মাইশা নাইমা তাসনিন ৩ ফেব্রুয়রি ২০১৫ বাবা নুরুজ্জামান পভলু ও মা মাফরুহা বেগমের সঙ্গে কক্সবাজার থেকে যশোর ফিরছিলেন। ভোররাতে কুমিল্লায় তাদের বাসটিতে পেট্রল বোমা ছোঁড়ে অবরোধকারীরা। পভলু প্রথমে জানালা দিয়ে মাফরুহা বেগমকে ছুঁড়ে ফেলতে পারলেও মেয়ে মাইশা এবং নিজে জীবন্ত পুড়ে মৃত্যুবরণ করেন।
[লেখাটি কাল্পনিক।
পেট্রল বোমায় নিহত এক কিশোরীর চিঠি
সাজ্জাদুল ইসলাম নয়ন

প্রিয় ম্যাডাম,
আমার এই পা দুটিতে যখন আগুন লাগে তার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ঘুমিয়ে ছিলাম। ঘুম ভাঙলো আগুনের ছ্যাঁকায়। পায়ের মোজা খুলতে খুলতেই আমার সাড়া শরীর জ্বলে উঠলো।
প্রিয় আপসহীন ম্যাডাম,
আপনি কি 'ঘোস্ট রাইডার' সিনেমাটি দেখেছেন? আপনি কি দেখেছেন সন্তানকে রক্ষা করতে সারা শরীরে আগুন লাগা এক বাবা ঘোস্ট রাইডারের মতো আমার দিকে এগিয়ে আসছেন।
বাবা আমার দিকে আসছেন ক্ষীণ গলায় আমাকে কী যেন বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু আগুন বাবার মুখের সে কথাগুলো কেড়ে নিচ্ছে। আমি চিৎকার করছি।
আগুন আমার পা থেকে ওপরের দিকে উঠে আসছে। আমার চোখের সামনে বাবা পুড়ছেন। আমি পুড়ছি।
অদূরে চেয়ে দেখি আমার মা বাসের বাইরে চিৎকার করছেন আর তাকে ধরে রেখেছে কয়েকজন। সবাই যেন আমাদের পুড়ে যাওয়াটা নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েছে। আমার সামনেই বাবার মাথা আগুনে গ্রাস করে নিল। মুখ পুড়ে মাংস খসে পড়লো বাসের মেঝেতে।
এবার বাবার খুলি পুড়ছে। চোখ পুড়ছে। চোখগুলো থেকে কেমন যেনো আঁঠালো কালো কালো রস গড়িয়ে পরলো। মাথার খুলিটা যেনো কয়লার আগুনে লাল হয়ে যাওয়া লোহার পিণ্ড। বাবার হাত থেকে সব মাংস পুড়ে খসে পরলো। এখন শুধুই কংকাল। এটাকেও রেহাই দিলো না আগুন। এবার হাড়গোড় ও জ্বলছে আমার বাবার।
শেষবারের মতো বাবা আমার পায়ের কাছে এসে আছড়ে পড়লেন। বাবা আর পারলেন না। আপনার ফেসবুকের স্ট্যাটাস মেনে নিয়েই তিনি তার মানবীয় সব রূপ হারিয়ে একটি কাঁদার দলার মতো আমার পায়ের কাছে ছোট একটি পিণ্ডকায় বলের মতো আছড়ে পড়লেন।
ম্যাডাম, আপনি কি জানেন মানুষকে পোড়ালে ছোট হয়ে যায়? হাত পা মাথা এক জায়গায় হয়ে যায়। আমার এই ছোট্ট জীবনে এ এক নিদারুণ নিষ্ঠুর অভিজ্ঞতা। বাসের বাইরে মা তখনও আহাজারি করছেন। দিশেহারা হয়ে বুক চাপড়াচ্ছেন। আগুনের লেলিহান শিখা আর কালো ধোঁয়ার মাঝেও আমি এবার চিৎকার করে মাকে ডাকছি ‘মা আমাকে বাঁচাও।’ মা ছুটে আসতে চাইলেও তাকে আটকে রাখছে কয়েকজন।
