<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নির্বাচনকেন্দ্রিক সংকট বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই কমবেশি লক্ষ করা যায়। নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও বড়সড় নড়াচড়াও দেখা যায়। বেশির ভাগ আলাপেই নির্বাচন যেন গ্রহণযোগ্য হয় এবং নির্বাচন ঘিরে যেন কোনো সংঘাত-সহিংসতা না হয়, সে বিষয়টিই অধিক বিবেচ্য হয়ে ওঠে। নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের একটি সম্পর্ক আছে। এ জন্য গণতন্ত্র ও নির্বাচন পাশাপাশি উচ্চারিত হয়। আর এই দুটি শব্দের সঙ্গেই রাজনৈতিক দলগুলোর সম্পৃক্ততা অনেক বেশি। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় থেকে অথবা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নির্বাচন ও গণতন্ত্র এই দুটি শব্দকে খুব বেশি কাজে লাগায়। মূলত রাজনৈতিক দলগুলোই গণতন্ত্রের খুঁটি হিসেবে বিবেচিত হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কয়েক বছর আগে গণতন্ত্রের সংকট নিয়ে একটি গবেষণা করেছিলাম। ওই গবেষণাপত্রটি উপস্থাপনের জন্য থাইল্যান্ডের রাজাভাট বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম। সেখানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গবেষণাপত্র উপস্থাপিত হয়। বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গবেষকরা তাঁদের গবেষণাপত্রে বিশ্বব্যাপী গণতন্ত্র যে চরম সংকটের মুখে তার গতি-প্রকৃতি তুলে ধরেন। সেখানে লক্ষ করা যায় যে গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বের বেশির ভাগ রাষ্ট্রের বিশেষ আকর্ষণ থাকলেও প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ নিতে পারেনি রাষ্ট্রগুলো। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতাসীন দল যদি মনে করে নিয়ন্ত্রণহীন সুষ্ঠু নির্বাচনে তাদের পরাজিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তখন তারা প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে নানা অজুহাতে সংঘর্ষ ও সংঘাত সৃষ্টি করে ভীতির রাজ্য কায়েম করার চেষ্টা করছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন অসংখ্য নজির রয়েছে। এর সঙ্গে তারা তৈরি করে বেশ কিছু আইনকানুন, যা দিয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা যায়। বিশ্বের বহু দেশে নির্বাচনী সংস্কার হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো বারবার কমিটমেন্ট করছে নির্বাচনকে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার বিষয়ে। তার পরও কোনো না কোনোভাবে নির্বাচন প্রভাবিত হচ্ছে এবং প্রশ্নবিদ্ধও হয়েছে। বর্তমান সময়ে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় নির্বাচন কতটুকু ভূমিকা রাখছে, সেটি এখন অধিকভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলো। এ উপলক্ষে গত মাস থেকেই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে আগে থেকেই চলছিল ভোটগ্রহণ। এতে অনেক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। অরেগন ও ওয়াশিংটনে দুটি ব্যালট বাক্সে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে কয়েক শ কাস্ট করা ভোট নষ্ট হয়ে গেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই এই দুটি ঘটনাকে পরস্পর যুক্ত বলে মনে করছে। ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের ক্লার্ক কাউন্টির নির্বাচিত নিরীক্ষক গ্রেগ কিমসি বলেন, এটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। তিনি আরো বলেন, এটি গণতন্ত্রের ওপর সরাসরি আঘাত। ব্যালট ড্রপ বাক্সে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সমালোচনা দেশজুড়ে হয়েছে। যেসব দেশ গণতন্ত্রের রোল মডেল, যারা গণতন্ত্র পর্যবেক্ষণ করে, সেসব দেশেও কারচুপির প্রশ্ন ওঠে। আবার যারা গণতন্ত্রের সূচকে সর্বোচ্চ স্কোর অর্জন করে, তাদের নির্বাচনেও টুকটাক ব্যত্যয়ের নজির রয়েছে। এ জন্য নির্বাচনী গণতন্ত্র এমন এক প্রক্রিয়া, যা হাতেনাতে কখনো ধরা যায় না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগামী নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই নিজেদের পথের কাঁটা হওয়া থেকে দূরে সরে আসতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়ন করতে হলে রাষ্ট্রক্ষমতার চাবি হাতে থাকা যেহেতু জরুরি, সেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য