টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় মা-ছেলেকে নির্মম নির্যাতনের ঘটনার বিচার চাইতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে লাশ হয়েছে তিনজন। জনতার বিক্ষোভে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি করেছে। গুলিবিদ্ধ বেশ কয়েকজন এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। পুলিশ কর্মকর্তারাই বলছেন, অন্তত ৭৮টি গুলি ছোড়া হয়েছে।
কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে নিহত তিন
উল্টো জনতাকে আসামি করে পুলিশের মামলা
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

মামলার বিষয়ে জানতে উভয় থানার ওসির মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তাঁরা কেউ ফোন ধরেননি। তবে টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (গোপালপুর সার্কেল) জমির উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মামলা হয়েছে।
পরে টাঙ্গাইলের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকারও মামলার কথা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, 'গুলির ঘটনায় ঘাটাইল ও কালিহাতী থানার সাত পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
পুলিশের গুলির ঘটনায় কালিহাতী ও ঘাটাইল উপজেলায় লোকজনের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলছে, বিনা উসকানিতেই পুলিশ গুলি করেছে। আর সে গুলিতে নিরীহ তিনজনের প্রাণ গেছে।
পুলিশ ও প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে গুলির ঘটনায় জড়িত হিসেবে যেসব পুলিশ সদস্যের নাম পাওয়া যাবে তাঁদের প্রত্যাহার করা হবে। আর চূড়ান্ত তদন্ত শেষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা তদন্তে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে একজন অতিরিক্ত ডিআইজিকে প্রধান করে গতকাল তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিদর্শক মো. মোখলেছুর রহমানের নির্দেশে গতকাল এ কমিটি গঠন করা হয়। অতিরিক্ত ডিআইজি (ডিসিপ্লিন) মো. আলমগীর আলমকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আক্তারুজ্জামান ও টাঙ্গাইল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসলাম খানকে সদস্য করা হয়েছে। আগামী সাত দিনের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গতকাল বিকেলে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমান, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান, অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার সঞ্জয় সরকার কালিহাতী থানা ও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল নিহত তিনজনের লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একজনকে ইতিমধ্যে ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। তাঁর চিকিৎসায় আরো অর্থ লাগলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। কালিহাতী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজহারুল ইসলাম তালুকদার জানান, নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য মাসিক ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর নিহত শ্যামল চন্দ্রের পরিবারকে বাড়ি করার জন্য স্থায়ী জায়গা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
প্রসঙ্গত, কালিহাতীর সাতুটিয়া গ্রামে এক মা ও তাঁর ছেলেকে মারধর এবং মায়ের সামনে ছেলেকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের প্রতিবাদ ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গত শুক্রবার বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল বের করে জনতা। ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন এসে ঘাটাইলের হামিদপুর বাসস্ট্যান্ডে প্রথমে মিছিল শুরু করে। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়। একপর্যায়ে সেখানে পুলিশ বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর টিয়ারশেল ও গুলি ছোড়ে। লোকজন ছত্রভঙ্গ হলেও একটু পরে তারা আবার জড়ো হয়ে কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিছিল শুরু করে। সেখানেও গুলি করে পুলিশ। গুলিতে ঘাটাইল ও কালিহাতীর মিলিয়ে অন্তত ৫০ জন আহত হয়। তাদের মধ্যে পরে তিনজন মারা যান। নিহতরা হলেন-কালিহাতী পৌর এলাকার কুষ্টিয়া গ্রামের মৃত সানু শেখের ছেলে ফারুক হোসেন (৩০), কামারপাড়ার রবি চন্দ্র দাসের ছেলে শ্যামল চন্দ্র দাস (১৮) ও ঘাটাইলের শালাঙ্কা গ্রামের মৃত ওসমান আলীর ছেলে শামীম হোসেন (৩২)।
