কাশি হলেই সিরাপ নয়

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
শেয়ার
কাশি হলেই সিরাপ নয়

শুকনা কাশি সচরাচর দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। তবে অনেক সময় কয়েক মাস থেকে এক বছরও কাশি থাকতে পারে। এর কারণ ভাইরাসের প্রভাবে শ্বাসনালি ফুলে অতিমাত্রায় সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে। এতে ভাইরাস সংক্রমণ সেরে যাওয়ার পরও কাশি রয়ে যায়।

ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিকও কাজ করে না। উল্টো অযোচিত অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে মানুষের শরীর ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে পড়ে।

 

কফের সিরাপ কি সমাধান?

কাশি হলেই কফের সিরাপ খাওয়া কোনো সমাধান নয়। বাজারে চলতি কফের সিরাপগুলো অনেক সময় খিঁচুনি, ঝিমুনি, অস্বাভাবিক হূত্স্পন্দন, কিডনি ও যকৃতের সমস্যাসহ নানা ক্ষতি করতে পারে।

কাশির সিরাপে হাইড্রোকার্বন থাকে। মূলত বুক ব্যথা ও কাশি নিয়ন্ত্রণে এটি ব্যবহৃত হয়। হাইড্রোকার্বন এক ধরনের নারকোটিকস, যা ক্ষতিকর। এ ছাড়া কাশির সিরাপের অনেক উপাদান, যেমনগুয়াইফেনেসিন, সিউডোফেড্রিন, ডেক্সট্রোমিথরফান ও ট্রাইমেথোপ্রিম ইত্যাদি কারণে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে, ঝিমুনি আসে, ঘুম ঘুম ভাব হয়।

সিরাপের মরফিন স্নায়ু ও পেশি শিথিল করে দেয়।

ইফিড্রিনের কারণে শ্লেষ্মা শুকিয়ে যায়। এমনকি সালবিউটামল ও মন্টিলুকাস্টজাতীয় ওষুধও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কারো সেবন করা উচিত নয়। আরাম পেতে কফের সিরাপ নয়; বরং কিছু উপদেশ মেনে চলতে পারেন।

 

বাড়তি কী করা যায়

গরম পানির ভাপ নেওয়া যায়।

এতে কিছুটা আরাম মিলবে। মনে রাখতে হবে, ভাপ নিলে কোনো জীবাণু মরে না; সাময়িক আরাম মেলে।

শুকনা কাশিতে গলা খুসখুস করলে হালকা গরম পানিতে একটু লবণ দিয়ে কুলকুচি করা যায়। মুখে লজেন্স, লবঙ্গ বা আদা রাখলেও আরাম মেলে।

 

চিকিৎসকের পরামর্শ কখন

কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, রক্ত দেখা গেলে, কাশতে কাশতে শরীর নীল হয়ে গেলে বা প্রচণ্ড জ্বর এলে, কথা বলতে কষ্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। যেকোনো কাশি দুই বা তিন সপ্তাহের বেশি থাকলে অবশ্যই বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হবেন।

 

লেখক : মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ

হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি., শ্যামলী, ঢাকা

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

দাঁত ব্রাশিং ও ফ্লসিংয়ের সঠিক উপায়

শেয়ার

এরাকনয়েড সিস্ট প্রাণঘাতী নয়

ডা. মো. ফজলুল কবির পাভেল
ডা. মো. ফজলুল কবির পাভেল
শেয়ার
এরাকনয়েড সিস্ট প্রাণঘাতী নয়

মস্তিষ্কে দেখা দিতে পারে এরাকনয়েড সিস্ট। এর আকৃতি খুব বড় হয়ে না গেলে রোগটি বড় সমস্যা তৈরি করে না। সাধারণত এই রোগ পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। সিস্ট বড় হয়ে গেলে মাথা ব্যথা হতে পারে।

বমিভাব বা বমিও হতে পারে। খিঁচুনি হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। চোখে দেখতেও সমস্যা হতে পারে, তবে এ উপসর্গ শুধু সিস্টের আকৃতি মাত্রাতিরিক্ত বড় হয়ে গেলে তবেই দেখা দেয়। এ ছাড়া মস্তিষ্কের মধ্যে থাকা সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড [সিএফ] প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়ে দেখা দিতে পারে হাইড্রোকেফালাস।
সিটি স্ক্যান বা এমআরআই পরীক্ষা করে রোগটি শনাক্ত করতে হয়। শনাক্ত হলেই চিকিৎসার প্রয়োজন নয়, সার্জারিও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে শুধু ফলোআপ করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। সিস্ট অতিরিক্ত বড় হলে অথবা জটিল উপসর্গগুলো দেখা দিলে সার্জারি লাগতে পারে।
তবে ভয়ের কিছু নেই, রোগটি নিরাময়যোগ্য। উপসর্গ দেখা দিলেই বিশেষজ্ঞ নিউরোসার্জনের পরামর্শ নিতে হবে।

 