আগুন আমার বুক পর্যন্ত উঠে এসেছে। এতক্ষণ আমি বাবার সাহায্যের অপেক্ষায় ছিলাম। এখন বাবা একটা পোড়া মাংসের দলা, মাঝখানে উঁকি-ঝুকি মারছে কিছু হাড়গোড়। আমার এত সুন্দর বাবা আজ এক কুৎসিত জড় থকথকে আঁঠালো পোড়া মাংস পিণ্ড।
জ্বলছে আমার সারা শরীর। এখন আমার শরীরে আর কোন যন্ত্রণা নেই। আমি ভাবছি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বাবার স্বপ্নের কথাগুলো। বলছিলেন ‘মা এটা হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা এর সদ্বব্যবহার করতে পারিনি। শুধু রাজনীতির হানাহানি আমাদের পিছিয়ে দিচ্ছে বারবার। সাগর পাড়ে বসে আমি শপথ নিয়েছিলাম আমিও রাজনীতি করবো। এই দেশ বদলাতে হলে সবার আগে রাজনীতির ত্রুটিকে বদলাতে হবে।
আগুন আমার মাথা পর্যন্ত উঠে এসেছে। জ্বলছে দাউ দাউ করে। আমার পোড়া চামড়া খসে পড়ছে, কোথাও কোথাও মাংসপিণ্ডও। এগুলো নিয়ে আর ভাববার সময় নেই। মনে পড়ছে বাবার কত স্বপ্ন ছিলো আমাকে নিয়ে। সেগুলো সব আমাকে পূরণ করতে হবে।
আমার হাতের দুটি আঙ্গুল জ্বলতে জ্বলতেই খসে পড়ে গেলো পায়ের কাছে। পা মানে পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া একটি কাঠ কয়লার খণ্ড। আমার হাসি পেল। নিজের মাংস পোড়া গন্ধ নিজেই সহ্য করতে পারছি না। প্রচণ্ড হাসি পাচ্ছে, চোখে রাজ্যের ঘুমে জড়িয়ে আসছে।
প্রিয় নেত্রী,
আপনার বড় সন্তান তারেক রহমান আর আমার বাবা একই বয়সের। একবার ভাবুন তো এই বয়সে তারেক রহমানের দুই সন্তান জ্বলছে সঙ্গে তারেকও। আর বাসের বাইরে বসে আপনি আহাজারি করছেন। বাতাসে ভাসছে আপনার প্রাণপ্রিয় সন্তান ও নাতনিদের মাংস পোড়া উৎকট গন্ধ। আপনি সহ্য করতে পারছেন না সেই গন্ধ।
কতক্ষণ ঘুমিয়ে ছিলাম জানি না। মায়ের চিৎকারে আমার তন্দ্রা ছুটে গেলো। মা.....আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার বায়নাতেই তোমরা আমাকে কক্সবাজার দেখাতে নিয়ে এসেছিলে..... আমি আর কোনোদিন কক্সবাজার দেখতে চাইবো না।
মা চিৎকার করছেন- কেউ কি আছো আমার মেয়েটাকে বাঁচাও.....
বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো। কান্নাও এলো, কিন্তু সর্বনাশা আগুন সেই জলটুকুও কেড়ে নিলো।
এবার আমার মাথার মগজ পুড়ছে। গলে বেরিয়ে আসছে চোখ মুখ ও নাকের কোটর দিয়ে। আমার কেমন যেন লাগছে। মনে হয় হাওয়ায় ভাসছি। এটাকেই মৃত্যু বলে তা হলে। কেমন যেন ভারসাম্যহীন হাওয়াই বেলুনের মতো লাগছে। সব কিছুই কেমন যেনো অন্যরকম লাগছে। আমি আস্তে আস্তে হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছি......
