<p>১. অলিভ অয়েল</p> <p>মস্তিষ্কের জন্য উপকারি বেশ কিছু খাদ্যগুণে ভরপুর অলিভ অয়েল। এতে আছে বিডি এন এফ প্রোটিন যা মস্তিষ্কের নতুন কোষ উৎপাদনে কার্যকর। অলিভ অয়েলে উপস্থিত অ্যাসেটাইল কোলিন নামের নিউরো ট্রান্সমিটারটি মস্তিষ্কের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।</p> <p>২. নারকেল তেল<br /> মায়ের দুধের পর সবচেয়ে বেশি মাত্রায় মাঝারি মাপের ট্রাই গ্লিসারাইড বা এম সি টি পাওয়া যায় নারকেলের তেলে। শরীরে এই এম সি টি বিক্রিয়ার মাধ্যমে কিটোনে রূপান্তরিত হয় এবং সহজেই মস্তিষ্কে পৌঁছায়। এম সি টি মস্তিষ্কের বার্ধক্য ঠেকাতেও কার্যকরি। নারকেলের তেল স্মৃতিভ্রম ও আলঝাইমারের শুশ্রূষায় কাজ করে। এছাড়াও পারকিনসন, স্ট্রোক ইত্যাদি নানা স্নায়বিক রোগের চিকিৎসায় এটি দারুণ উপকারি।</p> <p>৩. অ্যাভোক্যাডো<br /> সুস্বাদু এই ফলটি খেয়েছেন তো? অ্যাভোক্যাডোতে উপস্থিত ওলেইক অ্যাসিড এর স্বাদের জন্য দায়ী। আবার মস্তিষ্কের উর্বরতা বৃদ্ধিতেও ওলেইক অ্যাসিড কাজ করে। শরীরে প্রবেশ করার পর এই অ্যাসিডটি মায়েলিন নামের একটি প্রোটিন তৈরি করে। মস্তিষ্কের গঠনে মায়েলিন একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান।</p> <p>৪. বিট<br /> মস্তিষ্কের বিকাশে বিট অনন্য। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনার ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটির কিছু গবেষকদের মতে, বিটে উপস্থিত প্রাকৃতিক নাইট্রেট মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়ায়। ফলে বেড়ে যায় মস্তিষ্কের কাজ করার ক্ষমতা।</p> <p>৫. হলুদ<br /> মস্তিষ্ককে চাঙ্গা রাখতে খাবারে একটু হলুদ নিয়মিত মেশান। হলুদে উপস্থিত থাকা মস্তিষ্কের নানা গোলযোগ সারিয়ে তুলতে ভাল কাজে দেয়। এর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট গুণের কারণে আলঝাইমারের চিকিৎসায় খুব ভাল কাজ করে এই হলুদ। স্মৃতিশক্তি তাজা করে তুলতে বা অবসাদ রোগ সারিয়ে তুলতেও এর জুড়ি মেলা ভার। এছাড়াও সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় জানা গেছে যে, অ্যালকোহল জনিত মস্তিষ্কের গোলমালে হলুদ একটি দারুণ ওষুধ।</p> <p>৬. ডিম<br /> অ্যামাইনো এসিড আর প্রোটিনে ঠাসা ডিম মস্তিষ্কের শক্তি ও সঞ্চালন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে করে। কাজে মনোযোগ এনে দেয়। ভিটামিন বি কমপ্লেক্স আর ভিটামিন ডি-তে ভরপুর ডিম। মস্তিষ্কের বিকাশে ও সঞ্চালনে এদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। <br /> ৭. হাড়ের নির্যাস<br /> কম আঁচে হাড় সিদ্ধ করার পর যে নির্যাস তৈরি হয় তাতে প্রচুর গ্লাইসিন নামের অ্যামাইনো এসিড থাকে। গ্লাইসিন দুশ্চিন্তা কমায়। একাধিক সমীক্ষা বলছে যে এটি ঘুমের জন্যও ভাল। এমনকি দিবানিদ্রার হার কমিয়ে মস্তিষ্কের সঞ্চালনেও এর ভূমিকা আছে।