<p>প্রায় এক শ  বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ইতিহাসের প্রথম জন্মনিয়ন্ত্রণ ক্লিনিক খোলেন মার্গারেট স্যাঙ্গার। আর ৬০ বছর আগে প্রথম জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ির অনুমোদন দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। ১৯৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট বিবাহিত নারীদের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহারের আইনী অধিকার দেন। আর ১৯৭২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিবাহিত এবং অবিবাহিত নির্বিশেষে সব নারীদের জন্য জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহারের আইনী অনুমোদন দেওয়া হয়।</p> <p>এরপর থেকে জন্মনিয়ন্ত্রণের আরো নানা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু তা কখনোই পুরোপুরি নিখুঁত হয়ে ওঠেনি। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নারীদের স্বাধীনতার যে দরজা খুলে দেয় তা আজও একটি জ্বলন্ত ইস্যু।</p> <p>চলতি সপ্তাহে জন্মনিয়ন্ত্রণ ওষুধের ইতিহাসে যুক্ত হয়েছে নতুন আরেকটি নাম- ‘ডাইমেথ্যান্ড্রোলোন আনডেকানোঅ্যাট’ (ডিএমএইউ)।  এটি পুরুষদের জন্য সম্ভাব্য একটি জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি। পুরুষদের অস্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য একে সবচেয়ে সেরা প্রত্যাশা বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। যদিও আগের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হছে।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয় দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট এর অর্থ সহায়তায় এ নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে। তবে এখনো এটি চুড়ান্ত করা হয়নি।</p> <p>বড়িটি খেতে হবে খাবরের সঙ্গে। কিন্তু এটি এখনো প্বার্শ প্রতিক্রিয়া মুক্ত করা যায়নি। কোলেস্টেরল এর মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার মতো প্বার্শ প্রতিক্রিয়া রয়েছে বড়িটি সেবনে। তবে স্বল্প সময়ের (১ মাস) জন্য ব্যবহারে এটি নিরাপদ বলেই মনে হচ্ছে। অবশ্য এই ওষুধ সেবনে পুরুষদের ওজন বেড়ে যাওয়ার মতো ঝুঁকি আছে পুরোপুরি। যা আবার নারীদের জন্য হতাশাজনক।</p> <p>পরের ধাপে আরেকটি পরীক্ষা করে দেখা হবে বড়িটি পুরুষদের শুক্রাণু উৎপাদন ঠিক কতটুকু কমাতে সক্ষম। এরপর আরেকটি পরীক্ষায় দীর্ঘমেয়াদে এর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হবে।</p> <p>তবে গবেষকরা আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাজারে আসতে চলেছে পুরুষের গর্ভনিরোধক ওষুধ। তবে শুধু পিল না বরং নেসাল স্প্রে ও সাবস্কিন ইমপ্ল্যান্ট জেলের মতো ওধুষও বাজারে ছাড়া হতে পারে।</p> <p>সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন’ এর পক্ষ থেকেও প্রায় এক বছর ধরে এই ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন সেখানকার গবেষকরা। ৩২০ জন পুরুষের ওপর পরীক্ষা চালানো হয় এই এক বছরে। এবং তার মধ্যে ৯৬ শতাংশ যুগল সফল হয়েছে এই পদ্ধতিতে।</p> <p>প্রসঙ্গত, এই গর্ভনিরোধক পুরোপুরি কার্যকর হলেও, গবেষকরা জানিয়েছেন যে আরও কিছু কাজ এখনও বাকি রয়েছে। এর ব্যবহারে কতওটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, তা সঠিকভাবে এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।</p> <p>তবে বিজ্ঞানীদের মতে, খুব বেশি হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই বিশ্ববাজারে পাওয়া যাবে পুরুষ গর্ভনিরোধক পিল বা জেল বা স্প্রে।</p> <p>প্রসঙ্গত, পুরুষের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ পিলের গবেষণা অনেক দিন ধরে হয়ে আসলেও তা বরাবরই বাধার সম্মুখীন হয়েছে। দেখা গিয়েছে, এই ধরনের কিছু পিল যকৃতে প্রদাহ সৃষ্টি করে। আবার কিছু পিলের কার্যকারিতা তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায়, ফলে দিনে দুইবার করে তা সেবনের প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে পুরুষদের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলো হলো কনডম, উইথড্রোয়াল, আউটার কোর্স এবং ভ্যাসেকটমি।</p> <p>সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট, শিকাগো ট্রিবিউন </p>