গতকাল কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড ও ঘাটাইলের হামিদপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, দোকানপাট সব খোলা। যানবাহনও চলাচল করছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে ভয় আর চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে সাহস পায় না। তবে তারা মা ও ছেলেকে নির্যাতন এবং পুলিশের গুলির ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডে দক্ষিণ-পূর্ব পাশে একটি চায়ের দোকানে বসা ছিল আটজন। তাদের মধ্যে একজন বৃদ্ধ। তাদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে সবাই চুপ হয়ে যায়। অনেকক্ষণ চেষ্টার পর সেই বৃদ্ধ পরিচয় প্রকাশ না করে বলেন, 'এমনি এমনি কেউ আন্দোলন করে না। মাকে বেইজ্জতি করা হয়েছে। এটা কেউ মানতে চাবো? আর পুলিশ গুলি কি এমনিতেই করছে? খোঁজ নিয়ে দেখেনগা, তাগোরে কে মিছিলে বাধা দিতে বলছিল।' সেখানে উপস্থিত এক শ্রমিক নেতা বলেন, 'মা-ছেলেকে নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্তরা প্রভাবশালী। তাদের ক্ষমতাও আছে, টাকাও আছে। পুলিশ তো তাগো কথাই শুনবো।' পাশ থেকে আরেকজন বলেন, 'রোমার (মা-ছেলেক নির্যাতনের মামলার প্রধান আসামি) ভাইয়ের বাসায় কালিহাতী থানার ওসি ভাড়া থাকেন। আর কিছু বলন লাগবো?' পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলে, পরিচয় বললে পুলিশ ধরে নিয়ে সাক্ষী বানাবে। না হলে রাজনৈতিক নেতারা হয়রানি করবে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোকজন হামিদপুর বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হয়। সেখান থেকে প্রথমে মিছিল বের করতে চাইলে ঘাটাইল থানার পুলিশ বাধা দিয়ে তাদের লাঠিপেটা করে। এ সময় জনতা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে আবার তারা একত্র হয়ে মিছিল করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। একপর্যায়ে তারা পুলিশকে ধাওয়া দিলে সাত পুলিশ সদস্য পাশের একটি হোটেলে আশ্রয় নেন। জনতা সেখানেও ঢিল ছোড়ে। এরই মধ্যে টাঙ্গাইল থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে জনতার ওপর আক্রমণ করে। তারা গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়। পরে লোকজন ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আহতদের স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
বিকেল ৫টার দিকে আবারও লোকজন জড়ো হয় কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তারা মিছিল নিয়ে কালিহাতী থানার দিকে যাওয়ার উদ্যোগ নিলে কালিহাতী থানার পুলিশ প্রথমেই গুলি করে। সেখানেও কয়েকজন আহত হয়। হামিদপুর বাসস্ট্যান্ডের দোকানদার ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ অরফিজ বলেন, শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশ বাধা দেয়। মিছিল করতে দিলে কিছুই হতো না। কেন পুলিশ বাধা দিল? জনগণ পরে উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর করেছে, পুলিশকে ঢিল ছুড়েছে।
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, পুলিশকে ঢিল মারলে তারা গুলি করে। কিন্তু ঢিল খাওয়ার অবস্থাও তো পুলিশই সৃষ্টি করেছে। তারা কেন মিছিলে বাধা দিতে গেল? কারা মিছিলের আয়োজন করেছিল-জানতে চাইলে মোহাম্মদ অরফিজ বলেন, একজন মাকে অপমান করা ঘটনা কেউ সহ্য করতে পারেনি। তাই লোকজন নিজেদের মতো করে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য এলাকায় মাইকিংও করা হয়। কালিহাতীর সাবেক ইউপি মেম্বার হারুন অর রশিদ জানান, গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে পুলিশ টাকা খেয়ে আসামিদের ছেড়ে দিয়েছে এবং জনগণকে প্রতিবাদ করতে দেবে না। এ জন্য এলাকার লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। কালিহাতী বাসস্ট্যান্ড এলাকার ছাইদুর রহমান বলেন, পুলিশের বাধা দেওয়াতেই যত ঝামেলা হয়েছে। এত লোকজনকে আটকাতে চাওয়া উচিত হয়নি পুলিশের।