ভালো থাকুক বাংলাদেশ।
ইতি
মাইশা নাইমা তাসনিন
২০০১-২০১৫

মতামত
সামরিক বাহিনীর ঐক্য বিনষ্টে ষড়যন্ত্র ও সাম্প্রতিক দৃশ্যপট
মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

বাংলাদেশের সামরিক শক্তি ও কাঠামো নিয়ে এদেশের জনগণ চিরকাল গর্বিত। জনগণ সবসময়ই তাদের সোনালী সন্তানদের প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছে। এটাই তো সত্য, জাতীর যেকোনো প্রয়োজনে আমাদের সামরিক বাহিনীই এগিয়ে আসে এবং জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করে।
গত বছর আগস্ট মাসে, যখন সারা দেশ ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের ঝুঁকিতে, তখন আবারও আমরা সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বের দৃঢ় অবস্থান চাক্ষুস করি।
তিনি দেশের জনগণের প্রতি অবিচল সমর্থন রেখে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। সে সময়ে তিনি শপথ নিয়েছিলেন, "যা-ই ঘটুক না কেন, দেশের প্রতি তার শপথ এবং আনুগত্য বজায় রাখবেন।
এটাই সত্য, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের শুরুর দিকে, জেনারেল ওয়াকার ও তার বাহিনী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন চলাকালীন বিক্ষোভরত জনগণের দিকে গুলি চালানো থেকে বিরত ছিলেন। এর ফলে ১৫ বছরের শাসনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হন।
এখানে উল্লেখযোগ্য, ৫ মার্চ, ইউএন হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস, ফলকার টার্ক, একটি সাক্ষাৎকারে বিবিসির 'হার্ডটক'-এ বলেছিলেন যে, জাতিসংঘ বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীকে স্পষ্টভাবে সতর্ক করে দিয়েছিল যে, জনতার প্রতিবাদ দমনে সামরিক বাহিনীর অংশ নিলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অংশগ্রহণ ঝুঁকির মধ্যে পরতে পারে।
টার্ক আরো বলেছিলেন, "আমরা আসলে সেনাবাহিনীকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে, যদি তারা জড়িত হয়, তবে তারা আর শান্তি মিশনে ট্রুপস পাঠাতে পারবে না," টার্ক প্রকাশ করেছিলেন। "ফলস্বরূপ, আমরা দেখেছি যখন মুহাম্মদ ইউনুস অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।"
কিন্তু সত্যটা এমন নয়। সময়ের রেকর্ড খতিয়ে দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায়, ৩ আগস্টেই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার ঘোষণা করেছিলেন, "আর কোনো গুলি নয়, কারণ ছাত্রদের প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে।"
ওদিকে ইউএন হাই কমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস এর মতে, তিনি ৪/৫ আগস্ট রাতে এ বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছিলেন।
কোনো সন্দেহ নেই, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সবসময় জাতীয় স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং এমন নয় যে তারা বাহ্যিক চাপের দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের মিশনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে, সেনাবাহিনী ব্যক্তিগত লাভের জন্য কখনোই কাজ করে না। এখানে বাংলাদেশ সরকারের জন্য জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ থেকে অর্থনৈতিক লাভও উল্লেখযোগ্য, কারণ জাতিসংঘ বাংলাদেশকে এই অংশগ্রহণের জন্য একটি বড় অঙ্কের অর্থ ফেরত দেয়। অতএব, জাতিসংঘ মিশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।
সমরিক বাহিনীর এমন সকল পেশাদারি পদক্ষেপগুলির পরও দেখা যায়, বর্তমানে বিদেশে বসবাসরত ভুল পথ অনুসরণকারী ও অনিয়ন্ত্রিত কিছু অবরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা নিরবচ্ছিন্নভাবে আমাদের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতীক, সামরিক বাহিনীকে অস্থিতিশীল করার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
তথ্য যাচাই সাপক্ষে দেখা যায়, এই কর্মকর্তারা নানা মোহে পড়ে বিভিন্ন সংস্থার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছেন। তাছাড়া, বিদেশে অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাপনকারী কয়েকজন কুখ্যাত ব্যক্তিও ইউটিউবের মাধ্যমে বারবার কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ছড়িয়ে সামরিক বাহিনীর মধ্যে সমস্যা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। তাদের কর্মকাণ্ড স্পষ্টভাবেই দেশপ্রেমিক সামরিক বাহিনীকে অস্থিতিশীল করতে মদত যোগাতে চায়।
এই অজাচিত চেষ্টাগুলোর পাশাপাশি, প্রতিবেশী দেশের কিছু গোষ্ঠীও বাংলাদেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সামরিক বাহিনীর ভাবমূর্তিকে কলঙ্কিত করার চালাচ্ছে। আশ্চর্যজনকভাবে, ভারতের কিছু মালিকানাধীন মিডিয়া, যেমন ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ এবং ‘ইন্ডিয়া টুডে’, নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর কার্যক্রমে কালিমা লেপন ও বিভাজন সৃষ্টি করতে সচেষ্ট। তারা চাইছে ক্যন্টনমেন্টগুলোতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হোক। কিন্তু কেন?
