<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। তাই ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস। মহাসমারোহে পালিত হয় ১৬ ডিসেম্বর দিনটি। কিন্তু ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পেছনে মূল যুক্তি ছিল একটি স্বাধীন দেশে একটি ন্যায়সংগত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে থাকবে না কোনো ধরনের বৈষম্য, নির্যাতন-নিপীড়ন; যেখানে মানুষ করবে মুক্ত বিহঙ্গের মতো বিচরণ। মোটকথা, সমতা, সুযোগ, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা আলিঙ্গন করে বাংলাদেশ পরিচিত হবে বিশ্বের দরবারে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই ছিল চাওয়া।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কাকতালীয় যদিও এই ডিসেম্বরের শুরুতে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) উন্নয়নসংক্রান্ত বার্ষিক সম্মেলনের শিরোনাম ছিল </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমতা, সুযোগ, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। সম্মেলনের শুরুতে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বিনায়ক সেন শিরোনামের সার্থকতা তুলে ধরতে গিয়ে বললেন, সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থান অসমতার বিষয়টি গণ-আলোচনার (পাবলিক ডিসকোর্স) কেন্দ্রবিন্দুতে বসিয়েছে। বাংলাদেশের চরম দারিদ্র্য হ্রাসের সংবাদ স্বস্তিকর বটে, তবে পাশাপাশি আয় অসমতার পীড়াদায়ক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নজর এড়ায়নি। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে অনেকটা উল্লম্ফনে ২০২২ সালে গিনি সহগ দাঁড়ায় ০.৪৯৯ (শহর ০.৫৩৯, গ্রাম ০.৪৪৬)। তাবড় অর্থনীতিবিদ বৃত্তে গিনি সহগ বা পালমা অনুপাত ঘিরে আলোচনা-সমালোচনা  অব্যাহত থাকলেও আমাদের নীতিনির্ধারণী চিন্তায় প্রধান আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="সমতা সুযোগ স্বাধীনতা এবং মর্যাদা" height="351" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/13-12-2024/1.jpg" style="float:left" width="321" />সমতা, সুযোগ, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা পারস্পরিক সম্পর্কিত এবং এর মধ্যে মূলত সমতা ও সুযোগের মধ্যকার সংযোগ নিয়ে কিছু বলা উচিত। বলা বাহুল্য যে অসমতা শুধু লরেঞ্জ রেখা এবং গিনি সহগ বা পালমা অনুপাত নয়, বিভিন্ন অর্থে এর ব্যবহার আছে; যথা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিভাজন, ব্যবধান, বৈষম্য, পক্ষপাত, অপ্রতিসম, পছন্দ-অপছন্দ, অনানুপাতিক, অন্যায়, পার্থক্য, অপমান ইত্যাদি। এবং দারিদ্র্য পরিমাপের ক্ষেত্রে যেমন, অসমতার বেলায়ও গুণগত পরিমাপ  মুখ্য হয়ে ওঠে; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবজ্ঞা এবং অপমান, পার্থক্যকরণ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমতা-সুযোগের সংযোগটি ব্যাখ্যা করা যাক। আমাদের দেশে কেউ ব্যাংক থেকে ঋণ পায়, কেউ পায় না। এর ফলে সব জীবিকা-সম্পদে বিভিন্ন শ্রেণির প্রবেশগম্যতা ব্যাহত হয় এবং ভৌত ও মানব পুঁজি সংঘটনে বিস্তর ব্যবধান রচিত হয়। এমনকি এই বৈষম্য আন্ত প্রজন্ম বৈষম্যের বাহক হতে পারে। তেমনি নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত না হলে বৈষম্যের অন্য এক দরজা খুলে যায়; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কর্মক্ষেত্রে নারীর কম মাত্রায় অংশগ্রহণ। অন্যদিকে পুষ্টিতে নারীর প্রবেশগম্যতা অসম হলে তার সন্তানদের বিদ্যালয়ের কৃতিত্ব হ্রাস পাবে, যথাযথ পেশা বেছে নিতে সক্ষম হবে না এবং ভবিষ্যৎ উৎপাদনশীলতায় ঘাটতি ঘটবে। রাজনৈতিক মধ্যস্থতার পথটি নানাভাবে ঋণাত্মক প্রভাব তৈরি করে সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করার পর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা উসকে দেয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সমতা-সুযোগের সংযোগটি বেশ অন্তর্দৃষ্টিমূলক। আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে অ্যাডাম স্মিথ সাবধান করে দিয়ে বলেছিলেন, কেন পুঁজিবাদীদের উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বাস করা যায়, কিন্তু আইন প্রণেতা হিসেবে বিশ্বাস করা যায় না। তিনি বলেছেন, তারা কোনো আইন বা বাণিজ্য ব্যবস্থাপনা প্রস্তাব করলে খুব সাবধানে শুনতে হবে এবং তীক্ষ সন্দেহে চিল-চোখে পরীক্ষা না করে প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সমীচীন হবে না। এই প্রস্তাব এমন মানুষের কাছ থেকে আসে, যাদের স্বার্থ ও জনতার স্বার্থ কখনো এক হয় না এবং সাধারণত যাদের লক্ষ্য থাকে প্রতারণা করা। স্মর্তব্য, অলিগার্করা অর্থনীতির নীতি প্রণয়নে এলে এই অবিশ্বাস আরো