বগুড়ায় ‘শিল্প পার্ক’ পাল্টে দিতে পারে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি

টি এম মামুন, বগুড়া
টি এম মামুন, বগুড়া
শেয়ার
বগুড়ায় ‘শিল্প পার্ক’ পাল্টে দিতে পারে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতি

বগুড়ায় শিল্প পার্ক স্থাপন করা গেলে চীন থেকে পণ্য আমদানি কমে যাবে ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ বগুড়াতেই ৫০ শতাংশ পণ্য উৎপাদন করা হবে। পাল্টে যাবে বগুড়াসহ গোটা উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র। যদিও এই মুহূর্তে উৎপাদন এবং সরকারকে রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বগুড়ার অবস্থান শীর্ষে এবং বিনিয়োগ ও কারখানাভিত্তিক কর্মসংস্থানে দ্বিতীয়।

স্বল্প পুঁজি ও অল্প জনবল নিয়ে বিগত ১৬ বছর নিজ প্রতিষ্ঠান আঁকড়ে ধরে রেখেছেন এখানকার উদ্যোক্তারা।

বগুড়ায় ‘শিল্প পার্ক’ পাল্টে দিতে পারে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতিসূত্র দাবি করে, এখানকার শিল্প মালিকরা উৎপাদনব্যবস্থা আধুনিকায়নে বরাবরই মনোযোগী। শত বাধাবিপত্তি সত্ত্বেও দমে যাননি তাঁরা। স্বল্প পুঁজি নিয়েই বিসিকের অল্প জায়গা কাজে লাগিয়ে চাহিদাসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করেন।

পরিশ্রম ও কষ্ট করে কাজ ধরে রেখেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের কাছে চেয়েও মেলেনি শিল্পের জন্য এতটুকু জায়গা। ‘শিল্প পার্ক’ স্থাপনের বিষয়টি শুধুই ছিল ছলনা। তবু মিথ্যা আশ্বাসে থেমে থাকেননি উদ্যোক্তারা।
বাজারে টিকে থাকার কৌশল হিসেবে পণ্যগুলোর উৎপাদনব্যবস্থা আধুনিকায়নে পদক্ষেপ নেন। ফলে বছরভিত্তিক পণ্য উৎপাদন এবং সরকারকে রাজস্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলে সব বিসিক শিল্পনগরীকে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে বগুড়া। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বগুড়ায় বিসিকের শিল্প পার্ক স্থাপন প্রকল্পটি গুরুত্ব পাচ্ছে।    

বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি মিল্টন ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপের স্বত্বাধিকারী আজিজুর রহমান মিল্টন জানান, বগুড়ার গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত এখানে বিসিক শিল্প পার্ক করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জেলা সাধারণ সম্পাদক ও কামাল মেশিনারিজের স্বত্বাধিকারী কামাল পাশা জানান, বগুড়া এত দিন অবহেলিত ছিল।

অতীতে শিল্পোদ্যোক্তাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (বামমা) জেলার সাধারণ সম্পাদক রাজেদুর রহমান রাজু জানান, দেশের অনেক বিসিক শিল্পনগরীতে প্লট ফাঁকা পড়ে আছে। অথচ বগুড়ায় শিল্প স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তারা জায়গা পাচ্ছেন না। বিসিক শিল্পনগরীকে সম্প্রসারণ অথবা শিল্প পার্ক স্থাপিত হলে শুধু বগুড়া নয়, সারা দেশে এর প্রভাব পড়বে। ২০৩০ সালের মধ্যে চীন থেকে পণ্য আমদানি ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ বগুড়াতেই ৫০ শতাংশ পণ্য উৎপাদন করা হবে। পাল্টে যাবে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির চিত্র।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কার্যালয় এবং বাংলাদেশ অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, ১৯৬০ সালে উত্তরাঞ্চলের সর্বপ্রথম বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠে বগুড়ায়। দুই বছর পর ১৯৬২ সালে রাজশাহী, পাবনা ও দিনাজপুরে এবং ১৯৬৭ সালে রংপুরে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলার মধ্যে ১১টি জেলায় ১৯৮৪ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বিসিক শিল্পনগরীগুলো গড়ে ওঠে। বিনিয়োগ, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থানসহ সরকারকে রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে উত্তরাঞ্চলের ১৬টি বিসিক শিল্পনগরীর মধ্যে বগুড়া, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর ও রংপুর অন্য ১১টির চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে। বিসিক শিল্পনগরী থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, পণ্য উৎপাদন এবং সরকারকে রাজস্ব প্রদানের ক্ষেত্রে বগুড়ার অবস্থান শীর্ষে। বগুড়ায় শিল্প খাতে বিনিয়োগ হয়েছে ৮৬৫ কোটি টাকা। মাত্র ৩৩.১৭ একর জায়গায় প্রতিষ্ঠিত বগুড়া বিসিক শিল্পনগরীতে সচল ৯০টি প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হচ্ছে। বছরে রাজস্ব আসে প্রায় ১৭০ কোটি টাকা। 

