<p>বিদায়লগ্নে মাহে রমজান। পবিত্র এই মাসের শেষ দশক চলছে। প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, অন্যান্য মাসের ওপর রমজানের মর্যাদা যেমন, অন্য দুই দশকের ওপর শেষ দশকের মর্যাদা তেমন। কোরআন, হাদিস ও বরেণ্যদের বর্ণনা থেকে রমজানের শেষ দশকের মর্যাদা প্রমাণিত হয়।</p> <p>১. আল-কোরআন : পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ উষার, শপথ দশ রজনীর, শপথ জোড় ও বিজোড়ের।’</p> <p>(সুরা : ফাজর, আয়াত : ১-৩)</p> <p>জাহহাক (রহ.) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, আয়াতে বর্ণিত ‘দশ রজনী’ দ্বারা রমজানের শেষ দশক উদ্দেশ্য। আর কোনো কিছু নিয়ে আল্লাহর শপথ করা বিষয়টির মর্যাদার প্রমাণ। (তাফসিরে কুরতুবি)  </p> <p>২. নবীজি (সা.) : রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশককে বিশেষ মূল্য দিতেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রমজানের শেষ দশকে রাসুলুল্লাহ (সা.) রাত জেগে ইবাদত করতেন, তাঁর পরিবারকে ডেকে দিতেন এবং লুঙ্গি শক্ত করে বেঁধে নিতেন।</p> <p>(সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪)</p> <p>অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে যে পরিমাণ মুজাহাদা (ইবাদত-বন্দেগি) করতেন, অন্য কোনো সময় তা করতেন না।</p> <p>(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৯৬)</p> <p>৩. আয়েশা (রা.) : ২৩ রমজানের রাতে আয়েশা (রা.) পরিবারের সদস্যদের ঘুম থেকে জাগিয়ে দিতেন।</p> <p>৪. ইবনে আব্বাস (রা.) : তিনিও ২৩ রমজানের রাতে পরিবারের সদস্যদের জাগিয়ে দিতেন। এমনকি তাদের ওপর পানি ছিটিয়ে দিতেন।</p> <p>৫. ইবনে ওমর (রা.) : তিনি রমজানের শেষ দশকে পরিবারের সদস্যদের ঘুম থেকে ডেকে দিতেন। (আল মাজমু : ৬/৪২৪)</p> <p>৬. সুফিয়ান সাওরি (রহ.) : তিনি বলেন, রমজানের শেষ দশকে অধিক পরিমাণ ইবাদত করা এবং তাতে তাহাজ্জুদ পড়া আমার কাছে অধিক প্রিয়। (হাদায়িকুল আউলিয়া, পৃষ্ঠা ৮৯)</p> <p>৭. ইমাম নববী (রহ.) : ইমাম নববী (রহ.) বলেন, রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের পরিমাণ বৃদ্ধি করা এবং রাত জেগে ইবাদত করা মুস্তাহাব। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) এমনটি করেছেন। (আল মিনহাজ, পৃষ্ঠা ৭১)</p> <p>৮. ইবনে জারির তাবারি (রহ.) : তিনি বলেন, পূর্বসূরি আলেমরা রমজানের শেষ দশকের প্রতি রাতে গোসল করতে পছন্দ করতেন। যেমন—ইবরাহিম নাখয়ি (রহ.) প্রতি রাতে গোসল করতেন। আনাস (রা.) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি ২৪ রমজানের রাতে গোসল করতেন, সুগন্ধি মাখতেন এবং (নতুন) লুঙ্গি-চাদরের জোড়া পরিধান করতেন।</p> <p>(বুগয়াতুল ইনসান, পৃষ্ঠা ৭৩)</p> <p>৯. ইমাম সুয়ুতি (রহ.) : ইমাম সুয়ুতি (রহ.) লেখেন, পূর্বসূরি আলেমরা তিন মাসের তিন দশককে সম্মান করতেন। মহররমের প্রথম দশক, জিলহজের প্রথম দশক ও রমজানের শেষ দশক। (আর রিয়াজুন নুজরাহ, পৃষ্ঠা ৩০৮)</p> <p>১০. ইবনে তাইমিয়া (রহ.) : শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল—জিলহজের প্রথম দশক উত্তম, নাকি রমজানের শেষ দশক? তিনি বলেন, জিলহজের প্রথম দশকের দিনগুলো রমজানের শেষ দশকের দিনগুলো থেকে উত্তম। আর রমজানের শেষ দশকের রাতগুলো জিলহজের প্রথম দশকের রাতগুলো থেকে উত্তম।</p> <p>(রুহবানুল লাইল : ২/২৩৪)</p> <p> </p> <p>আল্লাহ সবাইকে রমজানের শেষ দশকে যথাযথভাবে ইবাদত করার তাওফিক দিন। আমিন।</p> <p> </p>
