<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের শিল্প-সাহিত্যে বৃক্ষবন্দনা কিংবা প্রশস্তির অন্ত নেই। এসব বৃক্ষেরও আছে জীবন। বহু বৃক্ষই হারিয়ে যাচ্ছে অগোচরে আমাদের কাছ থেকে। সংরক্ষণের অভাবে। তাই বৃক্ষ রক্ষায় উদ্যোগ দরকার। সম্প্রতি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে উদ্ভিদের লাল তালিকা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামের একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। এই বইয়ে এক হাজার উদ্ভিদ প্রজাতির লাল তালিকা করা হয়েছে। উদ্ভিদের সংরক্ষণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার নিঃসন্দেহে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ। ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন) দেশের চারজন জ্যেষ্ঠ উদ্ভিদবিজ্ঞানীর নেতৃত্বে এই তালিকা প্রকাশ করেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে এই বইয়ে দেখানো হয়েছে দেশের সাতটি প্রজাতির উদ্ভিদ একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আর ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে ২৭১টি প্রজাতি। বিপদাপন্ন হিসেবে দেখানো হয়েছে ৩৯৫টি প্রজাতি। এর মধ্যে পাঁচটি প্রজাতি মহাবিপন্ন। বিপন্ন ও সংকটাপন্ন হিসেবে দেখানো হয়েছে ১২৭টি ও ২৬৩টি উদ্ভিদ প্রজাতি। বিলুপ্ত প্রজাতিগুলো হলো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফিতাচাঁপা, কুড়াজিরি, ভানু দেয়পাত, গোলা অঞ্জন, সাত সারিলা, থার্মা জাম ও মাইট্রাসিস। মহাবিপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতিগুলো হলো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাঁশপাতা, বনখেজুর, বালবোরক্স, লম্বা ট্রায়াস অর্কিড ও বলগাছ। এই পাঁচটি গাছ যত্ন না নিলে দ্রুতই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটি এক হাজার উদ্ভিদের ওপর চালানো জরিপ। অবশিষ্ট আরো তিন হাজার উদ্ভিদের ওপর এমন জরিপ করা হবে। আর এসব তথ্যও একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর হালনাগাদ করা হবে। জরিপ করা উদ্ভিদের ৩৯ শতাংশই কোনো না কোনোভাবে বিপদাপন্ন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এর আগে ২০১২ সালে বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ৫৪টি উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষিত ঘোষণা করে। আইন অনুযায়ী এই ৫৪ প্রজাতির উদ্ভিদ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে ওঠানো, উপড়ানো, ধ্বংস বা সংগ্রহ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিধি লঙ্ঘনকারীকে আইনের ৩৯ ধারা মতে এক বছরের কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে। একই অপরাধ ওই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার করলে শাস্তি দ্বিগুণ হবে বলা হয়েছে। ৫৪টি উদ্ভিদ হলো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তালিপাম, হাতিশুঁড়, সিভিট, বইলাম, চুন্দুল, কুম্ভি, প্রশান্ত আমুর, ধুপ, কাঁটালাল বাটনা, কর্পূর, তেজবহুল, মণিরাজ, অনন্তমূল, পুদিনা, বাঁশপাতা, উরি আম, পাদাউক, রিটা, জায়না, উদাল, হাড়জোড়া, ত্রিকোণী বট, লতা বট, গয়া অশ্বত্থ, উর্বশী, উদয় পদ্ম, জহুরী চাঁপা ইত্যাদি।