<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুখী হওয়া খুব সোজা কিন্তু সোজা হওয়া খুব কঠিন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছোটবেলায় শুনতাম অমুকের মতো হও, তমুকের মতো হতে নেই। কলেজে পা ফেলে দেখি কেউ মহানায়ক উত্তম কুমারের মতো চুল ছাঁটে, কেউ নায়িকা মধুবালা কিংবা নার্গিসের মতো করে হাসতে গিয়ে হাসির খোরাক হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে দেখি পিকিং, মস্কো, ওয়াশিংটনপন্থীদের প্রচণ্ড পদচারণা; বাঙালিপন্থীও ছিল পাশাপাশি। পেশাজীবনে পেলাম বাংলাদেশের প্রতি পরামর্শ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দক্ষিণ এশিয়ার দেশের মতো হও। এর কথা, ওর কথা শুনতে শুনতে নীতিনির্ধারকদের অবস্থা মান্না দের গাওয়া সেই বিখ্যাত গানের মতো, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমি কোন পথে যে চলি, কোন কথা যে বলি/তোমায় সামনে পেয়েও খুঁজে বেড়াই মনের চোরাগলি/সেই গলিতেই ঢুকতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে দেখি/বন্ধু সেজে বিপদ আমার দাঁড়িয়ে আছে একি...।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুই.</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগামী এক দশকের মধ্যে উঁচু-মধ্য আয়ের দেশ এবং দুই দশকের মধ্যে উন্নত দেশে উন্নীত হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বাংলাদেশ সামনে এগোচ্ছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তত বিগত সরকারি পরিকল্পনায় এবং ধীমানদের ধ্যান-ধারণায় এমনই ইঙ্গিত মেলে। সন্দেহ নেই যে লক্ষগুলো প্রেরণাদায়ক, তবে উদ্দীপ্ত উদ্দেশ্যে পৌঁছাতে নির্দিষ্ট পথ পরিষ্কারভাবে জানান দেওয়া হয়নি। করণীয় হিসেবে আরো দরকার অন্ধ অনুসরণ নয়, বরং বাংলাদেশের নিজস্ব </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মডেলে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র ওপর ভর করে সামনের সমস্যাসংকুল পথ পাড়ি দেওয়া। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="বাংলাদেশের মতো হোক বাংলাদেশ" height="291" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/20-12-2024/1.jpg" style="float:right" width="321" />কিছুকাল আগে কোনো এক কনফারেন্সে এমনটাই বলেছিলেন প্রখ্যাত অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ (বর্তমান শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা)। তার মতে, বাংলাদেশের আগামী স্বপ্ন পূরণ করতে বাংলাদেশভিত্তিক সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য এবং পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আজকের এই নিবন্ধ তার বক্তব্যের নির্যাস হিসেবে নিবেদন করা হলো। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিন.</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিষয়ক অধ্যয়ন স্বীকার করে নিয়েছে যে উন্নয়নশীল দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন একটি সাধারণ ঘটনা, তবে টেকসই হওয়া ব্যতিক্রম। তাই উপলব্ধ উল্লাস উদযাপনের আগে সতর্ক দৃষ্টি রাখা বাঞ্ছনীয়। বলা বাহুল্য, এ ক্ষেত্রে উন্নয়নের বিদ্যমান ব্যাখ্যায় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এশিয়ার উদীয়মান বাঘ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর মতো হওয়ার অবারিত উপদেশ অহর্নিশ আসতে থাকল। অবস্থা অনেকটা যেন ১৯৬৫ সালে রক ব্যান্ড বিচের গাওয়া একটি গানের মতো </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওরা সবাই যদি ক্যালিফোর্নিয়ার মেয়ে হতো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিন্তু সবাই তা হয় না। শুধু তা-ই নয়, সম্ভবত অধিক সময় ব্যয় করা হয়েছে এমনতর </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপচিত</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> উপদেশ উদগিরণে। অথচ এর বিপরীতে অপেক্ষাকৃত অনেক কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জাপানের অভিজ্ঞতা সিঞ্চনে। এই দেশটি ১৯০০ সালে আর্জেন্টিনার সমান মাথাপিছু আয় নিয়ে আকাশচুম্বী উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ চীন হয়তো অনুকরণীয় মডেল হতে পারত, কিন্তু বাজার অর্থনীতি আলিঙ্গনের পর থেকে দেশটিতে প্রবৃদ্ধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে অসমতাসূচক আয়বৈষম্য। এখন বিদিশায় পড়া দেশটি বড় বড় ব্যবসা দমন করতে উঠেপড়ে লেগেছে। অথচ এর সম্পূর্ণ বিপরীত জাপানের অভিজ্ঞতা। শ্রমিকদের কল্যাণ ও আনুগত্যের মিলন ঘটিয়ে, যাকে বলে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাপানের মূল্যবোধ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাপানের ব্যাবসায়িক মডেল প্রবৃদ্ধিকে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ন্যায়সংগত রাখতে সক্ষম হয়েছে। আর সে জন্যই বোধ হয় জাপানে ধনী লোক বেশি, কিন্তু বিলিয়নেয়ার হাতে গোনা কয়েকজন (যুক্তরাষ্ট্রের ৬৭৫ এবং ভারতের ১৭৫-এর বিপরীতে মাত্র ২৫!)। সময়ের বিবর্তনে বাংলাদেশে যত উঁচু প্রবৃদ্ধি হচ্ছে, তত বিলিয়নেয়ার বাড়ছে; বিলিয়নেয়ার নিয়ে অসম প্রবৃদ্ধির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চার.</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সফলতার সব গল্পে অবশ্য কিছু মিল পাওয়া যায়; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লিও তলস্তয় বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুখী পরিবার সব একই রকম।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> মিলটি হলো এই যে একটি কল্যাণকর সমাজ বিনির্মাণের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা, যা অর্থনৈতিক উদ্যোগ উৎসাহিত করবে। এই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সহায়ক পরিবেশ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> দেশভেদে ভিন্নতর হতে পারে, তবে আমাদের কাছে মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন উপাদান কী হতে পারে?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রথমত, এলডিসি-পরবর্তী জামানার চ্যালেঞ্জ উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতকালের প্রাধিকারমূলক প্রাপ্তি ছাড়া কেমন করে দেয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দর-কষাকষি করে নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করা যায়, তার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। এবং তা এখন থেকেই। কেউ হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই, বরং আমাদের বাণিজ্য অংশীদাররা যার যার মতো করে এক বা একাধিক আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য এলাকায় এরই মধ্যে ঢুকে পড়েছে। দৌড়ঝাঁপ লেগে গেছে দোর খুলে দেওয়ার জন্য। প্রসঙ্গত মনে রাখা দরকার যে মুক্তবাণিজ্য এলাকায় প্রবেশের পথ বড় কঠিন। যেমন সময়ের দিক থেকে দীর্ঘ, তেমনি এর জন্য বিশেষজ্ঞের মূল্যাবধারণ প্রয়োজন। আর একটি কথা, আঞ্চলিক মুক্তবাণিজ্য ব্যবস্থার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের অন্তর্দৃষ্টি ভালো এমন একটি ভুল ধারণার ওপর ভর করে অনেক সময় সরকার নিষ্কপট নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এই গোষ্ঠীর ওপর। কিন্তু যেকোনো মুক্তবাণিজ্য ব্যবস্থার ফলে বিরাজমান ব্যবসায়ীদের কেউ লাভবান কিংবা কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, এটিই নিয়ম। যখন সব ব্যবসায়ী একযোগে মুক্তবাণিজ্য ব্যবস্থার পক্ষে হাত ওঠান, তখন অর্থনৈতিক তত্ত্ব বলে, প্রস্তাবিত সেই মুক্তবাণিজ্য ব্যবস্থা আলোর মুখ দেখতে পায় না।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের জন্য অন্য একটি বিশেষ দিক হচ্ছে প্রকট ভূমিস্বল্পতা। আবাসন আর উৎপাদনের বাইরে যে জায়গা আছে, তা দ্বীপদেশ সিঙ্গাপুর ছাড়া পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে কম। বস্তুত পরিস্থিতি এতই নাজুক যে বিদ্যমান কৃষিজমি, বন ও জলাধারের মতো অন্যান্য পরিবেশিক সম্পদের ওপর অনভিপ্রেত হস্তক্ষেপ ছাড়া নগরায়ণ ও শিল্পায়ন গড়ে তোলা বেজায় কঠিন কাজ। উঁচু-মধ্যম আয়ের দেশে যেতে পারলে তো চ্যালেঞ্জ তীব্রতর হওয়ার কথা। এমন সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের উচিত হবে পরিবেশবান্ধব ভূমি ব্যবস্থায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে শিল্পোন্নত দেশের চেয়েও বেশি জিডিপি উৎপাদন করার পথ বের করা, যার জন্য অবশ্য প্রচুর গবেষণা দরকার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তৃতীয়ত, ঢাকা শহরের মতো মেগাসিটিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড একে অপরকে সাহায্য করার তথা এগলোমারেসনের সুফল যেমন আছে, তেমনি রয়েছে পরিবেশদূষণের এবং ব্যয়বহুল নাগরিক সুবিধা প্রদানের কুফল। এখানে অবশ্য সুফলের চেয়ে কুফলের কর্তৃত্ব অনেক বেশি বলেই যত বিপত্তি। শহরের এই গাদাগাদি অবস্থাকে সহনীয় করে তুলতে প্রয়োজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কৌশল, যেখানে নগরায়ণ ও শিল্পায়ন সব দিকে ছড়িয়ে পড়বে। পুরো দেশ নগরসম আবাসভূমিতে রূপান্তরিত হলে দূরবর্তিতা দূর হবে, নিবিড় সংযোগ সাধিত সাপ্লাই চেইন গড়ে উঠবে এবং এভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড মেগাসিটির মতো এগলোমারেসন সুবিধা পাবে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশের উচিত হবে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের মতো ডেনসিটি ডিভিডেন্ড ঘরে তোলার প্রচেষ্টা চালানো।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ ধরনের ব্যাপনস্থল বিচ্ছুরিত উন্নয়নের জন্য তথা অর্থনৈতিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়ায় সঞ্চারণে পরিকল্পিতভাবে উন্নত ভৌত অবকাঠামোর উপস্থিতি অত্যন্ত প্রয়োজন সন্দেহ নেই, তবে এর সঙ্গে ব্যবসার পরিবেশ ভালো রাখার জন্য যথাযথ নীতিমালা থাকা দরকার। যমুনার ওপর নির্মিত সেতু উত্তরাঞ্চলে প্রত্যাশিত শিল্পায়ন ঘটাতে পারেনি নানা কারণে। