<p>সুন্দরবনে মানবসৃষ্ট ও পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। এই অগ্নিকাণ্ড বন্ধে বন বিভাগসহ সরকারকে গুরুত্ব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী। গত ২২ বছরে সুন্দরবনে ২৪ বার আগুন লেগে সরকারি হিসাবে প্রায় ৭৫ একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। সর্বশেষ লাগা আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।</p> <p>সর্বশেষ  শনিবার (৪ মে) বিকেল পৌনে ৩টায় সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া এলাকায় আগুন লাগে। রবিবার (৫ মে) সকাল ৮টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেছেন। পুলিশ, উপজেলা প্রশাসন, বনরক্ষী ও স্থানীয় বাসিন্দারা অংশগ্রহণ করেছে বনরক্ষার কাজে।</p> <p>সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নুরুল করিম বলেন, সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া এলাকায় আগুন নির্বাপণে রবিবার সকালে কাজ শুরু করা হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে এসিএফ চাঁদপাইকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। স্টেশন কর্মকর্তা ধানসাগর ও স্টেশন কর্মকর্তা জিউধারাকে নিয়ে গঠিত তিন সদস্যের ওই কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আগুন নেভানোর পর তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে।</p> <p>বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০২ সালে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের কটকায় একবার, একই রেঞ্জের নাংলী ও মান্দারবাড়িয়ায় দুইবার, ২০০৫ সালে পচাকোড়ালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খাল এলাকায় দুইবার, ২০০৬ সালে তেড়াবেকা, আমরবুনিয়া, খুরাবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচবার, ২০০৭ সালে পচাকোড়ালিয়া, নাংলী ও ডুমুরিয়ায় তিনবার, ২০১০ সালে গুলিশাখালীতে একবার, ২০১১ সালে নাংলীতে দুইবার, ২০১৪ সালে গুলিশাখালীতে একবার, ২০১৬ সালে নাংলী, পচাকোড়ালিয়া ও তুলাতলায় তিনবার, ২০১৭ সালে মাদ্রাসারছিলায় একবার এবং ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগর এলাকায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ২০২১ সালের ৩ মে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিস, বন বিভাগ ও স্থানীয়দের প্রায় ৩০ ঘণ্টার চেষ্টায় ৪ মে বিকেল ৫টায় আগুন নিভে যায়। পরদিন ৫ মে সকালে আগের অগ্নিকাণ্ডের দক্ষিণ পাশে আবারও আগুন লাগে।</p> <p>সুন্দরবনের সবকটি আগুনের ঘটনাই শুষ্ক মৌসুমে।</p> <p>প্রতিবার আগুন লাগার কারণ, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ও পরবর্তী সময়ে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে তদন্ত কমিটি গঠন করে বন বিভাগ।</p> <p>সুন্দরবন বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০২ সাল থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে এ নিয়ে ২৫ বার আগুন লাগার ঘটনা ঘটল। বন বিভাগের হিসাব মতে, বিগত ২৪ বারের আগুনে ৭১ একর ৬৬ শতাংশ বনভূমির ক্ষতি হয়। </p> <p>তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আগুন লাগার কারণ হিসেবে মৌয়ালীদের ব্যবহৃত আগুনের কুণ্ডলী, জেলেদের সিগারেট, দাবদাহ, অনাবৃষ্টি, খরা, বন অপরাধে সাজাপ্রাপ্তদের প্রতিশোধমূলক আচরণ, দুষ্কৃতকারীদের দিয়ে বনের মধ্যে আগুন ধরানোকে দায়ী করা হয়। আগুনের স্থায়িত্বের কারণ হিসেবে বিভিন্ন গাছের পাতার পুরু স্তরকেও দায়ী করেছে তদন্ত কমিটি।</p>