<p> তাজিংডং নয়, বরং বান্দরবানের মোদক টং-ই (Modowk Taung) দেশের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তথ্য প্রযুক্তিবিদ (জিও-ইনফর্মেটিক্স) ড. সাইদুর রহমান চৌধুরী। পর্বতটি স্থানীয়ভাবে সাকা হাফং নামে পরিচিত। এর উচ্চতা তিন হাজার ৪৫১ ফুট। উচ্চতার হিসেবে দেশের ৭৫টি পর্বতের মধ্যে তাজিংডং ২৬তম বলে দাবি করেছেন এ শিক্ষক। বিশ্বের সর্বাধুনিক উচ্চতামাপক পদ্ধতি ব্যবহার করে চূড়াগুলোর উচ্চতা নিয়ে গবেষণার পর এমন দাবি করেছেন ড. সাইদুর রহমান। তিনি দাবি করেছেন, সরকারি হিসাবে তাজিংডংয়ের উচ্চতা চার হাজার ৩০০ ফুট দেখানো হলেও তা সঠিক নয়। আসলে এর উচ্চতা দুই হাজার ৫৮৯ ফুট। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের এ শিক্ষক কালের কণ্ঠকে বলেছেন, 'সরকারিভাবে তাজিংডংয়ের যে উচ্চতা দাবি করা হয় তা অনেক আগের। উচ্চতা পরিমাপের জন্য আমি এসআরটিএম জরিপের তথ্য ব্যবহার করেছি, যা বিশ্বে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য।' তাঁর মতে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চূড়া ডুমলং, যার উচ্চতা তিন হাজার ৩০৪ ফুট। আর তৃতীয় সর্বোচ্চ জাও ত্ল্যাং পর্বতের উচ্চতা তিন হাজার ২৭১ ফুট। ড. সাইদুর রহমানের এই গবেষণার ফলাফলের সঙ্গে ৭৫টি পর্বতের পূর্ণাঙ্গ তালিকা ও মানচিত্র সন্নিবেশিত করে mapsnmaps.blogspot.com নামের একটি ওয়েবসাইটে প্রাথমিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে।</p> <p> মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজ বিভাগের এই অধ্যাপক গত বছর ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তির পরপরই দেশের সমুদ্রসীমার প্রথম পূর্ণাঙ্গ মানচিত্র প্রণয়ন করেছিলেন, যা সরকারি পর্যায়ে সমাদৃত হয়েছে। এটি জাতিসংঘের বে অব বেঙ্গল লার্জ মেরিন ইকো সিস্টেম প্রকল্পেও বিশেষভাবে সমাদৃত হয়েছে। ড. সাইদুর গবেষণা সম্পন্ন করতে ব্যবহার করেছেন মার্কিন গবেষকদের সূক্ষ্ম শাটল রাডার উপাত্ত, স্যাটেলাইট চিত্র, টপোগ্রাফিক মানচিত্র এবং বাংলাদেশি পর্বতারোহীদের সংগৃহীত উপাত্তগুলো। পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা পরিমাপের জন্য শাটল রাডারের তথ্যই পৃথিবীতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেন তিনি।</p> <p> গবেষণা বিশ্লেষণে জানা গেছে, পর্বতশৃঙ্গের উচ্চতা পরিমাপের জন্য বিশ্বে দুটি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। একটি কলোরাডো পদ্ধতিতে, অন্যটি অ্যালান ডওসন পদ্ধতি। তুলনামূলকভাবে কম পাহাড়ি দেশে কলোরাডো পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২০০০ ফুটের অধিক উচ্চতাসম্পন্ন স্থানকে পর্বত (মাউন্টেন) বলা হয়। আবার উচ্চতা যত বেশিই হোক নির্দিষ্ট মাত্রার আশপাশের এলাকা থেকে কত উঁচু তার পরিমাপ (টপোগ্রাফিক্যাল প্রমিনেন্স) না থাকলে একটি পর্বতচূড়াকে স্বতন্ত্র শৃঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করা যায় না। কলোরাডো নিয়ম পদ্ধতিতে স্বতন্ত্র শৃঙ্গ হওয়ার জন্য একটি চূড়ার কমপক্ষে ৩০০ ফুট প্রমিনেন্স থাকতে হবে। বাংলাদেশ তুলনামূলক কম পাহাড়ি দেশ বিধায় অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী তাঁর গবেষণায় কলোরাডো নিয়ম অনুসরণ করেন। এ পদ্ধতিতে গবেষক ৭৫টি পর্বতশৃঙ্গ চিহ্নিত করেছেন এবং তাদের উচ্চতা, প্রমিনেন্স ও ক্রম নির্ধারণ করেছেন। উচ্চতার ক্রমেই দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ দেখানো হয়েছে বান্দরবানের মোদক টংকে।</p> <p> এ ছাড়া দেশের ৭৫টি শৃঙ্গের মধ্যে উচ্চতা ও প্রমিনেন্সের ভিত্তিতে সামিটেবিলিটি স্কোর নির্ধারণ করেছেন ড. সাইদুর রহমান। সামিটেবিলিটি স্কোরের ভিত্তিতে পর্বতারোহীরা আকর্ষণীয় পর্বত নির্ধারণ করে থাকেন। সামিটেবিলিটি স্কোর বিবেচনায়ও মোদক টং প্রথম এবং টেমু ম্যাসিফ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে।</p> <p> উল্লেখ্য, ২০০৬ সালে ইংরেজ পর্বতারোহী গিঞ্জ ফুলেন এবং পরে দেশীয় আরোহীদের মোদক টং-এ আরোহণ এবং জিপিএসের মাধ্যমে উচ্চতার ডাটা সংগ্রহ করার পর মোদক টং (সাকা হাফং) দেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ বলে দাবি উত্থাপিত হতে থাকে। ব্রিটিশ ভারতের ১৯৩৮ সালের এবং পাকিস্তান আমলের ১৯৪৮ সালের মানচিত্র অনুসরণ করে তৈরি করা যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর টপোগ্রাফিক মানচিত্রেও দেখা যায় মোদক টংয়ের উচ্চতা সবচেয়ে বেশি।</p> <p> নৈর্ব্যক্তিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা করা এবং দেশের সব পর্বতশৃঙ্গ, তাদের উচ্চতা, টপোগ্রাফিক প্রমিনেন্স ও উচ্চতার ক্রমনির্ধারণ করাই ছিল অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমান চৌধুরীর গবেষণার উদ্দেশ্য।</p> <p>  </p>