<p>জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতাসংগ্রামের ডাক তথা স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ ঘোষণার মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এই মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু হয় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অপারেশন সার্চলাইট অর্থাৎ গণহত্যা। যে গণহত্যা চলে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। আর সে জন্যই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশের গণহত্যা নির্মম ঐতিহাসিক ঘটনায় আবদ্ধ। আজকে স্বাধীনতার ৫৩ বছরে দাঁড়িয়ে এ দেশের আপামর মানুষের মন ও মননে ভয়াবহ সেই গণহত্যা তথা হত্যাযজ্ঞ ঐতিহাসিক গুরুত্বে চিহ্নিত হয়ে আছে, যদিও স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে নির্মম এই ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহকে বিকৃত করার চেষ্টা চলেছে এবং এখনো চলছে।</p> <p>১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যা ও তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা সঠিক ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহ বর্তমান প্রজন্মের মন-মনন গঠনে অতীব প্রয়োজনীয়। এই প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু এই তিনটি বিষয় একে অন্যের পরিপূরক এবং অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পর্কিত। স্বাধীনতাসংগ্রামের পূর্বাপর প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বকে যুক্ত করে আজকের বাংলাদেশের সামগ্রিক ইতিহাস রচিত হতে হবে। না হলে তা হবে আংশিক, অসম্পূর্ণ এবং খণ্ডিত ইতিহাস। এটি অবধারিত যে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ গণহত্যা বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের ইতিহাসে নির্মম অধ্যায়। সুতরাং বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের পরিপূর্ণ ইতিহাসে গণহত্যার এই নির্মম ইতিহাস যথাযথভাবে বিবৃত হওয়া অত্যাবশ্যক।</p> <p>প্রকৃত অর্থে নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর এ জন্যই প্রয়োজন এই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধপূর্ব, মুক্তিযুদ্ধকালীন এবং বর্তমান চলমান বিষয় নিয়ে এই তিনটি অধ্যায়ের প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহের বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণমূলক উপস্থাপনার যথাযথভাবে প্রকাশ ঘটানো, যার মধ্য দিয়ে ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং স্বীকৃতি যৌক্তিকভাবে পৌঁছে যাবে তরুণ প্রজন্মের মননে।</p> <p>স্বাধীনতাপূর্ব বাংলাদেশের আন্দোলন-সংগ্রামের ঘটনাপ্রবাহ, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব—সর্বোপরি গণজাগরণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ চালাকালীন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগসহ নির্মম ঘটনাপ্রবাহের যথাযথ বিবরণ ঐতিহাসিক মূল্যে প্রয়োজনীয়। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বর্তমান অগ্রগতি সেটি অর্থনৈতিক, অবকাঠামোগত, শিক্ষা ও উৎপাদন এবং সামগ্রিক সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান। স্বাধীনতা-পরবর্তী বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নির্দেশিত সংবিধানের চার স্তম্ভের তিনটি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র এবং স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্বাধীনতাপূর্ব আন্দোলন-সংগ্রাম ও বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব, মুক্তিযুদ্ধকালীন আত্মত্যাগসহ নির্মম ঘটনাবলি আর বর্তমান দৃশ্যমান এবং স্বীকৃত উন্নয়ন অগ্রগতির বিস্তৃত বিশ্লেষণ ও তথ্যের উপস্থাপনাকে সমন্বয় করে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় দেশকে এগিয়ে নিতে হলে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ গণহত্যার ঘটনাপ্রবাহকে গুরুত্বের সঙ্গে সংযুক্ত করে পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা প্রয়োজন।</p> <p>২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এ দেশের ঘুমন্ত মানুষের ওপর যে হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগসহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা গণহত্যায় পরিণত হয়। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো, বস্তি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের ওপর যে আক্রমণ ও হত্যাযজ্ঞ চালায়, তার ঐতিহাসিক তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আবশ্যক। এই আলোকে উল্লিখিত বিষয়গুলোর বিশ্লেষণ, উপস্থাপন এবং সঞ্চালনের জন্য প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। এই উদ্যোগ হতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক। স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের সঠিক অধ্যায়গুলো সংযুক্ত করতে হবে। অন্যান্য দেশে যেসব গণহত্যা হয়েছে, তার অনেকগুলোই এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের গণহত্যাসহ যুদ্ধকালীন গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষায় গণহত্যার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। গণহত্যা নিয়ে আরো গবেষণাও প্রয়োজন।</p> <p> </p> <p>লেখক : সাবেক উপাচার্য, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়</p> <p> </p> <p> </p>