সামরিক বাহিনীর কমান্ডে অস্থিতিশীল চলছে। এই মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে, ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে একটি নোট প্রকাশ করেছে,
"বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, কিছু ভারতীয় মিডিয়া আউটলেট, যেমন ‘দ্য ইকোনমিক টাইমস’ এবং ‘ইন্ডিয়া টুডে’, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর কমান্ড চেইনে বিপর্যয় এবং অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা সম্পর্কিত মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এই রিপোর্টগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং এটি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সশস্ত্র বাহিনীর সম্মানকে ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি উদ্দেশ্যমূলক তথ্যগত প্রচারণার অংশ বলে প্রতীয়মান।'
আইএসপিআর আরো জানায়, 'আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিচ্ছি যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শক্তিশালী, ঐক্যবদ্ধ এবং প্রধান সেনাপ্রধানের নেতৃত্বে তার সাংবিধানিক কর্তব্য পালনে পূর্ণরূপে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কমান্ড চেইন দৃঢ় এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সকল সদস্য, শীর্ষ জেনারেলসহ, সাংবিধানিক কর্তব্য, কমান্ড চেইন এবং বাংলাদেশের জনগণের প্রতি তাদের আনুগত্যে অবিচল। বাহিনীর মধ্যে অসহযোগিতা বা অবিশ্বাসের যে কোনো অভিযোগ সম্পূর্ণরূপে ভিত্তিহীন এবং ক্ষতিকর। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব, অখণ্ডতা এবং নিরাপত্তা রক্ষার জন্য তার দেওয়া প্রতিশ্রুতি বজায় রেখেছে।"
সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ৫ আগস্ট এবং তার পরেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষা করেছেন। এটাই কি তার অপরাধ? তিনি বাংলাদেশের সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ থেকে রক্ষা করেছেন। এটাও কি তার অপরাধ? চাপ সত্ত্বেও, তিনি সামরিক শাসন আরোপ করেননি। এটাও কি তার অপরাধ?
তার জীবনী সম্পর্কে BBC ওয়ার্ল্ডের রিপোর্টে লিখেছে, “ওয়াকার বাংলাদেশ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং কিংস কলেজ, লন্ডন থেকে ডিফেন্স স্টাডিজে মাস্টার অব আর্টস ডিগ্রি লাভ করেছেন, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে।
সেনাবাহিনী প্রধান হওয়ার আগে, তিনি প্রায় ছয় মাসের জন্য চিফ অব জেনারেল স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন - যেখানে তিনি সামরিক কার্যক্রম এবং গোয়েন্দা সংক্রান্ত কাজ, বাংলাদেশে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ এবং বাজেট দেখাশোনা করেছিলেন।
এসব বলা এ কারণে, এই সময়ে পুরো দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম আকাশচুম্বী, নারীদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে এবং সার্বিকভাবে পুলিশের কর্মক্ষমতা কমে যাওয়ায় নানা মাত্রিক নিরাপত্তাও নাজুক। এমন পরিস্থিতিতে দেশ জুড়ে বিভিন্ন ধারার অরাজকতা চলছে।
দেখা যাচ্ছে, পুলিশ বিভাগের দুর্বল উপস্থিতির মাঝেও বাংলাদেশের জনগণের জন্য একমাত্র আশার আলো সামরিক বাহিনী এবং জনগণের জন্যে সাহসের একমাত্র উৎস হচ্ছে সামরিক বাহিনীর মাঝে অবিচল ঐক্য।
কিছু অপশক্তি গুজবকে পুজি করে সামরিক বাহিনীর মাঝে বিশৃংখলা ঘটাতে চায় এবং সামরিক বাহিনী এবং সরকারের মাঝে দূরত্ব বাড়াতে চায়। কারণ, সামরিক বাহিনীর শৃঙ্খলা ও একতা ভাঙতে পারলে দেশের নিরাপত্তা এবং জাতীয় স্বার্থে বিপর্যয় ঘটবে, যা স্বার্থান্বেসী মহল তাদের নিজেদের ফায়দার জন্য কাজে লাগতে পারবে।
তাই দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে, আমাদের দায়িত্ব হলো এই ধরনের মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকা এবং সামরিক বাহিনীর প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রদান করা। তাহলেই বর্তমান সরকারের প্রতি সামরিক বাহিনীর পূর্ণ সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা দেশের মধ্যে স্থিতিশীলতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত করতে পারব।
লেখক : কবি, কথা সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

মৃতদের বন, গাছই যেখানে কফিন

আপনি কি কখনো শুনেছেন এমন এক জায়গার কথা, যেখানে মানুষকে মাটির নিচে নয়, বরং গাছের ভেতরে কবর দেওয়া হয়?
