<p style="text-align: justify;">বৃষ্টি আল্লাহ তাআলার অপূর্ব সৃষ্টি। এটা বিশ্ববাসীর জন্য একটি নিয়ামত। সবাই বৃষ্টির মহত্ত্ব বুঝতে পারে। অতি ঝড়বৃষ্টির কারণে আবার ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। ভূমিধস, পাহাড়ধস, ভাঙনসহ প্রাকৃতিক নানা দুর্যোগ সৃষ্টি হয়। ঝড়বৃষ্টির সময় মহানবী (সা.)-এর বিশেষ কর্মপন্থা দেখা যায়। ঝড়বৃষ্টির মৌসুমে হাদিসে অনেক দোয়া বর্ণিত হয়েছে। এসব আমলের ব্যাপারে সবার মনোযোগী হওয়া উচিত।</p> <p style="text-align: justify;"><strong>বৃষ্টির পূর্বাভাসে নবীজির চিন্তা</strong></p> <p style="text-align: justify;">মেঘ ও প্রবল বায়ু প্রবাহিত হওয়ার সময় রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চেহারায় অস্থিরতা প্রকাশ পেত।‌ মুখের হাসি মুছে যেত। আয়েশা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে কোনো দিন এরূপ মুখ খুলে হাসতে দেখিনি, যাতে তাঁর আলজিভ দেখা যায়; বরং তিনি সর্বদাই মুচকি হাসতেন। আর তিনি যখন আকাশে মেঘ বা প্রবল বেগে বায়ু প্রবাহিত হতে দেখতেন তখন তাঁর চেহারায় ভীতি পরিলক্ষিত হতো।</p> <p style="text-align: justify;">আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! মানুষ সাধারণত আকাশে মেঘ দেখলে বৃষ্টির আশায় আনন্দিত হয়। আর আপনি যখন মেঘ দেখেন তখন আপনার চেহারায় আমার নিকট আপনার অসন্তুষ্টির ভাব ধরা পড়ে। এর কারণ কী? তিনি বলেন, ‘হে আয়েশা! তা শাস্তি বয়ে আনছে কি না এর নিরাপত্তা আমাকে কে দেবে? এক কওমকে বায়ুর মাধ্যমে শাস্তি দেওয়া হয়েছে (যেমন আদ ও হুদ), আরেক কওম মেঘ দেখে বলেছিল, এটা তো মেঘ! আমাদের বৃষ্টি দেবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৯৮)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>ঝড়-বাতাসে পড়ার দোয়া</strong></p> <p style="text-align: justify;">আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন প্রবল বেগে বায়ু বইতে দেখতেন তখন বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা খইরাহা ওয়া খইরামা ফি হা ওয়া খইরামা উরসিলতা বিহি ওয়া আউযুবিকা মিন শাররি মা ফিহা ওয়া শাররি মা উরসিলাত বিহি।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করি এর কল্যাণ, এর মধ্যকার কল্যাণ এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার কল্যাণ। আর আমি আপনার আশ্রয় চাই এর অনিষ্ট থেকে, এর ভেতরে নিহিত অনিষ্ট থেকে এবং যা এর সঙ্গে প্রেরিত হয়েছে তার অনিষ্ট থেকে।<br /> (তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৪৯)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>বৃষ্টিতে বরকত লাভের দোয়া</strong></p> <p style="text-align: justify;">বৃষ্টির পানিতে বরকত আছে। রাসুল (সা.) বৃষ্টির পানি হাত দিয়ে স্পর্শ করেছেন। আনাস (রা.) বলেন, একবার আমরা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন বৃষ্টির নামল। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর কাপড় প্রসারিত করলেন, যাতে সেটা পানি স্পর্শ করে। আমরা বললাম, আপনি কেন এমন করলেন? তিনি বলেন, কারণ এটা তার মহান রবের কাছে থেকে এখনই এসেছে (মুসলিম, হাদিস : ৮৯৮)</p> <p style="text-align: justify;">আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বৃষ্টি দেখলে বলতেন, ‘আল্লাহুম্মা সইয়্যিবান নাফি আন।’ অর্থাৎ হে আল্লাহ! মুষলধারায় কল্যাণকর বৃষ্টি দাও। (বুখারি, হাদিস : ৯৭৫; আবু দাউদ, হাদিস : ৩৩৯)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>মেঘের গর্জনে পড়ার দোয়া</strong></p> <p style="text-align: justify;">মেঘের গর্জন একেক সময় একেক রকম হয়ে থাকে। গর্জন ছোট হোক কিংবা বড়—শোনা মাত্র এ দোয়া পাঠ করতে হয়। ইবনে ওমর (রা.) তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন মেঘের ও বজ্রের আওয়াজ শুনতেন তখন বলতেন—‘আল্লাহুম্মা লা তাকতুলনা বি গজাবিকা ওয়ালা তুহলিকনা বি আজাবিকা ওয়া আাাফিনা কবলা জালিক।’</p> <p style="text-align: justify;">অর্থ : হে আল্লাহ! দয়া করে আপনি আমাদের আপনার গজবের দ্বারা মৃত্যু দেবেন না এবং আপনার আজাব দ্বারা ধ্বংস করবেন না, বরং এর আগেই আমাদের শান্তি ও নিরাপত্তা দান করুন। (মুসনাদে আহমাদ,হাদিস : ৫৭৬৩; তিরমিজি, হাদিস : ৩৪৫০)</p> <p style="text-align: justify;"><strong>অতিবৃষ্টি বন্ধের দোয়া</strong></p> <p style="text-align: justify;">আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, একদা জুমার দিনে দৈনিক সাহাবি রাসুল (সা.)-কে বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে বলেন। তিনি হাত তুলে দোয়া করেন। সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হয়ে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত বৃষ্টি হতে থাকে। পরের জুমায় আবার অতিবৃষ্টি বন্ধের জন্য আবেদন করা হলে তিনি দোয়া করেন—‘আল্লাহুম্মা হাওয়া লাইনা ওয়ালা আলাইনা।’ অর্থ : হে আল্লাহ! এ বৃষ্টি আমাদের আশপাশে (যেখানে প্রয়োজন) বর্ষণ করুন এবং আমাদের ওপর বর্ষণ করবেন না। (বুখারি, হাদিস : ৯৬৬)</p> <p> </p>