<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি মানুষ হত্যা করা হয়েছে গত জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার ও পরে সরকার পতন আন্দোলনের সময়। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে এক হাজারের বেশি মানুষ নিহত এবং ৪০০ জনেরও বেশি মানুষ তাদের চোখ হারিয়েছে। এ ছাড়া ৩০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। তাদের বেশির ভাগই বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ। আর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ এসেছিল দেশের সর্বোচ্চ স্থান থেকে। বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্র আন্দোলন দমন করতে এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। তীব্র ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কারণে শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যান। বর্তমানে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে দেড় শতাধিক মামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও (বাংলাদেশ) (আইসিটি) শেখ হাসিনা ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে বাংলাদেশে গত জুলাই-আগস্টে কোটা সংস্কার ও পরে সরকার পতন আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধের বিচার আইসিসিতে কিভাবে করা যায় সে সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন  আইসিসির  প্রধান প্রসিকিউটর করিম খান। সেখানে তাঁরা এ বিষয়ে কথা বলেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত অপরাধ, বিশেষ করে জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় সংঘটিত অপরাধ রোম চুক্তির ৫ এবং ৭ অনুচ্ছেদের আওতায় পড়ে। তাই শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত আন্তর্জাতিক অপরাধের তদন্ত, বিচার এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিচারিক আদালত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইসিসি সাধারণত গণহত্যা, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং আগ্রাসনের (রোম চুক্তি, অনুচ্ছেদ ৫) বিচার করে থাকেন। আইসিসির সংজ্ঞা অনুযায়ী বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অপরাধকে গণহত্যা বলা কঠিন। জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অপরাধ রোম চুক্তির ৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ বলা বেশি যৌক্তিক।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রোম চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক অপরাধ, বিশেষ করে শেখ হাসিনার শাসনামলে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আইসিসিতে মামলা করা। আইসিসি এই ধরনের অপরাধের তদন্ত ও বিচারের জন্য সবচেয়ে কার্যকর আন্তর্জাতিক সংস্থা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ আইসিসিতে অভিযোগ করলে আইসিসির প্রসিকিউটর অফিস আইসিসির প্রি-ট্রায়াল চেম্বার থেকে অনুমতি না নিয়েই তদন্ত শুরু করতে পারবে। এ ছাড়া আইসিসিতে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের জন্য মামলা করলে বেশ কয়েকটি সুবিধা রয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রচলিত ফৌজদারি আদালত বা আইসিটিতে হলে বিচারপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে, যেমন অতীতে হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া ভবিষ্যতে সরকার পরিবর্তন হলে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগ সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় এলে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করতে পারে বা অপরাধীদের ক্ষমা করে দিতে পারে। আইসিসিতে বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হলে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হলেও বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ করা সম্ভব হবে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তা ছাড়া ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা এরই মধ্যেই বিভিন্ন দেশে পালিয়েছে গেছেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও ভারতে পালিয়ে গেছেন। বাংলাদেশে তাঁদের শাস্তি হলেও বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করা কঠিন হবে। অন্যদিকে বর্তমানে আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র ১২৪টি। আইসিসি অভিযুক্ত/অপরাধীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে সদস্য রাষ্ট্রগুলো অপরাধীকে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য থাকবে ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ছাড়া মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আরেকটি সমস্যা তৈরি করতে পারে যদি তাঁরা এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশে স্থায়ী হয়ে থাকেন। কেননা বর্তমানে ১১২টি দেশ মৃত্যুদণ্ড বাতিল করেছে (অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ২৩ অক্টোবর ২০১৮)। ফলে ফৌজদারি আদালত বা আইসিটি মৃত্যুদণ্ড দিলে অপরাধী বিদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকলে তাঁকে ফিরিয়ে এনে শাস্তি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। কারণ  সংশ্লিষ্ট দেশের আইন মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন না করলে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন চুক্তি থাকলেও সে দেশ অপরাধীকে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবে না। আইসিসির ক্ষেত্রে এই সমস্যা নেই। কারণ আইসিসিতে মৃত্যুদণ্ড নেই। মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় আইসিসি ৩০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের আদালত অভিযুক্তের অনুপস্থিতিতে বিচার করতে পারেন। এটি আরেকটি সমস্যা তৈরি করতে পারে। অপরাধীর অনুপস্থিতিতে বিচার করা হলে এবং শাস্তি দেওয়া হলে অপরাধী বিদেশে থাকলে তাঁকে ফিরিয়ে আনতে বেশ জটিলতায় পড়তে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইসিসি যেকোনো ব্যক্তির বিচার করতে পারেন, অপরাধী যে পদেই থাকুন না কেন। আইসিসি রাষ্ট্রপ্রধান বা সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন এবং বিচার করতে পারেন। দেশীয় আদালত এবং ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারপ্রধানের বিরুদ্ধে বিচার করা এবং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ আইসিসিতে মামলা করলে বিচারপ্রক্রিয়া যেমন স্বচ্ছ হবে, তেমনি বিপুল আর্থিক খরচ থেকে বাংলাদেশ রক্ষা পাবে। সেই অর্থ দেশ পুনর্গঠনে ব্যবহার করা যেতে পারে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আইসিসিই একমাত্র বিচারিক আদালত, যা ভিকটিম ও অভিযুক্ত উভয়ের জন্য ন্যায্য বিচার নিশ্চিত করতে পারেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক আইনের গবেষক </span></span></span></span></p>