</p> <p>৮. ব্রকলি<br /> মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এমন দুটি উপাদান আছে ব্রকলিতে। প্রথমত, ভিটামিন কে, যা সাহায্য করে কিছু শেখা, মনে রাখা, বিবেচনা করা ইত্যাদিতে। আর দ্বিতীয়ত, কোলিন, যা সাহায্য করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করতে। কাজেই ব্রকলি আপনার মস্তিষ্কের উন্নতির জন্য একটি উপকারি খাবার।</p> <p>৯. সেলারি<br /> এই সব্জিটিতে প্রচুর লিউটিওলিন থাকে যা একটি প্রয়োজনীয় ফ্ল্যাভোনয়েড। এটি একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও কোনো রকম ফোলা কমাতে কাজ করে। একটি গবেষণা থেকে জানা গেছে যে, কিছু শেখা, মনে রাখা, বিবেচনা করা ইত্যাদিতে ও স্নায়ুক্ষয় রোধে এর গুণ সুবিদিত।</p> <p>১০. ড্যান্ডেলিওনের পাতা<br /> ডেইজি গোত্রের এই গাছের ল্যাটিন নামের অর্থ সিংহের দাঁত। কারণ এর পাতার আকৃতি কিছুটা সিংহের দাঁতের মতোই। আবার এর গুনাগুণও আপনাকে চমকে দেবে। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, কে এবং বি কমপ্লেক্স। সঙ্গে আছে নানা খনিজ উপাদান, যেমন ম্যাগনেসিয়াম, দস্তা, পটাশিয়াম, লোহা, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি। এতে উপস্থিত শরীরের প্রয়োজনের থেকে ছয় শ শতাংশ বেশি ভিটামিন কে যা মস্তিষ্কের স্নায়ুক্ষয় ও অ্যালঝাইমার রোধ করতে সাহায্য করে।</p> <p>১১. অ্যাস্পারাগাস<br /> প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকায় অ্যাস্পারাগাস স্ট্রোক ও অ্যালঝাইমার রোগকে দূরে রাখতে ভাল কাজ করে। এতে থাকা ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ও ফোলেট মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।</p> <p>১২. ডার্ক চকোলেট<br /> এতে আছে টেট্রাহাইড্রো কারবিনল নামের নিউরো ট্রান্সমিটার। যা মনকে সজাগ ও সতেজ রাখতে সাহায্য করে এটি। ডার্ক চকোলেটে উপস্থিত ফিনাইল মিথাইল অ্যামিন নামর উপাদানকে আবার ‘লাভ’ ড্রাগও বলে, কারণ এটি শরীরে ঢুকলে প্রেমে পড়ার অনুভূতি এনে দেয়। এছাড়াও আছে থিওব্রোমিন যা কিনা গঠনগত দিক থেকে খানিকটা ক্যাফেইনের মতো। এতে মস্তিষ্কের যৌন চিন্তা বৃদ্ধি হয়। নানা উপাদানে সমৃদ্ধ ডার্ক চকোলেট স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, অনেকক্ষণ ধরে একাগ্র থাকা ও সমস্যা সমাধানের চিন্তাশক্তি বাড়ায়।</p> <p>১৩. সবুজ শাকসব্জি<br /> হাভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের কিছু গবেষকদের একটি সমীক্ষায় জানা গেছে যে পালং, লেটুস, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি নিয়মিত খেলে মস্তিষ্কের নানা সমস্যা অনেকটা কমে যায়। শাকসব্জি ইত্যাদিতে উপস্থিত নানা ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ মস্তিষ্কের জন্য ভাল।