স্থানীয়রা বলছে, মা-ছেলেকে নির্যাতনের মামলার প্রধান আসামি রফিকুল ইসলাম রোমা কালিহাতী শহর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিনজু মিয়ার ছোট ভাই। রোমাও স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তা ছাড়া কালিহাতী থানার ওসি শহিদুল ইসলাম থানার অদূরে মিনজু মিয়ার বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। এসব কারণেই পুলিশ বিক্ষোভকারীদের দমন করতে মিছিলে বাধা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত গুলি চালায়।
তবে মিছিলে গুলির কথা অস্বীকার করেছেন থানার ওসি শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, 'পুলিশ কোনো গুলি করেনি। পুলিশ সদস্যদের ইস্যু করা অস্ত্র থেকে কোনো গুলি করা হয়নি।' তাহলে কারা গুলি করল জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপে বা তাদের অনুরোধে মিছিলে বাধা দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কারো কোনো চাপ ছিল না। যা করা হয়েছে পরিস্থিতিতে পড়েই করা হয়েছে।' টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখন কিছুই বলতে পারব না। আপনারা যা দেখেছেন তা তো জানেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কথা বলবেন।'
হামিদপুর বাসস্ট্যান্ডে কথা হয় টাঙ্গাইলের সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) হাফিজ আল আসাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, 'হাজারের ওপরে লোক জড়ো হয়েছিল। সেখানে পুলিশ ছিল মাত্র ১০ থেকে ১২ জন। মিছিল থেকে যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সে জন্য পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। পরে জনতা পুলিশের ওপর চড়াও হয়। পুলিশ পিছু নিলে জনতা তাদের ঘিরে ধরে। তারা একটি হোটেলে আশ্রয় নিলে সেখানেও তাদের আক্রমণ করা হয়। পরে তাদের উদ্ধার করতে অতিরিক্ত পুলিশ এসে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। দুই থানা মিলে প্রায় ৭৮টি গুলি ছোড়া হয়। ঘাটাইল থানার ওসি মোখলেসুর রহমান বলেন, 'ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক কোনো কারণ নেই। তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে এ অবস্থা হয়েছে।' গতকাল রোমাদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় গেটে তালা ঝুলছে। বাড়িতে কেউ নেই। প্রতিবেশীরা জানায়, বাড়িতে তালা দিয়ে সবাই পালিয়েছে।
ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন দুজন : কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত দুজনের চিকিৎসা চলছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। তাঁরা হলেন স্থানীয় একটি কলেজের ছাত্র ও মোবাইল ফোনের দোকানদার রুবেল (১৯) ও দিনমজুর বাদশা খান (২৫)। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, দুজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। রুবেলের খালাতো ভাই মো. মাসুদ বলেন, রুবেলের মাথার পেছনে ও পিঠে দুটি গুলি লেগেছে। বাদশার বাড়ি মধুপুরে। স্বজনরা জানান, কালিহাতীতে শ্বশুড়বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন বাদশা। বাসে করে বাড়ি ফেরার সময় গুলি লাগে।
তাহতদের ক্ষতিপূরণ দাবি আসকের : কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। একই সঙ্গে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ ও হতাহতদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানানো হয়েছে। আসকের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ দাবি জানানো হয়।

বিশেষ লেখা
বাংলাদেশ কি সত্যিই খাদের কিনারে?
- অদিতি করিম

বিলেতের প্রভাবশালী সংবাদপত্র ‘দ্য গার্ডিয়ানের’ সাংবাদিক হান্না এলিস পিটারসেন সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাত্ হয়। এই সব কিছু মিলিয়ে সম্প্রতি তিনি ‘দ্য গার্ডিয়ানে’ একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। এই প্রতিবেদনটি দেশে-বিদেশে সাড়া ফেলেছে।
তাঁর এই সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি নিয়ে এ দেশের রাজনীতিতে তোলপাড় চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো বটেই, বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনায়ও হান্না এলিস পিটারসেনের এই উক্তিটি নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। অনেক রাজনীতিবিদ তাঁর উক্তিকে উদ্ধৃত করে বাংলাদেশের সংকট মোকাবেলার জন্য আশু এবং জরুরি পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন।
