<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আজ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস। আমরা জানি, ২০০০ সালের ৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৮ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে হিসেবে পালনের ঘোষণা করার প্রেক্ষিতে প্রতিবছর সারা বিশ্বে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনের জন্য এ বছরের থিমে অভিবাসীদের অবদানকে সম্মান দেখানো এবং তাদের অধিকারকে শ্রদ্ধা করার প্রতি জোর দেওয়া হয়েছে। বলতে গেলে, অভিবাসীরা আমাদের সমাজে যে অবদান রেখে চলছে এবং কিভাবে তারা আমাদের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উন্নয়ন ঘটিয়ে যাচ্ছে সেই বিষয়গুলোর ওপর আলোকপাত করাই এবারের থিমের মুখ্য উদ্দেশ্য। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বে অধিকসংখ্যক অভিবাসী কর্মী প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। সংগত কারণেই বাংলাদেশের কাছে এই দিবসটি পালনের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। তাই নানা আয়োজনে প্রতিবছরই বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসটি উদযাপন করে থাকে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশ সরকার যেমন কর্মসূচি গ্রহণ করে, তেমনি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও সভা-সমাবেশের আয়োজন করে। সাধারণ মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে নেওয়া সেসব কর্মসূচিতে অভিবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা এবং অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপনের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত সেসব সভা-সমাবেশে অভিবাসীদের অবদান ও অভিবাসন সম্পর্কিত বিষয়াদি ছাড়াও কর্ম সমাপনান্তে ফিরে আসা অভিবাসীদের দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় সেসব বিষয় গুরুত্ব সহকারে আলোচনা করা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাধারণত একজন অভিবাসী অন্য দেশে উন্নত জীবন খোঁজার জন্য নিজের দেশ ত্যাগ করে থাকেন। অনেক সময় চাকরি নিয়ে, অধ্যয়ন করতে বা পরিবারের সঙ্গে যোগ দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণেও অভিবাসন হতে পারে। বাংলাদেশিদের এ ধরনের অভিবাসন ছাড়াও বাংলাদেশ থেকে অনেক দেশই তাদের চাহিদা অনুযায়ী কর্মী নিয়ে থাকে, যারা সেসব দেশে অস্থায়ী অভিবাসী কর্মী হিসেবে কাজ করেন। অস্থায়ী অভিবাসী বাংলাদেশিদের অধিকাংশই কাজের মেয়াদ শেষে দেশে ফিরে আসেন। উল্লেখ্য যে বাংলাদেশি অভিবাসীদের, বিশেষ করে অস্থায়ী অভিবাসী কর্মীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শক্তিশালী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।    </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এক কোটির বেশি বাংলাদেশি থাকলেও তাদের বেশির ভাগই অস্থায়ী কর্মী হিসেবে সেসব দেশে কর্মরত। বিশ্বের প্রথম ১০টি রেমিট্যান্সপ্রাপ্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ২০২২, ২০২৩ এবং ২০২৪ (অক্টোবর পর্যন্ত) সালে বাংলাদেশের প্রাপ্ত রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ২১.২৮, ২১.৮২ এবং ২২.০৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে এ বছর রেমিট্যান্স হয়তো ২৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। ২০২২ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি কর্মী বাংলাদেশ থেকে বিদেশ গেছে। অন্য ৯টি দেশের অভিবাসী কর্মীর সংখ্যা হিসাবে বাংলাদেশের আরো বেশি পরিমাণে রেমিট্যান্স পাওয়ার কথা। কিন্তু কর্মীর অনুপাতে বাংলাদেশ খুব কম রেমিট্যান্স পেয়ে থাকে। এমনকি প্রতিবছর পাঠানো কর্মীর সংখ্যা খুব কাছাকাছি থাকলেও বাংলাদেশের বার্ষিক রেমিট্যান্সের পরিমাণ প্রতিবেশী ভারতের এক-পঞ্চমাংশ। এর পেছনের কারণগুলো নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে অবশ্যই দৃষ্টি দিতে হবে, একটি হলো বিশ্বের চাহিদা অনুযায়ী কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রেরণ এবং অন্যটি হলো বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ থেকে যেসব কর্মী বিদেশে পাঠানো হয় তারা প্রথমই তাদের নিজ দেশেই শোষণের শিকার হন। কারণ বিদেশে কর্মী প্রেরণে নির্দিষ্ট কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় না, যাতে তাঁদের শোষণের হাত থেকে বাঁচানো যেতে পারে। নানা স্তরেই তাঁদের আর্থিক হয়রানির শিকার হতে হয়। বিদেশে গিয়েও উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ের বোঝা তাঁদের সব সময়ই তাড়া করে বেড়ায়। বিদেশে কয়েক বছর কাজ করে যে সঞ্চয় হয় তা দিয়ে ধারদেনা করে সংগৃহীত ওই অভিবাসন ব্যয় মেটাতেই শেষ হয়ে যায়। দেশে ফেরার সময় যে সঞ্চয়টুকু থাকে তা দিয়ে কিছু একটা করার উপায় থাকে না। এ ছাড়া ওই সময়ে পরিবারকে প্রেরিত অর্থও নানাভাবে খরচ হয়ে যায়। তাই একটা সহনশীল অভিবাসন ব্যয়ের ব্যাপারে সরকারকে অবশ্যই পদক্ষেপ নিতে হবে।