এখানকার মানুষ উৎপাদনমুখী হওয়ায় স্থানীয় উদ্যোক্তারা পঞ্চাশের দশকে সাবান, বস্ত্র, লৌহ, কাচ, সিরামিক, দিয়াশলাই এবং ট্যোবাকো খাতে অর্ধশত কলকারখানা গড়ে তোলেন। বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠার আগেই বগুড়া ‘শিল্পের শহর’ হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পায়। পরবর্তী সময়ে শহরের ফুলবাড়ী এলাকায় প্রথমে ১৪.৫০ একর জায়গায় বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। ব্যাপক চাহিদার কারণে ১৯৮০ সালে আরো ১৮.৬৭ একর জায়গা সম্প্রসারণ করা হয়। কিন্তু বর্ধিত শিল্পনগরীর প্লটগুলো কলকারখানায় ভরে যায়। এর পর থেকেই শিল্প স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তারা জায়গা পেতে বিসিকে ধরনা দিতে থাকেন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার জরুরি এ বিষয়ে কর্ণপাত না করায় বাধ্য হয়েই উদ্যোক্তারা ফসলি জমিতে কলকারখানা স্থাপন করেন। এতে করে একদিকে যেমন ফসলি জমি কমতে থাকে, তেমনি পরিবেশদূষণও বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ২০১৪ সালে বিসিক কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। সেটিও মুখ থুবড়ে পড়লে ২০১৮-তে শাজাহানপুর উপজেলায় ৩০০ একর জমিতে ‘উত্তরাঞ্চল কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প পার্ক’ স্থাপনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এতে জমি অধিগ্রহণসহ ৬৪০টি প্লট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ৯২০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। প্রস্তাবনাটি পরিকল্পনা কমিশনে গেলেও রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তা আটকে দেওয়া হয়।

বিসিকের পরিচালক মীর শাহে আলম জানান, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন পেলেই দ্রুত অনুমোদনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সাইরুল ইসলাম জানান, শেখ হাসিনার শাসনামলসহ দীর্ঘ ১৬ বছর বগুড়া ছিল উপেক্ষিত ও বঞ্চিত। এখানে শিল্প পার্ক স্থাপন করা হলে অর্থনীতিতে বিরাট বিপ্লব ঘটবে। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) বগুড়া জেলা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহফুজুর রহমান জানান, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে অর্থনীতির গতিশীলতা নতুন মোড় পাবে এবং বগুড়া অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বিশ্বে স্মার্টফোন সরবরাহে শীর্ষে স্যামসাং

    বছরের প্রথম প্রান্তিক
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
বিশ্বে স্মার্টফোন সরবরাহে শীর্ষে স্যামসাং

বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন উৎপাদকদের মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে স্যামসাং। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোনের সরবরাহ ১.৫% বৃদ্ধি (ইয়ার ওভার ইয়ার) পেয়ে ৩০৪.৯ মিলিয়ন ইউনিটে পৌঁছেছে।

অ্যাপলকে পেছনে ফেলে স্মার্টফোন সরবরাহে শীর্ষস্থান ফিরে পেয়েছে স্যামসাং।

ইন্টারন্যাশনাল ডেটা করপোরেশন (আইডিসি) ওয়ার্ল্ডওয়াইড কোয়ার্টারলি মোবাইল ফোন ট্র্যাকারের তথ্য অনুসারে, বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশের শত শত প্রযুক্তি বাজারের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন বাজারের আকার, ভেন্ডরসংক্রান্ত তথ্য এবং প্রযুক্তিবিষয়ক পূর্বাভাস দিয়ে থাকে আইডিসি ট্র্যাকার।

  

বিশ্বব্যাপী চলমান বেশ কিছু দ্বন্দ্ব স্মার্টফোন বাজারের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। তবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও সংকট উত্তরণে স্মার্টফোন উৎপাদকরা ভূমিকা রাখছে। ফলে এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি (স্মার্টফোন সরবরাহ বিবেচনায়) অর্জন করেছে স্মার্টফোন উৎপাদকরা।

