<article> <p style="text-align: justify;">বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ঘনবসতিপূর্ণ শহর ঢাকা। শহরটি বছরের বেশ কিছু সময় ধরে বায়ুদূষণেও শীর্ষে। ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মীয়মাণ স্থাপনার ধুলায় প্রতিনিয়ত দূষণের শিকার হচ্ছে রাজধানীর মানুষ। দূষিত বাতাসে দীর্ঘদিন শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের ফলে হৃদরোগ, শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের রোগ এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">সঠিক পরিকল্পনার অভাবে ঢাকা শহর যেন ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। ঢাকা শহরে সবুজ যেমন কমেছে, তেমনি গত দুই দশকে বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধূসর এলাকা ও কংক্রিটের পরিমাণ, যা নগর এলাকায় তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে মারাত্মক হারে। ২০২৩ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা ২২ শতাংশ থেকে কমে মাত্র ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অথচ নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা থাকা প্রয়োজন।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এর পাশাপাশি ভবনের নকশায় প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচলকে ব্যাহত করে দিয়ে আবদ্ধ ঘর, কাচনির্মিত ঘর ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের (এসি) ব্যবহারকে মাথায় রেখে ভবন নির্মাণের প্রবণতার কারণে মহানগরে তাপমাত্রা বাড়ছে।</p> <p style="text-align: justify;">প্রতিবছর শহরের গুণগত কিছু মানদণ্ড নিয়ে তালিকা করে থাকে ইকোনমিস্ট। </p> <p style="text-align: justify;"><strong>প্রতিষ্ঠানটির রেজিলেন্স সিটিস ইনডেক্স :</strong> আ গ্লোবাল বেঞ্চমার্ক অব আরবান রিক্স, রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে গত সপ্তাহে। প্রতিবেদনে বাছাইকৃত ২৫টি শহরের তালিকায় ২৪তম অবস্থানে রয়েছে ঢাকা।</p> </article> <p style="text-align: justify;">নাইজেরিয়ার লাগোসের ঠিক ওপরে অবস্থান করছে ঢাকা। ছয়টি প্রধান সূচকের কিছু নির্দেশকের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন করা হয়েছে। নির্দেশকগুলো হলো পাবলিক পরিবহন সুবিধা, বায়ুদূষণ, জনসংখ্যার ঘনত্ব, বিদ্যুৎ সুবিধা, শহরের নাগরিকদের ১০ মিনিটের মধ্যে দ্রুত পরিসেবা প্রদানের সক্ষমতা, সাইবার নিরাপত্তা, ভবন নির্মাণে জলবায়ু সহনশীলতা, তাপ সহনশীলতা, শিক্ষিত জনগোষ্ঠী, উদ্ভাবনে প্রণোদনা, জনগোষ্ঠীকে প্রস্তুত করতে সাংস্কৃতিক প্রস্তুতি, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মঙ্গলের জন্য প্রণোদনা ইত্যাদি।</p> <article> <p style="text-align: justify;">প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গণপরিবহনে সুবিধায় সবার নিচ থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। সবার নিচে থাকা মেক্সিকোর মেক্সিকো সিটির ওপরেই ঢাকার অবস্থান। অন্যদিকে বায়ুদূষণে সবার নিচ থেকে দিল্লির ওপরে ঢাকা। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফল ঢাকার নানা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। একটি নগরের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ জায়গা রাস্তা কিংবা পরিবহন যোগাযোগের জন্য থাকা প্রয়োজন, কিন্তু ঢাকার রাস্তার পরিমাণ মোট আয়তনের মাত্র ৫.১৫ শতাংশ।</p> <p style="text-align: justify;">আবার ঢাকা মহানগরের জনসংখ্যার অনুপাতে স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, খেলার মাঠ, উদ্যান-পার্ক এবং গণপরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও অত্যন্ত অপ্রতুল। ফলে যানজট দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকাবাসীর নিত্যদিনের বাস্তবতা। আর নগর কাঠামোয় রাস্তাঘাট ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা এমন যে জলাবদ্ধতার গ্রাস থেকে মহানগরের নাগরিকদের মুক্তি মিলছে না। এভাবে নানা সূচকে ঢাকা সহনশীল শহরের তলানিতে অবস্থান করছে।</p> </article> <article> <p style="text-align: justify;">এ ছাড়া অপরিকল্পিত অবকাঠামোর বোঝা কাঁধে নিয়ে যানজট আর জলাবদ্ধতার শহরে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা। ভূমি ব্যবহারের যথাযথ নীতিমালা না মেনে গড়ে উঠেছে বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। নগরে বিক্ষিপ্তভাবে গড়ে ওঠা অপরিকল্পিত অবকাঠামোর এ শহরে প্রতি একরে জনঘনত্ব ৭০০ জনের কাছাকাছি। যদিও একটি আদর্শ মহানগরে (মেগাসিটি) জনঘনত্ব ধরা হয় প্রতি একরে ১২০ জন। বিআইপির এক পর্যবেক্ষণের তথ্য বলছে, প্রতি একরে ৩০০ জন হিসাবে ঢাকায় ৬৩ শতাংশ ওয়ার্ডই ধারণক্ষমতা অতিক্রম করেছে।</p> <p style="text-align: justify;">বিআইপির তথ্য মতে, একটি বড় শহরের জনঘনত্বের জন্য মানদণ্ড ধরা হয় প্রতি একরে ৭০ থেকে ৮০ জন, কেন্দ্রীয় শহর এলাকায় যা সর্বোচ্চ ১২০ জন পর্যন্ত। দুই সিটি করপোরেশন মিলিয়ে ঢাকায় ওয়ার্ডের সংখ্যা ১২৯। সেই হিসাবে মূল ঢাকার ৯০ শতাংশ এলাকা প্রতি একরে ১৫০ জনসংখ্যার মানদণ্ড অতিক্রম করেছে। ঢাকাকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে ওঠায় ক্রমেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এই শহর। ক্রমবর্ধিষ্ণু ঢাকা মহানগরের এই উন্নয়নযজ্ঞ পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ না হওয়ায় কেবল জনঘনত্বেই নয়, বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, আলোদূষণ ও তাপমাত্রা বৃদ্ধিতেও পৃথিবীর অন্যতম শীর্ষস্থানে উঠে এসেছে ঢাকা। ফলে ঢাকা সামগ্রিকভাবেই বসবাস অনুপযোগী নগরের তালিকায়ও শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে রাজধানীকে বসবাসের উপযোগী করতে কাজ করছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।</p> <p style="text-align: justify;">ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত সচিব) মীর খায়রুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে উত্তর সিটি। ফুটপাত দখলমুক্ত করা, সড়কে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা, জলাবদ্ধতা, যানজট, মশার উপদ্রব কমানো থেকে শুরু করে সব বিষয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রমের পাশাপাশি আমরা আধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে একটি বসবাসযোগ্য শহর গড়তে কাজ করছি।’</p> <p style="text-align: justify;">তিনি আরো বলেন, ‘পরিবেশ এবং সময় পরিবর্তনশীল—এমন পরিবর্তনের মধ্যে কিভাবে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এগিয়ে যাওয়া যায় সেই কাজ আমরা করছি। বিশ্বব্যাপী যে বিষয়গুলো বেশি ব্যবহার হচ্ছে আমরা সেসব বিষয় কার্যক্রমে যুক্ত করছি। যেমন—মশক নিয়ন্ত্রণে এর প্রজনন ক্ষেত্রকে ধ্বংস করার একটা কাজ আছে। এখন আমরা লার্ভিসাইডিং, এডাল্টিসাইড করি, যা আমাদের কর্মীরা ছোট মেশিনে করে ছিটায়। অনেক সময় লাগে। এখন আমরা বাফেলো টারবাইন মেশিন আনছি, যেটি অনেক বড় জায়গা কাভার করবে। লেকে ওষুধ ছিটাতে সুবিধা হবে। আর আমরা বিশ্বব্যাপী পরীক্ষিত বিটিআই নামের জৈব কীটনাশক আনার ব্যবস্থা করছি।’</p> </article>