এ কথা ঠিক যে, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকার খুব একটা স্বস্তিতে নেই। এই সরকারের মধুচন্দ্রিমা সময় পার হয়েছে। এখন এই সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশার চাপ দিন দিন বাড়ছে। প্রত্যাশা পূরণ না হলে হতাশাও তৈরি হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর এই সরকার সবচেয়ে বড় যে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়ে তা হলো কথায় কথায় রাজপথ দখল এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধ।
নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর একটি ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে পুলিশ প্রশাসনকে নতুন করে গড়ে তুলছে। এই প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি। এই গণ-অভ্যুত্থান সামগ্রিক ভাবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা পুলিশের মনোবলকে দুর্বল করে ফেলেছে। পুলিশের বেশ কিছু সদস্য এই গণ-অভ্যুত্থানে মারা গেছেন। এটিও গোটা বাহিনীর মনোবল ভেঙে যাওয়ার একটি বড় কারণ। ফলে ৫ আগস্টের পর তাঁরা আগের মতো উদ্যম এবং দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছেন না। তাঁদের মধ্যে একটা ঢিলেঢালা ভাব। এক ধরনের আতঙ্ক এবং হতাশাগ্রস্ত মনোভাব লক্ষ করা যাচ্ছে। এ কারণে বিভিন্ন রাস্তায় কথায় কথায় অবরোধ এবং অবস্থান কর্মসূচিগুলোতে পুলিশ বাহিনী নিরাপদ দূরত্বে থাকছে। গা বাঁচিয়ে তামাশা দেখছে। পুলিশের এই হতাশাজনক অবস্থা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হওয়ার প্রধান কারণ।
আমরা জানি, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন থানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়েছিল। এসব অস্ত্র এখনো সন্ত্রাসীদের দখলে। অস্ত্র উদ্ধারের নামে যে অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, সেই অভিযান মোটেও সফল হয়নি। ফলে সন্ত্রাসীদের হাতে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। পাশাপাশি ৫ আগস্টের পর বেশ কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী কারাগার থেকে মুক্তি পায়। তারা নতুন করে তাদের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। ফলে সারা দেশে চুরি, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বিচার নিজের হাতে তুলে নেওয়া এবং মব জাস্টিসের নামে এক ধরনের মতলববাজি সারা দেশে রীতিমতো আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। সুযোগসন্ধানী দুর্বৃত্তরা এই সুযোগে যে যার মতো দখল বাণিজ্যে শামিল হয়ে প্রতিপক্ষের জমিজমা, ঘাট, হাট-বাজার ইত্যাদি সব দখল করে নিচ্ছে। দখল-পাল্টাদখল নিয়েও চলছে হানাহানি-খুনাখুনি। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে সারা দেশে নির্বিচারে নারী নিপীড়নের ঘটনা। বিশেষ করে মাগুরার আছিয়া গোটা বাংলাদেশকে কাঁদিয়ে বিদায় নিয়েছে। এ রকম একটা নাজুক পরিস্থিতিতে শুধু সেনাবাহিনীর উপস্থিতির কারণে এখনো মানুষের মধ্যে কিছুটা আশা আছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একই রকম অবস্থান একটা পর্যায়ে মানুষকে ক্ষুব্ধ করে তোলে, হতাশ করে তোলে এবং মানুষ বিরক্ত হতে শুরু করছে। যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে কিছু দর্বৃত্ত মব করে হামলা চালাচ্ছে, লুটপাট করছে, আগুন লাগিয়ে বিচার নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, রাস্তায় কাউকে প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করে তাকে পেটানো হচ্ছে ইত্যাদি ঘটনাগুলো একটা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশে। এসব উদ্বেগজনক।