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ল্যান্ড লকড অঞ্চল। তবে সাগরের সীমানা ধরে পদ্মা সেতুর সুফল ঘরে তুলতে চাই পরিকল্পিত পদক্ষেপ। স্মর্তব্য, এ ধরনের মেগাপ্রকল্প তখনই প্রবৃদ্ধিবান্ধব হয়, যখন তা অধিকতর ব্যক্তি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়। বিশেষত রপ্তানিমুখী এফডিআই প্রবাহের জন্য ভবিষ্যতে এই প্রকল্পগুলোর কারণে নেওয়া </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেনদেন ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটাতে পারে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এটি আবার অর্থনৈতিক পরিচালন পদ্ধতি এবং ব্যাবসায়িক পরিবেশ উন্নতিকরণের সঙ্গে গভীর সূত্রে গ্রোথিত। অর্থনীতিবিদ আখতার মাহমুদ সম্প্রতি এক লেখায় যথাযথভাবে বাজারবান্ধব পরিবেশ ও আপাতদৃষ্টে ব্যবসাবান্ধব নীতিমালার মধ্যে পার্থক্য টেনেছেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রথমটি বাজার প্রতিযোগিতা ও দক্ষ ব্যবসাকে উৎসাহিত করে আর দ্বিতীয়টি উঁচু সুরক্ষা দিয়ে নির্বাচিত অনুগ্রহভাজন ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেয়। দ্বিতীয় ধারাটি অর্থাৎ ব্যবসাবান্ধব নীতিমালা একসময় সহজেই ক্রনি ক্যাপিটালিজমে অধঃপতিত হতে পারে; যেমনটি বাংলাদেশে ঘটছে বলে অনেকের অভিযোগ, সম্প্রতি সমাপ্ত শ্বেতপত্রে তো বটেই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চতুর্থত, বাংলাদেশের শাসন বা গভর্ন্যান্স নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয়। বিষয়টি জটিল, তবে সাম্প্রতিক একটি বিশেষ দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ না করলেই নয়। অর্থনীতিবিদরা এখন ভালো করেই বুঝে গেছেন যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি লালনে বাজারের কার্যকারিতা এবং বাজারব্যবস্থার ভূমিকা নির্ভর করে রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও আচরণগত নৈতিক নিয়মের ওপর। বস্তুত এগুলো মিলে হচ্ছে অবকাঠামো, বলা চলে সামাজিক পুঁজি, যার মধ্যে বাজার অর্থনীতি দৃঢ়ভাবে গেঁথে আছে। গভর্ন্যান্সের যেসব নির্দেশক নিয়ে আমরা সচরাচর নাড়াচাড়া করি, সেগুলো মূলত সংগঠিত গভর্ন্যান্স কাঠামোতে অবস্থান নেওয়া পদ্ধতিগত ও কার্যকরীকরণ সমস্যা। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুর্নীতি দমনে নীতি সংস্কার, মৌলিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা, সম্পত্তি অধিকার সংরক্ষণ অথবা আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ ইত্যাদি। সন্দেহ নেই যে এরা বিদ্যমান উঁচু ব্যাবসায়িক ব্যয় কমিয়ে আনতে অবদান রাখতে পারে। কিন্তু পাশ কাটিয়ে যাওয়া হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। তা এই যে যদি আমরা না জানি কিভাবে বিচ্যুত-ব্যবহার জন্ম নেয় এবং কিভাবে আচরণগত নিয়মগুলো সংগঠিত হয়, সে ক্ষেত্রে জবাবদিহি বৃদ্ধি ও দুর্নীতি হ্রাসে গৃহীত এসব প্রশাসনিক সংস্কার কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। এমনকি বাজার নিয়ন্ত্রক এবং বিবেকহীন ব্যবসায়ীর মধ্যকার অশুভ গোপন সহযোগিতা ব্যাখ্যায়ও তার প্রয়োজন আছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নগর পরিবেশের বাইরে, যেখানে নিয়ন্ত্রণ বাস্তবায়ন অপেক্ষাকৃত নমনীয়, সেখানে সামাজিক ব্যাবহারিক নিয়মাবলি অপেক্ষাকৃত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি হচ্ছে ক্ষুদ্র খামারবহির্ভূত প্রতিষ্ঠানের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্কেলিং আপ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">-এর মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির বহুমুখীকরণ এবং গ্রামের প্রায় নগররূপ ধারণ। মূলত অসংগঠিত এই অর্থনীতির বিস্তার লাভের পেছনে কাজ করেছে সনাতন ব্যাবহারিক নিয়ম</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বাস, সহযোগিতা, পারস্পরিক বিনিময় এবং