<p>আজ কালিগঞ্জ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলনা কালিগঞ্জ (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু বাজার) এলাকায় রাজাকার-আল বদরদের চক্রান্তে প্রায় তিন শতাধিক মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়।</p> <p>স্থানীয়রা জানায়, সেদিন ছিল মঙ্গলবার সকাল প্রায় ১১টা। বালাগ্রাম ইউনিয়নের হিন্দু সম্প্রদায়ের অধিকারী ও শীল পরিবারের সদস্যরা স্মরণার্থী হিসেবে ভারতে যাবার পথে কালিগঞ্জ নামক স্থানে গেলে পাশ্ববর্তী ডোমার হতে চার ট্রাক পাকিস্থানী বাহিনী এসে তাদের ঘেরাও করে। এরপর নারী-পুরুষ ও শিশুদের পৃথকভাবে সারিবদ্ধ করে ব্রাশ ফায়ার করলে মুহুর্তেই তিন শতাধিক নিরস্ত্র স্মরণার্থী মানুষজন সেখানে মারা যায়।</p> <p>সেদিন খান সেনাদের গুলিতে আহত অমর চন্দ্র অধিকারী জানান, আমরা কিছু বুঝবার আগেই খানসেনারা রাইফেল তাক করে আমাদেরকে ঘিরে ফেলে। তারপর, বৃদ্ধ-নারী, যুবক ও শিশুদের আলাদা করে সারি করে গুলি করে। তাদের ছোঁড়া গুলি আমার উরুতে লাগলে আমি চেতনা হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে দেখি মৃত দেহগুলির সাথে আমাকেও মাটি চাপা দেওয়া হচ্ছে। আমি চিৎকার ও অনুরোধ করলে লোকজন আমাকে মাটি চাপা হতে উদ্ধার করে। সেই হতে আজ অবধি গুলির ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি।</p> <p>সেদিনের গুলিতে মারা যাওয়া হেমন্ত শীলের দ্বিতীয় সন্তান ভূপেন শীল আবেগ আপ্লুত হয়ে জানান, বাবা-মাসহ আমাদের পরিবারের সাত সদস্য সেদিন স্মরণার্থী কাফেলায় ছিলাম। পরিবারের আয়ের মানুষ একমাত্র বাবাই ছিলেন। তাকে হারিয়ে আজ পর্যন্ত যে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছি যা বলে বুঝানো সম্ভব নয়। শুধু কৃতজ্ঞতা হিসেবে ০৬এপ্রিল ১৯৭২ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক পত্রের আলোকে 'প্রধান মন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল' থেকে মৃত পরিবারদের দুই হাজার টাকা ও আহতদের জন্য পাঁচ শত টাকা করে এককালীন সহায়তা দেন। এ ছাড়া কোনো জন প্রতিনিধি কিংবা সরকার কখনো আমাদের খোঁজ নিয়েছে এমন নজির নেই।</p> <p>সেদিনের নির্মম হত্যাকাণ্ডের স্বীকার শ্রীকান্ত শীলের ছেলে পল্লব শীল জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে শহীদ পরিবারের স্বীকৃতির দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন-নিবেদন এমনকি মানববন্ধন কর্মসূচি করেছি। কোনো কাজই হয়নি। আমরা শুধু শহীদ পরিবারের মর্যাদা চাই, স্বীকৃতি চাই।</p> <p>গোলনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুল আলম কবির বলেন, বধ্যভূমির ওপর নির্মিত শহীদ মিনারটি অবহেলিত অবস্থায় আছে। তিনি সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য দাবী জানান।</p> <p>স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বলেন, সেদিন পাক সেনাদের হাতে যারা নির্মম  হত্যাকাণ্ডের স্বীকার হয়েছিল তাদের পরিবার-পরিজনদের প্রতি রাষ্ট্র কতৃক বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। স্বাধীনতার এত বছর পর যখন বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল- কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, তখন শহীদ পরিবারদের পাশে দাড়িয়ে তাদেরকে সম্মান ও স্বীকৃতি দেওয়া প্রয়োজন। তাদের সহায়তা, স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।</p>