<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুষ্ক-বৃষ্টিহীন প্রচণ্ড এ শীতেও প্রতিদিন মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। কোনোভাবেই যেন ঠেকানো যাচ্ছে না এডিস মশা এবং তার ডেঙ্গু সংক্রমণ। থামানো যাচ্ছে না ডেঙ্গুর অব্যাহত অগ্রযাত্রা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দীর্ঘদিন ধরে প্রাদুর্ভাব রয়েছে পরিচিত শত্রু এডিস মশা এবং তার দ্বারা সংক্রমিত রোগ ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার। ২০০০ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় প্রতিবছরই কমবেশি ডেঙ্গু হয়েছে। ডেঙ্গু এবং এর বাহক মশা সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত এবং এর নিয়ন্ত্রণব্যবস্থাও আমাদের জানা। তার পরও আমরা কেন ব্যর্থ হচ্ছি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, ২০২৪ সালে এক লাখ এক হাজার ২১৪ জন মানুষ ডেঙ্গু রোগ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৫৭৫ জন মানুষ মারা গিয়েছে। ২০২৩ সালে আক্রান্ত ছিল তিন লাখ ২১ হাজার ১৭৯ এবং মারা গিয়েছিল এক হাজার ৭০৫ জন। যদিও এই পরিসংখ্যানটি সম্পূর্ণ নয়। কারণ এটি শুধু যেসব হাসপাতাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে রিপোর্টিং করে তাদের তথ্য। এ ছাড়া অনেক হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে, যার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে পৌঁছে না। আবার অনেক রোগী বাসায় থেকেও চিকিৎসা নিচ্ছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের টেকসই প্রস্তাব" height="257" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11. january/08-01-2025/77.jpg" style="float:left" width="343" />জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব গবেষণাগার সব সময়ই মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়ে গবেষণা করে। আমরা ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, মাঠ পর্যায়ে এডিস মশার ঘনত্ব, বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এই কয়েকটি বিষয় নিয়ে মাল্টিভেরিয়েট অ্যানালাইসিস করে ফোরকাস্টিং মডেল তৈরি করে। যার মাধ্যমে ডেঙ্গু সম্পর্কে আগাম ধারণা দিতে পারি। আমাদের গবেষণাগার থেকে এ পর্যন্ত আমরা যে আগাম তথ্য দিয়েছি তার সবগুলোই সঠিক হয়েছে। আমাদের বর্তমান ফোরকাস্টিং মডেল বলছে সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ ঘটাতে না পারলে এ বছরও বাংলাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি খারাপ হবে। শুধু ঢাকায় নয়, বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় ডেঙ্গু আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দীর্ঘ ২৬ বছরের ল্যাবরেটরি এবং মাঠ পর্যায়ের গবেষণা এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সশরীরে পর্যবেক্ষণ করে বাংলাদেশের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি মডেল তৈরি করেছি। এই মডেল অনুযায়ী পাঁচ বছর কার্যক্রম চালাতে পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ হবে বলে নিশ্চিত করতে পারি। ধারণা করা হয়, ২০২৩ সালে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আমার এই মডেলটি বাস্তবায়নে যে ব্যয় হবে তা মোট নিয়ন্ত্রণ ব্যয়ের চেয়ে অনেক কম। মানুষের কষ্ট লাঘব হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বারবার জানানো হয় যে তারা সঠিকভাবে কাজ করছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে আমরা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতাই দেখছি। এই ব্যর্থতার কারণ অনুসন্ধান, প্রচলিত মশক নিধন কার্যক্রম মূল্যায়ন ও যুগোপযোগী, আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা প্রয়োজন। যেই পরিকল্পনার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ প্রস্তাবিত মডেলে রয়েছে। এখনই এর বাস্তবায়ন শুরু করতে পারলে ২০২৫ সাল ডেঙ্গুর জন্য ভালো বছর হিসেবে বিবেচনা করা যাবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রস্তাবিত মডেল বাস্তবায়নের অপারেশনাল ম্যানুয়াল তৈরি করে নিতে হবে। মশা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক সরঞ্জামাদি এবং আধুনিক কীটনাশক নির্দেশিকা এই ম্যানুয়ালে থাকবে। কোন সময়ে, কোন ধরনের মশার প্রজননস্থলে কী কীটনাশক, কী মাত্রায়, কত দিন পর পর প্রয়োগ করতে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ এবং প্রয়োগবিধি অনুযায়ী কাজ করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সারা দেশের মশা এবং অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি স্বতন্ত্র সেন্টার তৈরি করতে পারে। যেটির নাম হতে পারে বাংলাদেশ ভেক্টর কন্ট্রোল রিসার্চ সেন্টার। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের মশা এবং অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণ হতে পারে। এই সেন্টারে বছরব্যাপী মশা, অন্যান্য বাহক ও কীটনাশক নিয়ে গবেষণা হবে এবং তারাই নির্দেশনা দেবে কখন কোন কীটনাশক কোন বাহকের জন্য ব্যবহৃত হবে। বাহকের আচরণ এবং নতুন নতুন বাহক এর ক্ষেত্রে কী ধরনের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে সেটির দায়িত্ব তাদের ওপর থাকবে। এই সেন্টারে অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদ নিয়োগ দিতে হবে। এই সেন্টার দেশব্যাপী মশা ও অন্যান্য বাহক নিয়ন্ত্রণের অভিভাবক হিসেবে কাজ করবে। এই প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ কীটতত্ত্ববিদদের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন সেক্টরের জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের বাহকের আচরণ, প্রজনন এবং নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যাবহারিক প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। সঙ্গে সঙ্গে মশা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক সরঞ্জাম ও কীটনাশক সরবরাহ করবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডেঙ্গু যেহেতু এখন সিটি করপোরেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই. তাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোকে মশক নিধনে যুগোপযোগী করে তুলতে হবে। ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং জেলা পরিষদ প্রতিটি জায়গায় তাদের মশক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রতিটি জেলায় জেলা কীটতত্ত্ববিদের একটি পদ রয়েছে। কোনো কোনো জেলায় এ পদে কর্মকর্তা রয়েছেন। যেসব জেলায় পদগুলো ফাঁকা রয়েছে সেসব জেলায় এই পদগুলো পূরণ করে এই মশা নিয়ন্ত্রণ কাজ জোরদার করা প্রয়োজন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখন এডিস মশার ঘনত্ব কম এবং ডেঙ্গু পরিস্থিতি অতটা নাজুক নয়। আগামী দুটি মাস পরিস্থিতি ভালো থাকবে। তাই এটাই এডিস মশাকে নিয়ন্ত্রণে আনার উপযুক্ত সময়। আগামী তিনটি মাস স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবং জনগণকে মশা নিয়ন্ত্রণে যার যার অবস্থান থেকে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখন ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভালো বলে নীতিনির্ধারকরা ভুলে যাবেন না যে ডেঙ্গু ভয়াবহভাবে আবার আসবে না। বছরের শুরুতেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আমার প্রস্তাবিত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রিত পর্যায়ে থাকবে বলে বিশ্বাস করি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক ও অধ্যাপক প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><a href="mailto:professorkabirul@gmail.com" style="color:blue; text-decoration:underline">professorkabirul@gmail.com</a></span></span></span></span></p> <p> </p>