<p>পবিত্র কোরআনের ৯৯ নম্বর সুরা জিলজাল। মদিনায় অবতীর্ণ হয়েছে। এর আয়াত সংখ্যা ৮। সুরার প্রথম শব্দ জিলজাল থেকেই সুরার নামকরণ হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই সুরার সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো :</p> <p><strong>সুরা জিলজালের আলোচ্য বিষয়</strong></p> <p>সুরা জিলজালের আলোচ্য বিষয় কিয়ামত ও তার পরবর্তী অবস্থা সম্পর্কে ধারণা দেওয়া। কিয়ামতের ভয়াবহতার মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করা। নির্ধারিত সময়ে প্রবল ভূমিকম্পে কিয়ামত সংঘটিত হবে। দ্বিতীয় শিঙা ফুৎকারের মাধ্যমে সবাই কিয়ামতের ময়দানে উপস্থিত হবে। তখন জমিন তার ভূগর্ভস্থিত সব কিছু উগলে দেবে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ভূমি তার বক্ষস্থিত বস্তুগুলো সোনা স্তম্ভের মতো বের করে দেবে। তখন হত্যাকারী ব্যক্তি এসে বলবে, আমি এর জন্য হত্যা করেছি। আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারী ব্যক্তি এসে বলবে, আমি এর জন্য আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেছি। চোর এসে বলবে, এরই কারণে আমার হাত কাটা হয়েছে। অতঃপর সবাই তা ছেড়ে দেবে। এর থেকে তারা কেউ কিছু গ্রহণ করবে না। (মুসলিম, হাদিস : ২২১৩ )</p> <p>কিয়ামতের ময়দানে প্রত্যেকের আমলের চুলচেরা হিসাব-নিকাশ নেওয়া হবে । আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) একদিন এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন–সে দিন পৃথিবী তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। তারপর তিনি বলেন, তোমরা কি জানো পৃথিবীর বৃত্তান্ত কী? সাহাবিরা বলেন, আল্লাহ ও তার রাসুল ভালো জানেন ! তিনি বলেন, এ বৃত্তান্ত হলো প্রত্যেক বান্দা নারী ও পুরুষ তার ওপর যে কাজ করবে তারই সে সাক্ষ্য দেবে। বলবে, অমুক দিন সে অমুক কাজ করেছে, তমুক কাজ করেছে। এ হলো পৃথিবীর বৃত্তান্ত বর্ণনা। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৫৩)</p> <p><strong>সুরা জিলজালের একটি ঘটনা</strong></p> <p>আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল ! আমাকে পাঠ করা শিখিয়ে দিন। রাসুল (সা.) তখন তাকে বলেন, আলিফ লাম রা যুক্ত তিনটি সুরা পাঠ করো। লোকটি বলল, আমি বৃদ্ধ হয়ে গেছি। স্মৃতিশক্তি আমার দুর্বল হয়ে গেছে এবং জিহ্বা মোটা হয়ে গেছে। (সুতরাং এই সুরাগুলো পাঠ করা আমার পক্ষে কঠিন) তখন রাসুল (সা.) বলেন, আচ্ছা তাহলে হা-মিমযুক্ত সুরাগুলো পাঠ করো। লোকটি আবার একই ওজর পেশ করল। তখন রাসুল (সা.) তাকে বলেন, তাহলে উসাববিহু বিশিষ্ট তিনটি সুরা পাঠ করো। লোকটি ওই উক্তিটি পুনরাবৃত্তি করল এবং বলল আমাকে একটি সহজ পাঠ্য সুরার সবক দিন। তখন রাসুল (সা.) তাকে ইজা জুলজিলাত এই সুরা পাঠ করালেন। রাসুল (সা.) যখন পাঠ করা শেষ করলেন, তখন লোকটি বলল, আল্লাহর শপথ ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বিন পাঠিয়েছেন। আমি কখনো এর অতিরিক্ত কিছু করব না, এ কথা বলে লোকটি পিছন ফিরে চলে গেল। তখন নবীজি (সা.) বলেন, লোকটি সাফল্য অর্জন করেছে ও মুক্তি পেয়ে গেছে। এ ব্যক্তি সাফল্য অর্জন করেছে ও মুক্তি পেয়ে গেছে। (মুসনাদে আহমদ : ২/১৬৯, তাফসির ইবনে কাসির : ১৮/২৪৬)</p> <p><strong>সুরা জিলজালের গুরুত্ব ও ফজিলত</strong></p> <p>এ সুরার গুরুত্ব ও ফজিলত অনেক । মাত্র কয়েকবার পাঠেই কোরআন খতমের সওয়াব পাওয়া যায়। আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক সাহাবিকে বলেন, হে অমুক! তুমি কি বিয়ে করেছ? লোকটি বলল, না, হে আল্লাহর রাসুল। আল্লাহর কসম! আমার কাছে বিয়ে করার মতো কিছু নেই। তিনি বলেন, তোমার সঙ্গে কি কুলহু আল্লাহু আহাদ নেই? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিনি বলেন, কোরআনের এক-তৃতীয়াংশ। তোমার সঙ্গে কি ইজা জা-আ নাসরুল্লাহি ওয়াল ফাতহু সুরাটি নেই? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিনি বলেন, কোরআনের এক-চতুর্থাংশ। তোমার সঙ্গে কি কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন সুরাটি নেই? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিনি বলেন, কোরআনের এক-চতুর্থাংশ। তোমার সঙ্গে কি ইজা জুল জিলাতিল আরদু সুরাটি নেই? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তিনি বলেন, কোরআনের এক-চতুর্থাংশ। বিয়ে করে নাও। বিয়ে করে নাও। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯৫)</p> <p>আনাস ইবনে মালিক (রা.) আরো বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ইজা জুল জিলাত সুরা যে ব্যক্তি পাঠ করবে অর্ধেক কোরআনের সমান তার সওয়াব হবে। কুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন যে ব্যক্তি পাঠ করবে তার জন্য কোরআনের এক-চতুর্থাংশ পাঠের সমান সওয়াব হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৯৩)</p> <p>মহান আল্লাহ সবাইকে আমল করার তাওফিক দিন। আমিন।</p>