</p> <p>১৪. রোজমেরি<br /> রোজমেরি মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন, স্মৃতিশক্তি ও একাগ্রতা বাড়ায়। এতে উপস্থিত কারনসিক এসিড মস্তিষ্কে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এটি স্ট্রোক, আলঝাইমারের মতো নানা স্নায়ুক্ষয় জনিত রোগ সারাতে সাহায্য করে। <br /> ১৫. কিমচি<br /> কিমচি অর্থাৎ, অর্ধপাচিত খাদ্য। এই ধরণের খাদ্যের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ল্যাক্টোব্যাসিলাই থাকে। এর কারণেই কিমচি খেতে কিছুটা টক জাতীয় হয়। কিমচি বলতে টক দইকেও বোঝানো যেতে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, এই ধরণের খাদ্য মস্তিষ্কের কাজে দারুণভাবে সাহায্য করে।</p> <p>১৬. শাকআলু<br /> মস্তিষ্কের কাজ ঠিকভাবে চালনা করার জন্য ভিটামিন বি-৬ খুবই জরুরি একটি উপাদান। শাকআলুর মধ্যে এই ধরণের ভিটামিন প্রচুর পরিমাণে থাকে। এই ভিটামিন শরীরে প্রবেশ করে প্রোটিনকে চূর্ণ করে অ্যামিনো অ্যাসিডে পরিণত করতে পারে। ফলে পাচন প্রক্রিয়া ভালভাবে সম্পন্ন হয় এবং সকল প্রত্যঙ্গের কাজ আরও উন্নত হতে পারে।</p> <p>১৭. কেল শাক<br /> কারাম শাকের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পৌষ্টিক উপাদান থাকে। যেমন, এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ছাড়াও বেটা ক্যারোটিন, ফ্ল্যাবনয়েড, পলিফেনল থাকে। এছাড়াও এর মধ্যে ভিটামিন সি এবং ভিটামিন বি থাকে। এই ধরণের ভিটামিন মস্তিষ্কের গঠনে খুবই প্রয়োজনীয়। এছাড়াও, এই উপাদানগুলি দুশ্চিন্তা দূর করতে, প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে এবং অন্য নানারকম রোগ সারাতে সাহায্য করে থাকে।</p> <p>১৮. রেড ওয়াইন<br /> বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় যে, প্রতিদিন অল্প পরিমাণে রেড ওয়াইন খেলে দুশ্চিন্তা দূর হয়। এছাড়াও, রেড ওয়াইন পান করলে মস্তিষ্কে হিম অক্সিজিনেজের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই হিম অক্সিজিনেজ এক ধরণের উৎসেচক, যামস্তিষ্কের কোষ সহজে নষ্ট হতে দেয় না। এছাড়াও রেড ওয়াইনের মধ্যে এমন ধরণের উপাদান থাকে, যা স্মৃতিভ্রংশের সমস্যা দূর করতে পারে।</p> <p>১৯. কাজু বাদাম<br /> অ্যামণ্ড কাজু বাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে রাইবোফ্ল্যাবিন এবং এল- কারনিটাইন থাকে। এই দুই উপাদান মস্তিষ্কের কাজকে সুদৃঢ় করতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে মস্তিষ্ক এবং স্নায়ু সম্বন্ধিত নানা রোগকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে এই বাদাম।</p> <p>২০. তরমুজের বীজ<br /> তরমুজ তো সবাই খাই। কিন্তু তরমুজের বীজ খাই কি? জেনে রাখা ভাল যে তরমুজের বীজের মধ্যে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। যা শরীর তো বটেই মস্তিষ্ককেও শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়াও, এর মধ্যে থাকে ম্যাগনেসিয়াম। এই উপাদানটিও মস্তিষ্ককে করে তোলে শক্তিশালী।