<p>আমাদের মল-নিঃসারক প্রক্রিয়ায় আমাদের কিডনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আমাদের রক্ত থেকে ক্ষতিকর উপাদানদের বের করে দিতে কিডনিরা কাজ করে দিন-রাত হরদম। এবং ক্ষতিকর উপাদানদের পেশাবের আকারে বের করে দেয়।</p> <p>আমাদের কিডনি তৈরি হয়েছে নেফ্রোন নামের লাখ লাখ ছোট কোষের সমন্বয়ে। এই কোষগুলো কিডনিতে প্রবেশ করা নষ্ট রক্তকে ফিল্টার করে। এরপর সেই বিশুদ্ধ রক্ত পুনরায় দেহে ফিরে যায়।</p> <p>আমরা প্রায়ই শুনে থাকি কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এর কারণ কিডনিতে প্রচুর পরিমাণে টক্সিন বা বিষ থাকে যা ফ্লাশ আউটের মাধ্যমে বের করা দরকার।</p> <p>পানির সঙ্গে এই বর্জ্যগুলোকে মিশিয়ে পেশাব আকারে দেহ থেকে বের করে কিডনি। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করলে কিডনিতে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। আর তা থেকেই কিডনিতে পাথর তৈরি হয়। আর সেই পাথর মূত্রাশয়ে গিয়ে তীব্র ব্যাথার সৃষ্টি করে।</p> <p>তবে বংশসূত্রে বা গেঁটেবাত থেকেও কিডনিতে পাথর হতে পারে।</p> <p>কিডনিতে পাথর হলে তা দ্রুতই অপসারণ জরুরি। পাথরের আকার যদি ছোট হয় তাহলে তা পেশাবের সঙ্গে এমনিতেই বের হয়ে আসে। কিন্তু অনেক সময় পাথর বড় হলে অপারেশন করানোর দরকার পড়ে।</p> <p>কিন্তু অপারেশন করে পাথর অপসারণ ঝুঁকিপূর্ণ এবং তা ভালো হতে লম্বা সময় লাগে। আর এ কারণেই অনেকে প্রাকৃতিকভাবেই কিডনির পাথর অপসারণের চেষ্টা করেন। আসলে মানুষের সব ধরনের রোগেরই প্রাকৃতিক চিকিৎসা আছে। এতটাই শাক্তিশালী প্রকৃতি।</p> <p>আসুন জেনে নেওয়া যাক কিডনির পাথর তাড়ানোর ১২টি প্রাকৃতিক পদ্ধতি।</p> <p><strong>১. প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন</strong><br /> কিডনিতে পাথর হওয়ার প্রধান কারণ যেহেতু পানিশুন্যতা সেহেতু প্রচুর পরিমাণে পান করলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। পানি কিডনিতে টক্সিন জমতে দেয় না। আর পাথরের জন্য প্রাকৃতিকভাবে বের হওয়ার সুযোগ করে দেয়। এবং নতুন পাথর হওয়াও ঠেকায়।</p> <p><strong>২. আপেল সিডার ভিনেগার</strong><br /> এতে আছে সাইট্রিক এসিড যা কিডনির পাথর গলিয়ে ফেলতে সক্ষম। এছাড়া এর ক্ষারীয় উপাদান কিডনি থেকে বিষাক্ত বর্জ্য বের করে দিয়ে কিডনিকে পরিষ্কার রাখতে সহায়ক।</p> <p>এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে ২ টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মেশান। এবং প্রতিদিন পান করুন। তাহলে কিডনি পাথর দূর হয়ে যাবে।</p> <p><strong>৩. বেকিং সোডা</strong><br /> এতে থাকা এসিড কিডনির পাথরে থাকা এসিড নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এবং পাথরের আকার ছোট করে আনে। এছাড়া কিডনি এবং মূত্রনালির প্রদাহ কমায় বেকিং সোডা।</p> <p>এক গ্লাস পানির সঙ্গে আধা টেবিল চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে প্রতিদিন পান করুন। তাহলেই কিডনির পাথরগুলো একটা সময়ে গিয়ে বেরিয়ে আসবে।</p> <p><strong>৪. তুলসী পাতা</strong><br /> এটি টক্সিন পরিষ্কারক এবং কিডনিতে ইউরিক এসিডের হার কমাতে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এটি পেইনকিলার হিসেবেও কাজ করে।</p> <p><strong>৫. লেবু জুস এবং অলিভ অয়েল</strong><br /> লেবুর এসিডময় উপাদান কিডনির পাথরের আকার কমাতে সহায়তা করে। আর অলিভ অয়েল কিডনির পাথর সহজে বের করে আনতে সহায়ক।