<p>বিল কালেকশনসহ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সব স্তরে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে স্মার্ট সংস্থায় পরিণত হতে যাচ্ছে ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ঢাকা ওয়াসা)। ডিজিটালের গণ্ডি পেরিয়ে স্মার্টের পথে দ্রুতই এগিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। পানি ও পয়ঃসংযোগ, বিল অনলাইন পেমেন্ট পদ্ধতি, বাজেট ব্যবস্থাপনা, ডিজিটাল হাজিরা ব্যবস্থাপনা, অডিট ব্যবস্থাপনা, কোয়ার্টার ব্যবস্থাপনা, বোতল প্লান্ট ম্যানেজমেন্ট, সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট, ইউটিলিটি ব্যবস্থাপনা, ট্রেনিং ব্যবস্থাপনা, ল্যাবরেটরি ব্যবস্থাপনাসহ ৩২টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ডিজিটাইজেশন বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা ওয়াসা।</p> <p>ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, বর্তমানে আবাসিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে চার লাখ সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ, অর্থাৎ ৫০ হাজারের মতো বাণিজ্যিক সংযোগ আর প্রায় সাড়ে তিন লাখ আবাসিক সংযোগ রয়েছে। আবাসিকে প্রতি এক হাজার লিটার (এক ইউনিট) পানি ১৫ টাকা ১৮ পয়সা এবং বাণিজ্যিকে ৪২ টাকা রাখা হয়। এই বিশাল গ্রাহকের প্রতিদিন পানির চাহিদা ২৭০ কোটি লিটারের বিপরীতে উৎপাদন ক্ষমতা ২৮০ কোটি লিটার। এ ছাড়া বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার এটিএম বুথের মিনারেল ওয়াটারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে; প্রতিদিনই যেটি বাড়ছে। বর্তমানে ২৯৮টি ওয়াটার এটিএম বুথ চালু আছে এবং ২০২৫ সালের মধ্যে ৫০০টি ওয়াটার এটিএম বুথ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটিএম বুথে বর্তমানে গ্রাহক সংখ্যা চার লাখ ৪০ হাজার। শীতকালে খাবার পানির চাহিদা সাত লাখ ৫০ হাজার লিটার এবং গ্রীষ্মকালে খাবার পানির চাহিদা থাকে ১২ লাখ লিটার।</p> <p>সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০০৯ সালের পর থেকে ধীরে ধীরে ওয়াসাকে আধুনিক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করার কাজ শুরু করা হয়। আধুনিক বিশ্বের পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে মিল রেখে এগিয়ে যায় সংস্থাটি। ঢাকা ওয়াসা এখন ডিজিটালি অপারেট কার্যক্রম চালাচ্ছে। চালু করা হয়েছে ই-সেবা। ই-বিলিং, ইলেকট্রনিক গভ. প্রকিউরমেন্ট (ই-জিপি), পয়ঃসংযোগ, ই-নথি এবং ই-রিক্রুটমেন্ট করে ডিজিটাল ঢাকা ওয়াসায় যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। এখন মানুষের বাসায় বাসায় গিয়ে পানির মিটার রিডিং দেখে আসতে হয়। আগামীতে এমন প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চায় ওয়াসা, যেখানে মিটার রিডিং দেখতে বাসায় বাসায় লোক পাঠাতে হবে না। ডিজিটাল মিটার রিডিং পদ্ধতি থাকবে।</p> <p>ডিজিটাল ঢাকা ওয়াসা থেকে স্মার্ট ঢাকা ওয়াসার বিষয়ে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট বলতে আমরা বোঝাচ্ছি, মানুষ ঘরে বসে ঢাকা ওয়াসার সব ধরনের সেবা পাবেন। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় গ্রাহকদের ভোগান্তি দূর করে সেবা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছি। চলতি বছরই (২০২৪) ইনশাআল্লাহ আমরা সেটা পারব।’</p> <p>তিনি বলেন, ‘আমরা পানির পাম্পে সুপারভাইজরি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডাটা একুইজিশন (এসসিএডিএ) স্থাপন করে ওয়েব ও মোবাইল অ্যাপ দ্বারা গভীর নলকূপের অপারেশন, কন্ট্রোল ও মনিটরিংয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করে পরিচালন ব্যয় কমিয়েছি। ইন্টারনেট অব থিকস (আইওটি-অনলাইন ব্যবস্থাপনা) ও জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস-কোথায় কোথায় লাইন আছে দেখা যায়) ব্যবহার করে স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চলছে। এর মাধ্যমে সব মিটার, বাল্ব, অন্যান্য সেবাসহ সব কিছুর ডিজিটাইজেশন সম্পন্ন করছে ঢাকা ওয়াসা। কারণ প্রযুক্তি এখন এতটাই এগিয়েছে যে সব ধরনের সেবা ডিজিটালি দেওয়া সম্ভব। আর আমরা সব ডিজিটাল সেবা নিশ্চিত করতে পারলেই স্মার্ট সেবা নিশ্চিত হবে।’</p> <p><strong>স্মার্ট ঢাকা ওয়াসা গঠনে ইনোভেশন টিম </strong></p> <p>অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সব স্তরে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে স্মার্ট ঢাকা ওয়াসা ও স্মার্ট ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট স্লোগান ধারণ করে ই-গভর্ন্যান্স প্রণয়নে চলতি বছরের শুরুতে ইনোভেশন টিম গঠন করা হয়েছে। গঠিত এই ইনোভেশন টিম বার্ষিক ই-গভর্ন্যান্স ও উদ্ভাবন কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন, মূল্যায়ন ও রিপোর্টিং কাজ করবে। পাশাপাশি নতুন নতুন ধারণা উদ্ভাবন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ওয়ার্কশপ আয়োজনের উদ্যোগ নেবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভিশন-২০৪১-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডিজিটাল ওয়াসা থেকে স্মার্ট ওয়াসায় রূপান্তরের কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করবে।</p>