ইন্দোনেশিয়ার টারাজা সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে মৃত্যু মানে শুধু জীবন শেষ হয়ে যাওয়া নয়। বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যাওয়ার সুযোগ। এই বিশ্বাস থেকে তারা একটি বিশেষ ধরনের কবর প্রথা অনুসরণ করে, যেখানে শিশুদের দেহ গাছের ভেতরে রাখা হয়।
যেভাবে চলে এই অদ্ভুত কবর দেওয়ার প্রক্রিয়া
কোনো শিশুর মৃত্যু হলে, তার পরিবার কফিনের পরিবর্তে একটি বড় গাছ বেছে নেয়।
টারাজা সম্প্রদায়ের বিশ্বাস অনুযায়ী, গাছ হচ্ছে জীবনের প্রতীক। ছোট শিশুরা পৃথিবীতে তেমন একটা সময় কাটাতে পারে না, তাই তাদের গাছের ভেতর রাখলে তারা প্রকৃতির সঙ্গে মিশে নতুন জীবন পায়।
টারাজা সম্প্রদায়ের মানুষ শুধু এই গাছের কবর দিয়েই থেমে থাকে না। তারা মৃতদের প্রতি বছর তাদের কবর থেকে তুলে আনে।
এটি কি অদ্ভুত নাকি এক অনন্য সংস্কৃতি?
আমাদের কাছে এটি বিস্ময়কর মনে হলেও টারাজাদের কাছে এটি খুবই স্বাভাবিক এবং শ্রদ্ধার বিষয়। তারা বিশ্বাস করে, মৃত্যু মানেই শেষ নয় বরং এটি প্রকৃতির সঙ্গে এক নতুন সংযোগের শুরু। এ ধরনের অদ্ভুত কিন্তু সুন্দর সংস্কৃতি আমাদের শেখায়, মানুষের বিশ্বাস আর প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক কত বিচিত্র হতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

ওইমিয়াকন, বরফের গ্রামে টিকে থাকার লড়াই
- এখানে স্কুল বন্ধ হয় কেবল তখনই যখন তাপমাত্রা -৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের এর নিচে নামে

পৃথিবীর কিছু জায়গা আছে যেখানে প্রকৃতি তার ভয়ংকর রূপ দেখায়। সেখানে মানুষের টিকে থাকার ক্ষমতাও চরম পরীক্ষার মুখে পড়ে। রাশিয়ার ওইমিয়াকন গ্রাম তেমনই এক জায়গা, পৃথিবীর সবচেয়ে ঠান্ডা জনবসতিপূর্ণ স্থান। শীত এখানে শুধুই একটি ঋতু নয়, বরং এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা, যেখানে বেঁচে থাকাটাই যেন এক যুদ্ধ।
ওইমিয়াকন অবস্থিত রাশিয়ার সাইবেরিয়ায়। যেখানে শীতকাল প্রায় সারা বছরই টিকে থাকে। ১৯৩৩ সালে এখানে রেকর্ড করা হয়েছিল -৬৭.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা, যা কোনো জনবসতিপূর্ণ স্থানের জন্য পৃথিবীর সর্বনিম্ন। এমনকি অ্যান্টার্কটিকার কিছু অংশেও এতটা ঠান্ডা হয় না।
ওইমিয়াকন শহরে জীবন মোটেও সহজ নয়। এখানে মানুষের ঠান্ডার সাথে যুদ্ধ করেই বেশিরভাগ সময় চলে।
গাড়ি চালানোর চ্যালেঞ্জ
গাড়ির ব্যাটারি জমে যাওয়ার কারণে অনেকেই তাদের গাড়ি ২৪ ঘণ্টা চালু রেখে দেয়। একবার বন্ধ হলে আবার চালু করা প্রায় অসম্ভব হয়ে যায়। রাস্তার নিচে থাকা পাইপগুলোও জমে যায়। তাই এখানে প্রায় কোনো পানির লাইন নেই।
খাদ্য ও পানীয় সংগ্রহ
চাষাবাদের কোনো সুযোগ নেই।
গরম থাকার কৌশল
বাসাগুলো কাঠের তৈরি। এগুলোকে গরম রাখার জন্য দিনরাত চুলা জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এখানে বাথরুমগুলো ঘরের বাইরে থাকে, কারণ পাইপলাইনে পানি জমে গেলে তা বিস্ফোরিত হতে পারে।