নৈতিক নিয়ম, যা সময়ের বিবর্তনে বিকশিত হয়ে আসছে। বর্তমান কালের বিপদ হচ্ছে এই যে বিভিন্ন কারণে বাজার অর্থনীতির সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবকাঠামোটি ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছে; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাজনৈতিক মেরুকরণ, নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংঘাত এবং গ্রামের বিশ্বস্ত বয়স্কদের বিকল্প হিসেবে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশীল দলীয় ক্যাডারদের আধিপত্য ইত্যাদি। সব শেষে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ-ব্র্যান্ড</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। এটি হচ্ছে বেশ কিছু সামাজিক নির্দেশকে বাংলাদেশের চিত্তাকর্ষক অগ্রগতি, যার ফলে দেশটি পিছিয়ে পড়া অবস্থান থেকে তুলনীয় দেশের অগ্রভাগে স্থান নিয়েছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ গণনীতি বিষয় হচ্ছে কিভাবে এই অর্জন সুসংহত করে আরো অগ্রগতি সাধন করা যায়। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অধিকতর সরকারি ব্যয় এবং একই সঙ্গে উন্নত সেবা প্রদান। মনে রাখতে হবে, এ পর্যন্ত কম ব্যয়ের সমাধান এবং গণসচেতনতা প্রচার মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার ফলে সরকারি খাতের সরবরাহ পদ্ধতির দক্ষতার বিষয়টি কোনো রকমে পাশ কাটানো গেছে। কিন্তু করুণাহীন করোনা ওয়েক-আপ কল দিয়ে বুঝিয়ে দিল যে আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার স্বাস্থ্য ভালো নয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আর একটি কথা। জনকল্যাণে সামাজিক খাতের উন্নয়ন নির্দেশকের ভূমিকা ব্যাপক সন্দেহ নেই, কিন্তু আমাদের অধিকতর দৃষ্টি দেওয়া উচিত হবে এই অর্জন ও দেশের অর্থনৈতিক কৃতিত্বের মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টিতে। মেয়েদের স্কুলে অন্তর্ভুক্তি আর পোশাকশিল্পে কর্মসংস্থানের মধ্যকার সংযোগ নিয়ে গবেষণাপ্রসূত প্রমাণ আছে। কিন্তু এ প্রমাণও আছে যে কর্মোপযোগী দক্ষতার অভাবে মাধ্যমিক পাস এবং গ্র্যাজুয়েট অনেক বেকার থাকছে অথবা তাদের দক্ষতার উপযোগী তেমন কাজ নেই। সুতরাং চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে বর্ধনশীল শ্রমশক্তির যথেষ্ট দরকারি দক্ষতা ও সক্ষমতা সৃষ্টি করা কিংবা তাদের দক্ষতা সাপেক্ষে যথেষ্ট কর্মসংস্থান তৈরি করা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সুখবর যে বাংলাদেশে জনমিতিক রূপান্তর ঘটেছে একটু আগেভাগেই। ফলে জনমিতিক কাঠামোতে যুবস্ফীতির মাধ্যমে পাওয়া জনমিতিক সুফল সঞ্চারিত হয়ে বর্তমান প্রসারমাণ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রসাদ হাতের নাগালে। তবে সুযোগের জানালাগুলোর সঠিক ব্যবহার ঘটিয়ে আরো দুই দশক পার করতে পারলে বাঁচোয়া কারণ এর পর থেকে বার্ধক্যজনিত কারণে শ্রমশক্তির সরবরাহ ধীরে ধীরে নিম্নগামী হবে। মোটকথা, ব্যক্তির বেলায় যা, দেশের বেলায়ও তা সত্য। বৃদ্ধ হওয়ার আগে ধনী হতে হবে। ঘটনাক্রমে বলতে হয়, তৎকালীন সরকারি লক্ষ্য অনুযায়ী যে বছর বাংলাদেশের ধনী দেশ হিসেবে যাত্রা শুরু হওয়ার কথা, সে বছরই জনমিতিক সুফলের যুগ শেষ। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তোমার হলো শুরু, আমার হলো সারা...।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অর্থনীতিবিদ, সাবেক উপাচার্য </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p>