লেখক : রেজিস্ট্রার, মেডিসিন বিভাগ, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল।

মন্তব্য

ক্যান্সার চিকিৎসার অতীত ও বর্তমান

    উনিশ শতকের শুরুতে ক্যান্সার দেখা দিলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। বর্তমানে আরোগ্যলাভের সম্ভাবনা ছাড়িয়েছে ৭০ শতাংশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতভাগ। ক্যান্সার চিকিৎসার চিত্র ও ভবিষ্যতের আলোচনা করেছেন ডা. আলী আসগর চৌধুরী
শেয়ার
ক্যান্সার চিকিৎসার অতীত ও বর্তমান
মাঠ পর্যায়ে এখনও অপ্রতুল কেমোথেরাপি মেশিন ছবি : সংগৃহীত

দুই হাজার বছর আগেও ক্যান্সারের চিকিৎসা ছিল আক্রান্ত স্থান পুড়িয়ে দেওয়া, জোঁক দিয়ে রক্ত চোষানো বা ঝাড়ফুঁক, তাবিজ ও তন্ত্রমন্ত্র। বলা যায়, তখন ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দেওয়া হতো রোগীকে। কর্কট রোগ ওরফে ক্যান্সার কী, তা বুঝতে অনেক সময় লেগেছে চিকিৎসাবিজ্ঞানের। রোগটির উৎপত্তি কিভাবে, শরীরে ছড়িয়ে পড়ার মাধ্যম ও এর বহুমুখী আচরণ লুকোচুরি খেলেছে বিজ্ঞানের সঙ্গে।

উনিশ শতকের শুরুতে ক্যান্সার দেখা দিলে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ৫ শতাংশ। বর্তমানে আরোগ্যলাভের সম্ভাবনা ছাড়িয়েছে ৭০ শতাংশ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে শতভাগ। রেডিওথেরাপি চিকিৎসার অভূতপূর্ব উন্নতির পাশাপাশি গত পঞ্চাশ বছরে কেমোথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপির উন্নতি ক্যান্সার চিকিৎসার ফলাফলে অনুকূল প্রভাব ফেলেছে। তবে এসব চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি ও বিভিন্ন স্তরে প্রয়োগ করা হয়।
বাংলাদেশেও ক্রমেই বাড়ছে ক্যান্সারের প্রকোপ। জনগণের আয়ুষ্কাল বেড়েছে, নিয়ন্ত্রিত হয়েছে সংক্রমণজনিত রোগ। কিন্তু অন্যদিকে দ্রুত পশ্চিমা ধাঁচে রূপ নিচ্ছে জীবনযাপন; ধূমপান ও তামাকের ব্যবহার রোধ করা সম্ভব হয়নি। বায়ুদূষণ ও খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল এখনো বড় চ্যালেঞ্জ।
তাই প্রথম দশটি মৃত্যুর কারণের মধ্যে ঢুকে পড়েছে ক্যান্সার। দেশের সামগ্রিক ক্যান্সার চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা যুগোপযোগী হচ্ছে, তবে এটি সময়সাপেক্ষ। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত নিশ্চিত করা জরুরি। তাই সঙ্কোচ না করে সমস্যার প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার মানসিকতা গড়ে তুলতে হবে।

ক্যান্সার রোগীদের জীবনের কাহিনি অত্যন্ত করুণ।

চিকিৎসার একটি বড় নিয়ামক চিকিৎসা খরচ, যার পুরোটাই নির্ভর করছে রোগীর আর্থিক সামর্থ্যের ওপর। পারিবারিক সহায়তা এখনো অপ্রতুল, বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে। মাঝপথে অর্থাভাব দেখা দিলে রোগীরা চিকিৎসা গ্রহণ বন্ধ করে দেয়। চিকিৎসার খরচ জোগাতে বহু পরিবার হয়ে পড়ে সর্বস্বান্ত। ক্যান্সার রোগীদের জন্য সরকারি সাহায্য প্রয়োজন। চিকিৎসার পাশাপাশি রোগ পরীক্ষার জন্যও ক্যান্সার রোগীদের আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। এর পাশাপাশি চিকিৎসা বিকেন্দ্রীকরণে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি। চিকিৎসা বিকেন্দ্রীকরণ ছাড়া আধুনিক চিকিৎসার সুফল প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানো সহজ নয়। চিকিৎসার স্থান বিকেন্দ্রীকরণ না হওয়ায় দীর্ঘ মেয়াদে রোগীদের দূরবর্তী স্থানে থাকতে হচ্ছে। অঞ্চলভেদে ক্যান্সারের ধরন মাথায় রেখে প্রতিরোধমূলক কর্মসূচি একান্ত প্রয়োজন। দূর গ্রামের গরিব কৃষক, গার্মেন্ট নারীকর্মী, স্কুলশিক্ষক, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, অবুঝ শিশু, বৃদ্ধ পুরোহিত কিংবা মাঝবয়সী মসজিদের ইমামযে ব্যক্তিই ক্যান্সারের করাল গ্রাসে আক্রান্ত হয়, সে যেন চিকিৎসা নেটওয়ার্কের বাইরে না থাকে। তাদের নিয়েই হোক আমাদের লড়াই।