বেশি করে দানা বাঁধে। অন্য একটি সুড়ঙ্গ হচ্ছে সামাজিক বর্জন (সোশ্যাল এক্সক্লুশন)। ভারতের উত্তরের রাজ্যগুলোতে জাতপ্রথা ছাত্রদের শিক্ষার মানে বিরূপ প্রভাব ফেলে। এখনো জাত বিচারের সঙ্গে নিম্নমুখী মানবপুঁজি সঞ্চয়ন, পেশা পছন্দ এবং উৎপাদনশীলতার তাৎপর্যপূর্ণ সংযোগ রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্ক্যান্ডেনেভিয়ান, পূর্ব এশিয়া ও দু-একটি ক্ষেত্রে লাতিন আমেরিকার গুটিকয়েক দেশ ছাড়া আয়বৈষম্য হ্রাসের তেমন কৃতিত্ব কারো নেই। আয়বৈষম্যের উৎস হতে পারে কাঠামোগত সমস্যা; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রারম্ভিক পর্যায়ে সীমিত জমি অথবা চরম জাতপাত বা লিঙ্গনির্ভর বঞ্চনা। অন্য উৎস অবশ্যই সরকারি বা সামাজিক সুবিধা; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কর রেয়াত, বিভিন্ন নামে উৎপাদন সহায়তা বা ভর্তুকি, রাজনৈতিক ক্ষমতা ইত্যাদি। তবে সে যা হোক, কিছু ক্ষেত্রে; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও ভূমি সংস্কার, একটি নতুন রাজনৈতিক বোঝাপড়া ছাড়া সমতা বিধানের স্বপ্ন অধরা থেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অসমতা বা বৈষম্য কিভাবে সুযোগ সৃষ্টি প্রভাবিত করে? প্রথমত, একটি মাত্রার বাইরে অসমতা প্রবৃদ্ধি প্রতিহত করে, যদিও ওই মাত্রাটুকু নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। দুই. অসমতা এক ধরনের অবিচারমনস্কতা সৃষ্টি করে জনপ্রতিবাদের মাধ্যমে রাজনৈতিক অস্থিরতা উসকে দিতে পারে। এর ফলে স্বল্পকালে বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুযোগ-স্বাধীনতা সংযোগটি আরো বেশি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জন রাওলস স্বাধীনতার নীতিকে সবার ওপরে স্থান দিয়েছিলেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উন্নয়ন প্রথম, গণতন্ত্র পরেও আসতে পারে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> এমনতর মতবাদ বাংলাদেশের অতি সাম্প্রতিক ছাত্র-জনতার জাগরণ পায়ে মাড়িয়েছে। এখনকার কথা ফ্রিডম ফার্স্ট, উন্নয়ন সেকেন্ড। স্বাধীন চিন্তা-ভাবনা নিয়ে মানুষ অবাধে কর্মকাণ্ড ও চলাচল করতে পারলে উন্নয়ন আপনা-আপনি এসে হাজির হবে। স্বাধীনতা দেবে সরকার, মানুষ দেবে জিডিপি। যা হোক, রাষ্ট্র মেরামত ও সামাজিক সংস্কার ছাড়া সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা প্রায় অসম্ভব, তা বলা বাহুল্য। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব শেষে স্বাধীনতা ও মর্যাদার মধ্যকার সংযোগ শিক্ষণীয় উপাদান। মর্যাদা শুধু ব্যক্তি স্তরে নয়</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যেমন গরিবের মর্যাদা, তা আন্ত রাষ্ট্র মর্যাদা (যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ এবং মর্যাদাসম্পন্ন সম্পর্ক)। মর্যাদা বিষয়টিতে মনোযোগ দেওয়া মানে আত্মমর্যাদার রাজনীতির স্বীকৃতি অথবা নিম্নজাতের ক্ষমতায়ন (যেমনটি ভারতের নিম্নবর্গ আন্দোলন)। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একে আখ্যায়িত করেছেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যক্তিত্ব উন্নয়ন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> সমস্যা হিসেবে। তার কাছে প্রত্যেক মানুষের ব্যক্তিত্বের উন্নয়ন সমষ্টিগত উন্নয়নের পূর্বশর্ত। আর ব্যক্তিত্ব বিকাশের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে সক্ষমতা বা ক্যাপাবিলিটি।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানের পেছনে কাজ করেছে সমতা, সুযোগ, স্বাধীনতা এবং মর্যাদার জন্য আকুলতা ও আশা পূরণে ব্যর্থতা থেকে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীনদের নিশানা কি সেই দিকে? কিংবা যারা ক্ষমতায় আসার জন্য উদগ্রীব তারা? বর্তমানে দেশে যে ধরনের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অরাজকতা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> চলছে, তাতে কিভাবে সমস্যার সুরাহা হবে? মূলকথা, এই চারটি স্তম্ভের অনুপস্থিতিতে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হয়তো বা সম্ভব, কিন্তু সেটি যে টেকসই উন্নয়ন হবে না, তা অনেকটা হলফ করেই বলা চলে। বিজয়ের মাসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কথা স্মরণ করে এবং কেন মুক্তিসংগ্রাম সংঘটিত হয়েছিল, সে কথা মাথায় রেখে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সমতা, সুযোগ, স্বাধীনতা এবং মর্যাদা নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা স্বাধীনতা বিফল, বিফল বিজয় দিবসের চেতনা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অর্থনীতিবিদ, সাবেক উপাচার্য </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p>