<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">৫ আগস্ট ২০২৪ সরকার পতনের পরবর্তী তিন দিন প্রশাসনিক শূন্যতায় ছিল বাংলাদেশ। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এ সময়ের মধ্যে গ্রাম-শহর-নির্বিশেষে দেশবাসীর সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় ছিল বেঁচে থাকা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কখন বাসায় ডাকাত পড়ে, কখন ছিনতাকারীর কবলে, চুরি-ছিনতাই-লুটপাট। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাজারে ভোগ্য পণ্যের দাম বেড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এমন চলতে থাকলে তারা যে না খেয়ে মরবে! মিডিয়ায় পাওয়া খবর অনুযায়ী সরকার স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য সামগ্রী টিসিবির ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে দুস্থদের কাছে বিক্রি করার জন্য দেশব্যাপী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল। দেখা গেল, যেসব বিক্রেতাকে টিসিবির পণ্য বিতরণের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, তারা কাজ ফেলে চলে গেছে। তারা নাকি সাবেক সরকারের প্রতি অনুগত। এমন না হওয়াটা বরং অস্বাভাবিক। যারা সস্তায় ভোগ্য পণ্য কিনতে বাধ্য, তারা টিসিবির ট্রাক খুঁজে বেড়ায়। কারো আশা পূরণ হয়, কারো হয় না। যার হয় না, সে এবং তার পরিবারের সদস্যরাও অভুক্ত থাকতে পারে। বিষয়টি গুরুতর। দেশের  বেশির ভাগ মানুষই দরিদ্র। তারা অভুক্ত থাকলে তো সরকারের প্রতি জনরোষ বৃদ্ধি পাবে, যার পরিণতি সরকার ও ক্রেতা কারো জন্য শুভ হবে না। সরকার গঠনের দিন যদি ভোগ্য পণ্য সামগ্রী বিতরণব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একটি সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে আজ এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। একসময়ে পাড়ায় পাড়ায় রেশন দোকান ছিল। সপ্তাহওয়ারি যে যার রেশন তুলে নিত। টিসিবির ট্রাকের পেছনে রাস্তায় রাস্তায় ছুটে বেড়ানো দুস্থদের জন্য অবমাননার শামিল। রাস্তায় ট্রাক থেকে কেনার ক্ষেত্রেও একটি ফাঁকি আছে। তা কেমন? ট্রাক বোঝাই পণ্য বিক্রি শেষ হয়ে গেলে লাইনে দাঁড়িয়ে দুস্থদের বঞ্চিত হতে হয়। টিসিবির ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থার বদলে সম্মানজনক বিতরণব্যবস্থা চালু করার কথা ভাবা যেতে পারে; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশজুড়ে রেশনব্যবস্থা। আপৎকালীন বাজারমূল্য সহজলভ্য করার লক্ষ্যে অস্থায়ী ভিত্তিতে দেশজুড়ে একটি নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় রেশন চালু করা যেতে পারে। রেশনব্যবস্থা ভারতে এখনো বলবৎ আছে। যত দিন আমরা খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ না হব, তত দিন আমাদের জন্য এ ব্যবস্থা অপরিহার্য।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/05-01-2025/2/kalerkantho-ed-1a.jpg" height="238" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2025/1. january/05-01-2025/2/kalerkantho-ed-2a.jpg" style="float:left" width="350" />আরোগ্যলাভের সঙ্গে সময়-কালের সম্পর্ক নেই। বিশেষভাবে প্রযোজ্য তাদের জন্য, যারা জরুরি বিভাগের রোগী। সাবেক স্বৈরাচারী অবৈধ সরকারকে গদিচ্যুত করার মূল্য পূরণযোগ্য নয়। দেড়-দুই হাজার শহীদ, হাজার হাজার আহত, অন্ধত্বের বিনিময়ে এই দেশ রাহুমুক্ত হয়েছে। সরকার বলেছে, যারা প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, তাদের পরিবারের একজনের ভার গ্রহণ করা হবে। যাদের