<p>বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) গত ১১ মার্চ রাতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আগের দিন ইফতেখার ইসলাম ইফতি জানতে পারেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের স্ট্রেন্থ ও কন্ডিশনিং কোচ হিসেবে নাথান কেলিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ইফতি তখন জাতীয় দলের সঙ্গে চট্টগ্রামে। এমন খবরে বেশ মন খারাপ হয় বিসিবির এই ট্রেনারের। প্রথমবার জাতীয় দলের সঙ্গে কাজের সুযোগ পাওয়া ইফতি ভেবেছিলেন, এবার হয়তো দায়িত্ব পাকাপাকি হবে তাঁর। তবে সেই মন খারাপ কাউকে বুঝতে দেননি তিনি। ইফতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, এখনো জাতীয় দলের সঙ্গে আছেন জানিয়ে বলেন, ‘এ নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’</p> <article> <p>বিশ্বকাপের পর নিক লি’র সঙ্গে চুক্তি শেষ হলে নতুন স্ট্রেন্থ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় বিসিবি। একাধিক সাড়া মেলে। সেই তালিকা থেকে ছোট করে তিনজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল বিসিবি, যাঁদের একজন ইফতি। এরপরই শ্রীলঙ্কা সিরিজে ডাক পড়ে তাঁর। তাই ইফতি ভেবেছিলেন এবার বুঝি পাকাপাকিভাবে দায়িত্ব পেয়ে যাবেন। তবে স্বপ্নভঙ্গ সঙ্গী করে এখনো ‘ভারপ্রাপ্ত’ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। </p> <article> <p>ইফতির সুযোগ না পাওয়ার কারণ হিসেবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ব্যাপারটা এমন যে জাতীয় দল মানেই বিদেশি লাগবে। দেশি অনেক ট্রেনার আছে, ফিজিও আছে, তাঁদের দিয়েও কিন্তু চালানো সম্ভব। ইফতি চোটে পড়া ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করতে পারলে জাতীয় দলে কাজ করতে পারবে না কেন?’</p> <p>তবে বোর্ডের একটি পক্ষ মনে করে সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমদের মতো তারকা ক্রিকেটাদের সামলানোর অভিজ্ঞতা এখনো রপ্ত করতে পারেননি স্থানীয় ট্রেনাররা। এমন কথায় আপত্তি জানালেন বিসিবির সাবেক পরিচালক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর, ‘বিসিবি যদি স্থানীয়দের সুযোগ না দেয় তাহলে এই আস্থার সংকট থেকেই যাবে। আগে আস্থা রেখে দায়িত্ব দিতে হবে, তবে এই সংকট কাটবে। ’ উদাহরণ হিসেবে জাতীয় দলের ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম খানের নাম বলেন তিনি।</p> <p> </p> <p>সফরকারী শ্রীলঙ্কা দলে হেড কোচ ছাড়া সবাই স্থানীয়। কিন্তু বাংলাদেশ দলের সাপোর্ট স্টাফ বিদেশিনির্ভর। সেখানে এখন পূর্ণ মেয়াদে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে একমাত্র স্থানীয় বায়েজিদুল। বোর্ডের অনেকের মতে ভাষাগত কারণে যাবতীয় সমস্যা খোলাখুলিভাবে বলা যায় বলে ক্রিকেটাররা বায়েজিদকে পছন্দ করেন। তাহলে ট্রেনারদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এমন কেন নয়? আলমগীর মনে করেন, ‘ক্রিকেটাররা স্থানীয়দের কথা আমলে নিতে চায় না। কিন্তু বাইরের কেউ বললে গুরুত্ব দেয়। সম্মানটা আসলে মনের ব্যাপার। আপনি সুযোগ না দিলে মানসিকতা ঠিক হবে কিভাবে?’</p> <p>বিসিবিতে এখন সব মিলিয়ে ফিজিওর সংখ্যা পাঁচজন। অথচ বয়সভিত্তিক ছেলেদের দল, মেয়েদের দল, ‘এ’ দল, এইচপি ইউনিট, বাংলাদেশ টাইগার্স মিলিয়ে একাধিক প্রগ্রাম চলে। এর মধ্যে কোনো ক্রিকেটার চোটে পড়লে বেশির ভাগ সময় ট্রেনার, ফিজিও ছাড়াই পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চালাতে হয়।</p> <p>পেশা হিসেবে স্পোর্টস ফিজিও ও ট্রেনারের কাজের পরিধি সীমিত হওয়ায় অনেকেই এই পেশায় আসতে চান না বলে মনে করেন বিসিবির ফিজিও এনামুল হক, ‘স্পোর্টস ফিজিওর কাজটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। কারণ, দেশে তো এটার খুব বেশি প্রচলন নেই।’ দেশে সব মিলিয়ে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘এডুকেশন হেলথ অ্যান্ড স্পোর্টস’ পড়ানো হয়। এর একটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি শিক্ষক বিসিবির সাবেক পরিচালক আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে বের হয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বিদেশমুখী হয়ে যাচ্ছে। পেশা হিসেবে নিতে হলে দেশে এটার বাজার কেমন আছে সেটা আপনাকে দেখতে হবে।’</p> <p>বাংলাদেশে কাজের সুযোগ না পেয়ে অনেকে যেমন বিদেশগামী হচ্ছেন, তেমনি যাঁরা এখানে সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরাও থেকে যাচ্ছে আড়ালে।</p> </article> </article>