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="অভিবাসন প্রশ্নে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ও করণীয়" height="292" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/18-12-2024/1.jpg" style="float:left" width="320" />বলার অপেক্ষা রাখে না যে সহনশীল বা ন্যূনতম অভিবাসন ব্যয় বাস্তবায়ন করতে হলে প্রয়োজন হবে একটি অভিবাসীবান্ধব কর্মী প্রেরণ ব্যবস্থা গ্রহণের। প্রায় এক যুগ আগে এ ধরনের প্রক্রিয়া অনুসরণে (৩৫ হাজার টাকার মধ্যে) মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণ করা হয়েছিল। কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহলের ক্ষমতা সরকারকে সেই ব্যবস্থা থেকে সরে আসতে বাধ্য করে। জানি না বর্তমান সরকার দেশের অর্থনীতিতে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখা অভিবাসী কর্মীদের জন্য সেই ধরনের ব্যবস্থা করতে কোনো পদক্ষেপ নেবে কি না। সম্ভব হলে তারা এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে যাতে ভবিষ্যতে অভিবাসী কর্মীরা আর শোষণের শিকার না হয় সেই প্রক্রিয়া প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আরেকটি বিষয় হলো দেশে ফেরত আসা অভিবাসী কর্মীদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর প্রতি দৃষ্টি দেওয়া, বিশেষ করে তাঁদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সম্পৃক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ। যাঁদের রেমিট্যান্সের কথা সবাই এত বড় করে উল্লেখ করে থাকেন, কাজ শেষে দেশে ফিরে আসার পর তাঁদের খবর কেউ রাখেন না। অথচ তাঁদের অভিজ্ঞতা দেশের জন্য সম্পদ হয়ে উঠতে পারে, যদি কাজে লাগানো যায়। আর এর ফলে দেশ এবং দেশের মানুষেরই কল্যাণ হতে পারে।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বে বাংলাদেশি অভিবাসী কর্মীদের অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে আমাদের আরো সোচ্চার হতে হবে। যেসব দেশ অভিবাসীদের অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক কোনো দলিল স্বাক্ষর ও অনুসমর্থন করেনি, সেসব দেশের সঙ্গে এসংক্রান্ত দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করা যেতে পারে। বাংলাদেশ থেকে যারা দালালের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিদেশে যায় এবং সেখানে অবস্থান করে নানা সমস্যায় পতিত হয় তাদের প্রতি যথাসাধ্য সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে মানবপাচার প্রতিরোধ করাসহ এসব কাজে সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রোহিঙ্গাদের বিষয়ে দু-একটি কথা বলেই লেখাটি শেষ করতে চাই। বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা আমাদের জন্য একটি অসহনীয় বোঝা। বিভিন্ন সময়ে চেষ্টা করলেও তাদের আজ পর্যন্ত স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করানো যায়নি। মায়ানমার তাদেরকে কখনো ফিরিয়ে নেবে কি না সন্দেহ। এদিকে সে দেশে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যকার চলমান সংঘাত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে আরো অনিশ্চিত করে তুলেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে যে বিদ্যমান পরিস্থিতি আরো কয়েক লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে পারে। সার্বিক অবস্থার প্রেক্ষিতে আমাদের আরো ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, বিশ্ববাসীর সহযোগিতা আদায় করতে হবে। সম্ভব হলে তৃতীয় দেশে পাঠানোর পদক্ষেপও নেওয়া যায়। উল্লেখ্য, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আহ্বানে সাড়া দিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বসম্মতিক্রমে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা আগামী বছরে (সেপ্টেম্বর/অক্টোবর) অনুষ্ঠিত হতে পারে। শুধু কাগজের পাতায় সিদ্ধান্ত নিলেই হবে না, ওই সম্মেলনে যেন একটি ইতিবাচক এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অঙ্গীকার আসে সে ব্যাপারে আজ থেকেই আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ শুরু করে দিতে হবে।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে প্রথম এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। আমরা জানি, অভিবাসীদের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে কয়েক দিন আগে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসী কর্মীদের জন্য বিশেষ বিশ্রামাগারের উদ্বোধন করা হয়েছে। এই সরকার যদি অভিবাসীদের মঙ্গল চায় এবং এ ক্ষেত্রটিকে শোষণমুক্ত অভিবাসীবান্ধব করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করে, তাহলে দেশের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতোই এ ক্ষেত্রের ব্যাপক সংস্কার করা প্রয়োজন হতে পারে। আর সেটি করতে পারলে দেশের অর্থনীতির চাকা যেমন আরো শক্তিশালী হবে, তেমনি অভিবাসীরা এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জীবন দারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্ত হবে। একই সঙ্গে আমাদের অভিবাসীদের অবদানের স্বীকৃতিসহ কর্মস্থানে তাঁদের অধিকার সংরক্ষণের দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।  </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব</span></span></span></span></p> <p> </p>