এ রকম একটি নাজুক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কারণেই দেশের অর্থনীতিতেও সৃষ্টি হয়েছে স্থবিরতা। ব্যবসায়ীরা কেউ নতুন বিনিয়োগ করছেন না। সাম্প্রতিক প্রধান উপদেষ্টা অর্থ মন্ত্রণালয়ের জন্য একজন বিশেষ সহকারী নিয়োগ দিয়েছেন। ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী একজন দক্ষ অর্থনীতিবিদ। দেশে-বিদেশে তিনি বিভিন্ন উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক চিন্তার জন্য আলোচিত। দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই একটি মতবিনিময়সভায় তিনি বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কে ব্যবসা করতে চাইবে? এই সরকারের মেয়াদ সম্পর্কে মানুষের সুস্পষ্ট ধারণা নেই। এই সরকার কত দিন টিকবে, সেটা মানুষ জানে না।’
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এই সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য কী, সে সম্পর্কে একটা অস্পষ্টতা থাকার কারণে বিদেশি বিনিয়োগ যেমন কমছে, তেমনি বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশীয় শিল্প উদ্যোক্তারাও বিনিয়োগে আগ্রহী নন। আমরা জানি, ৫ আগস্টের পর থেকে বহু শিল্প-কারখানা আক্রান্ত হয়েছে। সেখানে দর্বৃত্তরা আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। অনেকে নিরুপায় হয়ে শিল্প-কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে লাখ লাখ শ্রমিক এখন বেকার। বেতন-ভাতার দাবিতে প্রতিদিনই বিভিন্ন সড়ক অবরোধ হচ্ছে। সাধারণ চোখে আমরা মনে করতে পারি, বাংলাদেশ একটা নাজুক সময় পার করছে। দেশটির সার্বিক অবস্থা ভালো নয়।
কিন্তু আমরা যদি বিশ্বের যেকোনো দেশের বিপ্লবের তাৎপর্য অনুভব করি এবং বিপ্লবের পরবর্তী পরিস্থিতিগুলোকে বিচার-বিশ্লেষণ করতে চাই, তাহলে দেখব, বিপ্লবোত্তর সমাজে এই ঘটনাগুলো স্বাভাবিক ঘটনা। বিশেষ করে বিপ্লবের ধ্বংসস্তূপের মধ্য দিয়ে নতুন সভ্যতার সূচনা হয়। নতুন দিন বিনির্মাণের আকাঙ্ক্ষা জাগ্রত হয়। বাংলাদেশ এখন সেই নতুন বিনির্মাণের প্রাক-স্তরে রয়েছে। বাংলাদেশের গত ১৫ বছরে যে বিধিব্যবস্থা এবং আইন-প্রশাসন ইত্যাদি ছিল, সবই ছিল ভঙ্গুর, দলীয়করণে দুষ্ট। একটি নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতায় রাখার অভিপ্রায়ে আবর্তিত। এই অবস্থা থেকে একটি জনগণের সরকার এবং জনগণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অনেক কঠিন কাজ। ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ আসলে সেই কঠিন সময়টা পার করেছে। এ কারণেই হয়তো ঢাকার রাস্তায় ঘুরতে গিয়ে গার্ডিয়ানের সাংবাদিক হান্না এলিস পিটারসেনের মনে হয়েছে, বাংলাদেশ খাদের কিনারে। সে জন্যই জনগণের মধ্যে সাময়িক অস্থিরতা, হতাশা। কিন্তু এই অস্থিরতা ও হতাশা বেশি দিন থাকবে না। অতীত ইতিহাস তাই বলে। হান্না এলিস পিটারসেন যদি বাংলাদেশ সম্পর্কে আরো একটু গভীরভাবে অনুসন্ধান করতেন, এ দেশের মানুষের মনমানসিকতা, চেতনা, ঐতিহ্য এবং আকাঙ্ক্ষাগুলোকে গভীরভাবে বিশ্লেষণ করতেন, তাহলে কিন্তু তিনি বাংলাদেশকে খাদের কিনারে দেখতেন না। তখন তিনি বাংলাদেশকে দেখতেন একটি নতুন অভিযাত্রার বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তখন তিনি তাঁর লেখায় কবি সুকান্তকে উদ্ধৃত করতেন।
সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়:
জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।
বাংলাদেশ যেন সেই রকমই একটি ঐতিহ্যকে ধারণ করে। যে দেশটি জ্বলে-পুড়ে ছারখার হওয়ার পরও আবার মাথা তুলে দাঁড়ায়। আবার ঘুরে দাঁড়ায়। বাংলাদেশের মানুষের রয়েছে অফুরন্ত প্রাণশক্তি। স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কাটার অফুরন্ত সাহস। এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা রাজনৈতিক দুর্যোগ যাই হোক না কেন, বাংলাদেশের মানুষ লড়াই করে, ঘুরে দাঁড়ায়, হারে না, বাংলাদেশের মানুষ দমে না। নতুন স্বপ্নের জাল বোনে। এটাই হলো বাংলাদেশের ইতিহাস।
মার্চ আমাদের স্বাধীনতার মাস। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর আক্রমণ, হত্যা, লুণ্ঠন এবং অপারেশন সার্চলাইটের পরও বাংলাদেশ হারেনি। তখনো বাংলাদেশ খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের অকুতোভয় বীর জনগণ সেই খাদের কিনারা থেকে এক অভূতপূর্ব মুক্তি সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশকে মুক্ত করেছে। আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ।
