বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘বাজারমূল্যের ওপর নির্ভর করে ৭০ থেকে ৯০ বিলিয়ন ডলার আমদানির বিপরীতে দেশে রপ্তানি সাধারণত বছরে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমরা উদার বাণিজ্যের দিকে যেতে চাই কারণ, আমরা শুধু রপ্তানিকে সমর্থন করতে চাই না, আমরা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে আমদানি করতে চাই। কারণ আমাদের আমদানি একটি বাস্তবতা।’
রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাণিজ্য উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘দেশে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যের পরিমাণ এত বেশি যে সরকার কিভাবে এটি অব্যাহত রাখবে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ জন্য আমাদের শুল্ক কাঠামো, কাস্টমস ডিউটি ঢেলে সাজাতে হবে এবং বিনিয়োগ সহজতর করতে হবে। কারণ অর্থনীতিতে কর্মসংস্থানের অফুরন্ত সুযোগ সৃষ্টির একমাত্র উপায় হচ্ছে স্থানীয় বিনিয়োগ ও এফডিআই।’
তিনি আরো বলেন, ‘এফটিএ, পিটিএ, ইপিএ এবং সিইপিএ-তে সব সমস্যা মোকাবেলা করার সময় আমরা কিভাবে দেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে পারি তা নিয়ে কাজ করছি।
’
এই বিষয়গুলোকে তাত্ত্বিকভাবে উপলব্ধি করে এবং অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যগুলোকে পূর্ণ মাত্রায় উপলব্ধি করে এবং একই সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্যের পথ ও প্রবণতার পরিবর্তনকে উপলব্ধি করে বশির বলেন, ‘সরকার পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়।’
‘কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে গত কয়েক বছরে কোনো চিন্তা-ভাবনা ও পরিকল্পনা ছিল না। এমনকি ন্যূনতম দায়িত্বের কোনো জায়গাও ছিল না। কিন্তু এখন যখন আমরা ২০২৬ সালে উদার অর্থনীতির জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি, তখন স্থানীয় বিনিয়োগ মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
’
উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের এলডিসি উত্তরণের ক্ষেত্রে বাণিজ্য উদ্যোগে যাতে ঘাটতি দেখা না দেয় সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলতে পারি আমাদের পূর্ণ সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আমরা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছি, যাতে আমাদের মসৃণ উত্তরণ কৌশল (এসটিএস) বাণিজ্য উদ্যোগ ও সক্ষমতায় ঘাটতি না হয়। সার্বিকভাবে সংশ্লিষ্ট সব দিক সামনে রেখে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ উইং, ডব্লিউটিও উইং এবং রপ্তানি উইং সমন্বিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব বিষয় বোঝার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার, অর্থনীতিবিদ ও থিংক ট্যাংকের সঙ্গে আলোচনা, কোরিয়া ও জাপান সফর এবং তাদের বাণিজ্য উপদেষ্টাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছি।
’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এফটিএ এবং পিটিএর মতো চুক্তির বিষয়ে আলোচনা খুব সহজ নয়, কারণ এগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থ জড়িত।’
শেখ বশিরউদ্দীন অবশ্য বলেছেন, ‘গত পাঁচ বছরে যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার কথা ছিল, তা তারা করছেন। কিন্তু সেই সময় একেবারেই নষ্ট হয়েছে এবং অর্থনীতি সংকটে পড়তে বাধ্য হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বাণিজ্য উদারীকরণ করি, তাহলে আমাদের সংবেদনশীলভাবে স্থানীয় বিনিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করার পাশাপাশি পরিণতির কথা বিবেচনা না করে কিছু না করার বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘২০২৬ সালের নভেম্বরে দেশের এলডিসি উত্তরণের পর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা হারাবে।’
তিনি বলেন, ‘আগে আমরা পাঁচ বছর সময় পেয়েছিলাম, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা সেই সময়টা নষ্ট করেছি।’
২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ)। যা ১ জুলাই ২০২২ তারিখে কার্যকর হয়। বশিরউদ্দীন বলেন, ‘বাংলাদেশ কেবল কাগজে-কলমে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমি যদি বলি এটা একেবারেই ভুয়া ছিল, তাহলে ভুল হবে না। কারণ এরপর ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যের পরিমাণ কমে গিয়েছিল এবং পিটিএ শিরোনাম ছাড়া তাতে নতুন কিছু ছিল না।’
তিনি বলেন, ‘এটি একই শুল্ক কাঠামোতে একটি পিটিএ শিরোনাম দিয়ে করা হয়েছিল।’
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘পরবর্তীকালে তারা যখন সরকারের দায়িত্ব নেয়, তখন পিটিএ এবং এফটিএ মোকাবেলা করা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’