<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যে কেউ বলবেন যে একাত্তরের যুদ্ধের অনেক বৈশিষ্ট্যের ভেতর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল দুটি; স্বতঃস্ফূর্ততা এবং দুঃসাহসিকতা। এই দুটি গুণই দেখতে পাওয়া যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র যারা গড়ে তুলেছিলেন, সেই তরুণদের ভেতরে। তরুণরা দুঃসাহসী হয়, হতে পারে; তাদের ভেতর স্বতঃস্ফূর্ততাও থাকে। কিন্তু যে ১০ জন তরুণ একত্র হয়েছিলেন বেতারকেন্দ্রটি গড়ে তুলতে, তাদের স্বতঃস্ফূর্ততা ও দুঃসাহসের উৎস ছিল অভিন্ন, সেটি হলো দেশপ্রেম। সঙ্গে ছিল বিপ্লবী চেতনা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উদ্যোগটি প্রথমে নিয়েছিলেন তিনজন। পরস্পরের পরিচিত বন্ধুই বলা চলে, বেতারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনজনই। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। একাত্তরের ২৬ মার্চের বিধ্বস্ত ও ভয়ংকর সকালবেলায় তারা ভাবছিলেন কী করা যায়। চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রকে ব্যবহার করে স্বাধীনতার কথা প্রচার করা যায় কি না</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই চিন্তা তাদের মাথায় এসেছিল, কিন্তু কেন্দ্রটি শহরের একেবারে ভেতরে। পাকিস্তানি হানাদাররা সহজেই আক্রমণ করতে পারবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই বিবেচনা থেকে শহরের বাইরে কালুরঘাটে গিয়ে সেখানকার ট্রান্সমিটারটি ব্যবহার করবেন বলে ঠিক করেন। কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। ছিল অত্যন্ত কঠিন ও ভয়ংকর দুঃসাহসিক। কী ঘটতে যাচ্ছে, তা জানা ছিল না। মুক্তিযুদ্ধ তখন শুরুই হয়নি। কোথাও বিদ্রোহের কোনো ঘটনা ঘটেছিল বলে জানা ছিল না। সবটাই ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন ও বিভ্রান্তিকর। এরই ভেতর তারা নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে বেতারকেন্দ্র চালু করবেন। অন্য কয়েকজন এসে যোগ দিয়েছিলেন; কর্মীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১০। তবে তারা যে রাষ্ট্রদ্রোহের কাজ করতে যাচ্ছেন, সেটি তারা জানতেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="বিপ্লবী চেতনার সাহসী তরুণরা" height="356" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/03-12-2024/1.jpg" style="float:left" width="400" />কী প্রচার করবেন সে বিষয়ে মোটেই পরিষ্কার ছিলেন না তারা। সবটিই ছিল অগোছালো। আসলে আমাদের স্বাধীনতাসংগ্রামের গোটা ব্যাপারটিই ছিল অত্যন্ত অগোছালো। পূর্বপরিকল্পনা ছিল না, প্রস্তুতিও ছিল না। প্রতিরোধ যা ঘটেছে, তার সবটিই স্বতঃস্ফূর্ত ও পরস্পরবিচ্ছিন্ন। লোকে ব্যারিকেড তৈরি করেছে, অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে, ক্যান্টনমেন্ট কাছে থাকলে সেদিকে ছুটে গেছে, গ্রামের মানুষ শহরত্যাগী মানুষকে সাহায্য করেছে এবং কেউই ভেবে পায়নি ঠিক কী করতে হবে। স্থানীয় নেতারা ছিলেন বিভ্রান্ত, তারা অনেক কিছু করবেন ভেবেছেন, কিন্তু কিভাবে করবেন, কোনটি আগে কোনটি পরে, কাকে দিয়ে কোন কাজ হবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব ঠিক করতে পারেননি। ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকে বেতারের কর্মীরা </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রেডিও পাকিস্তান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামটি ফেলে দিয়ে স্থানীয় বেতারকেন্দ্র বলে নিজেদের পরিচয় দিচ্ছিলেন। নির্দেশ পেলে তারা হয়তো আরো এগোতেন, কিন্তু নির্দেশ আসেনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালুরঘাটে তারা বেতারকেন্দ্র চালু করেছিলেন, কারো কাছ থেকে কোনো নির্দেশ বা পরামর্শ পাননি; ঘরসংসার, আত্মীয়-স্বজন ছেড়ে দিয়ে তারা চলে এসেছিলেন ভেতরের তাড়নায়। স্বতঃস্ফূর্ততার ভেতর যে অগোছালোপনা থাকে, সেটি তাদের কাজের মধ্যে ছিল। তবে তাদের ওপরে যে কর্তৃত্ব করার মতো কেউ ছিল না, সেটির সবটিই যে ছিল অসুবিধার ব্যাপার, তা-ও কিন্তু নয়, তার একটি ভালো দিকও ছিল। