<p>ষোড়ষ শতাব্দী। দক্ষিণ আফ্রিকার পেরুর জঙ্গলে হারিয়ে গেছে এক ইন্ডিয়ান। এই ‘ইন্ডিয়ান’ মানে কিন্তু ভারতীয় নয়, আমেরিকা মহাদেশে আদীবাসীদের বলা হয় ইন্ডিয়ান। আদীবাসীরা জঙ্গলেই বাস করে। তবু জঙ্গলে পথ হারালো কেন, এ প্রশ্ন হতেই পারে। হয়তো দলছুট হয়ে কিংবা দিগভ্রান্ত হয়ে দূরের কোনো জঙ্গলে হারিয়ে গিয়েছিল লোকটা। </p> <p>জঙ্গলে আর যাই হোক খাবারের অভাব হয় না কখনো। আদীবাসীদের জন্য জঙ্গলই খাবারের প্রধান উৎস। জঙ্গলের ফলমুল খেয়েই টিকে ছিল ইন্ডিয়ান লোকটা। কিন্তু খাবারের যেমন অভাব নেই জঙ্গলে, তেমনি মশার অভাবও জঙ্গলে কখনো ছিল না। আর মশা যখন আছে, ম্যালেরিয়ার জীবাণুও সেখানে থাকবে, এ তো জানা কথা। লোকটা মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন সব ভরসা বাদ দিয়ে শুধু মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা।</p> <p>একা একা অসুস্থ হওয়াতেও অনেক সমস্যা। চাইলেই তো হুট করে মৃত্যু আসে না। ভীষণ অসুস্থ লোকটার তখন ভীষণ পানি পিপাসা পায়। কিন্তু আশাপাশে পানির উৎস নেই। অসুস্থ শরীর নিয়েই পানির সন্ধান করতে থাকে লোকটা। শেষমেষ এক জংলি জলাশয়েরও হদিসও পেয়ে যায়। </p> <p>তীব্র পিপাসায় কাতর লোকটা সেই জলাশয়ের নোংরা পানিই পান করার চেষ্টা করে।  কিন্তু পানি মুখে দিয়ে দেখে ভীষণ বিস্বাদ, মানে তেতো। কী আর করা, বাঁচতে হলে এই পানিই পান করতে হবে। পানি পান করে তখনকার মতো প্রাণ বাঁচায় লোকটা, কিন্তু ম্যালেরিয়া জ্বর থেকে কীভাবে বাাঁচবে! ওভাবেই পুকুরের আশপাশে পড়েছিল কয়েকদিন। তারপর অবাক হয়ে লক্ষ করে তার জ্বর কমে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে লোকটা।</p> <p>কেন সুস্থ হয়ে উঠল, সেটার ব্যাখ্যা খোঁজার চেষ্টা করে লোকটা। বুঝতে পারে পুকুরের পানিই তাকে সুস্থ করে তুলেছে। অনেক ভেবে বুঝতে পারে, পানির তেতো স্বাদটা আসলে সিনকানা গাছ থেকেই এসেছে। জলাশয়টির চারপাশ সিনকানা গাছে ভরপুর। গাছের পাতাও প্রচুর ভেসে বেড়াচ্ছে জলাশয়ের পানিতে। লোকটা সিনকানার পাতার স্বাদ নেয়। হুবহু জলাশয়ের পানির মতো। তখন লোকটার বুশতভাগ নিশ্চিত হয়, সিনকানার নির্যাসই তাকে ম্যালেরিয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।</p> <p>লোকটা সুস্থ হয়ে পথ খুঁজে নিজেদের ডেরায় ফিরে আসে। সবাইকে বলে তার অসুস্থতার কথা, সিনকানার সাহায্যে বেঁচে ওঠার গল্পও। <br /> গল্পটার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। তবে এটা সত্যি, পেরুর জঙ্গলে পাওয়া সিনকানা গাছের নির্যাস থেকেই ম্যালেরিয়ার প্রথম ওষুধ ‍কুইনাইন আবিষ্কার করা হয়েছিল। তাই এই গল্পটাকে শুধুই গল্প বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।<br />  </p>