২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন সরবরাহের ভিত্তিতে তৈরি করা এই তালিকার শীর্ষ পাঁচে আরো রয়েছে অ্যাপল, শাওমি, অপো ও ভিভো।

স্যামসাংয়ের এই সাফল্য মূলত গ্যালাক্সি এস২৫ প্রিমিয়াম ডিভাইস এবং মিড-রেঞ্জের গ্যালাক্সি এ সিরিজের (বিশেষ করে এ৩৬ এবং এ৫৬) জনপ্রিয়তার কারণে অর্জন করা সম্ভব হয়েছে।

এই ডিভাইসগুলো সবার জন্য আরো সাশ্রয়ী মূল্যে এআই ফিচার ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি করেছে। বৈশ্বিক মোট সরবরাহের (স্মার্টফোন) ১৯.৯ শতাংশ এখন স্যামসাংয়ের দখলে। এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে স্যামসাংয়ের বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন সরবরাহের পরিমাণ ছিল ৬০.৬ মিলিয়ন ইউনিট।

 

 

মন্তব্য

ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন কমেছে ৫%

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন কমেছে ৫%

দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার কমে গেছে। গত জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ৫ শতাংশের বেশি। একইভাবে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। তবে খরচ বেড়েছে বাংলাদেশে আসা বিদেশিদের।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছে ২৯৭ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে খরচের পরিমাণ ছিল ৩১৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে দেশের অভ্যন্তরে ক্রেডিট কার্ডে খরচ ১৬ কোটি টাকা কমে গেছে। আর শতকরা হিসাবে ৫.১১ শতাংশ।

আলোচিত ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বিদেশে খরচ করা হয়েছে ৩৮৪ কোটি টাকা. যা তার আগের মাস জানুয়ারিতে এর পরিমাণ ছিল ৪৪৬ কোটি টাকা। সে হিসাবে জানুয়ারির তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে বিদেশে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ কমেছে ৬২ কোটি টাকা. যা শতকরা হিসাবে প্রায় ১৬ শতাংশের বেশি।

আলোচিত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে বসবাসকারী বা ভ্রমণে আসা বিদেশিদের ক্রেডিট কার্ডে খরচ বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিরা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে খরচ করেছিলেন ২৫৩ কোটি টাকা।

পরের মাস ফেব্রুয়ারিতে তাদের খরচের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৮ কোটি টাকায়। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে বিদেশিদের বাংলাদেশে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচ বেড়েছে ১৫ কোটি টাকা।

দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারেও পরিবর্তন এসেছে। দেশের বাইরে বাংলাদেশিদের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। একইভাবে বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশিদের মধ্যে ক্রেডিট কার্ডে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করছেন যুক্তরাষ্ট্রের কার্ডধারী নাগরিকরা।

চলতি বছরের দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ক্রেডিট কার্ডে বাংলাদেশিদের সর্বোচ্চ ৫২ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। অর্থাৎ দেশে ও বিদেশে ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কার্ডধারীদের।

আলোচিত ফেব্রুয়ারিতে দেশের বাইরে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবহার ছিল থাইল্যান্ডে। ফেব্রুয়ারিতে দেশটিতে খরচ হয়েছে ৪৭ কোটি টাকা। সেখানে জানুয়ারিতে খরচের পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি টাকা। ফেব্রুয়াতিতে সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে খরচ করা হয়েছে ৩৯ কোটি টাকা। জানুয়ারিতে দেশটিতে খরচ হয়েছিল ৩৮ কোটি টাকা।

এর আগে বাংলাদেশিরা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে সবচেয়ে বেশি অর্থ খরচ করতেন ভারতে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতে বাংলাদেশি ক্রেডিট কার্ডে খরচ হয়েছে ২৯ কোটি টাকা। আর জানুয়ারিতে ছিল প্রায় ৩৩ কোটি টাকা।

একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি ব্যাংকের প্রধান জানান, ভারতে যাতায়াত কমে যাওয়া ক্রেডিট কার্ডের খরচ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ। তারা নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে চিকিৎসা নিতেও যেতে পারছে না বাংলাদেশিরা। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের আগে সবচেয়ে বেশি ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার ও খরচ হতো ভারতে। এখন যে একেবারে যাচ্ছে না তা নয়। আগে ১০০ জন গেলে এখন যাচ্ছে ১০ জন। এ ছাড়া মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মালদ্বীপে যাওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা খুবই কম। তাদের খরচের পরিমাণও কম। তা ছাড়া ক্রেডিট কার্ডের ওপর হুন্ডি কমে যাওয়ারও প্রভাব পড়েছে।