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পেরেছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যুদ্ধটিকে জাতীয় যুদ্ধ হিসেবে না দেখিয়ে একক নেতৃত্বে পরিচালিত যুদ্ধ হিসেবে প্রচারের কথা বলা হয়েছিল। বেতারকর্মীদের আপত্তির দরুন সেটি করা সম্ভব হয়নি। কথিকা প্রচারকদের তালিকা এবং কথিকার পাণ্ডুলিপি পূর্ব-অনুমোদনের প্রথাটি অবশ্য চালু করা সম্ভব হয়েছিল। যুদ্ধটি ছিল প্রকৃত অর্থেই জনযুদ্ধ। কিন্তু জনযুদ্ধ শব্দটির ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। অজুহাত এই যে শব্দটি মাও জেদং ব্যবহার করতেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জয় বাংলা, বাংলার জয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামে একটি সিগনেচার টিউন ব্যবহার করা হতো। স্বতঃস্ফূর্তভাবেই সেটি এসেছিল। নভেম্বরের দিকে যুদ্ধ যখন চূড়ান্ত পরিণতির অভিমুখে এগোচ্ছে, তখন সেটি বাদ দিয়ে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ব্যবহার করার নির্দেশ এসেছিল। আগের গানের শেষ পঙক্তি কটি ছিল এই রকমের : </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভুখা আর বেকারের মিছিলটা যে ঐ/দিন দিন শুধু বেড়েই যাবে/রোদে পুড়ে জলে ভেসে অসহায় হয়ে/ফুটপাথে তারা ঠাঁই পাবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> দেশ স্বাধীন হতে যাচ্ছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ সময়ে এসব অলুক্ষণে কথা কেন, তা-ও আবার স্বাধীন বাংলা বেতারে? চলবে না, চলেনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাধীনতা পেলে উদ্ভাবনীশক্তি কেমন বিকশিত হতে পারে, সেটি স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মীদের কাজের ভেতর সুন্দরভাবে ধরা পড়েছে। নিজেদের কর্মস্পৃহার বাইরে তাদের জন্য কোনো বস্তুগত সমর্থন ছিল না। বেতারের ব্যাপারে তাদের যে অভিজ্ঞতা, সেটিও ছিল পাকিস্তানি বেতারকেন্দ্রে কাজ করারই। তারা অভ্যস্ত ছিলেন পাকিস্তানি চিন্তাধারার প্রচারে। হঠাৎ করেই তাদের অবস্থান নিতে হয়েছিল সম্পূর্ণ উল্টো। এরই মধ্যে তারা দ্রুতগতিতে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং সেসব সিদ্ধান্ত কার্যকর করেছেন। যেমন নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে হবে। কোথা থেকে প্রচার হচ্ছে, শত্রুপক্ষ সেটি যেন না জানতে পারে তার ব্যবস্থা করা দরকার হবে। শুরুতে একজন মহিলা ঘোষিকা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিতে চেয়েছিলেন তাদের সঙ্গে। তাকে তারা সঙ্গে নিতে পারেননি; পাছে রক্ষণশীল শ্রোতারা বিরূপ হয়। সম্প্রচার কেন্দ্রটি ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত। বেলাল মোহাম্মদ দেখলেন যুদ্ধটি যেহেতু সশস্ত্র, তাই সেনাবাহিনীর কাউকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করলে ভালো হয়। জিয়াকে তিনি বলেছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা তো সবাই মাইনর, মেজর হিসেবে আপনিই বরঞ্চ স্বকণ্ঠে কিছু বলুন।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তার বলার ভেতর কিছুটা কৌতুক ছিল, জিয়া কথাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে নিজের হাতে লিখে, নিজের পরিচয় দিয়ে স্বকণ্ঠে স্বাধীনতার একটি ঘোষণা পাঠ করেছিলেন। কথাগুলো তিনি ইংরেজিতে লিখেছিলেন এবং নিজের নামেই ঘোষণা দিতে চেয়েছিলেন। বেলাল মোহাম্মদের পরামর্শে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">on behalf of our great national leader Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যোগ করে দিলেন। সেটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সংশোধন। পরে বক্তব্যটি