<article> <p style="text-align: justify;">সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দেড় শতাধিক। তবে বিশ্ব কিংবা এশিয়া র‌্যাংকিংয়ে ভালো অবস্থানে নেই এসব বিশ্ববিদ্যালয়। যুক্তরাজ্যভিত্তিক ‘টাইমস হায়ার এডুকেশন’ এশিয়া ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং-২০২৪ প্রকাশ করেছে গত সপ্তাহে। ওই তালিকার সেরা ৩০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্থান পায়নি বাংলাদেশের কোনো সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।</p> <p style="text-align: justify;">অন্যদিকে টাইমস হায়ার এডুকেশনের ২০২৪ সালের বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ের প্রথম ৮০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তবে এ তালিকায় রয়েছে ভারতের ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়। অবশ্য বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ের ৮০১ থেকে ১০০০-এর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">আর এশিয়া র‌্যাংকিংয়ের ৩০১ থেকে ৬০০-এর তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছর বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ৬০১ থেকে ৮০০-এর তালিকায় স্থান পেয়েছিল বাংলাদেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়। গত বছরের তুলনায় এ বছর র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়।</p> <p style="text-align: justify;">জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাদেকা হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে টিচিং বিশ্ববিদ্যালয়, রিসার্চ বিশ্ববিদ্যালয় নয়।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কিন্তু র‌্যাংকিংয়ে গবেষণাকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে যদি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলি, আমাদের যে বাজেট দেওয়া হয়, তা বেতনেই শেষ হয়ে যায়। ফলে আমরা শিক্ষকদের গবেষণার সুযোগ দিতে পারছি না। যদিও ইউজিসি গবেষণার জন্য কিছু আলাদা অর্থ দিচ্ছে, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় সেটা খুবই কম। উন্নত বিশ্বে শিক্ষকরা ভালো বেতন পান, তাঁরা ছুটিতে থেকে গবেষণা করেন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">কিন্তু আমাদের শিক্ষকের সংখ্যা কম, বেতনও কম। ফলে তাঁরা গবেষণায় মন না দিয়ে অন্য কাজে মন দেন।’</p> <p style="text-align: justify;">সাদেকা হালিম আরো বলেন, ‘এখন যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রাজনীতি করে পদোন্নতি পান, পিএইচডি না করে পদোন্নতি পান, তাহলে তাঁরা গবেষণা কেন করবেন—সেটাও একটা প্রশ্ন।’</p> <p style="text-align: justify;">টাইমস হায়ার এডুকেশনের ওয়েবসাইট ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের এশিয়ার তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে চীনের সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়, দ্বিতীয় স্থানে একই দেশের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং তৃতীয় স্থানে রয়েছে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়। সেরা দশের তালিকায় চীনের পাঁচটি, হংকং ও সিঙ্গাপুরের দুটি করে এবং জাপানের একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।</p> <p style="text-align: justify;">প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, এশিয়া র‌্যাংকিংয়ে ৩০১ থেকে ৩৫০-এর মধ্যে যৌথভাবে রয়েছে বাংলাদেশের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। তালিকার ৩৫১ থেকে ৪০০-এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়। ৪০১ থেকে ৫০০-এর মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়। আর ৫০১ থেকে ৬০০-এর মধ্যে আছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।</p> <p style="text-align: justify;">জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘র‌্যাংকিংয়ে রিসার্চ, ইনোভেশন, আন্তর্জাতিক কোলাবরেশনসহ নানা বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা গবেষণায় পিছিয়ে আছি। অনেকে আবার গবেষক হতেও চান না। গবেষণার জন্য করপোরেট খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। শিক্ষকদেরও তাদের কাছে যেতে হবে।’</p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, ‘ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটির সঙ্গে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যোগাযোগ কম। গত কয়েক বছর ধরে সরকার গবেষণায় অনেক বেশি জোর দিয়েছে। সামনে আরো বেশি নজর দিতে হবে।’</p> <p style="text-align: justify;">একাধিক প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও স্বীকৃত টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাংকিং এবং কিউএস (কোয়াকোয়ারেলি সাইমন্ডস) ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিং।</p> <p style="text-align: justify;">টাইমস হায়ার এডুকেশন র‌্যাংকিংয়ে পিছিয়ে থাকলেও গত বছর নভেম্বরে প্রকাশিত কিউএস এশিয়া ইউনিভার্সিটি র‌্যাংকিংয়ের ৮৫৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের ২৪টি সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থান পেয়েছে। এর মধ্য ১১টি সরকারি এবং ১২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। অন্যটি বাংলাদেশে স্থাপিত একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১৪০তম, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ১৮৭তম এবং নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় ১৯১তম।</p> <p style="text-align: justify;">শিক্ষাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়; যেমন—প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম, চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সুনাম, ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত, শিক্ষকপ্রতি সাইটেশনের সংখ্যা, আন্তর্জাতিক শিক্ষকের সংখ্যা, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ইত্যাদি।</p> <p style="text-align: justify;">প্রাতিষ্ঠানিক সুনাম মূলত গবেষণার ওপর নির্ভর করে। কারণ বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, গবেষণা বিষয়ে সেরা কাজগুলো বর্তমানে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা করছেন। একইভাবে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাদের মতে বর্তমানে কোন বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে দক্ষ, উদ্ভাবনী শক্তিসম্পন্ন এবং কার্যকর গ্র্যাজুয়েট তৈরি করছে।</p> <p style="text-align: justify;">ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির উপাচার্য সহিদ আকতার হুসাইন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হচ্ছে গবেষণা। র‌্যাংকিংয়েও গবেষণাসংশ্লিষ্ট কাজগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। কিন্তু গবেষণার জন্য আমাদের বাজেট খুব কম। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এত শিক্ষার্থী যে শিক্ষার্থী-শিক্ষক অনুপাতও ঠিক থাকে না।’</p> <p style="text-align: justify;">তিনি বলেন, ‘আরেকটি বিষয়, ওয়েবসাইট আপডেটে আমরা অনেক পিছিয়ে। আমাদের যেটুকু কাজ হয় সেটাও আমরা ঠিকভাবে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি না। কিন্তু যেসব ক্রাইটেরিয়া মেনে র‌্যাংকিং করা হয়, সেগুলো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফলো করে না।’</p> </article>