মন্তব্য

লাল মালবেরিতে আয় লাখ টাকা

    ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা মালবেরি চাষ করে সফল উদ্যোক্তা রাকিব
আরিফ হাসান, ঠাকুরগাঁও
আরিফ হাসান, ঠাকুরগাঁও
শেয়ার
লাল মালবেরিতে আয় লাখ টাকা

ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় এই প্রবাদটি যেন হুবহু মিলে যায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ফারাবাড়ী এলাকার তরুণ রাকিবের জীবনের সঙ্গে। অল্প কিছু চারা নিয়ে শুরু করা মালবেরি চাষ আজ তাঁকে এনে দিয়েছে আর্থিক সচ্ছলতা, সম্মান এবং আত্মবিশ্বাস। এখন তিনি শুধু কৃষকই নন, বরং একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে এলাকায় বেশ সুনাম কুড়াচ্ছেন।

শুরুটা যেমন ছিল : প্রতিনিয়ত বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করা অনেক তরুণের মতো রাকিবও একসময় দিশাহারা ছিলেন।

জীবনের গতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা নিয়েও ছিল অনিশ্চয়তা। কিন্তু কৃষি নিয়ে তাঁর আগ্রহ বরাবরই ছিল প্রবল। বিশেষ করে ফলদ উদ্ভিদের প্রতি। ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মালবেরি চাষ নিয়ে বিভিন্ন ভিডিও দেখতে গিয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
পরে স্থানীয় কৃষি অফিস ও কিছু চাষির পরামর্শে নিজের বাড়ির পাশে পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি চারা রোপণ করেন।

প্রথম বছরই আশাতীত ফলন হয়। গাছে ফল ধরেছে, ফলের স্বাদ ভালো এবং সবচেয়ে বড় কথা বাজারে এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। এ থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে পরের বছর আরো বড় পরিসরে মালবেরি চাষ শুরু করেন।

চাষ ও বাজারজাতকরণ অবস্থা : রাকিবের বাগানে বর্তমানে রয়েছে প্রায় ২৬টি মালবেরি গাছ। এ ছাড়াও বাসায় রয়েছে আরো কয়েকটি গাছ। প্রতিটি গাছই সুস্থ ও ফলনে ভরপুর। গাছে ফল এসেছে ব্যাপক। চারা লাগানোর এক বছর পরেই গাছে ফলন আসা শুরু করে বলে জানিয়েছেন রাকিব।

প্রতিটি গাছে ৫ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত ফল আসে। এই ফল তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের স্থানীয় কালীবাজারে ফলের দোকানগুলোতে বিক্রি করেন। রাকিব জানান, চলতি মৌসুমে শুধু ফল বিক্রি করেই প্রায় এক লাখ টাকা আয় করতে পারবেন বলে আশা করছেন। প্রতি কেজি মালবেরি তিনি বর্তমানে বিক্রি করছেন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়। তবে রমজান মাসে এ দাম বেড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

তবে এখানেই থেমে নেই তাঁর আয়। মালবেরির চারা বিক্রি করেও এ বছর তাঁর আয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে আরো এক লাখ টাকায়। কারণ, এলাকার অনেকেই এখন রাকিবের অনুপ্রেরণায় মালবেরি চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন এবং তাঁর কাছ থেকেই চারা সংগ্রহ করছেন।

খরচ কম, লাভ বেশি : মালবেরি চাষে খরচ প্রায় নেই বললেই চলে। গাছগুলোর প্রাথমিক যত্ন নিলেই হয়। কীটনাশক বা অতিরিক্ত সার প্রয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। বরং প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা গাছগুলোই বেশি ফলন দেয় বলে রাকিব জানান। তিনি বলেন, প্রথমে কিছুটা শঙ্কা ছিল। ভাবছিলাম গাছ হবে কি না, ফল আসবে কি না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে সব গাছেই ভালো ফলন হয়েছে। খরচ বলতে তেমন কিছুই নেই। শুধু পরিশ্রম করতে হয়।

