<p>মাদারীপুরে একটি হত্যা মামলাকে কেন্দ্র করে জমির পাকা বেরো ধান কাটতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বাদীপক্ষের বিরুদ্ধে। পুরুষশূন্য এলাকায় নারীরাও জমিতে ধান কাটতে গেলে পড়তে হচ্ছে বাধা আর হুমকির মুখে। চলতি মৌসুমে ধান ঘরে তুলতে না পারলে লাখ লাখ টাকার ক্ষতির আশঙ্কা কৃষক পরিবারের। আসামিপক্ষকে শিক্ষা দিতেই জমির ধান কাটতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি বাদীপক্ষের। তবে শীঘ্রই পাকা ধান কাটতে সব ধরনের সহযোগিতার কথা জানিয়েছে পুলিশ।</p> <p>স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জমিতে ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদে পুড়েও যাচ্ছে। ধান কাটতে না পারায় জমিতেই হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন কৃষকের পরিবার সদস্যরা। এই দৃশ্য মাদারীপুর সদর উপজেলার পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকার। রাধিকা হালাদার হত্যাকাণ্ডের জেরে বাড়িছাড়া আসামিরা। ফলে কয়েক শ বিঘা জমিতে চলতি মৌসুমে বেরো ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদে পুড়ে ঝরে পড়ছে ধানের দানা। নারীরা ধান কাটতে গেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালানোর অভিযোগ মামলার বাদীপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। এমনকি শ্রমিক দিয়েও ধান কাটতে গেলে আসছে একের পর এক বাধা। এতে দিশাহারা কৃষকের পরিবার। আসামিপক্ষকে শিক্ষা দিতেই জমিতে ধান কাটতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি বাদীপক্ষের লোকজনের।</p> <p>কৃষক সুকুমার ঘরামীর স্ত্রী শেফালী ঘরামী বলেন, ‘একটি মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পরিবার ও বংশের ভাই-ব্রাদার-স্বামীকে আসামি করা হয়েছে। সবাই পলাতক। চাষ করা জমিতে ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। আমরা নারীরা জমিতে ধান কাটতে গেলে লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর বাদীপক্ষ হামলা চালায়। এই ধান ঘরে তুলতে না পারলে সারা বছর আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’</p> <p>প্রহ্লাদ মন্ডলের স্ত্রী বিনা রানী মন্ডল বলেন, ‘আমার স্বামী, দেবর-ভাশুর সবাই বাড়িছাড়া। আমাদের পরিবারের লোকজন জমিতে চাষ করে গেছে, সেই জমিতে এখন ধান পেকে নষ্ট হচ্ছে। ধান কাটতে গেলে বাদীপক্ষ হামলা চালায়, ভয়ে জমি থেকে ওঠে চলে যাই।’ <br /> দিলীপ বৈরাগীর স্ত্রী চম্পা বৈরাগী বলেন, ‘বছরে একবার জমিতে ধান হয়। এই ফসল ঘরে তুলতে না পারলে ছেলেমেয়ে, পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে। এখন বেঁচে থাকার কোনো রাস্তা নেই। ধান কাটতে এলে বাদীপক্ষের লোকজন লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। আমাদের ধাওয়া দিয়ে জমি থেকে তাড়িয়ে দেয়। আমরা এ থেকে পরিত্রাণ চাই।’</p> <p>রাধিকা হালদারের ভাইয়ের ছেলে বিল্পব হালদার বলেন, ‘আসামিদের পরিবারের কটূক্তিমূলক কথার কারণেই ধান কাটতে বাধার সৃষ্টি হয়েছে। জমির ধান জমিতেই থাকবে। অন্য কেউ ধান কাটতে পারবে না।’</p> <p>নিহত রাধিকা হালদারের পুত্রবধূ লক্ষ্মী রানী হালদার বলেন, ‘আসামিদের পরিবারের নারী সদস্যরা অনেক গালিগালাজ করে, তাই ধান কাটতে দেওয়া হচ্ছে না। মামলার আসামি যারা, তারা সরাসরি ধান কেটে নিয়ে যাক। অন্য কেউ ধান কাটতে এলে এমনই হবে।’</p> <p>পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকার ব্লক ম্যানেজার কামাল মাতুব্বর বলেন, ‘পূর্ব কলাগাছিয়া এলাকায় মারামারিতে একজন লোক মারা গেছে। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে, আসামিও আছে। আসামিপক্ষের লোকজন পলাতক। বাড়িতে শুধু নারী সদস্যরা রয়েছে। এই আসামিপক্ষের জমিতে ধান পেকে গেছে, কিন্তু বাদীপক্ষের লোকজন ধান কাটতে দিচ্ছে না। তিন-চার দিনের মধ্যে সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে। এতে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হবে কৃষকের পরিবারের।’</p> <p>মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, জমিতে পাকা ধান ঘরে তুলতে বাধা দেওয়া, সেটাও আরেকটি অপরাধ। ধান কেটে নেওয়ার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।</p> <p>মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, ধান পেকে জমিতে নষ্ট হচ্ছে। সেই ধান কাটতে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। এ জন্য কৃষকের পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।</p> <p>উল্লেখ্য, গত ১৪ মার্চ পিকনিকের গাড়িতে সামনে বসা নিয়ে মিল্টন হালদার ও প্রকাশ বৈরাগীর ঝগড়া হয়। পরদিন সকালে হালদার ও বৈরাগী বংশের লোকজন সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়। আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাধিকা হালদারকে ঢাকা মেডিক্যালে পাঠানো হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চার দিন পর মারা যান তিনি। এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী মিতালী হালদার বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় ৪০ জনের নামে একটি মামলা করেন। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।</p>