<p>৫১. স্মরণ করো এই কিতাবে মুসার কথা। সে ছিল বিশেষ মনোনীত। আর সে ছিল রাসুল, নবী। (সুরা : মারিয়াম, আয়াত : ৫১)।</p> <p>তাফসির : প্রতিকূল সমাজ ত্যাগ করার পর মহান আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে বিশেষ নিয়ামতে সিক্ত করেছেন। তিনি তাঁকে ইসহাক ও ইয়াকুব (আ.)-কে দান করেছেন। তাঁরা উভয়েই আল্লাহর নবী হয়েছেন। এ বিষয়ে আগের আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ইসহাক (আ.)-এর বংশ থেকে মুসা (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। আলোচ্য আয়াতে তাঁর সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এ আয়াতে মুসা (আ.)-এর কথা স্মরণ করতে বলা হয়েছে। তিনি একই সঙ্গে নবী ও রাসুল ছিলেন।</p> <p>নবী ও রাসুল পৃথক দুটি পরিভাষা। নিম্নে উভয়ের পরিচিতি উল্লেখ করা হলো—</p> <p>নবীর পরিচিতি : নবী শব্দের আক্ষরিক অর্থ বার্তাবাহক। কিন্তু পরিভাষায় আল্লাহর পক্ষ থেকে ঐশী বার্তাবাহককে নবী বলা হয়। ‘শরহে আকায়েদ আন-নাসাফি’ গ্রন্থের লেখকের মতে, ‘তাঁরাই আল্লাহর নবী, মহান আল্লাহ যাঁদের সৃষ্টিজগতের প্রতি শরিয়তের বাণী পৌঁছানোর উদ্দেশে প্রেরণ করেছেন। তবে তাঁকে নতুন শরিয়ত ও আসমানি কিতাব দেওয়া জরুরি নয়।’</p> <p>আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.) লিখেছেন : ‘যাঁরা আল্লাহর নবী, তাঁদের নতুন শরিয়তবিহীন (আগের নবী-রাসুলের অনুসারী হিসেবে) প্রেরণ করা হয়।’</p> <p>রাসুলের পরিচিতি : রাসুল শব্দের অর্থ দূত বা বিশেষ প্রতিনিধি। শাব্দিক অর্থের দিকে তাকিয়ে পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে ফেরেশতাদের জন্যও রাসুল শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও এই পরিভাষাটি শুধু নবীদের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রাসুল শব্দের পারিভাষিক অর্থ সম্পর্কে আল্লামা তাফতাজানি (রহ.) লিখেছেন : ‘তাঁরাই আল্লাহর রাসুল, মহান আল্লাহ যাঁদের সৃষ্টিজগতের প্রতি দ্বিন প্রচার করার জন্য প্রেরণ করেছেন এবং তাঁদের নতুন আসমানি কিতাব দেওয়া হয়েছে।’</p> <p>‘ইকদুল ফারায়েদ’ গ্রন্থে রয়েছে, ‘রাসুল হতে হলে নতুন শরিয়তসহ নতুন কিতাবপ্রাপ্ত হতে হবে। তবে নবীদের জন্য নতুন কিতাব বা নতুন শরিয়তপ্রাপ্ত হওয়া জরুরি নয়।’</p> <p>এ আলোচনা থেকে জানা যায়, প্রত্যেক নবীকে রাসুল বলা যাবে না। তবে প্রত্যেক রাসুল একই সঙ্গে নবী ও রাসুল। প্রশ্ন হলো, আল্লাহর কয়জন নবী ও রাসুল পৃথিবীতে আগমন করেছেন? এ বিষয়ে প্রসিদ্ধ কথা হলো, পৃথিবীতে এক লাখ অথবা দুই লাখ ২৪ হাজার নবী আগমন করেছেন। কিন্তু আবুজর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়, পৃথিবীতে এক লাখ ২৪ হাজার নবী আগমন করেছেন। তাঁদের মধ্যে ৩১৫ জন ছিলেন আল্লাহর রাসুল। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২২৩৪২; মিশকাত, হাদিস : ৫৭৩৮)।</p> <p>সুরা মারিয়ামের আলোচ্য আয়াতে মুসা (আ.)-কে একই সঙ্গে নবী ও রাসুল বলা হয়েছে। এতে বোঝা যায়, তিনি হাদিসে বর্ণিত ৩১৫ জন রাসুলের অন্যতম ছিলেন। তবে প্রসিদ্ধ চারজন রাসুল হলেন—মুসা (আ.), ঈসা (আ.), দাউদ (আ.) ও মুহাম্মদ (সা.)। মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত নাজিল করা হয়েছে। ঈসা (আ.)-এর ওপর ইনজিল কিতাব নাজিল করা হয়েছে। দাউদ (আ.)-এর ওপর জবুর কিতাব নাজিল করা হয়েছে এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর পবিত্র কোরআন নাজিল করা হয়েছে।</p> <p>গ্রন্থনা : মুফতি কাসেম শরীফ</p>