অর্থনীতিবিদরা বলতেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভারাক্রান্ত বাংলাদেশ কখনো উন্নতি করতে পারবে না। বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের একটি মডেল। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন, বাংলাদেশ যদি ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত হতে পারে, তাহলে সেটিই হবে বিশ্বের একটি মডেল। বিশ্বে তাহলে আর কোনো দেশেই ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও শ্রম তাদের ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণ করেছে। স্বাধীনতার পর কেউ চিন্তা করেনি, বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশ সারা বিশ্বকে যেন অবাক করে দেওয়ার জন্যই জন্ম হয়েছে। আমরা দেখি, ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ পেরিয়ে বাংলাদেশ একটি সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের পথে অভিযাত্রা করেছে। বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। এই দেশের ১৮ কোটি মানুষ অফুরন্ত প্রাণশক্তি দিয়ে খাদ্য উৎপাদন যেমন বাড়িয়েছে, তেমনি শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থনীতিকেও নিয়ে গেছে একটি সম্ভাবনার দুয়ারে। যার ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে স্বাধীনতার পর যে মূল্যায়ন করা হতো, সেই মূল্যায়ন ৫৩ বছর পর এসে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের সাফল্য। বাংলাদেশ সম্পর্কে তাই কোনো পূর্ব অনুমান ঠিক নয়। এ দেশের মানুষ আবেগপ্রবণ, ভালোবাসার আলিঙ্গনে আপনার জন্য সব কিছু উজাড় করে দেবে। এ দেশের মানুষ হাসতে হাসতে মরতে পারে। ধ্বংসস্তূপের অন্ধকারে নতুন স্বপ্নের সকাল গড়ে। বাংলাদেশ নিয়ে হতাশার মুহূর্তে এ দেশের জনগণ নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করে। আর এ কারণেই বাংলাদেশ নিয়ে আজ যে হতাশা বা দুর্ভাবনা, সেটি হয়তো শেষ বিচারে সঠিক হবে না। কারণ এ দেশের মানুষ পরাজয় মানে না, হার মানে না। একাত্তরে যেমন বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, তেমনি প্রমাণ করেছে চব্বিশে। বাংলাদেশ খাদের কিনারে নয়, বাংলাদেশ এখন নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের দুর্গম পথে। তবে এ দেশের জনগণের জয় অনিবার্য।
লেখক : নাট্যকার ও কলাম লেখক
auditekarim@gmail.com

সস্ত্রীক বিদেশ যেতে বাধা নেই ওরিয়ন চেয়ারম্যানের
নিজস্ব প্রতিবেদক

ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রী মিসেস আরজুদা করিমের বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল সোমবার ঢাকার মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গালিবের আদালত অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, চিকিৎসা ও ওমরাহ হজ পালনের জন্য বিদেশ যেতে অনুমতি চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আবেদন করেন ওবায়দুল করিম, তাঁর স্ত্রী আরজুদা করিম ও তাঁর মেয়ে জেরীন করিম। শুনানি শেষে আদালত ওবায়দুল করিম ও তাঁর স্ত্রীর বিদেশ যাওয়ার অনুমতির আদেশ দেন।
এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওবায়দুল করিমসহ পরিবারের সদস্যদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন আদালত। আবেদনে বলা হয়, ওরিয়ন গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং সংক্রান্ত অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানকালে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গোপন সূত্রে জানা যায়, অভিযোগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা দেশ ত্যাগ করে অন্য দেশে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

ডা. শফিকুর রহমান
শহীদ সেলিম ও মন্টু দাসের পরিবারের পাশে জামায়াত
ঝালকাঠি ও বরগুনা প্রতিনিধি

রাজধানীতে জুলাইয়ে শহীদ সেলিম তালুকদারের শ্বশুরবাড়ি ঝালকাঠি শহরের কবিরাজবাড়ি এলাকায় গিয়ে তাঁর স্ত্রী-সন্তানের খোঁজখবর নিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। গতকাল সোমবার দুপুরে ওই পরিবারকে সান্ত্বনা জানিয়ে শিশুটির দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।
এর আগে গতকাল সকালে বরগুনায় নির্যাতিত শিশু এবং তার বাবা নিহত মন্টু চন্দ্র দাসের বাড়িতে গিয়ে অসহায় পরিবারটির পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জামায়াতের আমির।
