<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আড়িয়াল বিলের কথা বললেই হুমায়ুন আজাদের একটি কবিতার কথা মনে পড়ে যায়। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভাল থেকো বক আড়িয়াল বিল ভাল থেকো</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কবিতার এই লাইনটি। আড়িয়াল বিল মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা জেলায় অবস্থিত। এটি এক লাখ ৬৭ হাজার একর জায়গা নিয়ে বিস্তৃত। এটি লম্বায় ২৬ কিলোমিটার আর প্রস্থে ১২ কিলোমিটার। এর প্রাচীন নাম চুড়াইন বিল। একটি তথ্য মতে, ব্রহ্মপুত্রের একটি শাখা নদী আড়িয়াল খাঁ। নদীটি এর ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে একসময় মরে গিয়ে বিলে রূপান্তরিত হয়। আড়িয়াল খাঁ নদীর নাম অনুসারে তখন এর নাম হয় আড়িয়াল বিল। এখানে হাজারখানেক জলাধার আছে। কিছু ছোট আবার কিছু বড়। পদ্মা ও ধলেশ্বরী নদীর অববাহিকায় গড়ে উঠেছে এই বিল। আড়িয়াল বিলে একসময় যেমন প্রচুর মাছ পাওয়া যেত, তেমনি দেখা যেত বহু রকম পাখি। যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কালিম, চকা-চকি হাঁস, রাজহাঁস, বালিহাঁস, নারকলি, হাড়গিলা, ঢেউস্যা, বড় পানকৌড়ি, কাঁচিচোখা, সরালি ইত্যাদি। তবে এখন পাখির সংখ্যা অনেক কমে গেছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আড়িয়াল বিলের মাছও বেশ সুস্বাদু। এখানকার সরপুঁটি, হলুদ কই, কালকিনি মাছ বেশ বিখ্যাত। বিলটি এখনো দেশীয় মাছের একটা বড় প্রয়োজন মেটায়। এখানকার মাছ উৎপাদন, বিপণন প্রভৃতি কাজে প্রায় দুই লাখ মানুষ জড়িত। এই বিলটিকে ঘিরেই ১০ লাখ লোকের জীবন-জীবিকা চলে। প্রাচীনকাল থেকেই এখানে একটি আড়িয়াল সভ্যতা গড়ে উঠেছে। শ্রীনগর, নবাবগঞ্জ ও দোহার উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের ৭০টি গ্রাম এর সঙ্গে জড়িত। </span></span></span></span></p> <p><img alt="সমন্বিত উদ্যোগ দরকার" height="228" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11. january/09-01-2025/5.jpg" style="float:left" width="342" /><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আড়িয়াল বিল এখনো মুগ্ধ করার মতো সুন্দর। চারপাশে বিশাল জলরাশি আর তার মধ্য থেকে শাপলা ফুলের উঁকি দেওয়া মুখ মনকে ভরিয়ে তুলবে। শুধু শাপলা ফুল নয়, নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদে ভরপুর এই বিলে রয়েছে কলমিশাক ও কচুরিপানার সৌন্দর্যও। বর্ষাকালে এটি পানিতে টইটম্বুর থাকে। তবে শীতকাল এলে এটি শস্যক্ষেতে পরিণত হয়। নানা ধরনের শীতকালীন সবজি চাষ করা হয়। যখন হলুদ সরষে ফুলে বিলটি জেগে ওঠে। সেটিও তখন বেশ দেখার মতো হয়। এই বিলটিই মধ্যাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন বিল। ঢাকা থেকে মাত্র ৪২ কিলোমিটার দক্ষিণে শ্রীনগর উপজেলায় এটি অবস্থিত। এর আয়তন ১৩৬ বর্গকিলোমিটার।    </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গত সেপ্টেম্বর মাসে কালের কণ্ঠ অনলাইনে আড়িয়াল বিল নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরের আড়িয়াল বিল নিয়ে পরিবেশ উপদেষ্টার একটি বক্তব্য উঠে আসে। এতে দেখা যায়, পরিবেশ উপদেষ্টা আড়িয়ার বিলে কে বা কারা মাটি ভরাট করছে এমন বিষয় অবহিত করেন এবং দ্রুত এর বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে বলেন। সেই সঙ্গে তিনি এও জানান, আড়িয়াল বিলে কোনো ধরনের আবাসন ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে না। জীববৈচিত্র্য ও কৃষি খাতে ফসল উৎপাদনের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে তিনি যেকোনো মূল্যে অবৈধ আবাসন ও মাটি কাটা বন্ধের কঠোর নির্দেশনা দেন। একটি পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী আড়িয়াল বিলের একটি বড় অংশ এখন হাউজিং কম্পানি ও বাণিজ্যিক দখলদারদের কবলে চলে গেছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একসময় এখানে আড়িয়াল বিল রক্ষা কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। ২০১১ সালের কথা। সে সময় আড়িয়াল বিলে একটি বিমানবন্দর করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ সময় হাজার হাজার কৃষক, নারী-পুরুষের আন্দোলনের মুখে সরকার সে প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়। কিন্তু সেই কৃষকরাই এখন অধিক টাকার লোভে হাউজিং কম্পানির কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন তাঁদের জমি। হাউজিং কম্পানিগুলো ডোবা, নালা, খাল-বিল ভরাট করছে, যদিও ২০২৩ সালে হাইকোর্ট আড়িয়াল বিলের জমি দখল ও মাটি ভরাট বন্ধে একটি নির্দেশ দেন। হাউজিং কম্পাগুিলো নানা ধরনের বিলবোর্ড টাঙিয়ে সেখানকার জলাধার বালু দিয়ে ভরাট করে চলেছে, যদিও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ অনুযায়ী কোনো জলাধার ভরাট করা বেআইনি। এই অবস্থায় বিলের সুরক্ষাটা জরুরি। সে জন্য সমন্বিত উদ্যোগ দরকার। আমাদের প্রত্যাশা, আগে যেমন জনগণ বিল ধ্বংসের পাঁয়তারা রুখে দিয়েছে, এখনো তারা তেমনটাই করবে। </span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : শিক্ষক ও গবেষক</span></span></span></span></p> <p> </p>