<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে প্রথমবারের মতো ব্যাট-রিও ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ (আইইডিসিআর)-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় পাঁচজনের শরীরে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। তবে সেগুলোর মধ্যে কেউই গুরুতর কোনো জটিলতায় আক্রান্ত হননি। প্রতিবছর খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার কারণে নিপাহ ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে অনেক মানুষ আক্রান্ত হয়। এই ধরনের লক্ষণ দেখতে পাওয়ার পর সম্প্রতি ৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। তবে তাদের মধ্যে নিপাহ ভাইরাস পাওয়া না গেলেও পাঁচজনের শরীরে রিও ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যাট-রিও ভাইরাস প্রথম পাওয়া যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে, বিশেষত চীন, ভারত, বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনামসহ অন্যান্য দেশের বাদুড় বা মাংস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। একাধিক দেশে প্রাদুর্ভাবের কারণে এটি একটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যাট-রিও ভাইরাস রিও ভাইরাস পরিবারের একটি সদস্য, যা মূলত বাদুড় (ব্যাট) প্রজাতির মধ্যে বিদ্যমান থাকে। রিও ভাইরাস পরিবারের সদস্যরা সাধারণত জীবাণু হিসেবে মানুষের মধ্যে ছড়াতে সক্ষম হয়। এই ভাইরাসের নাম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যাট-রিও ভাইরাস</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। কারণ এটি মূলত বাদুড়ের মধ্যে সংক্রমিত হয়ে মানুষের মধ্যে ছড়ায়। ব্যাট-রিও ভাইরাস </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">(Bat-Rio Virus</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">) নিপা ভাইরাসের মতোই আরেকটি ভাইরাস। এই ভাইরাস গোত্রের মধ্যে পরিচিত একটি ভাইরাস হলো রোটা ভাইরাস। এটি প্রাণিজগতের এক নির্দিষ্ট অংশে জীবিত থাকে এবং পরিবেশের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। এটি বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ, যেখানে বাদুড়ের সংখ্যাধিক্য রয়েছে সেখানে স্বাস্থ্যঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাদুড় এ ভাইরাসের প্রাথমিক বাহক। এটি বাদুড়ের রক্ত, শরীরের তরল, অথবা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। বাদুড়ের মধ্যে এই ভাইরাস জীবিত থাকে, তাদের মাধ্যমে এটি পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষ যখন এসব বাদুড়ের সংস্পর্শে আসে বা তাদের দ্বারা সংক্রমিত কোনো প্রাণী বা বস্তু স্পর্শ করে, তখন এই ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। বাদুড়ের মাধ্যমে এই ভাইরাস গাছের ফল, যেমন পাকা তেঁতুল, পেঁপে, খেজুরের রস ইত্যাদির ওপর ছড়িয়ে যায়। এসব ফল বা রস খাওয়ার মাধ্যমে মানুষ ভাইরাসের সংক্রমণ লাভ করে। এ ছাড়া কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাসটি সরাসরি মানুষের হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়াতে পারে, যদি আক্রান্ত ব্যক্তি কোনো শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা বা লক্ষণ দেখান।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যাট-রিও ভাইরাসের সংক্রমণের লক্ষণগুলো শুরু হয় সাধারণ ঠাণ্ডা, সর্দি, কাশির মতো সমস্যার মাধ্যমে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি জ্বর, ক্লান্তি, গা গোলানো, পেশি ব্যথা এবং মাথা ব্যথাসহ বমি, ডায়রিয়া ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে আরো গুরুতর লক্ষণ, যেমন শ্বাসকষ্ট এবং হার্টের সমস্যা অনুভব করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে ভাইরাসটি এনকেফালাইটিস বা মস্তিষ্কের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। যার ফলে প্যারালাইসিস বা মস্তিষ্কের কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে পারে। আর এই ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়স্করা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্যাট-রিও ভাইরাসের কারণে মৃত্যুহার তুলনামূলকভাবে কম, তবে যদি রোগী দ্রুত চিকিৎসা না পায় সে ক্ষেত্রে মৃত্যুঝুঁকি হতে পারে। এই ভাইরাসের জন্য এখনো কোনো নিশ্চিত বা কার্যকর চিকিৎসা নেই। তবে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অন্যান্য ভাইরাসের মতোই লক্ষণভিত্তিক চিকিৎসা করেন; প্যারাসিটামল বা অলিভ ফিভার রিলিভার (জ্বর কমাতে),  কাশি প্রশমন এবং অ্যান্টি-কফ মেডিসিন (কাশি কমাতে), অক্সিজেন থেরাপি (যদি শ্বাসকষ্ট হয়), ইনহেলার/ব্রঙ্কোডিলেটরস (যদি শ্বাসযন্ত্রে অবরোধ থাকে)। গুরুতর রোগীদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকা প্রয়োজন।  যাদের শ্বাসকষ্ট তীব্র বা গুরুতর হয়, তাদের ক্ষেত্রে ভেন্টিলেটরি সাপোর্ট বা ইনটিউবেশন প্রয়োজন হতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা রিও ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য শীত মৌসুমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার ওপরও জোর দেওয়া হয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যদিও সরকারিভাবে সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি, তবে সাম্প্রতিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কয়েকজন মানুষের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেছে। বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে বাদুড় বা অন্যান্য প্রাণীর সংস্পর্শে আসা মানুষের সংখ্যা বেশি, সেখানে এর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : কীটতত্ত্ববিদ, গবেষক ও অধ্যাপক প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">professorkabirul@gmail.com</span></span></span></span></p> <p> </p>