গতকাল দুপুরে হেলিকপ্টারে ঝালকাঠি শহরের পৌর মিনি স্টেডিয়ামে নামেন তিনি।
দুপুরে ঝালকাঠি পৌর মিনি স্টেডিয়ামের সামনে এক পথসভায় জামায়াতের আমির বলেন, ‘শহীদরা এ জাতির সম্পদ।
তিনি বলেন, ‘জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি কল্যাণকর এবং মানবিক রাষ্ট্র গড়তে চাই। কোরআনের ভিত্তিতে একটি মানবিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি আমরা।
জেলা জামায়াতের আমির অ্যাডভোকেট হাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে পথসভায় কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বক্তব্য দেন ঝালকাঠি-২ আসনে জামায়াতের প্রার্থী শেখ নেয়ামুল করিম, বরিশাল জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল জব্বার প্রমুখ।
এর আগে, সকাল ১০টায় জামায়াতের আমির ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে বরগুনা সার্কিট হাউস মাঠে পৌঁছান। এরপর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় মন্টু দাসের বাড়িতে গিয়ে ভুক্তভোগী পরিবারকে উপহারসামগ্রী দেন। এরপর সকাল এগারোটায় বরগুনা শহীদ মিনারে এক পথসভায় অংশ নেন তিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আল্লাহ আল-কোরআনে বলেছেন, যারা ধর্ষণ করে, তারা পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট। আমরা সামাজিকভাবে মজলুমের পাশে দাঁড়ালে, জুলুমকারী ভয় পাবে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাড. মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবর, বরগুনা জেলা আমির অধ্যাপক মহিবুল্লাহ হারুন প্রমুখ।

এনডিটিভিকে মার্কিন গোয়েন্দা প্রধান
বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্র
- গ্যাবার্ডের মন্তব্য সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে করা হয়নি : অন্তর্বর্তী সরকার
কালের কণ্ঠ ডেস্ক

বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দেশটির গোয়েন্দা প্রধান তুলসী গ্যাবার্ড ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন বিশ্বজুড়ে ‘ইসলামী সন্ত্রাসবাদকে’ হারাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গতকাল সোমবার সাক্ষাৎকারটি প্রচারিত হয়েছে।
এনডিটিভি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বলেন, ‘হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতন, হত্যা ও নিপীড়ন যুক্তরাষ্ট্র সরকার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর প্রশাসনের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
এদিকে তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার স্পষ্ট করে বলেছে, ‘তুলসী গ্যাবার্ডের মন্তব্যে আমরা গভীর উদ্বিগ্ন হতাশ ও ক্ষুব্ধ। তিনি তাঁর মন্তব্যে অভিযোগ করেছেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন ও হত্যা চলছে’ এবং ‘বাংলাদেশের আদর্শ ও লক্ষ্যে ইসলামী সন্ত্রাসবাদীদের ‘মূল’ নিহিত, যারা বাংলাদেশে ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। তাঁর এই বিবৃতি যেমন বিভ্রান্তিকর, তেমনি বাংলাদেশের সুনামের প্রতি অবিচার।
তুলসী গ্যাবার্ড বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নতুন মন্ত্রিসভা এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তবে এটি আমাদের উদ্বেগের কেন্দ্রীয় বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।’
এ সময় তিনি বাংলাদেশে ইসলামী চরমপন্থা ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থানের কথা উল্লেখ করেন।
সাক্ষাৎকারে তুলসী গ্যাবার্ড ‘ইসলামী খিলাফত’-এর আদর্শের কথা উল্লেখ করে বলেন, বিশ্বজুড়ে চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো এমন একটি ফলাফল অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছে। ইসলামী সন্ত্রাসীদের হুমকি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বৈশ্বিক প্রচেষ্টা একই আদর্শ ও লক্ষ্যে নিবদ্ধ, যা হলো ইসলামী খিলাফতের মাধ্যমে শাসন বা শাসন করা।
তিনি আরো বলেন, এটি স্পষ্টতই অন্য যেকোনো ধর্মের মানুষকে প্রভাবিত করে, বিশেষ করে যারা তাদের গ্রহণযোগ্য ধর্মের বাইরে। তারা এটিকে সন্ত্রাস ও সহিংসতার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে চায়। সূত্র : এনডিটিভি