<p>দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানির উদ্দেশ্যে নিজেদের চিনিকলের উৎপাদনক্ষমতা বাড়াচ্ছে দেশবন্ধু গ্রুপ। নরসিংদীর চরসিন্দুর পলাশ শিল্প এলাকায় অবস্থিত দেশবন্ধু সুগারমিলের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ছে তিন গুণ। বর্তমানে মিলটিতে দৈনিক উৎপাদন হয় ৫০০ টন চিনি। এটি বাড়িয়ে দৈনিক ১৫০০ টন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে বছরে সাড়ে চার লাখ টন চিনি উৎপাদিত হবে। দেশবন্ধু গ্রুপের কর্মকর্তারা বলছেন, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের বাজারে একচেটিয়া ব্যবসার প্রবণতা কমবে। একই সঙ্গে চিনির দামও মানুষের নাগালে থাকবে।</p> <p>জানতে চাইলে দেশবন্ধু গ্রুপের প্রকল্প পরিচালক প্রভাষ চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশবন্ধু চিনিকলটি ঐতিহ্যবাহী। মিলের উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর কাজটি ভারতের মেসার্স স্প্রে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভাইসেস লিমিটেড বাস্তবায়ন করছে। বর্তমানে সম্প্রসারণ কর্মসূচি শেষের দিকে রয়েছে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব হবে এবং এর ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়বে। একই সঙ্গে রপ্তানিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’</p> <p>পলাশ শিল্প এলাকায় অবস্থিত দেশবন্ধু সুগার মিলসহ দেশবন্ধু পলিমার, দেশবন্ধু ফুড ও বেভারেজ লিমিটেড এবং দেশবন্ধু ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে চলছে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলমান শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি নতুন শিল্প স্থাপন অব্যাহত রেখেছে। এতে ব্যবসার পরিসর ও ব্যাপ্তি দুটিই বাড়ছে। উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে বিদেশি দক্ষ প্রকৌশলীদের তত্ত্বাবধানে শ্রমিকরা দিন-রাত কাজ করে চলেছে।</p> <p>পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দেশবন্ধু গ্রুপের একমাত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু পলিমার। সরেজমিনে দেখা গেছে, পলিমারের উৎপাদন বাড়াতে বেশ কয়েকটি নতুন ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। নতুন মেশিন স্থাপনের কাজ চলছে। দেশবন্ধু পলিমারের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশবন্ধু সুগারমিল চালু হওয়ার পর মোড়কের জন্য প্রতিবছর ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ চিনির ব্যাগ প্রয়োজন হয়। চিনির ব্যাগের চাহিদা পূরণ করতে দেশবন্ধু পলিমার কারখানা স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছিল ২০০৬ সালে। প্রথমে তাইওয়ান থেকে আনা যন্ত্রপাতি দিয়ে স্বল্প পরিসরে, অর্থাৎ বার্ষিক এক কোটি ব্যাগ উৎপাদনক্ষমতার মিল স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১১ সালে বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা তিন কোটিতে উন্নীত করা হয়। উন্নত যন্ত্রপাতি সংযোজনের মাধ্যমে এখন বছরে ছয় কোটি ব্যাগ উৎপাদন হয় বলে জানান সাখাওয়াত।</p> <p>সূত্র জানায়, দেশবন্ধু পলিমার ২০০৯ সালে পাবলিক লিমিটেড কম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ২০১১ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এ আওতাভুক্ত হয়। দেশে এবং বিদেশে দেশবন্ধু পলিমার লিমিটেডে উৎপাদিত ব্যাগের ব্যাপক চাহিদা থাকায় নতুন করে আরো একটি কারখানার কাজ চালু করার প্রক্রিয়াধীন। আগামী মার্চ কিংবা এপ্রিলে যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ শেষ করে বিদেশে রপ্তানি শুরু হবে।</p> <p>দেশবন্ধু গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু বেভারেজের যাত্রা শুরু হয় ২০১৫ সালে। গত বছর ১০ অক্টোবর শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বেভারেজ কারখানা উদ্বোধন করেন। এই প্রকল্পের সমন্বয়ক মোহাম্মদ মারুফ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে সিএসডি, ড্রিংকিং ওয়াটার ও জুস মিলিয়ে ৯টি আইটেম উৎপাদিত হচ্ছে। উৎপাদনক্ষমতা প্রতিদিন ২৮ হাজার কার্টন। দেশবন্ধু বেভারেজের উৎপাদিত পণ্য দেশের গণ্ডি পেরিয়ে থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, গ্রিসেও রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান মারুফ হোসেন। শিগগিরই এই কারখানার উৎপাদনক্ষমতাও বাড়বে।</p> <p>দেশবন্ধু গ্রুপের আরেক প্রতিষ্ঠান দেশবন্ধু ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুটের কারখানার কাজ শুরু হয় গত বছর মার্চে। এখন চলছে যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ। মার্চ ও এপ্রিলের মধ্যে শিল্প-প্রতিষ্ঠানটি উৎপাদনে যাবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। এই কারখানায় চিপস, বিস্কুট, ব্রেড, ড্রাইকেক, চানাচুরসহ টোস্ট বিস্কুট উৎপাদনের কথা রয়েছে।</p>