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে যার অবস্থান থেকে যতটা সম্ভব অবদান রাখার এখনই সময়। জাতীয় ঐকমত্য, সম্মিলিত উদ্যোগ, সহানুভূতির চাদরে মোড়া ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ক্যান্সার যুদ্ধে একধাপ এগিয়ে দিতে পারে। রোগীদের শুধু চিকিৎসাজনিত নিশ্চয়তা নয়, মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করাও জরুরি। আমাদের দীপ্ত শপথ, প্রত্যেক ক্যান্সার রোগী যেন সহায়তা, সহানুভূতি ও ভালোবাসার স্পর্শ থেকে বঞ্চিত না হয়। তাদের জীবনেও রং ফিরুক, হাসি ফুটে উঠুক চোখেমুখে। অর্থপূর্ণ জীবন তাদেরও অধিকার।

 

 লেখক : সহযোগী অধ্যাপক

ক্লিনিক্যাল অনকোলজি ও রেডিওথেরাপি বিভাগ

চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল

মন্তব্য

যখন-তখন মন্টিলুকাস্ট সেবন নয়

অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান
শেয়ার
যখন-তখন মন্টিলুকাস্ট সেবন নয়

প্রতিটি ওষুধের ব্যবহারবিধি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আলাদা। সেসব আমলে নিয়ে তবেই যেকোনো ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখে থাকেন চিকিৎসক। স্বপ্রণোদিত হয়ে ওষুধ সেবন করতে নিষেধ করার কারণ এটাই, প্রতিটি রোগ ও রোগীর চাহিদা আলাদা। অথচ হাঁচি-কাশি হলেই মুড়ি-মুড়কির মতো মন্টিলুকাস্ট সেবন করছে অনেকেই।

এ ওষুধের রয়েছে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। আর যদি ওষুধটি হয় মেয়াদোত্তীর্ণ বা নকল, তাহলে হতে পারে অকল্পনীয় ক্ষতি, ভয়ংকর পরিণতি বয়ে নিয়ে আসবে সেই ওষুধ। মন্টিলুকাস্ট বাজারে বেশ কিছু নামে পরিচিত, যেমনমোনাস বা এমকাস্ট। 

 

ব্যবহার

ওষুধটি মূলত শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।

অ্যালার্জির কারণে নাকের অভ্যন্তরে প্রদাহ তৈরি হলে তার উপশমে এই ওষুধ কার্যকর। এর মধ্যে আছে ক্রনিক অ্যালার্জিক রাইনাইটিস ও সিজনাল অ্যালার্জিক রাইনাইটিস। কিছু ক্ষেত্রে অ্যাজমা বা হাঁপানি দমনেও এটি কার্যকর।

 

কখন ব্যবহার করা যায় না

একই রোগে ভুগলেও সব রোগী মন্টিলুকাস্ট সেবন করতে পারে না।

ওষুধটির প্রতি অতিসংবেদনশীলতা ও অন্যান্য অনেক কারণেই তা হতে পারে, যেমন

যাদের এ গোত্রের কোনো ওষুধে অ্যালার্জি আছে।

গর্ভবতী অথবা গর্ভধারণের পরিকল্পনা করছে যেসব নারী তাদের এ ওষুধ সেবন করা অনুচিত। যারা শিশুকে বুকের দুধ পান করাচ্ছে তাদেরও ওষুধটি সেবনে ঝুঁকি আছে।

লিভারের সমস্যা আছে যাদের বা মদপানের অভ্যাস আছে।

মানসিক সমস্যা থাকলে বা বিশেষত যারা এর জন্য ওষুধ সেবন করছে।

স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করলে।

ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স থাকলে।

 

ওষুধটির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

নিয়ম না মেনে এই ওষুধ সেবন করলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। যেমন

 

ত্বকের গভীর স্তর ফুলে যাওয়া (এনজিওএডিমা)।

হাইপার সেনসিটিভিটি রি-অ্যাকশন।

ত্বকে ফুসকুড়ি ওঠা, জ্বর।

অস্থিরতা, উদ্বিগ্ন বোধ, মাথা ঘোরা, খিটখিটে মেজাজ, দুঃস্বপ্ন, অনিদ্রা ও ঘুমের মধ্যে হাঁটার মতো মানসিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

হজমে সমস্যা, বমি বমি ভাব, প্যানক্রিয়াটাইটিস।

 

মন্টিলুকাস্টের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার লক্ষণ পরিলক্ষিত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। মন্টিলুকাস্ট সেবন করে গাড়ি চালানো ঠিক নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হাঁচি-কাশি হলেই মন্টিলুকাস্ট সেবন করা যাবে না।

 

লেখক : মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ

হেলথকেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লি.,শ্যামলী, ঢাকা

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