</p> <p>২১. ডাল জাতীয় শস্য<br /> ডাল জাতীয় শস্য, যেমন বিনস, মটরশুঁটি, মুগ-মসুর ডাল সহ যে কোনও ডাল ইত্যাদিকে বোঝায়। এগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড থাকে। গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই ধরণের শস্য খুবই উপকারি উপাদান। এতে গর্ভস্থ শিশুর মস্তিষ্ক ভালভাবে গঠিত হতে পারে এবং স্নায়ুর কোনও সমস্যা থাকলে তা সমাধান করতে পারে।</p> <p>২২. চিয়া বীজ<br /> চিয়া বীজের মধ্যে থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এছাড়াও থাকে নয়টি গুরুত্বপূর্ণ অ্যামাইনো অ্যাসিড, যা আসলে বিশেষ ধরণের প্রোটিন, আছে কার্বোহাইড্রেট এবং নানা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এই উপাদানগুলি শুধু শরীরের জন্যই নয়, দরকার মস্তিষ্কের কাজ বৃদ্ধি করার জন্যও। নিয়মিত চিয়া বীজ খেলে তাই স্বাস্থ্য এবং বুদ্ধি দুইই বজায় থাকবে।</p> <p>২৩. কুইনোয়া<br /> কুইনোয়া বা রামদানা এক ধরণের বীজ। এরমধ্যে প্রচুর পরিমাণে অ্যামিনো অ্যাসিড, বিশেষত লাইসিন থাকে, যা উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, এই বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় মস্তিষ্কের আঘাত বা প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে পারে। একইসঙ্গে এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা মস্তিষ্ককে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে।</p> <p>২৪. বাঁধাকপি<br /> বয়স হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অনেকেই অ্যালঝাইমার দ্বারা আক্রান্ত হন। অ্যালঝাইমার হল এক ধরণের স্নায়ুরোগ। তবে, এর প্রতিকারও আছে। আর তা হল লাল বাঁধাকপি। এই বাঁধাকপির মধ্যে অ্যান্থঅসিয়ানিন থাকে, যা স্নায়ুকে অ্যালঝাইমারের হাত থেকে রক্ষা করতে পারে।</p> <p>২৫. সূর্যমুখীর বীজ<br /> সূর্যমুখীর বীজ মস্তিষ্ককে শক্তি দান করতে বিশেষভাবে পারদর্শী। এতে, এতো পরিমাণে লেসিথিন থাকে, যা অ্যাসিটিকোলাইন তৈরিতে সাহায্য করে। এই অ্যাসিটিকোলাইন হল এমন এক ধরণের রাসায়ানিক উপাদান, যা মস্তিষ্কের কাজ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।</p> <p>২৬. টমেটো<br /> খুব কম খরচে মস্তিষ্ককে যদি শক্তিশালী করে তুলতে চান, তবে টমেটোর থেকে ভাল আরও কিছু হতে পারে না। টমেটোর মধ্যে মস্তিষ্ককে শক্তিশালী করে তোলার মতো যে উপাদান থাকে, তা ক্যারটেনয়েড নামে পরিচিত। এছাড়াও নানা অ্যান্টি অক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ এই ফল বা সব্জিতে রয়েছে লাইকোপেন, যা মস্তিষ্কের বৃদ্ধি এবং প্রদাহজনিত সমস্যা দূর করতে পারে।</p> <p>২৭. শস্যদানা<br /> মস্তিষ্কের কাজ বৃদ্ধির জন্য শস্যদানা খুবই উপকারি।এর কারণ শস্যদানার মাধ্যমে আমাদের শরীরে কার্বোহাইড্রেট প্রবেশ করতে পারে। খাদ্যশস্য বলতে বিভিন্ন সবুজ খাদ্যবস্তু যেমন, বিনস, নানা রকমের ফল এবং সব্জি ইত্যাদি। এগুলি খাওয়া একান্তভাবে জরুরি। কারণ এগুলির মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। এতে শরীর তো বটেই, মস্তিষ্কের কাজও বৃদ্ধি পায়।</p>