষণে জয়শঙ্কর বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের ঘাটতি বা প্রতিবেশীর মতো সম্পর্কের অভাব নিয়ে আন্তরিক আলোচনা হওয়া প্রয়োজন। তাঁর বক্তব্যে প্রতিফলিত হয় যে উভয় দেশের মধ্যে পারস্পরিক অবিশ্বাস ও সহযোগিতার ঘাটতি প্রকৃত সমস্যা সমাধানে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, যদি সত্যিকারের বন্ধুত্ব এবং ভালো প্রতিবেশী সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়, তাহলে কিছু স্বচ্ছ ও আন্তরিক বিশ্লেষণ এবং সমস্যার কারণগুলো খুঁজে বের করা আবশ্যক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জয়শঙ্করের পাকিস্তান সফরটি প্রতীকী হলেও তাৎপর্যপূর্ণ। প্রায় এক দশক পর একজন ভারতীয় মন্ত্রী পাকিস্তান সফর করছেন, যা কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে। ২০১৫ সালে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পাকিস্তান সফর করেছিলেন এবং সেই সফরের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরো তিক্ত হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলা এবং পরবর্তী বালাকোট বিমান হামলা, ভারতের কাশ্মীরের সাংবিধানিক স্বতন্ত্রতা বাতিলের পর থেকে সম্পর্ক পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে; যদিও জয়শঙ্কর পাকিস্তানে কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন না বলে জানিয়েছিলেন, তাঁর সফরটি প্রতীকীভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেখাচ্ছে যে ভারত কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করতে ইচ্ছুক, তবে সেই সম্পর্ক সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের কঠোর অবস্থানের ওপর ভিত্তি করেই হবে। এর পাশাপাশি এসসিও সম্মেলন ভারতের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মঞ্চ, যেখানে তারা চীনের প্রভাব এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপড়েনকে কৌশলগতভাবে মোকাবেলা করতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন ও এসসিও সম্মেলন" height="210" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/10.October/19-10-2024/5.jpg" style="float:left" width="320" />মধ্যপ্রাচ্যের চলমান সংঘাত এবং যুদ্ধের কারণে অস্ত্র ব্যবসার প্রসার ঘটেছে। এই অঞ্চলটি বড় শক্তিগুলোর জন্য অস্ত্র রপ্তানির একটি লাভজনক ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে, যেখানে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে দেখা যায়। এসসিও সম্মেলনে জয়শঙ্কর স্পষ্টভাবে জানান যে ভারত সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদ এবং উগ্রবাদের বিরুদ্ধে এসসিওর কৌশলগত অবস্থানকে সমর্থন করে। তিনি চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন। চীন-পাকিস্তান বন্ধুত্ব এবং চীন-রাশিয়া জোটের বিপরীতে ভারত ও রাশিয়ার ঐতিহাসিক মৈত্রী একটি অনন্য কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই বাস্তবতায় এসসিওতে ভারতের ভূমিকা নতুন কৌশলগত অংশীদারির দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসসিও সম্মেলনে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জয়শঙ্করের সফর এবং তাঁর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, ভারত সরাসরি আলোচনার পরিবর্তে আঞ্চলিক ফোরামগুলোর মাধ্যমে কৌশলগত আলোচনা করতে আগ্রহী। এসসিও সম্মেলন এমন একটি প্ল্যাটফরম হিসেবে কাজ করছে, যেখানে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের বিষয়ে সীমিত আলোচনার সুযোগ থাকলেও এটি নতুন অংশীদারি এবং কৌশলগত সহযোগিতার দিকে ইঙ্গিত দেয়। দুই দেশের মধ্যে সরাসরি আলোচনার অভাবে তৃতীয় পক্ষ এসসিওর মাধ্যমে একটি মধ্যস্থতার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কের এই নতুন পর্যায়ে এসসিও সম্মেলনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, যদিও এসসিও সরাসরি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতিতে কাজ করছে না, তবে এটি দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত আলোচনা এবং অংশীদারি তৈরির একটি মাধ্যম হতে পারে। তবে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সন্ত্রাসবাদ, সীমান্ত বিরোধ এবং কাশ্মীর সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত প্রকৃত সম্পর্কের উন্নয়ন সম্ভব নয়। দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় এসসিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তবে এর জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে আন্তরিকতা এবং আন্তরিক আলোচনার প্রয়োজন হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন সহজ কাজ নয়। দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক ও সামরিক উত্তেজনা বিরাজ করছে এবং উভয় দেশেরই শক্তিশালী জাতীয়তাবাদী অবস্থান রয়েছে। কিন্তু বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দুই দেশের সম্পর্কের পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রথমত, এসসিও সম্মেলন ভারতের জন্য চীনের সঙ্গে সম্পর্কের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্র। ভারতের নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্বার্থ চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে এবং চীন-পাকিস্তান মৈত্রী ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ অবস্থায় ভারতের জন্য কূটনৈতিকভাবে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন প্রয়োজন। পাকিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে ভারতকে এই সম্পর্ক পুনর্বিবেচনা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নয়নে রাশিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। রাশিয়া, যা ভারতের দীর্ঘকালীন মিত্র, এখন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করছে। তবে রাশিয়া এখনো দক্ষিণ এশিয়ায় ভারসাম্য বজায় রাখতে চায়। রাশিয়ার এই ভূমিকা ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। এসসিও সম্মেলনে জয়শঙ্করের সফর এবং তাঁর বক্তব্য প্রমাণ করে যে ভারত পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নে আগ্রহী হলেও সে সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে কোনো সমঝোতা করবে না। অন্যদিকে পাকিস্তানও তার ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানকে মজবুত করতে আন্তর্জাতিক ফোরামে অংশ নিচ্ছে। এসসিও সম্মেলন ভবিষ্যতে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তবে বাস্তব সমস্যাগুলোর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এই সম্পর্কের পুনর্গঠন সম্ভব নয়। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতি আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এসসিও সম্মেলন এই সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে যে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন হতে পারে এবং ভবিষ্যতে দক্ষিণ এশিয়ায় কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। তবে এটি নির্ভর করবে দুই দেশের কূটনৈতিক কৌশল এবং রাজনৈতিক ইচ্ছার ওপর।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক ও সাবেক সভাপতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p> </p>