আন্তঃফসল চাষে সুবিধা : রাকিবের চাষে অন্যতম ব্যতিক্রমী দিক হচ্ছে, তিনি জমির আইলের মধ্যেই মালবেরি চারা রোপণ করেছেন। এতে জমির মূল ফসলের কোনো ক্ষতি হয়নি, বরং উল্টো উপকার হয়েছে। মালবেরিগাছের পাতা ও ছায়া অন্য ফসলের জন্য পরিবেশবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া বাড়ির পাশেও কয়েকটি গাছে ফল ধরেছে। বাড়ির ব্যবহারকৃত ফাঁকা জায়গাগুলো কাজে লাগিয়েই তিনি এই চাষে সফল হয়েছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা : রাকিব এখন মালবেরি চাষকে ঘিরেই বড় স্বপ্ন দেখছেন। তাঁর ইচ্ছা, ভবিষ্যতে একটি নার্সারি গড়ে তোলা, যেখানে শুধু মালবেরির চারা নয়, আরো বিভিন্ন ফলদ ও ভেষজ উদ্ভিদের চারা উৎপাদন ও বিক্রির ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া মালবেরি দিয়ে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরির একটি ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তোলার পরিকল্পনাও রয়েছে।

রাকিবের সাফল্য দেখে এলাকার অনেকেই এখন মালবেরি চাষকে সম্ভাবনার খাত হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন। বিশেষ করে তরুণরা নতুনভাবে উৎসাহ পাচ্ছেন। তাঁর দেখানো পথে চলতে চান অনেকেই।

একজন স্থানীয় প্রবীণ কৃষক মো. সামসুল ইসলাম বলেন, আমরা তো চিনি, এই ছেলেটা কিভাবে নিজের পরিশ্রমে আজকে এই জায়গায় এসেছে। এ রকম চাষাবাদ আগে দেখিনি। এখন আমরাও শিখছি।

কৃষি বিভাগ যা বলছে : রাকিবের এই সফলতা নজর কেড়েছে কৃষি কর্মকর্তাদেরও। ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক আলমগীর হোসেন বলেন, মালবেরি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর ও অর্থকরী ফল। আমাদের দেশে এর চাষ এখনো সীমিত হলেও এর সম্ভাবনা অনেক। রাকিব যেভাবে উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আমরা তাঁকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। রাকিবের মতো আরো তরুণরা এগিয়ে এলে মালবেরি চাষের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো শক্তিশালী হতে পারে।

লাল মালবেরিতে আয় লাখ টাকা

উদ্যোক্তা রাকিব মালবেরি চাষ ঘিরেই বড় স্বপ্ন দেখছেন। ছবি : কালের কণ্ঠ

মন্তব্য

দশ দেশে ওষুধ রপ্তানি বাড়াবে ওয়ান ফার্মা

    আফগানিস্তান, মায়ানমার ও শ্রীলঙ্কায় রপ্তানি হচ্ছে ক্যান্সারের বায়োটেক ওষুধ তৈরিতে যন্ত্রপাতি স্থাপন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানি হবে ক্যান্সারের ওষুধ ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
দশ দেশে ওষুধ রপ্তানি বাড়াবে ওয়ান ফার্মা

বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রপ্তানি দিন দিন বাড়ছে। এখন রপ্তানিতে পিছিয়ে থাকা কম্পানিগুলোও নতুন বাজার ও বড় রপ্তানি আদেশ পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তারা। আগামী তিন বছরে আফ্রিকাসহ নতুন ১০টি দেশে ওষুধ রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ওয়ান ফার্মা। কম্পানিটি বর্তমানে তিনটি দেশে রপ্তানি করছে।

আরো কয়েকটি দেশে রপ্তানি করতে প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার।

তিনি বলেন, আমদানির বিকল্প ওষুধ বাজারে দিতে সক্ষম হয়েছি। এতে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। আমদানি না করে আমাদের কম্পানি দেশে ওষুধ তৈরি করে কম দামে দিতে পারছি।

আগামী দিনে এমন ওষুধ উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে। তিনি আরো বলেন, আমরা আধুনিক প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি স্থাপন করে ভালো মানের ওষুধ তৈরি করে এখন বাজারে ছাড়ছি। আগামী দিনগুলোতে ভালো কম্পানির ওষুধের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কম দামে বাজারে ওষুধ দিতে চাই।

ওয়ান ফার্মার চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান ক্যান্সারের বায়োটেক ওষুধ তৈরির প্লান্ট স্থাপন করছে।