বাংলা অনুবাদ প্রচার করা হয়েছে। ওই বিবৃতি ছিল অত্যন্ত সময়োপযোগী। প্রতিক্রিয়া ঘটেছে বৈদ্যুতিক। সবাই যে শুনতে পেয়েছে তা নয়, কিন্তু যারা শুনেছে, তাদের কাছ থেকে অন্যরা শুনেছে। জনে জনে ছড়িয়ে দিয়েছে। বিদেশি বেতারেও সেটি প্রচার পেয়েছে। বিদেশে বাঙালিরাও জানতে পেরেছে। বিলেতে মেজর জিয়াকে কেউ কেউ মেজর জিয়া খান বলেও মনে করেছে। সর্বত্র আশার সঞ্চার হয়েছে। প্রতিরোধ জোরদার হয়ে উঠেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বতঃস্ফূর্ত উদ্ভাবনার আরো ঘটনা ঘটেছিল। পাকিস্তানি হানাদাররা বোমাবর্ষণ করে কেন্দ্রটিকে ধ্বংস করে দেয়। সেটি ৩০ মার্চের দুপুরের ঘটনা। বেতারকেন্দ্রটির সেখানেই ইতি ঘটতে পারত। কর্মীরা কিন্তু দমেননি। কালুরঘাট কেন্দ্রের এক কিলোমিটারের একটি অতিরিক্ত ট্রান্সমিটার ছিল। সেটিকে খুলে একটি মাইক্রোবাসে চাপিয়ে তারা রওনা হয়েছিলেন মুক্তাঞ্চলের খোঁজে; প্রচারের কাজ নতুন করে শুরু করবেন এই পরিকল্পনা নিয়ে। ওই ট্রান্সমিটারটি অবশ্য ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়নি, আগরতলায় গিয়ে তারা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে একটি ট্রান্সমিটার পেয়েছিলেন। সেটি ব্যবহার করে এপ্রিল মাসের ৩ তারিখে তারা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের দ্বিতীয় পর্বের কাজ শুরু করেন। এখান থেকে অনুষ্ঠান প্রচার চালু ছিল মে মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত। তার পরে শুরু হয় কলকাতা থেকে তৃতীয় এবং চূড়ান্ত পর্বের সম্প্রচার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেতারের ওই ১০ জনের অবকাশ ছিল না বিশ্রামের। পেছনে ফেরার কোনো পথ ছিল না। ফেরার কথাও তারা ভাবেননি। জামাকাপড় ঠিক ছিল না। গায়ে যা ছিল, তা পরেই থেকেছেন। দিনের পর দিন। এপ্রিলের ১১ তারিখে আগরতলায় প্রথম নতুন জামাকাপড় কেনেন। খাবারদাবারের কষ্ট ছিল ভীষণ। আগরতলায় প্রথমে থাকতেন বাঁশের ঘরে। খবর লিখতেন ঘাসের ওপর বসে। স্বাস্থ্য এমন খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ লজ্জা পেয়েছে। বিপরীতে নেতারা ছিলেন রেস্টহাউসে। তাদের জন্য কষ্ট ছিল না থাকা-খাওয়ার। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এরই মধ্যে খবর সংগ্রহ, খবর তৈরি, কথিকা লেখা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব কিছু করতে হয়েছে। উদ্ভাবনীশক্তির চমৎকার ব্যবহার ঘটিয়ে মুস্তাফা আনোয়ার একটি স্লোগান দাঁড় করিয়েছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওরা মানুষ হত্যা করেছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আসুন আমরা পশু হত্যা করি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> অত্যন্ত উপযোগী একটি স্লোগান। সে জন্য জনপ্রিয় হয়েছিল। ইয়াহিয়া খানের ভয়াবহ একটি মুখাবয়ব এঁকে শিল্পী কামরুল হাসান তার নিচে ওই স্লোগানটি বসিয়ে দিয়েছিলেন। কলকাতায় রেকর্ড করা হয়েছিল গুরুসদয় দত্তের একটি ব্রতচারী গান, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানুষ হ মানুষ হ আবার তোরা মানুষ হ/অনুকরণ খোলস ভেদি/কায়মনে বাঙালি হ।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> গানটি মোটেই জমেনি। তিন-চারবার প্রচারের পর সমালোচনার মুখে রেকর্ডটি বাতিল করা হয়েছিল। স্লোগান হিসেবে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আসুন আমরা পশু হত্যা করি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র সঙ্গে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আবার তোরা মানুষ হ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র তুলনা করলে স্বতঃস্ফূর্ত স্বাধীনতার সঙ্গে কৃত্রিম নিয়ন্ত্রণের ব্যবধানটি বোঝা যায়। একাত্তরে বাঙালিকে মানুষ হতে উপদেশ দেওয়া পরিহাসের শামিল ছিল বৈকি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p> </p>