চিকিৎসার সুযোগ দেশে নেই, তাদের বিদেশি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার দায়িত্ব সরকার নেবে। যারা আহত, চোখে দেখতে পায় না, হাত অথবা পা কেটে ফেলতে হতে পারে, তাদের এ দেশেই চিকিৎসাসেবা দেওয়া হবে। সময় চলে যাচ্ছে, কোথায় বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা, রুটিন চিকিৎসাসেবার কাজই নিয়মিত হচ্ছে না বলে পত্রিকান্তরে জানা যায়। মাঝেমধ্যে মিডিয়ায় কিছু খবরাখবর পাওয়া যায়, যা যথেষ্ট নয় বলে মনে হয়। এই অবহেলাজনিত কারণে আহতদের যেটুকু বেঁচে থাকার আশা ছিল, তা-ও অপসৃয়মাণ। কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা একজন বিদেশি রাষ্ট্রদূতকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চলে যাওয়ার সময়ে আহতদের স্বজনরা তাদের অবস্থা সরেজমিনে গিয়ে দেখার জন্য উপদেষ্টার কাছে আবেদন জানালে তিনি সময়ের অভাবে না দেখে চলে যেতে চেয়েছিলেন। এতে কি মনে হয় সরকার যে কথা দিয়েছিল, তা রেখে চলেছে? উচিত ছিল বিশেষ ব্যবস্থায় যেসব বেসরকারি হাসপাতাল এমন কাজে অভ্যস্ত এবং উপযুক্ত, তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়া (সরকারি ক্রয় নীতিমালায় দুর্যোগকালীন অবস্থায় এভাবে পণ্য, সেবা কেনার বিধান রয়েছে)। তাহলে এমন দুঃখজনক পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না বলে মনে করছি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেশ কয়েক মাস অতিক্রান্ত। অনিরাপদ অস্থির পরিবেশের তেমনটা উন্নতি হলো না। এমন চলতে থাকলে বিদেশি বিনিয়োগ স্থবির হয়ে পড়তে পারে, যাদের বিনিয়োগ আছে, তা গুটিয়ে নিতে চাইবে। দেশি বিনিয়োগও থমকে যেতে পারে। কর্মসংস্থান হ্রাস পেতে পারে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুলিশ বাহিনীকে সাবেক সরকার কর্তৃক অবাধ দুর্নীতি ও লুটপাট করার সুযোগ করে দেওয়ায়  বেশির ভাগ  সদস্য সাবেক সরকারপ্রধানের মতো প্রাণ ভয়ে ভীত হয়ে পড়েছিলেন। কর্মস্থল ত্যাগ করে পালিয়েছেন। এই ভয় তাদের সারা জীবন ধাওয়া করবে। কারণ যে বাহিনী হেরে যায় বা যারা দলত্যাগ করে, তাদের মনোবল-আনুগত্য তলানিতে চলে যায়। বিশ্বস্ততা থাকে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পরিকল্পনা ও শিক্ষা উপদেষ্টা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যার শিরোনাম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিনিয়োগ না বাড়ালে মন্দা দেখা দেবে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> (সূত্র : কালের কণ্ঠ, ২৬.১১.২০২৪)। তিনি বলেছেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার কারণে বেসরকারি খাতে উৎপাদনে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। নতুন বিনিয়োগও হচ্ছে না। অন্যদিকে সরকারি উন্নয়ন ব্যয়ও যদি না বাড়ে, তাহলে তো অর্থনীতির মন্দা অবস্থা তৈরি হবে। এই পরিস্থিতিতে নতুন উদ্ভাবনী ও মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে নতুন প্রকল্প তৈরির কথা চিন্তা করছে অন্তর্বর্তী সরকার।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> তার কথার মর্মার্থ, খাদ্য, চিকিৎসাসেবা নিরাপত্তায় আশানুরূপ অগ্রগতি হলে মন্দার শঙ্কা দেখা দিত না। মন্দা একটি ভয়ংকর পরিবেশ। এর বৈশিষ্ট্য দীর্ঘকাল ধরে কর্মসংস্থানে দুর্ভিক্ষ, সেই সঙ্গে নিম্ন উৎপাদন ও বিনিয়োগে স্থবিরতা। </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : প্রধান প্রকৌশলী ও পরিচালক (প্রকৌশল)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন</span></span></span></span></p>