<p>দেশজুড়ে তীব্র দাবদাহের মধ্যে অবশেষে বৃহস্পতিবার (২ মে) দেখা গেল বৈশাখের রুদ্ররূপের অন্য দিকটা। এদিন তীব্র ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে তুমুল বজ্রপাতে পাঁচ জেলায় অন্তত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা বিভাগের কিছু জেলা এবং সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশির ভাগ অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে। ফলে তিন বিভাগে তাপমাত্রা কিছুটা কমে স্বস্তি নামে জনজীবনে। বৃষ্টির পানিতে সিলেটের জৈন্তাপুরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিতও হয়েছে। তবে তার পরও দেশের পাঁচটি অঞ্চলের তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে ছিল। বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে কক্সবাজার, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কুমিল্লা ও সিলেটে। এতে নিহতের পাশাপাশি আহত হয়েছে আরো প্রায় ১০ জন।</p> <p><img alt="ঢাকাসহ তিন বিভাগে বৃষ্টি বজ্রপাতে নিহত ১১" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/05.May/03-05-2024/67899.jpg" style="float:left" />আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের বেশির ভাগ জায়গায় বৃষ্টি হয়েছে। এদিন রাতে এবং আজ শুক্রবারও চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাশাপাশি ঢাকা, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের কিছু জায়গায় বৃষ্টি বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।</p> <p>এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সব মিলিয়ে তাপমাত্রা কিছু জেলায় প্রশমিত হতে পারে।</p> <p>আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল হয়ে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোর ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪২.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।</p> <p><strong>কুমিল্লায় প্রাণ গেল ৪ জনের</strong><br /> কুমিল্লার চার উপজেলায় বজ্রপাতে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে জেলার চান্দিনা, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, বুড়িচং ও দেবীদ্বারে এই চারজনের মৃত্যু হয়। সংশ্লিষ্ট চার থানার ওসিরা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।</p> <p>কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার সূর্যনগর গ্রামে বজ্রপাতে মারা যান আতিকুল ইসলাম (৫০)। চান্দিনার কিছমত শ্রীমন্তপুর গ্রামে ধান কাটতে গিয়ে মারা যান দৌলতুর রহমান (৪৭) নামের এক কৃষক। বুড়িচংয়ের পাঁচোড়া নোয়াপাড়া গ্রামে আলম হোসেন নামের এক যুবক এবং দেবীদ্বারে ধামতী গ্রামে বাড়ির পাশে খড় আনতে গিয়ে মোখলেসুর রহমান (৫৮) নামের আরেক ব্যক্তির মৃত্যু হয়।</p> <p>কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া সন্ধ্যায় বলেন, ‘আমরা বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংবাদ পাচ্ছি। সঠিক সংখ্যা জানতে আরো সময় লাগবে।’</p> <p>জেলার ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবেদ আলী বলেন, বজ্রপাতে মারা যাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।</p> <p><strong>কক্সবাজারে বজ্রপাতে দুই লবণ শ্রমিক নিহত</strong><br /> কক্সবাজারের পেকুয়ায় তীব্র ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে তুমুল বজ্রপাত শুরু হলে মাঠে থাকা লবণ ঢেকে দিতে গিয়ে দুই শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছে বজ্রপাতে। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ১২। বৃহস্পতিবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নের পৃথক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বজ্রপাতে নিহতরা হলো মগনামা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কোদাইল্যাদিয়া এলাকার জমির উদ্দিনের ছেলে দিদারুল ইসলাম (৩০) ও রাজাখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ছড়িপাড়ার জামাল উদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ আরাফাত (১২)।</p> <p>পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজিবুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে রাজাখালী ইউনিয়ন থেকে আরাফাত নামের এক শিশুকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়। তবে এর আগেই তার মৃত্যু হয়। মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউনুস চৌধুরী কোদাইল্যাদিয়ায় লবণ মাঠে বজ্রপাতে শ্রমিক দিদারুল ইসলামের মারা যাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।</p> <p><strong>রাঙামাটিতে নিহত ৩</strong><br /> পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে বজ্রপাতে অন্তত তিনজনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া যায়। বৃহস্পতিবার রাঙামাটি শহরের সিলেটিপাড়া ও বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপাকারী ইউনিয়ন ও সাজেক ইউনিয়নে এসব মৃত্যু ঘটে বলে জানা যায়। একই সময়ে আরো অন্তত সাতজনের আহত হওয়ার ঘটনার তথ্য মিলেছে।</p> <p>নিহতরা হলেন রাঙামাটি শহরের সিলেটিপাড়ার বাসিন্দা মো. নজির (৫০) এবং বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপকারী ইউনিয়নের মুসলিম ব্লক এলাকার বাসিন্দা বাহারজান বেগম (৫৫) এবং  সাজেকের লংথিয়ানপাড়ার তনিবালা ত্রিপুরা (৩৭)।</p> <p>রূপকারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যাসমিন চাকমা জানান, ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মুসলিম ব্লক গ্রামের লাল মিয়ার স্ত্রী বাহারজান বেগম গরু আনতে গিয়ে বজ্রপাতে মারা যান। বাঘাইছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিরীন আক্তার জানান, বজ্রপাতে রূপকারী ইউনিয়নে বাহারজান নামের একজন এবং সাজেকে তনিবালা ত্রিপুরা নামের আরেক নারী নিহত হন। নিহতদের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার টাকা করে তাত্ক্ষণিক আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।</p> <p>বাঘাইছড়িতে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একটি চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়ার সময় বজ্রপাতে সাতজন আহত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে স্থানীয়রা। আহতরা হলো তরুণ চাকমা, তৃণা চাকমা, রবীন্দ্র চাকমা, সুষমলাল চাকমা, অক্ষয়মনি চাকমা, পাত্থর চাকমা ও অমরজ্যোতি চাকমা।</p> <p><strong>খাগড়াছড়িতে কিশোরের মৃত্যু</strong><br /> খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বজ্রপাতে ইয়াছিন আরাফাত নামের এক কিশোরের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বড়নাল ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইব্রাহিমপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে।</p> <p>ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। স্বজনরা জানায়, বৃষ্টির সময় উঠানের পাশেই আম কুড়াতে যায় ইয়াছির ও তার এক ভাই। এ সময় বজ্রপাতে ছোট ভাই প্রাণে বেঁচে গেলেও বড় ভাই ইয়াছিন ঘটনাস্থলেই মারা যায়।</p> <p><strong>সিলেটে এক কৃষকের মৃত্যু</strong><br /> সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায় ধান কাটতে গিয়ে বজ্রপাতে বাবুল আহমদ (৪৮) নামের এক কৃষক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন ফাহিম আহমদ (১৭) ও প্রদীপ বিশ্বাস (২০) নামের আরো দুজন। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার দিঘিরপাড় পূর্ব ইউনিয়নের এক হাওরে এই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহত বর্গাচাষি বাবুল উপজেলার দক্ষিণ কুয়রের মাটি গ্রামের মৃত আব্দুস সালামের ছেলে।</p> <p>নিহতের স্বজন ও স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাবুল আহমদ কয়েকজনের সঙ্গে স্থানীয় শফিক হাওরে ধান কাটছিলেন। দুপুর ১২টার দিকে হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে বজ্রপাত হলে ঝলসে গিয়ে গুরুতর আহত হয় তারা। খবর পেয়ে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক বাবুল আহমদকে মৃত ঘোষণা করেন। গুরুতর আহত ফাহিম ও প্রদীপকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।</p>