ওইমিয়াকনের জনসংখ্যা খুবই কম। শুধুমাত্র কয়েকশো মানুষ এখানে বসবাস করেন। তাদের প্রধান পেশা পশুপালন, বিশেষ করে রেনডিয়ার (হরিণ) পালন।এখানে স্কুল বন্ধ হয় কেবল তখনই যখন তাপমাত্রা -৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের এর নিচে নামে। স্থানীয় শিশুরা এত কম তাপমাত্রাতেও স্কুলে যায়, যা অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।
পর্যটকদের জন্য আকর্ষণ-
এই ভয়ংকর ঠান্ডার মধ্যেও কিছু দুঃসাহসী পর্যটক ওইমিয়াকন ঘুরতে যান। এখানে গেলে যা যা অভিজ্ঞতা হয়।
ফ্রোজেন নুডলস চ্যালেঞ্জ: গরম নুডলস বাইরে রেখে দিলে সেকেন্ডের মধ্যে জমে যায়। কাঠের ঘর ও বরফাচ্ছন্ন অঞ্চল দেখতে সত্যিই অন্যরকম।
ট্র্যাডিশনাল ইয়াকুট খাবার: এখানে বিশেষ ধরনের হিমায়িত মাছ ও মাংস খাওয়ার প্রচলন আছে।
ওইমিয়াকন হলো প্রকৃতির এক অবিশ্বাস্য সৃষ্টি, যেখানে মানুষ প্রকৃতির কঠোরতার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। আধুনিক বিশ্বের স্বাচ্ছন্দ্য এখানে একেবারেই অনুপস্থিত। এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা আমাদের শেখায়, পরিবেশ যতই কঠিন হোক মানুষ টিকে থাকার পথ খুঁজে নেয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের জন্মদিন আজ
অনলাইন ডেস্ক

রেহমান সোবহান বাংলাদেশের একজন অন্যতম খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ। ১৯৩৫ সালের ১২ মার্চ (আজকের দিনে) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক। তিনি বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করেছেন।
রেহমান সোবহানের জন্ম ১৯৩৫ সালের ১২ মার্চ কলকাতায়। তার বাবার নাম কে এফ সোবহান। তিনি ছিলেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং রাষ্ট্রদূত।
রেহমান সোবহান ১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে দেশে ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে শিক্ষকতাজীবন শুরু করেন।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত বিআইডিএসে এমিরিটাস ফেলো হিসেবে কাজ করেন। এ ছাড়া কুইন এলিজাবেথ হাউসে ১৯৭৬-১৯৭৯ পর্যন্ত ভিজিটিং ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল (ক্যাবিনেট মিনিস্টারের পদমর্যাদায়), পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (১৯৯১) সদস্য ছিলেন।
তিনি সাউথ এশিয়া সেন্টার ফর পলিসি স্টাডিজে (২০০১-২০০৫) নির্বাহী পরিচালক ছিলেন। তিনি ১৯৯৪-১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) প্রতিষ্ঠাতা এবং নির্বাহী চেয়ারম্যান ছিলেন। এ ছাড়া তিনি বিআইডিএসের পরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন।
রেহমান সোবহানের প্রকাশিত মনোগ্রাফের সংখ্যা ৪২টি। এ ছাড়া তার বিভিন্ন জার্নালে প্রায় ২০০-এর ওপরে লেখা প্রকাশিত হয়েছে। তার কাজের প্রধান বিষয়বস্তুর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আইয়ুব খানের কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির রাজনৈতিক সম্পর্ক, মধ্যবর্তী শাসনপদ্ধতিতে সর্বজনীন সাহসী উদ্যোগের ভূমিকা, বৈদেশিক নির্ভরশীলতার সংকট, ঋণ পরিশোধে ব্যর্থতা, কৃষিজ সংস্কার, সমন্বয়নীতি সংস্করণের সমালোচনামূলক নিবন্ধ, দুঃশাসনের ব্যবচ্ছেদ এবং সর্বশেষে দারিদ্র্য বিমোচনের কৌশল।
তিনি ২০০৮ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন।