কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে নিহত তিন

উল্টো জনতাকে আসামি করে পুলিশের মামলা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
শেয়ার
উল্টো জনতাকে আসামি করে পুলিশের মামলা

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় মা-ছেলেকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনার বিচার চাইতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে লাশ হয়েছে তিনজন। জনতার বিক্ষোভে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করেছে। গুলিবিদ্ধ বেশ কয়েকজন এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারাই বলছেন, অন্তত ৭৮টি গুলি ছোড়া হয়েছে।

অথচ এখন উল্টো সেই জনতাকে আসামি করেই মামলা করেছে পুলিশ। গতকাল শনিবার সন্ধ্যার দিকে কালিহাতী ও ঘাটাইল থানায় পুলিশের পক্ষ থেকে এ মামলা করা হয়।

মামলার বিষয়ে জানতে উভয় থানার ওসির মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা কেউ ফোন ধরেননি। তবে টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (গোপালপুর সার্কেল) জমির উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মামলা হয়েছে।

পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।' তবে কতজনকে আসামি করা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।

পরে টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকারও মামলার কথা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, 'গুলির ঘটনায় ঘাটাইল ও কালিহাতী থানার সাত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তাঁদের মধ্যে চারজন কনস্টেবল ও তিনজন এসআই রয়েছেন।' তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি ওই সাতজনের নাম জানাতে পারেননি।

পুলিশের গুলির ঘটনায় কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলায় লোকজনের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলছে, বিনা উসকানিতেই পুলিশ গুলি করেছে। আর সে গুলিতে নিরীহ তিনজনের প্রাণ গেছে।

অবশ্যই এ ঘটনার বিচার হতে হবে।

পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে গুলির ঘটনায় জড়িত হিসেবে যেসব পুলিশ সদস্যের নাম পাওয়া যাবে তাঁদের প্রত্যাহার করা হবে। আর চূড়ান্ত তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে একজন অতিরিক্ত ডিআইজিকে প্রধান করে গতকাল তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক মো. মোখলেছুর রহমানের নির্দেশে গতকাল এ কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত ডিআইজি (ডিসিপ্লিন) মো. আলমগীর আলমকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আক্তারুজ্জামান ও টাঙ্গাইল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসলাম খানকে সদস্য করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গতকাল বিকেলে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার কালিহাতী থানা ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল নিহত তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজনকে ইতিমধ্যে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাঁর চিকিৎসায় আরো অর্থ লাগলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার জানান, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য মাসিক ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর নিহত শ্যামল চন্দ্রের পরিবারকে বাড়ি করার জন্য স্থায়ী জায়গা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।

প্রসঙ্গত, কালিহাতীর সাতুটিয়া গ্রামে এক মা ও তাঁর ছেলেকে মারধর এবং মায়ের সামনে ছেলেকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের প্রতিবাদ ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত শুক্রবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জনতা। ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন এসে ঘাটাইলের হামিদপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রথমে মিছিল শুরু করে। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে সেখানে পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়ে। লোকজন ছত্রভঙ্গ হলেও একটু পরে তারা আবার জড়ো হয়ে কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিছিল শুরু করে। সেখানেও গুলি করে পুলিশ। গুলিতে ঘাটাইল ও কালিহাতীর মিলিয়ে অন্তত ৫০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে পরে তিনজন মারা যান। নিহতরা হলেন-কালিহাতী পৌর এলাকার কুষ্টিয়া গ্রামের মৃত সানু শেখের ছেলে ফারুক হোসেন (৩০), কামারপাড়ার রবি চন্দ্র দাসের ছেলে শ্যামল চন্দ্র দাস (১৮) ও ঘাটাইলের শালাঙ্কা গ্রামের মৃত ওসমান আলীর ছেলে শামীম হোসেন (৩২)।

গতকাল কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড ও ঘাটাইলের হামিদপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, দোকানপাট সব খোলা। যানবাহনও চলাচল করছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে ভয় আর চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে সাহস পায় না। তবে তারা মা ও ছেলেকে নির্যাতন এবং পুলিশের গুলির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডে দক্ষিণ-পূর্ব পাশে একটি চায়ের দোকানে বসা ছিল আটজন। তাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সবাই চুপ হয়ে যায়। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর সেই বৃদ্ধ পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, 'এমনি এমনি কেউ আন্দোলন করে না। মাকে বেইজ্জতি করা হয়েছে। এটা কেউ মানতে চাবো? আর পুলিশ গুলি কি এমনিতেই করছে? খোঁজ নিয়ে দেখেনগা, তাগোরে কে মিছিলে বাধা দিতে বলছিল।' সেখানে উপস্থিত এক শ্রমিক নেতা বলেন, 'মা-ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তরা প্রভাবশালী। তাদের ক্ষমতাও আছে, টাকাও আছে। পুলিশ তো তাগো কথাই শুনবো।' পাশ থেকে আরেকজন বলেন, 'রোমার (মা-ছেলেক নির্যাতনের মামলার প্রধান আসামি) ভাইয়ের বাসায় কালিহাতী থানার ওসি ভাড়া থাকেন। আর কিছু বলন লাগবো?' পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলে, পরিচয় বললে পুলিশ ধরে নিয়ে সাক্ষী বানাবে। না হলে রাজনৈতিক নেতারা হয়রানি করবে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন হামিদপুর বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হয়। সেখান থেকে প্রথমে মিছিল বের করতে চাইলে ঘাটাইল থানার পুলিশ বাধা দিয়ে তাদের লাঠিপেটা করে। এ সময় জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে আবার তারা একত্র হয়ে মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। একপর্যায়ে তারা পুলিশকে ধাওয়া দিলে সাত পুলিশ সদস্য পাশের একটি হোটেলে আশ্রয় নেন। জনতা সেখানেও ঢিল ছোড়ে। এরই মধ্যে টাঙ্গাইল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে জনতার ওপর আক্রমণ করে। তারা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

বিকেল ৫টার দিকে আবারও লোকজন জড়ো হয় কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তারা মিছিল নিয়ে কালিহাতী থানার দিকে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে কালিহাতী থানার পুলিশ প্রথমেই গুলি করে। সেখানেও কয়েকজন আহত হয়। হামিদপুর বাসস্ট্যান্ডের দোকানদার ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ অরফিজ বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। মিছিল করতে দিলে কিছুই হতো না। কেন পুলিশ বাধা দিল? জনগণ পরে উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর করেছে, পুলিশকে ঢিল ছুড়েছে।

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশকে ঢিল মারলে তারা গুলি করে। কিন্তু ঢিল খাওয়ার অবস্থাও তো পুলিশই সৃষ্টি করেছে। তারা কেন মিছিলে বাধা দিতে গেল? কারা মিছিলের আয়োজন করেছিল-জানতে চাইলে মোহাম্মদ অরফিজ বলেন, একজন মাকে অপমান করা ঘটনা কেউ সহ্য করতে পারেনি। তাই লোকজন নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য এলাকায় মাইকিংও করা হয়। কালিহাতীর সাবেক ইউপি মেম্বার হারুন অর রশিদ জানান, গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে পুলিশ টাকা খেয়ে আসামিদের ছেড়ে দিয়েছে এবং জনগণকে প্রতিবাদ করতে দেবে না। এ জন্য এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড এলাকার ছাইদুর রহমান বলেন, পুলিশের বাধা দেওয়াতেই যত ঝামেলা হয়েছে। এত লোকজনকে আটকাতে চাওয়া উচিত হয়নি পুলিশের।

স্থানীয়রা বলছে, মা-ছেলেকে নির্যাতনের মামলার প্রধান আসামি রফিকুল ইসলাম রোমা কালিহাতী শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিনজু মিয়ার ছোট ভাই। রোমাও স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তা ছাড়া কালিহাতী থানার ওসি শহিদুল ইসলাম থানার অদূরে মিনজু মিয়ার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। এসব কারণেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দমন করতে মিছিলে বাধা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত গুলি চালায়।

তবে মিছিলে গুলির কথা অস্বীকার করেছেন থানার ওসি শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'পুলিশ কোনো গুলি করেনি। পুলিশ সদস্যদের ইস্যু করা অস্ত্র থেকে কোনো গুলি করা হয়নি।' তাহলে কারা গুলি করল জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপে বা তাদের অনুরোধে মিছিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কারো কোনো চাপ ছিল না। যা করা হয়েছে পরিস্থিতিতে পড়েই করা হয়েছে।' টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখন কিছুই বলতে পারব না। আপনারা যা দেখেছেন তা তো জানেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কথা বলবেন।'

হামিদপুর বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হাফিজ আল আসাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'হাজারের ওপরে লোক জড়ো হয়েছিল। সেখানে পুলিশ ছিল মাত্র ১০ থেকে ১২ জন। মিছিল থেকে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। পরে জনতা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ পিছু নিলে জনতা তাদের ঘিরে ধরে। তারা একটি হোটেলে আশ্রয় নিলে সেখানেও তাদের আক্রমণ করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করতে অতিরিক্ত পুলিশ এসে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। দুই থানা মিলে প্রায় ৭৮টি গুলি ছোড়া হয়। ঘাটাইল থানার ওসি মোখলেসুর রহমান বলেন, 'ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক কোনো কারণ নেই। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে।' গতকাল রোমাদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় গেটে তালা ঝুলছে। বাড়িতে কেউ নেই। প্রতিবেশীরা জানায়, বাড়িতে তালা দিয়ে সবাই পালিয়েছে।

ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন দুজন : কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত দুজনের চিকিৎসা চলছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাঁরা হলেন স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্র ও মোবাইল ফোনের দোকানদার রুবেল (১৯) ও দিনমজুর বাদশা খান (২৫)। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। রুবেলের খালাতো ভাই মো. মাসুদ বলেন, রুবেলের মাথার পেছনে ও পিঠে দুটি গুলি লেগেছে। বাদশার বাড়ি মধুপুরে। স্বজনরা জানান, কালিহাতীতে শ্বশুড়বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন বাদশা। বাসে করে বাড়ি ফেরার সময় গুলি লাগে।

তাহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি আসকের : কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। একই সঙ্গে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও হতাহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়েছে। আসকের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ দাবি জানানো হয়।

 

মন্তব্য

ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়

শেয়ার
ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়
ন্যায্যমূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে মানুষের ভিড়। গতকাল রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ে। ছবি : লুৎফর রহমান
মন্তব্য

গরমের তীব্রতা

শেয়ার
গরমের তীব্রতা
গরমের তীব্রতা বাড়ছে। একটু স্বস্তি পেতে পানিতে নেমে সাঁতার কাটছে দুই শিশু। গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য
জামায়াতের আমির

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য থাকা উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য থাকা উচিত
শফিকুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকা উচিত। গতকাল রবিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দ্য ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এ কথা বলেন।

শফিকুর রহমান বলেন, ভিন্নমত গণতন্ত্রের সৌন্দর্যের অংশ, যাকে সম্মান জানিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, দেশে প্রতিহিংসার অবসান ঘটবে এবং মানবিক মূল্যবোধের বিজয় হবে।

তিনি বলেন, বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের রায় হাইকোর্টে প্রত্যাশিতভাবে এসেছে। তিনি এ রায় দ্রুত কার্যকর করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এর মাধ্যমে আবরারের পরিবার কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।

শফিকুর রহমান বলেন, আল্লাহ তাআলা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন।

মানুষকে তিনি ভালো-মন্দের জ্ঞান বা বিবেক দিয়েছেন। প্রকৌশলীরা হচ্ছেন মানুষের মধ্যে অন্যতম সেরা মেধাবী। কিন্তু একজন মানুষের মাঝে শুধু জ্ঞান ও দক্ষতা থাকলেই হবে না, তাকে একই সঙ্গে সত্ হতে হবে। তাহলেই তার দ্বারা দেশ এবং জাতি উপকৃত হবে।

ফোরামের সভাপতি প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফার সভাপতিত্বে ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলামের পরিচালনায় ইফতার মাহফিলে বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও দ্য ফোরাম অব ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সাইফুল আলম খান মিলন ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

 

 

মন্তব্য

আন্তর্জাতিক মানের ভোট চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আন্তর্জাতিক মানের ভোট চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন : সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বাংলাদেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। ইসিও এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি আমরা।

গতকাল রবিবার বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর এ কথা বলেন তিনি।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ বৈঠকে সিইসির সঙ্গে ইসি সচিবও উপস্থিত ছিলেন।

ইইউ রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সিইসি বলেন, মূলত আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রস্তুতি কী আছে, তা উনারা জানতে চেয়েছিলেন। আমরা যা যা করছি তাঁদের জানিয়েছি। নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতির সব কিছু জানিয়েছি।

উনারা জানতে চেয়েছিলেন, ভোটের বাজেট কত, টাকা-পয়সা ঠিকমতো আছে কি না, কোনো রকম অসুবিধা আছে কি না। আমরা বলেছি, আমাদের টাকা-পয়সার কোনো অসুবিধা নেই। সরকারের কাছে বাজেট চেয়েছি। তবে উনারা (ইইউ) আমাদের সাহায্য করতে চান।

সিইসি বলেন, আমাদের কী প্রয়োজন, সেটি জানতে চান তাঁরা। আমরা বলেছি, ইউএনডিপি এরই মধ্যে একটা নিড অ্যাসেসমেন্ট করেছে। একটা টিম পাঠিয়েছিল, কী কী সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে, এরই মধ্যে প্রজেক্টও বানিয়েছে। নির্বাচনের জন্য যে ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হবে তা দিতে তাঁরা প্রস্তুত আছেন। নির্বাচন কমিশনকেই শুধু নয়, বাংলাদেশের উন্নয়নেও সহায়তা করতে চান তাঁরা।

এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, তাঁরা আগামী মাসে একটি কর্মশালা করবেন। এতে ইসি সচিবসহ ইসির প্রতিনিধিরা যাবেন। সেখানে সিভিল সোসাইটি থাকবে। আমরা জোর দিয়েছি দলের পোলিং এজেন্ট, ভোটার এডুকেশন ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে।

সিইসি জানান, ইসি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক দলের এজেন্টদের কিভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া যায় সে বিষয়ে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। ভোটার এডুকেশন ও পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারে সাহায্য করতে প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা। আরো সহায়তা লাগলে জানানো হবে, সর্বতোভাবে সহায়তায় প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা।

সিইসি বলেন, উনারা চান যে আন্তর্জাতিক মানের একটি নির্বাচন হোক। আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন উনারা দেখতে চান। আমরাও তো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখানে আমাদের দ্বিমত নেই। তাঁরা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চান, যেটা আমাদেরও ওয়াদা। এটা আমরাও চাই। নিরপেক্ষভাবে আমরা কাজ করব, এটা তো আমরা ঘোষণা দিয়েছি। আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছি।

যা বললেন মিলার : ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলের প্রধান মাইকেল মিলার সাংবাদিকদের জানান, এটি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে তাঁদের দ্বিতীয় সভা।

তিনি বলেন, আমরা আলোচনা করেছি এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বর্তমানে যে কাজ করছে সে সম্পর্কে সংক্ষিপ্তভাবে জানতে পেরেছি।

মিলার বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ তার রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেহেতু (সিইসির কাছে) তিনটি বার্তা পেশ করেছি। প্রথমত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই দেশের জন্য একটি দৃঢ় অংশীদার এবং আমরা এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময়ে আপনার পাশে আছি। দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে তার অংশীদারিকে সব দিকে শক্তিশালী করতে চায় এবং আমরা এখানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করতে এসেছি, যাতে তারা গত বছর আপনার নিজস্ব নাগরিকদের প্রকাশিত প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে এবং তৃতীয় বার্তাটি হলো, প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছি যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী এই দেশে নির্বাচন পরিচালনাকে সমর্থন করবে।

মিলার জানান, নির্বাচন কমিশনকে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি আর্থিক বিষয়েও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে ইইউ। বিদেশি পর্যবেক্ষক মোতায়েনের বিষয়েও নির্বাচন কমিশনকে অবগত করা হয়েছে।

আজ ওআইসি মিশনপ্রধানদের বৈঠক : আজ সোমবার ইসলামী সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলোর বাংলাদেশ মিশনপ্রধানদের কাছে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে ইসির সঙ্গে বৈঠক হতে যাচ্ছে।

এই বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, মিসর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিশনপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