<p>দারিদ্র্য আর মৃত্যু ছিল কাজী নজরুল ইসলামের সারাজীবনের সঙ্গী। জীবনের চড়াই-উৎরাইয়ে বাংলার বিভিন্ন শহরে তাঁকে বাস করতে হয়েছে। এক সময় তিনি নদীয়ার জেলা সদর কৃষ্ণনগরে বাস করতেন। সপরিবারে। তখন তাঁর সংসারে দুরবাস্থা— হাড়িতে চাল নেই, পকেটে পয়সা নেই। কী খাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। এদিকে প্রিয়পুত্র বুলবুল অসুস্থ। এ অবস্থায় কিছু টাকা না হলেই নয়। সুতরাং একদিন ট্রেন ধরে চলে গেলেন কলকাতা। হানা দিলেন ‘কল্লোল’ পত্রিকার অফিসে। </p> <p>কল্লোলের সম্পাদক তখন সুরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। নজরুল গিয়ে বললেন, শিগগির আমাকে কিছু টাকা দে। যেখান থেকে পারিস জোগাড় কর। উনুনে হাঁড়ি জ্বলছে না;  ছেলে অসুস্থ। এ অবস্থায় তোরা যদি কিছু টাকা জোগাড় না করতে পারিস, তাহলে ভয়ংকর বিপদ আমার!<br /> একদমে নজরুল বলে গেলেনে। সুরেশচন্দ্রকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই বললেন, ‘দেরি করিস না। যেখান থেকে পারিস টাকা জোগাড় কর। এক্ষুনি আবার বাড়ি ফিরতে হবে, ছেলেটার অসুখ বাড়াবাড়ি রকমের।</p> <p>সত্যিই সুরেশ তক্ষুণি কিছু টাকা জোগাড় করে নজরুলের হাতে তুলে দিলেন। নজরুল টাকা নিয়ে ঝড়ের বেগে বেরিয়ে গেলেন। কিন্তু কী মনে করে বেশিদূর এগুতে পারলেন না। তক্ষুনি আবার ফিরে এলেন। এসে একখানি কাগজ ছুড়ে দিয়ে বললেন, ট্রেনে বসে এটা লিখেছি। দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। দেখ, এটা চালানো যায় কিনা।</p> <p>সুরেশচন্দ্র দেখলেন, কাগজটা একটা লিফটলেট। তার পেছনে কাঁপা-কাঁপা হাতে কবিতার মতো কী যেন লেখা। নিশ্চয়েই ট্রেনের ঝাঁকুনিতে কবির হাত কেঁপে গিয়েছিল। অনেক কষ্টে লেখার মর্মোদ্ধার করা সম্ভব হলো। সেখান থেকে বেরিয়ে এলো নজরুলের কালজয়ী গান, যে গানটির জনপ্রিয়তা যুগ পেরিয়ে এই অনলাইনের যুগে এসেও কোক স্টুডিও কাঁপিয়েছে। সেই গানটি হলো—</p> <p style="text-align: center;">বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুলশাখাতে <br /> দিসনে আজি দোল।<br /> আজও তার ফুল কলিদের ঘুম টুটেনি<br /> তন্দ্রলে বিলোল...<br />  </p>