থাকে ক্ষমতায় যাওয়া। ক্ষমতায় যেতে অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হতে রাজনৈতিক দলগুলো এখন মরিয়া হয়ে উঠবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমনটাই স্বাভাবিক। শিষ্টাচারসম্মত রাজনীতির জন্য জনপ্রতিনিধিদের গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরি। এ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের বক্তব্য প্রদানে সতর্ক অবস্থান নিশ্চিত আবশ্যক। আপত্তিকর পরিবেশ যেমন মানায় না, ঠিক তেমনি কোনো আপত্তিকর বক্তব্য মানায় না। জনপ্রতিনিধিরা যেহেতু নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত হন, সেহেতু নাগরিকদের মনে বিন্দুমাত্র আঘাত লাগুক এমন অপসংস্কৃতিকে লালন করাও যুক্তিসংগত নয়। যেহেতু মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত করা গণতন্ত্রের অন্যতম মূল নীতি, সেহেতু রাজনীতিবিদদের সেদিকটা খেয়াল রাখা শিষ্টাচারসম্মত রাজনীতির অংশ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা লক্ষ করছি যে নতুনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন হতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে এমনভাবে নির্বাচন কমিশনকে সংস্কার করতে হবে, যাতে শুধু নির্বাচন পরিচালনা করাই নির্বাচন কমিশনের একমাত্র কাজ না হয়। নির্বাচনের পর একজন সংসদ সদস্যের আয়-ব্যয়ের তদারকির বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলাদেশে এমন তদারকির বিষয়টি এযাবৎকালে মোটেও হয়নি। একটি ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন কমিশনকে একেবারে কম ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তবে এ পর্যন্ত দেশে যতগুলো নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে, তার খুব কম কমিশনকেই তাদের যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করতে দেখা গেছে। সম্ভবত সে জন্যই বেশির ভাগ কমিশনের কার্যক্রমই বেশির ভাগ মানুষের কাছে প্রশংসিত হয়নি। নির্বাচনের সময় যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তাদের মন জুগিয়ে চলার কারণেই মূলত নির্বাচন কমিশন বিতর্কমুক্ত থাকতে পারে না। তা ছাড়া ইদানীং বাংলাদেশের নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা খুব শোনা যায়। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি খুব আলোচিত। বিশেষ করে ব্যবসায়ীদের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি অধিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় মনোনয়ন বাণিজ্যের প্রসঙ্গটিও বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের অর্থের প্রভাবে রাজনীতিতে রাজনীতিবিদরাও অনেকটা কোণঠাসা হয়েছেন। সংসদে ব্যবসায়ী ও আমলাদের একচেটিয়া আধিপত্য ও দাপটে রাজনীতিবিদ বিলুপ্তপ্রায় হয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন যাতে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারে সে ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হওয়া জরুরি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনেক সময় আমরা দুঃখ পাই, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা একে অপরে কাদা ছোড়াছুড়ি করেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো, এমন পরিস্থিতি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বব্যাপীই এই প্রক্রিয়া দৃশ্যমান। তাহলে আপনারাই বলুন, আইন করে কি এই কাদা ছোড়াছুড়ি রোধ করা যাবে? কখনোই নয়। আমাদের নিজেদের বিবেক এবং চিন্তা যদি পরিশীলিত বা মার্জিত না হয়, তাহলে কোনোভাবেই ইতিবাচক প্রত্যাশা সফল হবে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কাজেই আমরা বাংলাদেশে যে কাঠামোই পছন্দ করি না কেন কিংবা যেমন আইনই তৈরি করি না কেন অথবা যেমন সংস্কারই হোক না কেন, এগুলো বাস্তবায়নের মূলে রয়েছে নাগরিক এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন। মানসিকতা পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই একটি গ্রহণযোগ্য মানের উদার নির্বাচনী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পেতে পারে।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><a href="mailto:sultanmahmud.rana@gmail.com" style="color:blue; text-decoration:underline">sultanmahmud.rana@gmail.com</a></span></span></span></span></p>