<p>সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ায় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেছেন, ‘আমি বিএনপি করছি, বিএনপি করব। (প্রকাশ অযোগ্য ভাষা) শহীদ জিয়ার বিএনপিতে না থাকুক এটা আমি চাই না।’</p> <p>বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব পদে থাকা খোকনকে গত ২০ এপ্রিল সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। গতকাল রবিবার (২১ এপ্রিল) বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে সোমবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের এক নম্বর কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে আসেন খোকন। সেখানে ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামালকে নিয়েও বিষোদগার করেন সমিতি সভাপতি।</p> <p>প্রতি বছর সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪টি পদে নির্বাচন হয়ে থাকে। পেশাজীবী সংগঠন হলেও এ নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী প্রার্থীরা সাদা ও বিএনপিপন্থী প্রার্থীরা নীল প্যানেলের প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। গত ৬ ও ৭ মার্চ নির্বিঘ্ন ভোট হলেও ভোট গণনা কখন হবে এ নিয়ে বিবাদ তৈরি হয় প্রার্থীদের মাঝে। এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনাও ঘটে। পরিচিত দুই প্যানেলের বাইরে সম্পাদক পদের প্রার্থী নাহিদ সুলতানা যুথীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, তিনি সমিতির নির্বাচনে বহিরাগতদের দিয়ে সাদা প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী শাহ মঞ্জুরুল হকসহ অন্য প্রার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছেন। আর এতে ইন্ধন যুগিয়েছেন নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজল। এ পরিস্থিতিতে গত ৯ মার্চ ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করে নির্বাচন পরিচালনা উপ কমিটি।</p> <p>ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী সংখ্যা গরিষ্ঠ জয় পায় আওয়ামী পন্থী সাদা প্যানেল। সম্পাদকসহ ছয়টি দাপ্তরিক ও চারটি সদস্য পদে জয় পায় এ প্যানেলের প্রার্থীরা। আর সভাপতি ও তিনটি সদস্য পদে জয় পায় নীল প্যানেল অর্থাৎ বিএনপি-জামায়াত পন্থী প্রার্থীরা। ওইদিন মাহবুব উদ্দিন খোকন ও তাঁর এজেন্টরা ভোট গণনায় অংশ নিলেও বিএনপি পন্থী অন্য প্রার্থী বা তাঁদের কোনো এজেন্ট গণনায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। ফলাফলে সভাপতি পদে জয়ী হলেও গণনায় কারচুপির অভিযোগ তুলে পুননির্বাচন দাবি করেন মাহবুব উদ্দিন খোকন। সেই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সিদ্ধান্ত নেয় পুননির্বাচনের জন্য যৌক্তিক আন্দোলন চালিয়ে নেওয়ার। আর এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে নির্বাচিত চার জনকে সংশ্লিষ্ট পদের দায়িত্ব গ্রহণ না করতে গত ২৭ মার্চ চিঠি দেয় জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সে চিঠি উপেক্ষা করে গত ৪ এপ্রিল দায়িত্ব নিয়ে সভাপতি পদে বসেন বিএনপি নেতা খোকন। এরপর মাহবুব উদ্দিন খোকনকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জানায় সংগঠনটি।</p> <p>কায়সার কামাল বার নির্বাচনে সরকার সমর্থক প্যানেলকে জেতানোর জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন উল্লেখ সংবাদ সম্মেলনে খোকন বলেন, ‘এই ষড়যন্ত্রের মূলে ছিল ভোট গণনার সময় এজেন্টদের সরিয়ে নেওয়া। যদি এজেন্টদের সরিয়ে নেওয়া না হতো, তাহলে আমরা ১২ পদে জয়ী হতাম।’</p> <p>বারের সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে খোকন আরো বলেন, ‘তারেক রহমান আমাদের প্যানেল ঘোষণা করেছেন। বিএনপির কার্যালয়ে সকলের উপস্থিতিতে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। তারেক রহমান তো বলেনি তোমরা ভোট গণনায় যেও না, সভাপতির দায়িত্ব নিও না। তাহলে দায়িত্ব নিও না - এ কথা বলার কায়সার কামাল কে? যদি আমরা ১২ পদে জয়ী হতাম তাহলে গণতন্ত্র ও ভোটাধিকারের আন্দোলন শক্তিশালী করতে পারতাম। উনার উদ্দেশ্য ছিল সরকারকে ওয়াকওভার দেওয়া।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘বার নির্বাচনে আমরা সরকারের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু কায়সার কামালের ষড়যন্ত্রের কারণে সেই যুদ্ধে পুরোপুরি জয়ী হতে পারিনি। উনি নির্বাচনের সময় উপস্থিত না থেকে বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেরিয়েছেন। তারেক রহমানের ঘোষিত প্যানেলের বিরুদ্ধে তিনি অবস্থান নিয়েছেন।’</p> <p>কায়সার কামালকে অর্বাচীন উল্লেখ করে ব্যারিস্টার খোকন বলেন, ‘উনি একজন আত্মস্বীকৃত অপরাধী। সে কীভাবে আইনজীবীদের নেতা হন? নৈতিক স্খলনের কারণে আইনজীবী ফোরাম থেকে তার সদস্যপদ থাকা উচিত না। সরকারের এই এজেন্টকে দল থেকে বহিষ্কার করা উচিত। আমি মনে করি কায়সার কামালের ভূমিকা বিএনপির স্থানীয় কমিটির সদস্যদের তদন্ত করা উচিত।’</p> <p>প্রয়াত আইনজীবী টিএইচ খানের মত আইনজীবীদের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম গড়ে তালা হয়েছিল উল্লেখ করে বার সভাপতি বলেন, ‘সেই সংগঠনকে পাশ কাটিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম করে কায়সার কামাল। এই সংগঠনের কোনো গঠনতন্ত্র নেই। যদি গঠনতন্ত্র না থাকে তাহলে কীভাবে আমাকে অব্যাহতি দেয়? এই অব্যাহতির সিদ্ধান্ত আইনগত কার্যকারিতা নাই।’</p>