</p> <p>লেবুতে থাকা সাইট্রিক এসিড কিডনির স্বাস্থ্য ভালো করে এবং পুনরায় পাথর হওয়া প্রতিরোধ করে। আর অলিভ অয়েল কিডনির পাথরগুলো সহজে বের করে আনার জন্য লুব্রিকেন্ট বা পিচ্ছিলকারক হিসেবে কাজ করে।</p> <p>প্রতিদিন দুই চা চামচ লেবুর রসের সঙ্গে ২ চা চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে পান করুন। তাহলেই কিডনির পাথর দূর হয়ে যাবে।</p> <p><strong>৬. তরমুজের বীজ</strong><br /> সম্প্রতি তরমুজের বীজের চা কিডনির পাথর দূর করার ওষুধ হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। তরুমুজের বীজ এর রেচক গুনের জন্য বিখ্যাত। তরুমুজের বীজ শক্তিশালী ক্লিনজার এবং কিডনি থেকে বর্জ্য এবং অন্যান্য টক্সিক উপাদান বের করে দিতে সহায়ক। এর ফলে কিডনির ফাংশন উন্নত হয় এবং সার্বিকভাবে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। যা স্বাস্থ্যবান কিডনির জন্য জরুরি।</p> <p>এক লিটার পানি সেদ্ধ করে তাতে এক মুঠো তরমুজের বীজ বেটে মেশান। এরপর আধা ঘন্টা ধরে রান্না করে ঠাণ্ডা করে নিন এবং খেয়ে ফেলুন।</p> <p><strong>৭. বেদানার জুস</strong><br /> এর কষাটে উপাদান কিডনি পাথর দূর করতে সহায়ক। এটি কিডনির ইউরিক এসিডের মাত্রা কমায় এবং পাথর ভাঙতে সহায়ক। এরপর পাথরগুলো সহজেই পেশাবের সঙ্গে বের হয়ে আসে। বেদানার জুস আমাদের দেহের আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সহায়ক।</p> <p>এ কাপ বেদানার বীজ দুই কাপ পানির সঙ্গে মিশিয়ে ব্লেন্ডারে পিষে জুস বানিয়ে পান করুন।</p> <p><strong>৮. সেলারি</strong><br /> এই শাকটি খেলে কিডনি থেকে বর্জ্য অপসারণের গতি বাড়ে। এছাড়া কিডনির ক্ষারের হারে ভারসাম্যও ফিরিয়ে আনে এটি। এছাড়া প্রস্রাবের উৎপাদনেও উৎসাহ যোগায় সেলানি যা কিডনি থেকে পাথর অপসারণে সহায়ক।<br /> এক পাত্র পানিতে এক আঁটি সেলারি শাক সেদ্ধ করে প্রতিদিন সেবন করুন।</p> <p><strong>৯. কলার ডাঁটা</strong><br /> নানা প্রাচীন গ্রন্থেও কলা গাছের ভেতরের সাদা ডাঁটার কিডনির পাথর অপসারণের গুন বর্ণিত আছে। এটি উচ্চমাত্রায় মূত্রবর্ধক এবং কিডনির পাথর ভাঙতে সহায়ক। প্রতিদিন যদি কলার ডাঁটার জুস খাওয়া যায় তাহলে কিডনির পাথর অপসারিত হবে।</p> <p>আধা কাপ কলার ডাঁটার কুচি নিন এবং দুধের সঙ্গে সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে এর সঙ্গে এক চিমটি দারুচিনির গুড়ো মিশিয়ে পান করুন।</p> <p><strong>১০. কর্ণ হেয়ার</strong><br /> এর আরেকটি নাম কর্ন সিল্ক। ভুট্টার তুষ থেকে পাওয়া যায় এটি। এটি মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। এটি কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হতে দেয় না। এবং পেইনকিলার হিসেবে কাজ করে। এছাড়া কিডনির প্রদাহও কমায় এটি।</p> <p>এককাপ পানিতে এক মুঠো কর্ন হেয়ার সেদ্ধ করার পর রসটুক ছেঁকে নিয়ে পান করুন।</p> <p><strong>১১. কিডনি বিন</strong><br /> এতে আছেঁ উচ্চমাত্রার আঁশ যা যে কোনো ধরনের কিডনির রোগ উপশমে সহায়ক। একটি সস পেনে কিডনি বিন নিয়ে হালকা আঁচে ২-৩ ঘন্টা ধরে সেদ্ধ করুন। এরপর পানিটুকু ছেঁকে নিয়ে পান করুন। প্রতিদিন কয়েকবার এভাবে কিডনি বিনের রস পান করুন।</p> <p><strong>১২. মুলার জুস</strong><br /> মুলার রসে থাকা খনিজ উপাদান কিডনির পাথর ভাঙতে এবং সহজে বের করে দিতে সহায়ক।</p> <p>আধা কাপ মুলার কুচি নিয়ে পানিতে আধা ঘন্টা ধরে সেদ্ধ করুন। এরপর রসটুকু ছেঁকে নিয়ে পান করুন। পাথর বের না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন পান করুন।</p> <p>সূত্র: বোল্ডস্কাই</p>