কিছু যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। আরো যন্ত্রপাতি আসছে। এগুলো স্থাপন করে দেশে তৈরি ক্যান্সারের ওষুধ বাজারে দেওয়া সম্ভব হবে। ক্যান্সারের ওষুধ এখন বেশ ব্যয়বহুল। আমরা উৎপাদন করলে এই ওষুধ গরিব মানুষ কম দামে পেলে তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
এই ওষুধ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করতে এরই মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আরো কিছু চুক্তি সই করার পরিকল্পনা আছে।

জানা যায়, ওষুধ রপ্তানি বাড়াতে কম্পানিটি ব্যবসা সম্প্রসারণে যাচ্ছে। এ জন্য প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। বিশেষ করে ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদনে এর বড় অংশ বিনিয়োগ হচ্ছে। ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন শুরু হলে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি রপ্তানিতে বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। ২০১৫ সালে এই ওষুধ কম্পানি বগুড়ার বিসিক শিল্পনগরীতে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে এই ওষুধ কারখানায় ২০০ শ্রমিক কাজ করছেন। শতাধিক জেনেরিক ওষুধ এখন তৈরি করছে কম্পানিটি।

ওয়ান ফার্মার প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আলজেরিয়া তাদের কম্পানির ওষুধ নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশটির সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এখন প্রক্রিয়াগত বিষয়গুলো চলছে। এটি শেষ হলে রপ্তানি সম্ভব হবে। এর বাইরেও আফ্রিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অনুন্নত দেশগুলোতে ওষুধ রপ্তানির বাজার বাড়ানো যাবে। দেশের বিভিন্ন কম্পানি এখন ওষুধ রপ্তানির বাজার ধরছে। আমাদের কম্পানি ১০০টি দেশে রপ্তানির টার্গেট করে কাজ করছে। আগামী দুই থেকে তিন বছরে ১০ দেশে রপ্তানি করতে চাই। বর্তমানে আফগানিস্তান ও মায়ানমারে রপ্তানি হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা থেকে রপ্তানি আদেশ দিয়েছে। এই তিন দেশে এখন রপ্তানি হচ্ছে। ক্যান্সারের ওষুধ উৎপাদন শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হবে। কম্পানির শীর্ষস্থানীয় এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৮ সাল থেকে ওষুধ রপ্তানি শুরু করে ওয়ান ফার্মা। ২০২৪ সালে দুই মিলিয়ন ডলারের ওষুধ আফগানিস্তানে রপ্তানি করেছে। চলতি বছরে তিন মিলিয়ন ডলারের অর্ডার আছে। এ ছাড়া মায়ানমারে ৫০ হাজার ডলারের ওষুধ রপ্তানি হয়েছে। এই ওষুধ কম্পানিটির বার্ষিক টার্নওভার ১৫০ থেকে ১৮০ কোটি টাকা। গত বছরে এই কম্পানির প্রবৃদ্ধি ৬১ শতাংশ ছিল বলে দাবি করেছেন। কম্পানিটি স্টরয়েড ও বায়োটেক ওষুধ তৈরি করছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ওষুধশিল্পে উত্তরোত্তর উন্নতি করেছে। দেশে উৎপাদিত ওষুধ বিশ্বের ১৫৭টি দেশে রপ্তানি করা হয়। পাশাপাশি দেশের মোট চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ এখন দেশেই উৎপাদিত হয়। দেশে উৎপাদিত প্রায় সব ওষুধই রপ্তানি হচ্ছে। এই রপ্তানির পরিমাণ প্রায় ২০ কোটি ডলার। দেশে উৎপাদিত ওষুধ রপ্তানিতে উৎসাহিত করতে সরকার অনেক দিন ধরে প্রণোদনা দিয়ে আসছে। বর্তমানে এই পণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে অ্যালোপ্যাথি, হোমিওপ্যাথি, ইউনানি ও আয়ুর্বেদসহ ওষুধ কম্পানি আছে ৯০৫টি। এর মধ্যে অ্যালোপ্যাথি ওষুধ কম্পানি আছে ৩০৫টি, চালু ২২৯টি। দেশের ওষুধের বাজার ৪০ হাজার কোটি টাকার।

ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওয়ান ফার্মা। এই গ্রুপ অব কম্পানির চেয়ারম্যান নাজমুন নাহার। তিনি বলেন, দেশে অনেক দিন ধরেই নগরায়ণ বাড়ছে। এই কারণে ফসল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করে ন্যাশনাল এগ্রিকেয়ার।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