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়ামের তথ্য অনুযায়ী ২০১৯ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা তিন হাজার ৮৪০। এরপর আরো ১০টি প্রজাতি আবিষ্কৃত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি গাছের কারণে বাংলাদেশে পাঁচ হাজার প্রজাতির দেশি গাছ থাকলেও এটি এখন কমে তিন হাজার ৮২৮ প্রজাতিতে এসে দাঁড়িয়েছে। একটি বাস্তুতন্ত্রে প্রবেশকারী নতুন প্রজাতিকে বলা হয় এলিয়েন স্পেসিস আর যেসব প্রজাতি ভিন্ন বা নতুন বাস্তুতন্ত্রে প্রবেশ করে স্থানীয় প্রজাতির জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়, তাদের বলা হয় আগ্রাসী এলিয়েন স্পেসিস। এলিয়েন স্পেসিসের কারণে স্থানীয় প্রজাতি শুধু ধ্বংসের মুখে পড়ে না, বিশেষজ্ঞদের মতে কোনো কোনো প্রজাতির বিলুপ্ত হওয়ার অন্যতম কারণও হয় এলিয়েন স্পেসিস বা প্রজাতির প্রবেশ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে এলিয়েন প্রজাতি হিসেবে রয়েছে কচুরিপানা, পার্থেনিয়াম, লজ্জাবতী, আসামলতা, স্বর্ণলতা ও ঢোলকলমি। বাংলাদেশে এ রকম ১৫টি আগ্রাসী এলিয়েন স্পেসিস শনাক্ত করেছে ন্যাশনাল বায়োডাইভার্সিটি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান। এলিয়েন স্পেসিসকে আগ্রাসী ও ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে ন্যাশনাল বায়োডাইভার্সিটি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যানে। বিদেশি গাছ নানাভাবে প্রবেশ করলেও বেশির ভাগ প্রজাতি মানুষের মাধ্যমেই ছড়িয়েছে। বাংলাদেশে রেইনট্রি, সেগুন, আকাশমণি, আকাশি, শিশু, বাবলা, ইউক্যালিপটাসসহ নানা জাতের বিদেশি গাছ রয়েছে। রেইনট্রি, মেহগনি, চাম্বুল প্রভৃতি গাছ বাংলাদেশে প্রবেশ করে ব্রিটিশ আমলে। বাংলাদেশে আকাশমণি, শিশু, ইপিলইপিল, বাবলা, ইউক্যালিপটাস, খয়ের জাতীয় গাছ প্রবেশ করে আশির দশকে। এ ছাড়া কচুরিপানা, পার্থোনিয়াম, স্বর্ণলতা, মটমটিয়া, রিফুজিলতা ইত্যাদি বিভিন্ন সময়ে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল হারবেরিয়াম বন অধিদপ্তরের টেকসই বন ও জীবিকা প্রকল্পের আওতায় ১৭টি বিদেশি আগ্রাসী উদ্ভিদ প্রজাতি শনাক্ত করেছে। ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছে যেমন কোনো পাখি বাসা বাঁধে  না, তেমনি এর নিচে বিশ্রাম নেওয়া যায় না, এমনকি এসব গাছের কাণ্ড, পাতায় কোনো অণুজীবও জন্মায় না। সম্প্রতি পরিবেশ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, বন বিভাগ আর ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণি গাছ রোপণ করবে না। স্থানীয় প্রজাতি রক্ষার্থে এমন সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়া বিদেশি গাছ আমদানি করতে একটি নীতিমালা দরকার। বিশেষজ্ঞ কমিটি দ্বারা কোন গাছ আনা যাবে, কোন গাছ আনা যাবে না অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে। ক্ষতিকর বিদেশি গাছ শনাক্ত করাটা যেমন জরুরি, তেমনি সারা দেশে তা কাটারও ব্যবস্থা করতে হবে। বন বিভাগকেও বিদেশি জাতের উদ্ভিদ না দিয়ে দেশি জাতের চারা বিতরণে এগিয়ে আসতে হবে। এ ছাড়া বিপদাপন্ন উদ্ভিদ প্রজাতি রক্ষার্থে মন্ত্রণালয় দ্রতই উদ্যোগ নেবে বলে আশা করি।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : শিক্ষক ও গবেষক  </span></span></span></span></p>